somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি, রোদেলা এবং এক চিমটি ভালোবাসা

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"জানো? আজকে আম্মুকে কী বলেছি?" গাড়ি থেকে নামতে নামতে রোদলো বেগম আমাকে দুই চোখ নাচিয়ে প্রশ্নটা করলো।

আমি খুব নীরসভাবে বললাম, "বলো, কী বলেছো?"

"হে: হে:... বলেছি আজকে লাইব্রেরিতে অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করবো। তাই বাসায় ফিরতে দেরী হবে।"

এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে আমরা এসেছি ব্লাফার্স পার্কে। গত রাতে নাকি রোদেলা বেগম স্বপ্নে দেখেছে টরন্টো'র লেক ওন্টারিও'র ধারে ব্লাফার্স পার্কে আমার হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই আজকে জোর করে আমাকে ধরে এনেছে এই ঠাণ্ডার মধ্যে শাস্তি দিতে।

"ওমা! দেখো দেখো কত্ত অ্যালবাট্রস পাখি! কি দারূণ!"

চলো, চলো। ওদিকটায় বসি গিয়ে। ঠাণ্ডার মধ্যে হাত ধরে জড়াজড়ি করে বসে আজকে আমরা অনেকক্ষণ প্রেম করবো। ওকে? প্রায় সবগুলো দাঁত বের করে রোদেলা তার অখাদ্য সেনটেন্সগুলো কমপ্লিট করলো।

আমি আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে বললাম, "রোদলো, আর ইউ ক্রেজি? এই পাখিগুলো পরিবেশ দূষণ করছে, বুঝতে পারছো? ওদের 'পু' এর গন্ধে টেকা দায়। আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে দেখো বসার বেঞ্চগুলো একদম ভিজে গিয়েছে। প্লিজ চলো, অন্য কোথাও বসি গিয়ে।"

রোদেলা আমার কথাগুলো কান দিয়ে ঢোকালো কিনা বুঝলামনা। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পাখি দেখছে। আর বাচ্চাদের মতো হঠাৎ হঠাৎ হাত তালি দিচ্ছে। মাথামুথা পুরাই গেলো নাকি পাগলটার?

"একটা জিনিস লক্ষ্য করেছো? পাখিগুলো কিন্তু জোড়ায় জোড়ায় আছে সব। যেমন ধরো ওই যে দুইটা পাখি। ওরা নিশ্চয়ই হাজব্যাণ্ড আর ওয়াইফ। আবার ওইদিকে দেখো ওই দুইটা অ্যালবাট্রস। ফর শিওর ওগুলো ওদের বাচ্চা।"

আমি শীতল গলায় বললাম, "রোদেলা, স্যরি টু সে দ্যাট, আমি চারিদিকে পাখির সাদা সাদা হাগু এবং বিকট গন্ধ ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছিনা।"

পকেট থেকে বেলমন্টের প্যাকেটটা বের করে কেবল লাইটারটা অন্য পকেটে হাতড়ে খুঁজছি। এমন সময় রোদেলা বেগম হুঙ্কার দিয়ে উঠলো। "এ্যাই! খবরদার বলছি। সিগারেট ধরাবেনা। তুমি একটা লায়ার! আমাকে কতবার প্রমিস করেছো যে আর সিগারেট ধরাবেনা? আর এখন বেহায়ার মতো সিগারেট ধরাচ্ছো? দাও আমাকে প্যাকেটটা। লেক ওন্টারিওতে ফেলে দেবো। আর তাছাড়া সিগারেট খেলে ধোঁয়াতে পাখিগুলোরও কষ্ট হবে।"

"বাহ! তোমাকেতো আজ অদ্ভূত সুন্দর লাগছে রোদেলা?! কই দেখি দেখি, আমার ছোট্ট পাখিটার মায়া মায়া চেহারাটা দেখিতো?!

