somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫শে নভেম্বর!! বিশ্ব নারী সহিংসতা দূরীকরণ দিবস- শুধু এ দিনটি নয়, বছরের প্রতিটি দিন নারীর প্রতি সহিংসতা - না বলুন

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনি কি দেখেছেন? গলে পড়া চোখ, কুঁচকে যাওয়া চামড়াবৃত মুখ বা কারো গলা, হাত, পা, বুক পিঠের শুস্ক দগ্ধ অনাবৃত অংশটুকু। চোয়াল গলে বেরিয়ে পড়া দাত। বিভৎস্য চেহারার এই মানুষগুলোকে কি দেখেছেন আপনি কখনও? হয়তো দেখেছেন, পত্রিকার পাতায় কিংবা টিভিতে খবরের ভিডিও ফুটেজে অথবা কোনো প্রামান্য চিত্রে, আর্ট ফিল্ম বা কোনো বিদেশী সাহায্যের ডকুমেন্টারী ছবির দৃশ্যে। হয়তো শিউরে উঠেছেন, চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বা দ্রুত আপনা আপনি চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে আপনার। আপনার কিশোরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠেছে বুক। আপনার তরুণী বোনটির কথা ভেবে কাঁটা হয়ে উঠেছেন আপনি, ভেবেছেন, এক মুহুর্তের জন্যও মাথায় এসেছে একটি বিস্ময়, এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা!

যারা অনেক সাহস সঞ্চয় করে তাকিয়ে থেকেছেন সেসব দৃশ্যে হয়তো দু'চোখে জলও গড়িয়ে পড়েছে কারো কারো। ভেবেছেন কি করে এই দুঃসহ অসহনীয় জীবন বহন করছেন তারা। শুধু সৌন্দর্য্য নয়, বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের সাথে সাথে ওদের ভেতরের মনটাও মরে গেছে অনেক আগেই। ওরা হারিয়েছে ওদের সোনালী অতীত, বর্নীল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে তারা অনেকেই। এখন ওরা পার করছে প্রথম জীবনে ফেলে আসা সকল সুন্দর পেরিয়ে এক বিভিষিকাময় দ্বিতীয় জীবন। আপনি জানেন না, এ যাতনা কারো পক্ষে অনুধাবন করাও সম্বব নয়, জানে শুধু তারাই কি যাতনা কোনোরূপ কলঙ্ক না করেও সে কলঙ্কিত জীবনের।

অথচ ওদের এই বিভিষিকাময় জীবনে টেনে আনলো কারা? আপনার আমার মতই দেখতে তারা। মানুষেরা। তাদের নাম মানুষ, মানুষের মতই দুটো হাত, পা চোখ মুখ রয়েছে তাদের কিন্তু ভেতরের মনটা মানুষের নয়। পশুর। তারা মানুষরূপী নরপশু। তারা এই নৃশংশতম এসিড সন্ত্রাসী পশু। হিতাহিত জ্ঞান, ভালো মন্দ, দোষ ত্রুটি, ন্যায় অন্যায় কিছুই যাদের হৃদয়ে কাজ করেনা। প্রতিহিংসা পরায়ন নির্বোধ এই পশুগুলিই ঘটিয়েছে এই নৃশংসতম অপরাধ।

এসিড সন্ত্রাস। বাংলাদেশের নারীর প্রতি ঘটে চলা সকল নির্যাতনের নিকৃষ্টতম রুপটিই বুঝি এই এসিড সন্ত্রাস। এ সন্ত্রাসের শিকার মূলত নারীরা। অধিকাংশ সময় প্রেম প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় অশিক্ষা কুশিক্ষা ও নীতিগত শিক্ষাহীন পুরুষ ঝলসে দিচ্ছে নারীর সুন্দর মুখ। ঘৃন্যতম এসব নরপশুদের নেই বিবেক, বোধ, লজ্জা, বুদ্ধি কিংবা জ্ঞান। এসিড হামলা ছাড়াও ধর্ষণ, পথে-ঘাটে উত্যক্ত করা, অপহরন কিংবা নারী পাচার এসবই নারীর প্রতি সহিংসতা। শুধু তাই নয় গালমন্দ, গঞ্জনা, অশালীন আক্রমন, অতি সামান্য দোষে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, মারধোর সকলই নারীর প্রতি সহিংসতার নৃশংসতম রূপগুলি। বেশিভাগ ক্ষেত্রে নারী লুকিয়ে ফেলে এসব গালমন্দ বা মার ধোরের মত নৃশংসতাগুলিকে। তবে এসিড সন্ত্রাসের শিকার মানুষগুলির সম্ভব নয় সেসব লুকিয়ে ফেলা বা স্বাভাবিক জীবনে আর কখনও ফিরে আসা। এসব মানুষগুলিকে দেখলে বোঝা যায় আমরা মানুষরুপী কিছু নরপশু মনুষত্ব ভুলে কি নিদারুন পশুত্ব ধারন করে রাখতে পারি। পশুরাও বুঝি এমন নিষ্ঠুরতা কখনও দেখাতে পারবেনা। লজ্জা পাবে তারাও।

