এর মাঝে ব্লগার আরিয়ানা সিঙ্গাপুর থেকে ব্রিসবেন এ চলে গেল তল্পিতল্পা সহ.....কি কাকতালীয় ব্যপার! গেল বছর জাফনা আর আমি যখন ফিলিপাইন গেছিলাম আমাদের অনেক প্লান ছিল আমরা সিঙ্গাপুর এ আরিয়ানার ওখানে ধুমসে বেড়াবো.......শেষমেসসেটা করতেই পারলাম না........সেই আফসুস থেকে মুতক্ত পাওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা দেখে আমি হড়বড় করে আরিয়ানাকেও খবরটা জানিয়ে দিলাম......শুরু হোল আমাদের গাছে কাঠাল গোফেঁ তেল দেয়া..........
এক সময় ডনের কাছ থেকে মেইল আসা শুরু হোল.....সে কি উত্তেজনা মনে মনে! অষ্ট্রেলিয়াতে আমার একগাদা ভাইবোন থাকে তাদের কাছ থেকে এত গল্প শুনেছি, এখন কাছ থেকে দেখবো, এটা যেন জাফনা এবং আমার কাছে বিরাট ব্যপার...বলে বোঝানো যাবে না....
সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া থাকে সরকারী চাকরদের প্রক্রিয়াটা আরো জটিল ভিতরে এবং বাহিরে দুদিকেই.........প্রতিটা ঘাট পেরুতে যেন প্রতিবার জ্বর এসেছে আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে....আর আমার যা স্বভাব, কিছু হলে আমি আমার চারদিকে সব্বাইকে শুদ্ধু অস্থির করে ছাড়ি........এই লিস্টটা নেহায়েত কম বড় না সবচেয়ে বেশী ছিল আরিয়ানা আর পারভীন আপু........আরো অনেকে ছিল সবার নাম বলা যাবে না....... .......আর ঝামেলাদের ও যেন হাত পা গজিয়েছিল.....কোন একটা কাজ নির্বিঘ্নে যদি হোত, এমন ছিল অবস্থা!
এইরকম বারবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে ছাড়তে এক্কেবারে "স্টেশনে পৌছাইবার পর ট্রেন ছাড়িল" টাইপের অবস্থায়........আমাদের ভিসা হোল.........মাথায় গুচ্ছের চিন্তা....২১ দিন ট্রেনিং এর সাথে ২৬ দিন ছুটি নিয়েছি....ভাইবোনদের বাড়ী বেড়াবো বলে........তো বাড়ীটা সেরকম গুছিয়ে যেতে হবে........পিএইচডির থিসিসটা অবশ্যই জমা দিয়ে যেতে হবে.........যেন দেবী দশভূজা হয়ে এক একটা কাজ পই পই করে গুছিয়ে অবশেষে আমরা ব্যগ গোছানো শুরু করলাম.........আমরা মানে জাফনা আর আমি...........জাফনা শুধূ বলে "মা, আমি খুব এক্সাইটেড"..........আমি জিজ্ঞেস করি "কেন মা?" বলে "অষ্ট্রেলিয়া যাব তো তাই!" আহা বাড়ী ময় সবাই এক্সাইটেড! এত শত কাজের চাপে কারো জন্য কিচ্ছু কিনতে পারলাম না...........(বেশ একটা ভাল অজুহাতই হোল)....
এর মধ্যে আরিয়ানার প্রতিদিন ফোন, কোথায় কেমন করে তার বাড়ীতে যেতে হবে...সব আমাকে বোঝানো...ওর উষ্ণতায় মন ভাল হয়ে যেত, আমাদের ট্রেনিং হবে ব্রিসবেনে..........খানিকটা সময় যদিও বিসবেন থেকে একটু দূরে টুউম্বাতে....তবু আমাদের প্ল্যান আরিয়ানার বাড়ী থেকে আমি অফিস করবো......কত কি যে প্ল্যান! আর বড়পার সাথে তো কথা হচ্ছেই.
অবশেষে আমরা ঢাকা থেকে প্রথমে মেলবোর্ন গেলাম....একরাত কাটিয়ে জাফনাকে বড়পার কাছে রেখে আমি ব্রেসবেনের প্লেনে চড়ে বসলাম রাতদুপুরে.........এখানেও হ্যপা.........মেলবোর্নে সেইদিনই ডে লাইট সেভিং এর জন্য ঘড়ির কাটা একঘন্টা আগিয়ে দিতে হবে........কেন রে বাবা এটা দুদিন আগে পড়ে হতে পারতো না, আমিও এলাম আর উনারা সেদিনই ঘড়ির কাটা আগাবেন! আমরা সব সন্ধ্যায় খেয়েদেয়ে ঘড়ির কাটা একঘন্টা আগিয়ে এলার্ম দিয়ে ঘুমাতে গেলাম.........রাত তিনটায় উঠে...খেয়ে দেয়ে ছুট.........ইশ কি ঠান্ডারে বাবা মেলবোর্নে, গল্পে শোনা শীতের হালকা দেখা পেলাম....
আমাদের মা মেয়েতে ২১ দিনের জন্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল............ব্রিসবেনে পৌছেই ডন এর হাসি হাসি মুখের উষ্ণ অভ্যর্থনা........সাথে ওর মেয়ে এমারেল্ডও এসেছে........মিষ্টি মেয়ে এমারেল্ড.......বারবিদের মতন সোনালী রঙের চুল তার.............ডন আমাকে খানিক ঘুরাতে নিয়ে গেল......মরটন বে তে, আমরা কফি খেয়ে গাড়ীতে উঠে বসতেই আরিয়ানার ফোন...........মরটন বে শুনেই সে হৈচৈ...........আমরা নাকি তার বাড়ীর খুব কাছেই........তবে ডন আমাকে নিএল এর কাছে হস্তান্তর করবে..........কারন নিএল আমাদের আরও কজনাকে এক সাথে করে টুউম্বা নিয়ে যাবে.........তাই আরিয়ানার সাথে দেখা হওল না..........ওরা দুজনে আবার পরদিনই সিঙ্গাপুর চলে যাবে..........নিএল এর গাড়ী আমাদের নিয়ে চলল ব্রিসবেন শহরটা একচক্কর ঘুরিয়ে পাহাড়ী শহর টুউম্বা রেন্জ এর দিকে.......
নীএল ডন এমারেল্ড এবং আমি ব্রিসবেন এয়ারনপোর্টে
(লেখাটা কয়েক পর্ব চলবে............এটা পর্ব ১)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১১:৩৯