ব্যাস কাজ হয়ে গিয়েছে। প্যাকেটের কথা রোদেলা বেগম ভুলে গিয়ে বেশ একটা লজ্জা লজ্জার হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই ফাঁকে বেলমন্টের প্যাকেটটা প্যান্টের পকেটে সেভ করে ফেললাম।

ব্লাফার্স পার্কের ভেতরে হাত ধরে হাঁটছি দু'জন। আমার চোখ অবশ্য আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। মানুষজন খুব একটা নেই। তারপরেও সাবধানের মার নেই। পরিচিত কেউ দেখে ফেলে যদি আবার! কোথাও শান্তি নাইরে ভাই। চারিদিকে এত দেশী পিপল আর পরিচিত মানুষজন! শান্তিমতো যে প্রেম করবো, সেই উপায়ও নেই।

"এ্যাই! এদিক ওদিক কী দেখছো? আমার দিকে তাকাও।"

রোদেলার তীক্ষ্ণ কণ্ঠের আওয়াজের উত্তরে অত্যন্ত নির্লিপ্তভাবে তাকালাম ওর দিকে।

"সত্যি করে বলোতো কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?" কিছু প্রশংসা বাক্য শোনার জন্যে রোদেলা বেগম মরিয়া।

"ইয়ে মানে, ভালোই ... তবে ..."

"তবে কী? বলো? বলো?"

"মাথায় এটা বস্তার মতো কী পড়েছো রোদেলা?"

"এটা বস্তা না গাধা। এটাকে বলে হিজাব।"

"হিজাব?"

"হ্যাঁ। দেখো নাই তুমি? এটা এখনকার মেয়েদের ফ্যাশন। আর তাছাড়া ইসলামেইতো পর্দা করার কথা বলা আছে।"

"ওয়েল, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তার মানে কী এই, যে তোমার ওই মাথার চারদিকে ফ্যাশনের বস্তুটাকে জড়িয়ে রেখে বাকী শরীরের বাঁকগুলো দেখিয়ে হিজাবের নামে ইসলাম পালন করছো? পর্দা যদি করতেই হয় তাহলে এইসব ফ্যাশনেবল হিজাবের নামে মাথা ঢেকে, বাকী শরীর খুলে ফাজলামি না করে বরং সঠিক পদ্ধতিতে হিজাব করাটাই কী যৌক্তিক নয়?

সামারি করলে দাঁড়ায়, তুমি মাথায় ওটা যা পড়েছ, সেটা সিম্পলি একটা ফ্যাশন ছাড়া আর কিছু নয়। এটাকে কোনভাবেই ইসলাম দিয়ে জাস্টিফাই করোনা প্লিজ। স্যরি টু সে দ্যাট তোমার এই হিজাবটাকে আমি 'ন্যাকা হিজাব' নামে ডাকি।"

আমার কথাগুলো রোদেলা বেগমের মনে ধরলোনা। বুঝলাম, তিনি ইনসাল্ট ফিল করেছেন। তিনি গোসসা করেছেন।

পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করাটা জরুরী। রোদেলার ডান হাতটা ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললাম, "গল্প শুনবে একটা?"

"না, শুনবোনা।" মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলো রোদেলা।"

"আরে শোনোইনা। এক হিজাবীকে নিয়েই এই গল্পটা। যথারীতি আমার জীবন থেকে নেয়া।" বলে শুরু করলাম আমি।

"আমি তখন থাকি মন্ট্রিয়ল ডাউনটাউনের বেরি উকাম সাবওয়ের পাশে। কাজ বলতে একটা গ্যাস স্টেশনে পার্ট টাইম দুই দিন। আর পড়াশুনাটা ফুলটাইম। তুমিতো জানোই, আমি গান পাগল মানুষ। ফাঁকে ফাঁকে গিটারটা তাই নিজের প্র্যাকটিস হবে ভেবে এক দুইজন স্টুডেন্টকে বাসায় গিয়ে টুকটাক তালিম দেই। এভাবেই চলছিল।