এসিড সন্ত্রাসের কিছু কারনসমূহঃ-
১) প্রেমে প্রত্যাখ্যান
২) বিবাহ- বিচ্ছেদ
৩) জমি জমা, টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিবাদ
৪) মনোমালিন্য বা ঝগড়া-বিবাদ
৫) পারিবারিক প্রতিহিংসা ইত্যাদি
৬)যৌতুক
৭)যৌন সম্পর্কে অসম্মতি

নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো মানুষের জীবনেই ঘটতে পারে এসব কারনগুলো তথাপি এসিড সন্ত্রাসের শিকার মূলত নারীরা। কারণ আমাদের সমাজে নারীকে হেয় করা ও অপবাদ দেওয়া খুব সহজ। এতে আক্রমনকারী পূর্ব থেকেই আত্মতৃপ্তি লাভ করে ফেলে। তারা বিবেক বুদ্ধি ও ন্যায় অন্যায় জ্ঞান হারায়। বেছে নেয় এই কুৎসিৎতম পন্থা।


এসিড আক্রমণের ফলাফলঃ-
এসিড সন্ত্রাসের পরিণতিতে একজন নারীর শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিকভাবে যে ভয়াবহতার শিকার হন তা একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সহানুভূতি জানাতে পারে কিন্তু সমব্যথী হওয়া কখনও সম্ভব নয়। এসিড নামক রাসায়নিক এ দাহ্যপদার্থটির ভয়াবহতা এতটাই যে তা চামড়া ভেদ করে তা হাড় পর্যন্ত গলিয়ে দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন এর হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১২ সালের শেষার্ধ্ব পর্যন্ত সারাদেশে ৩ হাজার ৮৬টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে আহত হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৩৯২ জন। এদের প্রায় সবার নাক ও চোখসহ মুখমন্ডল এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ঝলসে যাওয়ায় জীবন এক কষ্টকর উপাখ্যানে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার এই ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি ও এসিড দগ্ধদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ ও আইন প্রণয়ন করেছে। এসিড সহিংসতা রোধে এসব আইন ও এ সংক্রান্ত বিধিমালা হলেও দেশে এসিড সন্ত্রাস সেভাবে কমেনি।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী এসিড ছোড়ার শাস্তি হিসেবে রয়েছে সর্বনিম্ন ৭-১২বছরের জেল বা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই আইন বিদ্যমান থাকলেও অনেক সময় আইনের অপর্যাপ্ততা ও প্রয়োগ না করার কারনে এসিড নিক্ষেপকারী দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৩০ভাগ এসিড নিক্ষেপকারী দোষী স্বাব্যস্ত হলেও উচ্চাদালতে তাদের আপিলের কারনে দণ্ড স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে প্রায় ৩০০ টি মামলা নিম্ন আদালতে প্রক্রিয়াধীন আছে। পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতি ও তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারনে অধিকাংশ মামলা যথাযথ ভাবে তদন্ত করা সম্ভব হয় না। ফলে এসিড নিক্ষেপকারী ছাড় পেয়ে যায় ও বাদী উপযুক্ত বিচার পায় না।


এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এ এস এফ)
বাংলাদেশে সরকারী সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে এসিড আক্রান্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য যে প্রতিষ্ঠানের কথা অবশ্যই বলা উচিত তা হল এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন( এ এস এফ)
এ এস এফের প্রতিষ্ঠার আগে এসিড হামলায় আক্রান্তদের চিকিৎসার ও পুনর্বাসন এবং এসিড সন্ত্রাসের প্রতিরোধের জন্য কোন সমন্বিত উদ্যোগ ছিল না। ফলে বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাস ব্যপক বিস্তৃতি লাভ করে। প্রথমদিকে কিছু এনজিও বিচ্ছিন্নভাবে এসিড আক্রান্ত নারীদের আইনি ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান শুরু করে। কিন্তু তা ছিল অপর্যাপ্ত, নির্যাতিত নারীদের জন্য সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রটিই ছিল আক্রান্তদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। একজন এসিড আক্রান্তকে যতই সুযোগসুবিধা ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হোক না কেন তাকে সাধারণ সমাজে সুস্থভাবে বাঁচার সুযোগ না করে দিতে পারলে প্রকৃত সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। এই চিন্তাধারা থেকেই কেবলমাত্র এসিডকে উপলক্ষ করে একটি স্বাধীন ও স্বাবলম্বী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। তাছাড়া তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসার সুব্যবস্থাও ছিল না আর এসিড সহিংসতার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের উদ্যোগ ছিল খুবই সীমিত।
এই প্রেক্ষাপটের এক পর্যায়ে ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউনিসেফ প্রণীত একটি প্রতিবেদনে এসিড হামলায় আক্রান্তদের সাহায্য এবং পুনর্বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রোধকল্পে এ ধরনের একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সুপারিশ করা হয় এবং পাশাপাশি এর অপরিহার্যতার প্রতিও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় CIDA (কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) এবং ইউনিসেফ একসাথে কাজ করা শুরু করে। এসময় কয়েকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনতে হয় -
এসিডদগ্ধ ও তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা।
আক্রান্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করা।
এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় রেখেই পরবর্তী বছরের মে মাসে এ এস এফের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অনেক আত্মনিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক এবং ট্রাস্টিদের প্রভূত সহযোগিতা ছিল।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে সংঘটিত প্রতিটি এসিড হামলার ঘটনা রেকর্ড করে ৷ সংগৃহীত প্রতিটি সহিংসতার ঘটনার বিরুদ্ধে জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে, ২০০২ সালে সরকার দুইটি আইন জারি করে -একটি হলো এসিডের সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, এবং অন্যটি হলো এসিড নিক্ষপকারীদেরকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের জন্য ৷
এই আইনগুলো এবং ফাউন্ডেশনের গণসচেতনতা কর্মসূচিকে ধন্যবাদ, এসিড হামলার সংখ্যা ২০১১ সালে ৮৪তে নেমে এসেছে, যা ২০০২ সালে ৪৯৪ ছিল ৷
এসিডে ঝলসে যাওয়ার চিকিৎসায়, কয়েক বছর ধরে কয়েকবার অপারেশন করানোর প্রয়োজন হয়, যা ব্যয়বহুল ৷ ফাউন্ডেশন ঢাকায় একটি হাসপাতাল পরিচালনা করে থাকে যেখানে চারজন পূর্ণ-কালীন ডাক্তার রয়েছেন ৷ সেই সাথে, ঢাকার নেতৃস্থানীয় হাসপাতালগুলোর চারজন প্লাস্টিক সার্জন ভিকটিমদের জন্য স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে থাকেন ৷এ প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা, বাড়ি: ১২, সড়ক: ২২, ব্লক: কে, বনানী, ঢাকা, বাংলাদেশ।
এএসএফ পাঁচটি ইউনিটের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে—
১) নোটিফিকেশন ইউনিট: এসিড হামলার ঘটনা বাংলাদেশের যে স্থানেই ঘটুক না কেন, এএসএফ যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানতে পারে ও রেকর্ডভুক্ত করতে পারে এবং রিপোর্ট পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেন এসিডদগ্ধ ব্যক্তিকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে পারে।

২) মেডিকেল ইউনিট: আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব এএসএফের হাসপাতাল জীবনতারায় স্থানান্তর করে। ২০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়েছে দেশে-বিদেশে পাওয়া সর্বোন্নত চিকিৎসা ও নার্সিং কেয়ার ব্যবস্থা।

৩) আইনি সহায়তা ইউনিট: এ ইউনিট মামলাগুলো সহযোগী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে মামলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে, আক্রান্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং মামলার গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের ও তাদের পরিবারের কাছে ব্যাখ্যা করে। নিয়মিত আইন ও আইনি পদক্ষেপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে।

