টেলিটক- দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত থ্রিজি ইন্টারনেট সেবাদান কারী প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই টেলিটক গ্রাহকসেবা ও নেটওয়ার্ক নিয়ে যে বদনাম কুড়িয়েছে- তাতে কোনদিনই ইচ্ছে হয়নি টেলিটকের কোন 'সেবা' গ্রহণের।
ওদিকে কথিত ফোরজি প্রযুক্তির দাবীদার দুই কোম্পানী বাংলালায়ন ও কিউবির প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল। যার ফলে বাসায় অর্থাৎ মিরপুর এলাকায় বাংলালায়নের সার্ভিস ভাল জেনে পোস্টপেইড প্যাকেজ ব্যবহার করতাম। আর বনানী অফিসে ব্রডব্যান্ড কানেকশন বাদ দিয়ে কিউবির ১ এমবিপিএস আনলিমিটেড প্যাকেজ (ওয়াইফাই ইনডোর মডেম) ব্যবহার করতাম। দুই জায়গাতেই মোটামুটি সন্তুষ্ট ছিলাম।
কিন্তু এই দেশে ভাল কোনকিছু বেশিদিন ভাল থাকে না। ৫/৬ মাস আগে থেকে বাংলালায়ন ও কিউবির নেটওয়ার্ক ও স্পিড বিরক্তিকর ভাবে কমে যায়। কিছুক্ষণ পর পর নেটওয়ার্ক হাওয়া হয়ে যায়। কিউবির ১ এমবিপিএস স্পিড নেমে আসে ৩০/৪০ কেবিপিএস এ। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে বলে দ্বিগুণ স্পিড মানে ২ এমবিপিএসের প্যাকেজ নিতে। আমি মনে মনে বলি- ওহে জোচ্চর, বাটপার কোম্পানী! তোমরা ১ এমবিপিএস দিতে পার না আবার বল ২ এমবিপিএস নিতে!
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি। বাংলালায়ন ও কিউবি যে স্পিডের প্যাকেজ অফার করে, সেটা শুধুমাত্র ডাউনলোড স্পিড। ব্রাউজিং ও আপলোড স্পিড ভয়াবহ রকমের কম! একটা হাস্যকর বিষয় হল- একদিন স্পিডটেস্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলালায়ন, কিউবি ও জিপি ইন্টারনেটের আপলোড স্পিড পরীক্ষা করেছিলাম। সেখানে বাংলালায়নের স্পিড ছিল যতদুর মনে পড়ে ৩০০ কেবিপিএস, জিপির ছিল ৬০ কেবিপিএস, আর মহান কিউবির ছিল মাত্র ৪০ কেবিপিএস। অথচ আপলোড স্পিড ডাউনলোড স্পিডের এক-চতুর্থাংশ হওয়ার কথা!
সেই সময় চিন্তা করলাম- টেলিটকের থ্রিজি নিয়ে দেখি কেমন সার্ভিস। প্রথম থ্রিজি মোবাইল ও ট্যাবে ব্যবহার করলাম- ভাল স্পিড পেলাম। তারপর মডেমে ভরে কম্পিউটারে ব্যবহার করলাম- দেখলাম মন্দ না। বরং বাংলালায়ন ও কিউবির চেয়ে সবক্ষেত্রেই ভাল। এমনকি ঢাকা থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত গাড়িতে যেতে মাঝে কিছু স্থান বাদ দিয়ে প্রায় পুরোটা পথ থ্রিজি ইন্টারনেট পেয়েছি।
দেরি না করে বাংলালায়ন ও কিউবি বাদ দিয়ে দিলাম। এই প্রসঙ্গে যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে একটা টিপস- যারা টেলিটকের একটি সংযোগ দিয়ে একাধিক ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান তারা দুটি জিনিস কিনবেন- একটা টেলিটকের থ্রিজি সিম সহ মডেম, আরেকটা টিপিলিঙ্ক বা ডিলিঙ্কের থ্রিজি রাউটার। যাদের কাছে জিপির থ্রিজি মডেম আছে তাদের আর টেলিটকের থ্রিজি মডেম কিনতে হবে না। থ্রিজি রাউটারে থ্রিজি মডেমের পোর্ট আছে। শুধু কানেক্ট করতে হয়- অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাউটার মডেমটিকে অটো নিয়ে নেয়। কখনও কখনও এপিএন, ডায়াল নম্বর বসাতে হয়। সেটা কেউ জানতে চাইলে পরে বলব। এই পদ্ধতিতে আপনি টেলিটকের সংযোগ ল্যানের মাধ্যমে ডেস্কটপে ও ওয়্যারলেস ল্যানের মাধ্যমে ওয়াইফাই যুক্ত ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইসে ব্যবহার করতে পারবেন।
যাহোক, টেলিটকের স্পিড নিয়ে এখনও আমার কোন আপত্তি নেই। মূল সমস্যা হল এদের কাস্টমার কেয়ার। আপনি জিপি সহ অন্যান্য যে কোন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের হেল্পলাইনে ফোন করে আপনার মোবাইলের রিচার্জ ব্যালেন্স ও ইন্টারনেট ইউসেজ ব্যালেন্স জানতে পারবেন। কিন্তু টেলিটক এমনই এক বিদঘুটে কোম্পানী যেখানে আপনি হেল্পলাইনে সংযোগ পাবেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, কিছু জিজ্ঞেস করলে এমন সব জবাব দিবে তাতে মনে হবে ঐ প্রান্তের ব্যক্তিটির চেয়ে টেলিটক সম্পর্কে আপনি নিজেই ভাল জানেন। এমন সব উত্তর দিবে মনে হবে উনি এই মাত্র ভূমিষ্ঠ হলেন। যদি বলেন, আমার মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটার ব্যালেন্স কত আছে বা কতটুকু ইউজ করেছি জানান। বলবে- মোবাইল থেকে ওমুক নাম্বারে এসএমএস করুন। আর এদের এসএমএসের মাধ্যেম খুব কম সময়ই আপনি সঠিক রিপ্লাই পাবেন। যেমন বলা আছে, ইন্টারনেট ডাটা ইউসেজ জানতে U লিখে 111 এ সেন্ড করুন। আপনি থ্রিজি ব্যবহার করছেন অথচ রিপ্লাই পাবেন- Sorry, there is no GPRS information in your GPRS list. এই কথা যদি হেল্পলাইনে বলেন, বলবে আমাদের কিছু করার নেই। আপনাকে এসএমএসের মাধ্যমেই ইউসেজ জানতে হবে....
এই হল আমাদের টেলিটক! আমি গত ৩ মাসে কমপক্ষে ১৫ জনকে টেলিটকের থ্রিজি সিম কিনতে পরামর্শ দিয়েছি। তবে সাথে এটাও বলেছি, টেলিটকের থ্রিজি ব্যবহার করুন, ভাল স্পিড পাবেন। তবে যদি কাস্টমার কেয়ারের আশা করেন তবে মারাত্মক ভুল করবেন!
টেলিটকের কোন কাস্টমার কেয়ার নেই। এখানো সম্পূর্ণই- SELF SERVICE!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১