আমার গীটারের একটা স্টুডেন্ট ছিল। অরিজিানলি ইরানিয়ান ফ্যামিলির ছেলে। নাম আহমাদ। আহমাদ বয়সে আমার থেকে মেলা ছোট হলেও আসলে ছিল আমার বন্ধুর মতো। ওর সাথে হেন কোন গল্প নাই যে আমি করতামনা। ইভেন অ্যাডাল্ট জোক্স পর্যন্তও বাদ যেতনা। ওদের বাসায় গেলে আমাদের আড্ডাটাও জমতো ফাটাফাটি। আর ওদের ফ্যামিলিটাও আমাকে কেমন যেন আপন করে নিয়েছিল। বিশেষ করে 'আন্টি' মানে আহমাদের মা তো আমি ওদের বাসায় গেলে কি খাওয়াবেন, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে যেতেন। আহমাদের একটা বোন ছিল। প্রায় পিঠাপিঠি বয়সের শুনেছি। কিন্তু কখনো দেখা হয়নি আমার সাথে।

এভাবেই চলছিল দিনগুলো।

কিন্তু হঠাৎ একদিন রাতের খাওয়া শেষ করে বিছানায় যাবো, এমন সময় একটা কল এলো। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে শুনলাম এক নারী কণ্ঠ।

"ফোনটা রেখে দিবেননা প্লিজ।" খানিকটা অনুরোধের সুরে ভদ্রমহিলা বললেন।

"আমি কী জানতে পাারি আপনি কে বলছেন?" কৌতুহল আমার একেবারেই কম। কিন্তু এই ঠাণ্ডার রাতে বিছানা আর ঘুম আমাকে চুম্বকের মতো টানছে। এই মুহূর্তে কথা বলার মতো কোন খায়েশ আমার নেই।

"আমাকে আপনি হয়তো চিনবেননা। কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।"

"বেশ ভালো কথা। এখন কী করতে পারি আপনার জন্যে যদি অনুগ্রহ করে বলেন, তাহলে কৃতার্থ হই।" খানিকটা কড়া ভাষাতেই কথাটা বললাম ভদ্রমহিলাকে।

ভদ্রমহিলার মনে হয় গায়ের চামড়া গণ্ডারের থেকেও মোটা। খানিকটা নির্লজ্জের মতোই বললো, "আপনাকে একটা জরুরী কথা বলার জন্যে ফোন করেছি। কথাটা বলার পরেই আমি ফোন রেখে দিব।

আপনি আগামীকাল মন্ট্র-আমলাতে বিকাল পাঁচটায় থাকবেন। আমি সামনাসামনি আপনার সাথে কথা বলবো। আগামীকাল বিকাল পাঁচটা। মন্ট্র-আমলা।" ফোনটা কেটে গেল।

আমি আর কল ব্যাক করলামনা। কোন পাগল ছাগল কল করেছে কে জানে। কাল ছুটি আমার। সারাদিন আরাম করে ঘুমাবো। ফোনটাকে সাইলেন্ট মুডে দিয়ে কম্বল মুড়ি দিতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

পরদিন দুপুরের দিকে ঘুম ভাঙতেই প্রথমেই গতকালের সেই ফোন কলটার কথা মনে পড়লো। মনে কেমন যেন একটা খুঁত খুঁত শুরু হলো। আচ্ছা কে সেই মহিলা? কী বলতে চায় সে? ওই নম্বরে একটা কল দেবো কি? এইসব ছাইপাশ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো আজকেতো আমার আর তেমন কোন কাজ নেই। একবার মন্ট্র-আমলা থেকে ঘুরে এলে মন্দ কি? মন্ট্র-আমলা জায়গাটা যদিও আমার খুব একটা পছন্দের না। মন্ট্রিয়লের মানুষের আর ঘুরতে যাবার কোন জায়গা নেই বলে পাহাড়ের চূড়ার মতো এই মন্ট্র-আমলাতে গিয়ে মন্ট্রিয়ল শহর দেখে। আর এই মন্ট্রামলাতে 'রাকুন' নামের খুবই ডেঞ্জারাস এক প্রাণীর আখড়া। পুরাই ফালতু একটা জায়গা।