৪) সামাজিক পুনর্বাসন ইউনিট: এসিড-আক্রান্তদের পরিবারকে তাত্ক্ষণিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া, আক্রান্ত ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বৃত্তি দেওয়া, দক্ষতা উন্নয়নমূলক ও কাজভিত্তিক প্রশিক্ষণের আয়োজন, আক্রান্তদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন।

৫) গবেষণা, অ্যাডভোকেসি ও প্রতিরোধ ইউনিট: ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এসিড-সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ নিয়ে এক বর্ণাঢ্য ‘পুরুষদের শোভাযাত্রা’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এএসএফের এসিড অপরাধ দমন প্রচারাভিযানের সূচনা হয়। প্রথম আলো ও এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল।

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য তারা নিয়মিত আয়োজন করে চলেছে সভা, সেমিনার ও কর্মশালা।
এসিড-সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে ইস্যুগুলোকে এই ইউনিট বিবেচনা করে তা হলো, এসিড-সহিংসতা সম্পর্কিত আইনের প্রচার, এসিড অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, বিনা লাইসেন্সে এসিড বিক্রি প্রতিরোধ ইত্যাদি। যোগাযোগ উপকরণ; যেমন—পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার, তথ্যপুস্তিকা, নিউজ লেটার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড তৈরি এবং জাতীয় থেকে তৃণমূল অবধি এসব উপকরণের বিতরণ চলছে।
এ ছাড়া জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল ও জেলা এসিড নিয়ন্ত্রণ কমিটি, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর সঙ্গে ফলদায়ক লবি গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ ইউনিট কাজ করে চলেছে।


আমি এতক্ষন বলেছি শুধুমাত্র নারীর প্রতি এসিড সন্ত্রাসের বিভৎস্য দুঃসহ জীবনের ভয়াবহতার কথা। এ ছাড়াও সারা বিশ্বের কোথাও কোনোখানেই আসলে নারীরা নিরাপদ নয়। তাদের প্রতি অহরহ যে নৃশংসতা, নির্মমতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে তার বিভিন্ন রুপ ও প্রকারভেদ বা বর্ণনার কথা শুনে আমাদের বিবেক প্রায়ই কেঁপে ওঠে। কিন্তু কিছু নরপশুদের জন্য থেমে থাকেনা এসব বিভৎস্য কদর্য্যতা। আমি যখন এ লেখা লিখছি আমার চোখে ফুটে উঠছে আমার দেখা কিছু মানুষরূপী কিলবিলে কীটের মুখগুলো। যারা এই আমাদের বা আপনাদেরই সন্তান, কারো ভাই, মামা , চাচা বা আত্মীয় পরিজন। যাদের পরিচয় দিতে আজ আমাদের ঘেন্না হয়।


নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণ - বড় প্রয়োজন আজ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনঃ-
১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে তিনজন নারী নির্যাতিত হয়। এ ঘটনার স্মরণে ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে প্রথম লাতিন আমেরিকায় নারী অধিকার সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নির্যাতনবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর জাতিসংঘ 'নারী নির্যাতন দূরীকরণ ঘোষণা' প্রকাশ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের খসড়া অনুমোদন করে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন দূরীকরণ দিবস' হিসেবে গ্রহণ করেছে।

নারী নির্যাতন ও বিশ্ব জরীপঃ-
জরিপে জানা গেছে, বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ নারী তাদের জীবনে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
কারণগুলো-
১) পরিবারের বা খুব কাছের সদস্য দ্বারা।
২) যৌতুক
৩) ভালোবাসার ডাকে সাড়া না দিলেও নারীকে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত।
৪) স্কুল ও কলেজগামী মেয়েরা ইভ টিজিং
৫) ধর্ষন
৬) অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দেশে দেখা যায়, নারী নির্যাতনের মূল হোতা আরেকজন নারী। যেমন বলা যায়, একজন মেয়ের বিয়ের পর সর্বপ্রথম শাশুড়ি-ননদ বা কাছের মানুষের কাছেও অনেক সময় তারা নিগৃহীত হয়।
৭)এ ছাড়া গৃহকর্ত্রীর হাতে মেয়ে গৃহকর্মী নির্যাতনের কথাও সবার জানা।

