ক্রিকেট একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ক্রিকেট একটা জনপ্রিয় খেলা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত প্রসার ঘটেছে। আজ থেকে শুরু হলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ উপলক্ষে এ্ই ব্যতিক্রমী পোস্ট।
জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের আক্ষরিক অর্থ আছে, সেটা কি আপনি জানেন?
ক্রিকেটের আক্ষরিক অর্থের কথা ভাবলে প্রথমে মনে পড়ে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা সিরিজের "ক্রিকেট মানে ঝিঝি" গল্পের কথা। আমার প্রিয় একটা গল্প। আর ক্রিকেটের আভিধানিক অর্থ হল ঝিঝি পোকা। ফুটবলের মতো ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মত। তবে বেশিরভাগ মতই বলছে ক্রিকেটের জন্ম হয় ইংল্যান্ডে। কিন্তু বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত থেকে জানা যায় ক্রিকেটের প্রচলনটা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলের ‘দোয়াব’ এলাকায়। ৭ম শতাব্দীতে এই এলাকায় ব্যাট এবং বল নামে এক ধরনের খেলা হতো। তাদের মাধ্যমে ৮ম শতাব্দীর আরও কিছু পরের সময়ে খেলাটি পারস্যের দিকে প্রচলিত হতে থাকে। ইউরোপে খেলাটির প্রচলন সম্পর্কে জানা যায়, ১০ম শতাব্দীর আগে প্রাচীন ভারতীয় মরুভূমিতে বসবাসকারী ‘নরম্যাডিক জিপসি’রা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যায় এবং সেখানে দিয়ে তারা তাদের মধ্যে প্রচলিত এই খেলাটি খেলে থাকে। তাদের দেখাদেখিই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয়। বল নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খেলা প্রচলিত ছিল। তবে বলের সাথে ব্যাটের উদ্ভব হয়েছে দক্ষিণ ভারতে। সেখানে ব্যাটকে ‘ডান্ডা’ বলা হতো।
সাত অক্ষরের সমষ্টি ক্রিকেট যা মানুষের জীবনের সাতটি গুণের ধারক। এই সাতটি গুণের আবর্তেই ক্রিকেট নামটির উৎপত্তি।
১.C দিয়ে Concentration মানে একাগ্রতা :
ইংরেজিতে CRICKET লিখতে হলে প্রথমে আসে ইংরেজি বর্ণমালার তৃতীয় অক্ষর 'C' । এটি Concentration -এর প্রথম অক্ষর। এর অর্থ হলো একাগ্রতা। ক্রিকেট খেলার জন্য একাগ্রতার যতেষ্ট প্রয়োজন আছে। ক্ষণিকের অমনোযোগিতা বা একাগ্রতার অভাবে বিপদ হতে পারে। যে কোন খেলোয়াড় ব্যাটসম্যান, বোলার কিংবা ফিল্ডার -প্রত্যেকেরই এটার যথেষ্ট প্রয়োজন। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে তো অপরিহার্য।
২.R দিয়ে Regularity মানে নিয়মানুবর্তিতা :
পরের অক্ষর 'R' এসেছে Regularity অর্থাৎ নিয়মানুবর্তিতা থেকে। খেলায় Regularity না থাকলে শুধু ক্রিকেটই নয়, ক্রীড়াক্ষেত্রে কোনটাতেই সফল হওয়া যায় না। খেলোয়াড়দের নিয়মিত প্র্যাকটিস তাকে খ্যাতির শীর্ষে উঠতে সহায়তা করে। আর ক্রিকেট খেলায় এর প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা সবারই জানা।
৩. I দিয়ে Intelligence মানে বুদ্ধিমত্তা :
'I' নেয়া হয়েছে Intelligence থেকে। এর অর্থ বুদ্ধিমত্তা। ক্রিকেট হলো বুদ্ধির খেলা। বিশেষ করে অধিনায়ক ও বোলারদের বুদ্ধির জোরে অনেক খ্যাতিমান ব্যাটসম্যানকে অকালে উইকেট খোয়াতে হয়।
৪. C মানে Courage মানে সাহস :
তারপরের অক্ষর 'C' হলো Courage -এর আদ্যক্ষর। Courage -এর অর্থ হলো সাহস। দলের বিপদের সময় সাহসের সাথে রুখে দাঁড়ানো এবং ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারদের বল মোকাবিলা করাই সার্থকতা। ঠিক তেমনি একজন বোলার সাহসের অভাবে একজন ভাল ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে ভাল বল করতে পারে না। তাই সাহসী হতে হবে।
৫. K দিয়ে Keenness মানে বিচক্ষনতা :
CRICKET -এর 'K' হলো Keenness -এর প্রথম অক্ষর। এর অর্থ বিচক্ষণতা। খেলার প্রতি মন-প্রাণ সঁপে না দিয়ে খেললে কখনও ভাল খেলা যায় না। খেলার গতি-প্র্রকৃতি বুঝে বোলারকে বল, ব্যাটম্যানকে ব্যাটিং এবং অধিনায়ককে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
৬. E দিয়ে Energy মানে শক্তি :
'E' হলো CRICKET -এর ষষ্ঠ অক্ষর। 'E' অক্ষরটি এসেছে Energy অর্থাৎ শক্তিমত্তা থেকে। ক্রিকেট খেলতে হলে প্রচুর Energy দরকার। কারণ টেস্ট ম্যাচে পাঁচদিন পর্যন্ত খেলে যেতে হয়। কখনও কখনও দলের প্রয়োজনে একটানা দুই-তিনদিন পর্যন্ত শুধু ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং করতে হয়।
৭. T দিয়ে Temperament মানে সহনশীলতা
CRICKET -এর সর্বশেষ অক্ষর হলো 'T', যা Temperament -এর আদ্যক্ষর। Temperament -এর আভিধানিক অর্থ হলো সহনশীলতা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ক্রিকেট খেলতে হয়। মাথা গরম করলেই একাগ্রতা বিঘ্নিত হয়। সেজন্য পরিস্থিতি অনুযায়ী মাথা ঠাণ্ডা রেখে ক্রিকেট খেলতে হয়।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে CRICKET -এর 'C' হলো Concentration থেকে, 'R' হলো Regularity থেকে, 'I' হলো Intelligence থেকে, 'C' হলো Courage থেকে, 'K' হলো Keenness থেকে, 'E' হলো Energy থেকে, 'T' হলো Temperament থেকে গৃহীত। একমাত্র ক্রিকেট খেলাতেই এ সাতটি গুণের পরিচয় দিতে হয়। আর এখানেই হলো ক্রিকেট খেলার সার্থকতা। এজন্যই ক্রিকেট খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
ধন্যবাদ সবাইকে। শুভকামনা বাংলাদেশকে। মাশরাফি, সাকিব ও তামিমরা সাতটি গুনের পরিচয় দিয়ে বিশ্বকাপে ভাল ফল বয়ে আনুক।
তথ্যসুত্র : ইন্টারনেট ও পত্রিকা।
ছবি : গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৪