জাফনাকে বৃষ্টিতে ভিজতে শিখিয়েছিলাম তিন বছর বয়সে। খুলনায় গ্রামটায় থাকতাম তখন। তখন বর্ষাকাল। এইরোদ, আবার এই ঝুমঝুম বৃষ্টি হোত। একদিন দুপুরে বাসায় খেতে আসবো আকাশ কালো করে আসছে, আমি তো মনে মনে খুশী বাড়ী ফেরার পথে বৃষ্টি আমার নাগাল পাবে, কায়দা করে কাকভেজা হওয়া যাবে। মাঝপথে নামলো কঠিন বৃষ্টি। আমি আরাম করে আধভেজা হয়ে বাড়ী পৌঁছলাম। জাফনাকে ভেজাতে ইচ্ছে হল। ওকে কোলে নিয়ে সোজা ছাদে, ঐ বাড়ীটাতে একটা বড় ছাদ ছিল। পিচ্চিতো আমাকে ভয়ে আকড়ে ধরে আছে। আমি কোলে নিয়ে বলছি, ওপরে মুখ তোল, মুখে বৃষ্টি লাগাও। ভয়ে ভয়ে একবার দৃবার করে মুখে বৃষ্টি মাখাল। এরপর ভয় ভাংল, মজা পেল তারপর কোল থেকে নামল। শুরু হোল তার ছোট বড় সব বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচে চলাফেরা। এমনো হয়েছে বিকেল বেলাতেও রাস্তায় ছুট ভিজবে বলে। পাগল মায়ের সীমাহীন প্রশয় ছিল এ ব্যপারে।
ঢাকায় ফেরার পর আমরা বৃষ্টি হলেই বাসার ছাদে ছুট দেই । মা মেয়ে হাপুস হুপুস করে ভিজি। আমি হয়তো গুনগুন করি আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে, জাফনাও গাইতে চেস্টা করে।এই শহরের ছাদে ভিজতে ভিজতে আমার মেয়ে ধরেই নিয়েছে বৃষ্টিতে ভিজতে হলে ছাদ চাই!
এবছর ভরা বর্ষায় আমরা ফিলিপিন চলে গেলাম। যাবার আগে যাও দৃ একটা ঝুম বৃষ্টি হোল জাফনা ভিজতে পারলো না তার চিকেন পক্স হোল বলে। বেচারাকে বাসায় রেখে আমি যখন ভিজে হাপুস হয়ে ঘরে ফিরতাম, সে কাঁদতো। ওকে আমি শান্ত্বনা দিতাম, তুমি ভাল হয়ে নাও তুমি তখন ভিজো। ফিলিপিনে যখন তখন বৃষ্টি হয়, সকালে যদিবা রোদ, বিকেল হতেই উথাল পাথাল বৃষ্টি ঝড় হোত। একদিন পিচ্চির মনে হোল সে বহুদিন বৃষ্টিস্নাত হয়না। আমি বললাম যাও বাগানে নেমে ভিজে আস। সে বলেবাগানে ভিজতে পারবো না, সবাই দেখবে। ফিলিপিনের বাসায় ছাদ নেই কেন, এই অনৃযোগে সে কি কান্না!!! আকুল হয়ে কাঁদে আর বলে আমি কতদিন ভিজি না, ফিলিপিনের পচা বাসা একটা বাসাতেও ছাদ নাই। আমি কবে বাংলাদেশে যাব? কবে বৃষ্টিতে ভিজবো? আমি বলি আচ্ছা বাংলাদেশেই ভিজিস। এরপর আবার কান্না, বাংলাদেশে গেলে আমি আর বৃষ্টি পাব না......! এরপর আমাকে বলে তুমি আমাকে রেখে বাংলাদেশে ভিজছো.......এরপর দেশে গেলে আমি তিনবার ভিজবো তুমি সিঁড়িঘরে বসে থাকবে, ভিজতে পারবে না। তিনবারের পর তুমি ভিজবে।
এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়ে সে যাত্রা কান্না থামানো গেছিল। যদিও মাঝে মাঝেই তার মনে পড়তো আর নাকি কান্না চলতো।