মেনে নেওয়া অবিচার ও নারীঃ-
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী নির্যাতনের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না।
কারণ-
১) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্বল ও দরিদ্র নির্যাতিতরা নির্যাতনের ঘটনার বিচার চাইতে আইনের দ্বারস্থ হয় না।
২) হয়রানি ও নির্যাতনের ভয়ে ও আর্থিক সংকটের ফলে তারা নীরব থাকে।
৪) উপযুক্ত তদন্ত ও তথ্য-প্রমাণের অভাব, বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নের দুর্বলতায় বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না।
৫)এ ছাড়া নির্যাতনকারীরা আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা সহজেই পার পেয়ে যায়।
৬)তা ছাড়া অনেক নারী নির্যাতিত হয় স্বামীর দ্বারা। স্বামীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আর্থিক সংগতি ও আশ্রয় মেয়েদের কমই থাকে।
৭) মান সন্মান ও পারিপার্শ্বিকতার কথা ভেবে অনেক নারীই প্রতিবাদে সোচ্চার না হয়ে মুখ বুজে সহ্য করে।

নারীদের প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধে, নিগ্রহের হাত থেকে রক্ষা করতে জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশন রয়েছে, রয়েছে অসংখ্য প্রতিবেদন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সম্মেলনে গৃহীত পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গাইডলাইন। নামকরণ করা হয়েছে- সব ধরনের বৈষম্য ও নিপীড়নের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ গাইডলাইন। এ ছাড়া নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত, ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ২০০০ ও ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট-২০০৮, হাইকোর্ট নির্দেশিত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা-২০০৮ পাস হয়েছে।

এখন কথা হলো, এত আইন বা নীতিমালা পাস হওয়া সত্ত্বেও কেন বন্ধ হচ্ছে না নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা। তা ছাড়া দেশের নারীসমাজের আন্দোলন তো থেমে নেই।
কারণঃ-

১) যেসব নারী সহিংসতার শিকার হয়, তাদের মনে এ-সংক্রান্ত সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
২) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কিছু সদস্যের মধ্যে সততার বড়ই অভাব।
৩) যে পরিবারে নারী নির্যাতন বা সহিংসতার ঘটনা ঘটে, সেই পরিবারের শিশুরা হয়ে পড়ে নানা দিক দিয়ে অরক্ষিত। ফলে অনেক সময় তারা সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়ে।

আসুন আমরা এ ব্যাপারে আরো সচেতন হই এবং নারী নির্যাতন না করার শপথ নিই। পাশাপাশি এ অভিশাপ দূরীকরণের চেষ্টা করি। আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু আইন করেই বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য চাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

আমাদেরকে-

১) সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
২) নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার ও রাষ্ট্রকে এ ক্ষেত্রে অধিকতর আন্তরিক হতে হবে।
৩) সাধারণ নিরাপত্তা জোরদার করাটা জরুরি
৪) রাজনীতি থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দূর করতে হবে।
৫) সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনয়ন করা প্রয়োজন।
৬) নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আমাদের আরো দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হবে। এই সহিংসতা বন্ধে আমি থেকে শুরু করতে হবে। আমি, আমার পরিবার, তারপর সমাজ।
সর্বোপরি-
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ব্যক্তি থেকে সমাজ, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। এ ক্ষেত্রে নিজে নির্যাতন থেকে দূরে থাকলেই চলবে না, সেই সঙ্গে আমাদের আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে হবে। সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।

এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সচেতন নারীরা এবং তারা ক্রমাগত আন্দোলন করে যাচ্ছে। এ আন্দোলনের সঙ্গে সচেতন পুরুষরাও এগিয়ে এসেছেন। যদিও সংখ্যাগত দিক থেকে তা অনেক কম। তবে পুরুষের তথাকথিত পৌরুষত্বমূলক মনোভাবকে পরিবর্তন করে মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করার নিমিত্তে তাদের এই এগিয়ে আসা। একটা সময় ছিল নারীকে নির্যাতন করা যে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, সেটা অনেকেই জানত না। তখন নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ ছিল না বা নির্যাতনের কথা জানানোর কোন জায়গা ছিল না। এখন গণমাধ্যমের সুবাদে মানুষ এ বিষয়গুলো সহজে জানতে পারছে। যদিও তা সংখ্যায় অনেক কম। যেমন ১০০ জন নারী নির্যাতিত হলে রিপোর্ট হচ্ছে ১০ জনের। দেশের তিনটি রফতানিকারক পণ্যের অধিকাংশ শ্রমিক নারী। এর মধ্যে চা, গার্মেন্ট ও হিমায়িত খাদ্যে ৮০ ভাগ নারী শ্রমিক কাজ করেন। ৭০ ভাগ নারী কৃষিক্ষেত্রে কাজ করছেন। যদি কোন কারণে নারী শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন তবে গোটা দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে। সুতরাং নারীকে বাদ দিয়ে কোন অগ্রগতি সম্ভব নয়। নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য আমাদের শিক্ষা কারিকুলামের পাশাপাশি অতিরিক্ত ইস্যুগুলো যুক্ত করতে হবে। বেশিরভাগ পরিবারে পারিবারিক সহিংসতাকে খুব হালকাভাবে দেখা হয়। অথচ এটি যে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে সেটি অনেকেই জানেন না। এ সহিংসতা নারীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। প্রায়ই নারী শারীরিক মানসিক, অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হন। এ সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য অর্থাৎ ঘরের ভেতরে নারীর সম্মানজনক অবস্থানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা, পারিবারিক সহিংসতা যে একটি গুরুতর অপরাধ, এটিকে বোঝানো ইত্যাদি বিষয়গুলো খুব জরুরি।


নারী নির্যাতন - ভেবে দেখেছেন কি?

প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এসিড সন্ত্রাস- অধিকাংশ সময় দেখা যায় অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও বিবেক বুদ্ধিহীন কিছু নরপশু প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ঝলসে দিয়েছে কোনো মেয়ের সুন্দর মুখ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় কি পরিমান পশুত্ব এবং প্রতিহিংসা পরায়নতা কাজ করে এসব মানুষের মাঝে যারা মানুষ নামের কলঙ্ক। প্রেম প্রস্তাবে সাড়া না দেবার প্রধান কারণ ঐ পশুর অযোগ্যতা। যে মেয়েটি সাড়া দেয়নি দোষ তার নয়। বরং দোষ সেই অযোগ্য পশুটির। নিজের অযোগ্যতা সত্বেও সে অযোগ্যতার কথা না ভেবে অপরের উপর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওঠে। এই জঘন্যতম হীন অপরাধ করবার আগে নরপশুরা কখনই কি উপলদ্ধি করতে পেরেছে তারা যে মানুষ নামের পশু?

মনোমালিন্য বা ঝগড়া-বিবাদ - হতে পারে তা প্রেমিক- প্রেমিকার বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। এক সময়কার মধুর প্রেমের পরিসমাপ্তিও ঘটতে পারে একজনের মাঝে অথবা দুজনাতেই। তার মানেই কি জোর করে অপরের জীবন নষ্ট করে দিতে হবে? আমাকে কারো আর ভালো লাগছেনা, হতে পারে তার পছন্দ অপছন্দের পরিবর্তন এসেছে। তার মানে কি আমাকে তাকে জোর করে ভালো লাগতেই হবে? সে অযোগ্যতাও তো আমার।আমি তার মনের মত হতে পারিনি। অথবা আমার কোনো দোষই নেই কিন্তু তারও তো নেই তার ভালো লাগছে না আর আমাকে। এতে কাকে দোষ দেওয়া যাবে? কারুরই নয় হয়তো। দুজনের দুটি পথ আলাদা হতেই পারে। তবে এক হাতে তালি বাজেনা । একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা বা আকর্ষন হারানোতে দুজনেরই কিছু না কিছু ঘাটতি, কমতি থাকতেই পারে। সোজা ভাষায় জোর করে কিছু হয়না। তাই বলে তার জীবন তার মত আমার জীবনও আমার মতই কাটিয়ে দিতে হবে। এসব সন্ত্রাসে নিজের মনুষত্ব বিসর্জন করা যায়না।

যৌতুকের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ মানষিক বা শাররিক অত্যাচার- এই হীন মানষিকতার অবসান কবে হবে জানা নেই। কথায় কথায় গালমন্দ মারধোর এতে পুরুষের সাথে সাথে সামিল হন কিছু নারীরাও। খুব সহজেই সমাজে এ লোভ ও লালসার বীজ প্রোথিত হয়ে পড়েছে। একজন নারী যখন বঁধু হয়ে আসেন তখনও তিনি শিকার হন যৌতুকের এক সময় ছেলে সন্তানের বঁধুর উপরেও খড়গ হস্ত হতে কুন্ঠিত হন না।

পারিবারিক প্রতিহিংসা- পারিবারিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অনেকেই নারীর প্রতি সহিংস হয়ে ওঠেন । কারণ নারী সে শাররিক, মানষিক ক্ষমতায় সহজে পরাজেয় ও সামাজিকভাবে তাকে হেয় করাটা খুব সহজ। অথচ আপনি নিজের কাছে কতটা হেয় হলেন ভেবেছেন কি?