বিকেল পাঁচটা বাজার কিছু আগেই আমি মন্ট্র-আমলাতে পৌঁছে গেলাম। ঠাণ্ডার কারণেই বোধহয় আজ বেশি একটা মানুষ নেই।

পাহাড়ের চূড়া থেকে মন্ট্রিয়ল শহরের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ পেছন দিক থেকে একটা গলা খাকড়ানির শব্দে ফিরে তাকালাম। ঘুরে দেখি আপাদমস্তক হিজাবে ঢাকা এক মহিলা। হ্যাঁ মহিলাইতো। মহিলা ছাড়া হিজাব আর কে পড়বে? শুধু হিজাবের ভেতর দিয়ে কালো কালো চোখগুলো দেখা যাচ্ছে।

ভদ্রমহিলা কথা বলা শুরু করলেন।

প্রথমেই আমাকে সালাম দিলেন। তারপর আমি তার অনুরোধ রাখায় অত্যন্ত বিনয়ীভাবে ধন্যবাদ জানালেন।

এরপর তিনি বলে চললেন, "আমি কথা শুরুর আগে আপনাকে আমার পরিচয়টা দেই। আমি আহমাদের বোন। আমার নাম আফ্রা। আমাদের বাসায় আপনি নিয়মিত আসেন, সেটা আমি জানি। আহমাদকে গীটারের লেসন দেন। আর আমি আপনাদের সব কথাই শুনি। আহমাদের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনি। কেন শুনি? কারণ আপনাদের কথা শুনতে আমার ভালো লাগে। 'আপনাদের' শব্দটা বলা ঠিক হবেনা। বরং স্পেসিফিক্যালি আপনার কথা শুনতেই আমার ভালো লাগে। অসম্ভব ভালো লাগে। আপনার গীটার বাজানো আমার দারুণ পছন্দ। আর পছন্দ আপনার কথা বলার স্টাইল। কিন্তু কখনো সাহস করে রুমের ভেতরে ঢোকা হয়নি। তাই আপনার সাথে দেখা বা পরিচয়ও হয়নি।"

এই পর্যন্ত এক নি:শ্বাসে বলে ভদ্রমহিলা থামলেন। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম তার পরবর্তী কথাগুলো শোনার জন্যে।

খানিকটা বিরতি নিয়ে আফ্রা আবার কথা বলা শুরু করলো। "আপনাকে আমার এই ভালো লাগাটা আসলে এখন আমার কন্ট্রোলের বাইরে চলে গিয়েছে। আমি দিন-রাত শুধু আপনার কথাই চিন্তা করছি। আমি ঘুমাতে পারছিনা। খেতে পারছিনা। কোন কাজ-ই ঠিকমতো করতে পারছিনা। আল্লাহ সাক্ষী, দিন দিন আমার অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে।"

আমি আফ্রাকে থামিয়ে দিলাম। "আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?"

"হ্যাঁ, আপনার সাহায্য লাগবে আমার। আর সে জন্যেই অনেক সাহস নিয়ে আপনাকে ফোন করে এখানে কথা বলার জন্যে আসার অনুরোধ করেছি।"

খানিকটা বিরতি।

"আপনি কী আমাকে বিয়ে করবেন?"

আফ্রার শেষ কথাটা বুঝতেও আমার দশ সেকেণ্ড সময় লাগলো।

তারপর খানিকটা বিষন্ন এবং গম্ভীর গলায় বললাম, "আপনার অনুভূতিগুলোকে আমি সম্মান করি আফ্রা। কিন্তু আমি দু:খিত যে, আমি আপনার ব্যাপারে ভালোবাসা বিষয়ক কিছুই চিন্তা করছিনা এবং আপনি যা বললেন, সেই অনুরোধ রাখাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এখন তাহলে আমি আসি?"

