আজ আমার প্রজাপতি মেয়েটার ৮তম জন্মদিন।
পৃথিবীতে আসবার সময় সে হাতে বো এর মতন একটা স্থায়ী দাগ বয়ে এনেছিল, তাই মা তাকে আদর করে বলতো প্রজাপতি মেয়ে। মায়েদের কখনো আহ্লাদের শেষ থাকে না, প্রথমবার মা হলে তো কথাই নেই। তাই কখনো সে প্রজাপতি মেয়ে, কখনো চন্দনা পাখি, কখনো বুবুন, কখনো টুনটুন.....এইসব আদখেলপনার শেষ নেই। আর সবার কাছে ন্যাকামী মনে হলেও মাতা কন্যার কাছে এইসব আদর আহ্লাদ স্বাভাবিক ই মনে হয়।
আট বছর আগে শ্রাবণের এই সন্ধ্যায় সে মায়ের কোল, হৃদয়, সমস্ত জীবন ভরে দিয়েছিল। পোস্ট অপারেটিভে যখন তাকে প্রথম দেখি, দেখি দুই চোখে পুরোটা মেলে দিয়ে পিটিশ পিটিশ করে এদিক ওদিক দেখছেন তিনি। দৃষ্টিসীমা তার অনেক ছোট জানি তবু তার বিস্ময়মাখা মুখ আর চোখের নড়াচড়া বেশ লেগেছিল। পৃথিবীতে আসবার আগের সময়গুলোতে মা আর তার মাঝে কত কত কথা হোত! মা তাই তাকে কাছে নিয়ে বললেন, বাবুসোনা, এই যে মা তোমার কাছে। জন্মাবার আগে জানা ছিলনা শিশুটি ছেলে কি মেয়ে তাই তাকে ডাকা হত বাবুসোনা বলে।
মেঘে মেঘে বেলা কত হয়ে গেল! আট আটটি বছর পেরিয়ে গেল! ছোটবেলায় খুউব শান্ত ছিল। চোখ দুটো ছিল এমন মনে হত এই বুঝি ঘুম থেকে উঠল। আমি বলতাম আমার ঘুম ঘুম চাঁদ। দিন দিন খোলস পাল্টাচ্ছে, কথা বলতে শিখছে, বুদ্ধিদীপ্ত দুষ্টুমি তার স্বভাবজাত, এত রসবোধ কি করে তার মাঝে এল তা আমি ভেবে পাই না।
ইয়া লম্বু হয়েছে এই আট বছরে। যারা পুচকু একটা জাফনাকে এতদিন দেখেছে তারা নির্ঘাত অবাক হবে। বড় হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ভাল লাগে না আমার, শুধু বলি এত তাড়াতাড়ি বড় হও কেন!
ও কোল ঘেষে আরো কাছে এসে অনেক খানি আদর মিশিয়ে বলে কি হয় তাতে?" লম্বু আর হাতে পায়ে বড় হলে কি হবে, ফোনে যখন কথা বলে তখন মনে হয় নাহ মেয়েটা এখনো ছোটই আছে। কন্ঠ এখনো শিশুর মতনই।
জাফনা আট বছর হয়ে গেল! স্বল্পভাষী মেয়েটা এখন হাত পা চোখ মুখ নেড়ে চেড়ে আমাকে ঘটে যা্ওয়া কোন ঘটনা শোনায়। আমি কতটুকু শুনি বা না শুনি অবাক হয়ে ওর হাত পা নাড়ানো দেখি, ওর চোখের কথা বলা দেখি......আর ভাবি ইশ মেয়েটা বড়ই হয়ে গেল।
জাফনাকে নিয়ে দেয়া আগের একটা পোস্ট: স্বর্গের প্রজাপতির মর্তে আগমন