যৌন সম্পর্কে অসম্মতি বা ধর্ষন - পৃথিবীর আদিমতম প্রবৃত্তি বা পাশবিক এই প্রবৃত্তি নিরসনে আপনি নিজের কাছে কতটা ছোট হলেন? একটাবার অন্তত ভাবুন।

পরিবারের বা খুব কাছের সদস্য দ্বারা যৌন নির্যাতন- বাড়িতে শৈশবে এমন অনেক শিশু , কিশোরীরাই আছেন যারা চাচা, মামা খালু দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন। লজ্জা ও ভয়ে বেশিভাগ সময়ই লুকিয়ে রাখে তারা সেসব নির্মম নির্যাতনের কাহিনীগুলো। একটাবার ভাবুন আপনার অনাগত সন্তানের কথা। ভাবুন আপনার ছোট বোনটিকে। পারবেন কি ওদের জলেভেজা চোখ দুটো সহ্য করতে?

স্কুল ও কলেজগামী মেয়েরা ইভ টিজিং- ইভ টিজিং নারীর প্রতি সহিংসতার আরেক উদাহরন। ব্যাক্তিত্বহীন নরপশুদের সুচনাই হয় এই ইভটিজিং থেকে। এ থেকে ইভ টিজাদের আশু মুক্তির প্রয়োজন। পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ি্যে তুলতে হবে। বিশেষ করে পরিবার পারে এই নৈতিকতার শিক্ষা দিতে।

নারী যখন নারীর শত্রু- একজন মেয়ের বিয়ের পর সর্বপ্রথম শাশুড়ি-ননদ বা কাছের মানুষের কাছেও অনেক সময় তারা নিগৃহীত হয়। যৌতুক, কাজ না পারার খোঁটা, হাঁটা চলা, কথা বার্তা নিয়ে নানা প্রকার খোঁটা দেওয়া থেকে শুরু করে কখনও কখনও অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।

গৃহকর্ত্রীর হাতে মেয়ে গৃহকর্মী নির্যাতনের কথাও সবার জানা- প্রায়ই দেখা যায় সনামধন্য শিক্ষিত মানুষেরা গৃহকর্মীদের নির্যাতন করে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তারা ছাড়াও ছোটখাটো নির্যাতন, কথায় কথায় গালমন্দ, চড় থাপ্পড় এসব যেন তাদেরই প্রাপ্য এমন মানষিকতার মানুষও আমাদের সমাজে অসংখ্য ছড়িয়ে আছে।

আরও একটিবার দেখুনঃ-
দুঃস্বপ্নে সেই রাতের বিভীষিকার দৃশ্য দেখে এখনও প্রায়ই আঁৎকে ওঠেন শামিমা আকতার।

অনেক চেষ্টা করেও রিয়েল ভিক্টিমদের ছবি দিতে পারলাম না। অনেকবার আপলোড করেও মুছে দিলাম। শুধু প্রতিকী ছবিগুলি রইলো আমার এ লেখায়।

এ সকল অসুস্থ্য মানষিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে নারীর প্রতি সহিংসতাকে না বলুন! সুখী সুন্দর সুস্থ্য একটি সমাজ ও পরিবার গড়ে তুলুন। ২৫শে নভেম্বর, বিশ্ব নারী সহিংসতা দূরীকরণ দিবস- শুধু এ দিনটি নয়, বছরের প্রতিটি দিন নারীর প্রতি সহিংসতাকে - না বলুন। মানুষ হিসাবে নিজের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করুন।


সুত্রসমূহ-

এসিড সন্ত্রাস ভয়াবহতা ও প্রতিকার
এসিড সন্ত্রাস এবং বাংলাদেশের নারী সমাজ

এসিড সন্ত্রাস ও আইন

নারীর প্রতি সহিংসতা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২
৮০টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×