যেদিন আমি শাহবাগে গিয়ে যুদ্ধাপরাধিদের ফাঁসির দাবিতে সমোস্বরে স্লোগান দিয়েছিলাম, ফেসবুক সহ ব্লগের পাতাগুলোয় যখন তাদের ফাঁসির যুক্তির পক্ষে কথা বলেছিলাম, তখন আমি ছিলাম দেশের সুশিল সমাজের অংশ; স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
আজ যখন আমার পেটে আপনারা লাথি দিচ্ছেন; আমার বাবার রক্ত পানি করে আয় করা টাকা অন্যায় ভাবে চুষে নিচ্ছেন; রাষ্ট্র যখন আমার মৌলিক অধিকার পূরন করতে ব্যার্থ হচ্ছে, যখন আমি আমার চাহিদা পূরন করার জন্য; আমার বাবার স্বপ্ন পূরন করার জন্য বিকল্প পথ খুজে নেই; যখন আমি আমার উপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি; তখন আমি স্বাধীনতা বিরোধি হয়ে যাই।
আজকে সত্যি খুব রাগ হচ্ছে এই কথা ভেবে, আমার বাবা কেনো মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটটি তুলতে যায়নি। অন্তত আজ এই সার্টিফিকেট দেখিয়ে হলেও প্রমাণ করতে পারতাম যে আমি বংশগত ভাবে স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলি। আমার মা-খালারা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রেঁধে নিয়েছিলো, আফসোস হচ্ছে এই ভেবে, তারা সেটার জন্য কোন সার্টিফিকেট নেননি। তাহলে আজ বলতে পারতাম, আমি জন্ম থেকেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
যত কথাই বলেন না কেনো, হতে পারে আমরা টাকা দিয়ে, এসি রুমে বসে ক্লাস করি। বসে থেকে আমাদের গায়ে চর্বি জমে গেছে, তবুও নিজের দাবির কথা বলার জন্য, নিজের অধিকারটকু সংরক্ষন করার জন্য রাস্তায় নামার সাহসটুকু আমাদের আছে। অলস হতে পারি, কিন্তু শরীরে মুক্তিযোদ্ধার রক্তটাও বইছে।
শিক্ষার উপর ভ্যাট যখন প্রথম থেকেই মেনে নেইনি, আজও মানবোনা। আমাদের বন্ধুরা রসিকতা করেই বলেছিলো "দেহ পাবি, মন পাবি, ভ্যাট পাবিনা" আপনারা সেটাকে আন্দোলনের ভাষা না বলে উলটো ভাবে নিয়েছেন। ভাবতেও অবাক লাগছে, এদের পাশে বসে নাকি আমি আর আমার মা শাহবাগে স্লোগান দিয়েছিলাম। ঘাট হয়েছে বাপ, মাফ চাইছি; তোদের সভ্য ভেবে সত্যিই বড় ভুল করেছি। তাই আমিও বলছি "দেহ পাবি, মন পাবি, ভ্যাট পাবিনা"।
এবার একটু বুঝিয়ে বলি, দেশের প্রতি ভালোবাসার যেমন কখনো কমতি হবেনা, এর জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করবোনা। কিন্তু দাবি একটাই, টিউশন ফির উপর ভ্যাট চাইলে ভ্যাট পাবিনা। প্রয়োজনে জীবন দেবো, পকেটের মানিব্যাগে আমার নাম-ঠিকানা লেখা একটি কাগজ সে স্কুল জীবন থেকে নিয়ে ঘুরছি। দয়া করে লাশটা আমার বাড়ি পৌছে দিস ভাই, তবুও ভ্যাট দিবোনা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩০