চলল ছোট ছোট গ্রপে আড্ডা...এক এক গ্রপের আড্ডার বিষয় এক এক রকম, নানা দিকে মোড় নিচ্ছে...বাঙালীদের মতন এখানেও মহিলাদের সাজুগুজু, অন্য মেয়েরা কি করছে, বাচ্চারা কি করছে না করছে এইসব ই আড্ডার বিষয়.......আবার যখন কলিগরা একসাথে বসছি, দেখা যাচ্ছে কাজ নিয়েও তুমুল আড্ডা...নিএল এর ছেলে মেয়েরা সামনে বিয়ে করবে....এসব নিয়েও কথা হয়..........চিরাচরিত পিতা মাতার উতকন্ঠা দেখি সন্তানের সংসারের সুখ সম্ভাবনা নিয়ে.........মানুষ আসলে একই...সে যে দেশেরই হোকনা কেন।
এর মধ্যে চলছে হালকা খাওয়্ দাওয়া...এক সময় ডিনার শেষ হোল...আরো আড্ডার পর নিএল আমাদের পৌছে দিল মোটেলে, বাইরে বেড়িয়ে বুঝলাম বেজায় ঠান্ডা পড়েছে...এরপর থেকে দেখেছি বিকেল নামতেই টুউম্বাতে শীত নেমে আসে, মেলবোরন এর মতন!
পরদিন সকাল থেকেই মূলত শুরু হয় আমাদের কাজ, প্রথম দুতিন দিন আমরা এখানকার ক্রপিং সিস্টেম সম্পরকে একটা ধারনা নেব...তাই মাঠে মাঠে ঘুরতে হবে। মাঠে মাঠে ঘোরই তো আমাদের কাজ, তাই ভালই লাগে..প্রথমেই সিএসআইআরও এরে একটা জটিল একসপেরিমেন্ট দেখি...মুগ্ধ হবার মতন। এত এত টাকা এরা খরচ করছে, তারপরও বলছে বাজেট কম...অথচ আমরা কাজ করতে চাইলে শুধু বাজেট কাটে...গরীব দেশ বলে আমাদের কাজেও বাজেট পাইনা.
বাংলাদেশের মতন এখানেও রিসারচার রা কৃষক সিলেক্ট করে, তাদের মোটিভেশন করে তাদের প্লটে এক্সপেরিমেন্ট অথবা ডেমোনসেট্রশন করে।
সরগাম আমি এই প্রথম দেখলাম, দেশে নাকি এখন একটু একটু হচ্ছে, তবে এখানকার সরগাম মূলত পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে। সরগামের পাশেই আছে তুলা..........এখানে দুটো ফসল পাশাপাশি লাগানো.......যাতে একটা কাটা হয়ে গেলে অন্যটা মাঠে থাকে.......এতে করে মাঠ কখনোই পুরোটা খালি থাকবে না, যার ফলে বৃষ্টি হলে মাটির ইরোশন হবে না, কারন এলাকাটা পাহাড়ী ঢালু.......দারুন আইডিয়া...
এই প্রথম তুলার ক্ষেত ও দেখলাম..........তুলার ফুল এবং বীজটা ফেটে তুলা বেড় হয়ে আসা....অসাধারন! মেলবোরনের বাসায় এসে জাফনাকে দেখানোর পরে সেও খুব মজা পেল এবঙ পরদিন তুলার ফুল এবঙ তুলা একে ফেলল.......তার যা কাজ আরকি!
পরদিন অবশ্য বড় বড় কৃষকদের দেখা পেলাম........এরা এত বড় কৃষক, আসলে কৃষক না বলে এদের এগ্রোবিজনেসমেন বলা ভাল...এক এক জন বিশাল বিশাল জমির মালিক....তাদেরই জমিতে দেখলাম....যেদিকে দুচোখ যায় মুগডালের ক্ষেত..............অথবা দিগন্ত বিস্তৃত তুলার ক্ষেত...........এ যে কি অসাধারন দৃশ্য!
তবে এখানে বৃষ্টি খুব কম হয়, তাই পানি ধরে রাখবার জন্য বিশাল বিশাল পুকুর করে রেখেছে...নাম দিয়েছে রিঙ টেংক...এখানে মটির নিচের পানিও আছে তবে সরকার ব্যবহারের লিমিট ঠিক করে দিয়েছে......যা এলকেশন, তারও পঞ্চাশ থেকে আশি ভাগ শুধু ব্যবহার করতে পারবে..........যাতে আগামী একশত বছর পরের জেনারেশনও পানি পায়...কি পরিমান দূরদরশী পরিকল্পনা ভাবা যায়! অন্তত আমাদের দেশের সাথে তুলনা করলে!
বৃষ্টি কম হবার কারনে বিজ্ঞানীরা এখানকার কৃষকদের শিখিয়ে ছেড়েছেন মাটির কনার ফাকে ফাকে লুকিয়ে আছে যেটুকু পানি তা দিয়েই তারা একটা কি দুটো ফসল করতে পারবে.........কৃষকরা্ও এখন এই ভাষাতেই কথা বলে যেটা আমার জন্য ছিল বিরাট বিস্ময়! আমাদের গবেষকদেরই এই কথা বুঝাতে গেলে পারবো না.........কৃষক তো অনেক দূরের কথা, তবে আমাদেরও মনে হয় বেশী দুর নেই সেই দিনের...তাই ভাবনার অথবা কাজের অনেক খোরাক পা্ওয়া গেল...
এরপর চলল আরো কিছু টেকনিক্যাল কাজ.............ল্যাব ঘুরে দেখা...........দুনিয়ার যত আধুনিক যন্ত্রপাতি....মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখলাম আর ছবি তুললাম.........থাক, নিজের দেশের সাথে আর কি তুলনা করবো!
আগের পোস্ট
রোমাঞ্চকর ভ্রমন...স্বপ্নের দেশ অস্ট্রেলিয়াতে
ব্রিসবেন থেকে টুউম্বা পাহাড়ের কোলে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৫:১০