আমার ফুফু দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলেন।দুধে আলতা গায়ের রং।গ্রামের সবার মধ্যমনি।দাদার অনেক স্বপ্ন ছিলো তাকে নিয়ে।যে সময়ের কথা বলছি,সেই সময় ঘরে সুন্দরী মেয়ে থাকলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়া হতো।আমার ফুফুর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলোনা।দাদাজান তার কন্যাকে সুযোগ্য পাত্রে দান করলেন।আমার ফুফা ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্র।তখনও যুদ্ধের সময় আসে নাই।
আমার ফুফু লাল টুকটুক বেনারশী পরে স্বামীর ঘরে গেলেন।কি ছিলোনা সেই ছোট্ট সুখের সংসার এ।ফুফা তখন ফাইনাল ইয়ার এর ছাত্র।ঢাকা কলেজে ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।এতো মেধাবী ছিলেন যে শিক্ষকরা উনাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। ফুফার পড়াশুনার কারনে ফুফু ঢাকাতেই থাকতেন।ফুফা অনেক সৌখিন ছিলেন।ফুটফুটে বৌ-টির জন্য প্রায়ই এটা সেটা নিয়ে আসতেন।আর ফুফু পান খেয়ে লাল টুকটুক মুখে অপেক্ষা করতেন স্বামীর জন্য।এরই মাঝে ঘর আলো করে একটি ছেলে এলো।চাঁদের আলো যেন বাঁধ মানছিলোনা সুখের সংসারে।
এর পরে এলো ১৯৭১।যুদ্ধ তখন কেবল শুরু হয়েছে।ফুফার তখন ফাইনাল পরীক্ষা সামনে।পরীক্ষা দিয়েই তিনি যুদ্ধে যাবেন।কিন্তু ফুফার প্রতিদ্বন্দী যিনি ছিলেন,তিনি পরীক্ষার আগে ফুফাকে কি যেনো খাইয়ে দিলেন যেনো উনি পরীক্ষা দিতে না পারেন।ফুফার মাথা খারাপ হয়ে গেলো।ফুফু,ফুফাকে নিয়ে গ্রামে বাপের বাড়ি চলে এলেন।যুদ্ধ তখন পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে।ফুফা সুস্থ হলেন না।ঘরে তখন নতুন আরো একজন আসার সময় হয়ে গিয়েছে। এরপরে একদিন ফুফা ঘর থেকে বাইরে গেলেন কি কারনে।সেই যে গেলেন আর এলেন না।
ছেলেদুটো আজ বড় হয়েছে ।বিয়েসাদী করে শহরে ঘর পেতেছে।কিন্তু তাদের মা গ্রাম থেকে কিছুতেই কোথাও যেতে রাজী না।
তার একটাই কথা,"যদি তোদের বাপ ফিরে আসে,আর আমাকে না পায়??"
যে জীবনটা কাটানোর কথা ছিলো ঢাকা শহরে আরাম আয়েস করে,সেই জীবনটা ফুফু কাটিয়ে দিলেন মাত্র কিছুদিন আগে বিদ্যুত আসা একটা গ্রামে।এখনো স্বামীর প্রতীক্ষায়।