আফ্রাকে আর দ্বিতীয় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।

এরপর সপ্তাহখানেক আর আহমাদদের বাসায় যাওয়া হয়নি।

আন্টি মানে আহমাদের মায়ের কল এলো একদিন। আমার সাথে তার নাকি জরুরী কথা আছে।

মন্ট্রিয়ল ডাউনটাউনের কাছে চায়না মার্কেটের এক রেস্টুরেন্টে বসে আন্টির সাথে বেশ সময় নিয়ে কথা হলো। নানান কথার পর তিনি আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, "দ্যাখো বাবা, তোমাকে আমরা আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারই মনে করি। আর তুমিতো আমার ছেলের মতোই। আফ্রা আমার একমাত্র মেয়ে। শিক্ষিতা এবং যথেষ্ট সুন্দরী সে। আর আমাদের আর্থিক অবস্থাও যথেষ্ট ভালো তা তো তুমি জানোই। কাজেই আফ্রাকে বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কোথায়?"

আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আন্টিকে বললাম, "আন্টি, আপনি হয়তোবা জানেননা যে, আপনাকে আমি আমার 'মা' মনে করি। আর সত্যি বলতে কী, আপনাদের ফ্যামিলিটা এ্যাত বেশি চমৎকার যে আমি সবসময়ই এটাকে আমার নিজের ফ্যামিলি ভেবে এসেছি। কিন্তু আফ্রার ব্যাপারে যা বললেন, সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন।"

আন্টি মরিয়া হয়ে প্রশ্ন করলেন, "কিন্তু কেন সম্ভব নয়? প্লিজ এতটুকু জানার অধিকারতো আমার আছে, নাকি?"

"হ্যাঁ আছে। আমি একজনকে পছন্দ করি। আর তাকে ছাড়া আমি আমার জীবনে অন্য কাউকে চিন্তাও করতে পারিনা।"

"আমি কী তার নামটা জানতে পারি?" আন্টি যেন একটা বিশাল ধাক্কা খেয়ে প্রশ্নটা করলেন।

"হ্যাঁ পারেন। ওর নাম 'রোদেলা'।"

গল্পটা এখানেই প্রায় শেষ। আমি হাসি হাসি মুখ করে রোদেলা বেগমের দিকে তাকালাম।

'তুমি একটা বিশাল বড় চাপাবাজ। জানো সেটা?" রোদেলা তার চোখগুলোকে বড় বড় করে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো। "তোমার মতো মিথ্যুক, গল্পবাজ আমি জীবনেও দেখিনি।"

"আরে আরে রেগে যাচ্ছো কেন? গল্পের শেষটা শুনবেনা? শোন শোন। না শুনলে পুরাই মিস।"

আন্টির সাথে ওইদিন কথা বলার পর আমি আর কখনো আহমাদদের বাসায় যাইনি। আহমাদ কিংবা আন্টিও আমাকে ফোন করে আর যেতে বলেননি।

এর প্রায় মাস ছয়েক পর আমার বাসায় একটা চিঠি এলো। খামের ওপরে আমার নাম, ঠিকানা। আর প্রেরকের ঘরের নামটা দেখলাম লেখা আছে 'আফ্রা'।

খানিকটা কৌতুহল নিয়েই চিঠিটা খুললাম। খুব ছোট একটা চিঠি। সামান্য কয়েকটা কথা। ওতে লেখা ছিল:

"আমি সম্প্রতি বিয়ে করেছি। আমার হাজব্যাণ্ড দেখতে আপনার থেকেও অনেক সুন্দর। অনেক হ্যাণ্ডসাম। কিন্তু সে আপনি না।"

আমি মৃদু একটু হেসে চিঠিটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে বাতাসে উড়িয়ে দিলাম।

********************************************************************************************************
ভেজা একটা কাঠের বেঞ্চে আমি আর রোদেলা পাশাপাশি বসে আছি। হঠাৎ অনুভব করলাম আমার হাতের ওপরে নরম একটা হাতের মৃদু চাপ। আমি রোদেলার চোখে চোখ রাখলাম। ভালোবাসার এই মানুষটার জন্যেই হয়তো পৃথিবীটা এত সুন্দর।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×