ইদানিং আমার নিজেকে বৃক্ষ মনে হয়। স্থবির, অচল শীতল চোখে তাকিয়ে থাকা ধু ধু অরন্যের একাকী এক বৃক্ষ। আমাদের গায়ের ধার ঘেসে বয়ে চলা শঙ্খনদীর পাড়ে একাকী নিশ্চুপ ঝুম ধরে দাঁড়িয়ে থাকা নেড়া বেলগাছটাকেও খুব মনে পড়ে আজকাল। ঝলসানো শরীর, পত্র পল্লবহীন, নিশ্চল, অনড়, বজ্রপাতে প্রাণ হারানো একাকী নিসঙ্গ বেলগাছ। একদিন গাঢ় হরিৎ চকচকে ক্ষুদে ক্ষুদে পত্ররাজীতে ভরে থাকতো যার প্রতিটি ছোট বড় শাখা এবং প্রশাখা হঠাৎ একদিন আকাশ হতে নেমে আসা আচমকা লেলিহান শিখায় থমকে গেলো তার জীবন।
বেলগাছটি তার নিথর প্রাণহীন দেহ নিয়ে তবুও দাঁড়িয়ে থাকতো। শুস্ক জৌলুসহীন চেহারা এবং জীর্ন শীর্ন শরীরেও তার ঋজুতার আপ্রাণ চেষ্টা, খুব মনে পড়ে আজকাল। কতবার নৌকা করে যেতে যেতে আমি তাকিয়ে দেখেছি সে গাছ। অন্য সব বড় বড় অশত্থ, মেহগনী আর ভুতুড়ে ঝোপ ঝাড়ের সজীবতার মাঝে ঐ শুস্কতাই কেনো যেন আমাকে বিশেষভাবে টানতো। তার দুপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রানহীন ডালগুলিকে আমার মনে হত তার দুটি মৃত বাহু। যেন আমাকে ডাকছে .... আয় আয় আয়....
কিছুদিন হলো আমি গাছটাকে বেশ কয়েকবার স্বপ্নেও দেখেছি। প্রতিবার ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠবার পর আমি বিষন্ন হয়ে যাই। বেলগাছটার পাশেই ছিলো পুরোনো শ্বসান ঘাট। আলতা সিঁদুর পরা ঘোমটা দেওয়া গায়ের বউ ঝিয়েরা গাছটির জীবিতকালে সেই পাতায় সাজাতো পুঁজোর নৈবদ্য। গাছটির মৃত্যুর পর একে একে সবাই তাকে ভুলে যেতে থাকে। খুব অল্পদিনেই আশ পাশ ঘিরে বেড়ে ওঠে ঝোঁপ ঝাঁড় আর আগাছা।
আসলেই প্রকৃতি কোনো শুন্যস্থান রাখেনা। খুব দ্রুতই পূরণ হয়ে যায় সকল শূন্যতা।
আমার শূন্যতাও কেউ মনে রাখবেনা
আমার শূন্যতা কেউ মনে রাখেনি.....
তাই
আমিও বৃক্ষ হবো,
এক টুকরো মাটি আঁকড়ে থাকা মৃত বৃক্ষ.....
শুস্ক ঝলসে যাওয়া শরীরে
টিপটিপ করে জ্বলছে একটি শিখা
তবুও তাতে আলোকিত হবে না কোনো গৃহ
কাটবেনা কোনো রাত্রী আঁধার
তাই আমি বৃক্ষই হবো.....
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩২