১.
একটু আগে টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলে খবর ও সংবাদ পর্যালোচনা দেখছিলাম।
যথারীতি আজকের আলোচনার মূল বিষয়- বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা সংক্রান্ত।
এক ক্রিকেট বিশ্লেষক বলছেন- মাশরাফিকে নেয়া উচিত ছিল। কারণ এই মুহূর্তে শচীন টেন্ডুলকার, শেবাগ, রিকি পন্টিং- এরাও ইনজুরিতে আছেন। তারপরও তাদের দলে রাখা হয়েছে।
আরেক বিশ্লেষক বলছেন- নিউজিল্যান্ডের সাথে শেষ সিরিজে মাশরাফি ছাড়াই দল জিতেছে। তাই মাশরাফি এখন দলের অপরিহার্য সদস্য নয়। বরং আশরাফুলকে দলে রাখাই সবচেয়ে বড় চমক!
আমি বিলক্ষণ জানি, যদি ব্যাপারটা উল্টো হত অর্থাৎ আশরাফুলকে দলে না রাখা হত আর মাশরাফিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হত তাহলে এরাই বা এদের মত তথাকথিত বিশ্লেষকরাই বলতেন- আশরাফুল দেশের সেরা ব্যাটসম্যান, তাকে না রেখে নির্বাচকরা চরম ভুল করেছেন। ওদিকে মাশরাফি ইনজুরিতে আক্রান্ত। তাকে দলের বোঝা হিসেবে রাখার কি দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি।
এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র- বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা করা।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি আশরাফুল ও মাশরাফি- দুজনকেই দলের বাইরে রাখার পক্ষে ছিলাম। কিন্তু নির্বাচকরা আশরাফুল ফুলে কি মধু পান তা তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন। আমার মনে হয় আশরাফুল নায়ক শাকিব খানের মতই সাধারণ মানুষের প্রিয় 'স্টার'। একে দলের বাইরে রেখে জনরোষের কবলে পড়তে চায় না বিসিবি- অর্থাৎ এখানেও ভোটের রাজনীতি।
আর মাশরাফি দলের প্রয়োজনের সময় চাপ নিতে ব্যর্থ হয়- এটা আমার একেবারে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ।
২.
কয়েকদিন ধরেই আরেকটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আজকে দেখলাম এক ব্লগার এই নিয়ে পোস্টও দিয়েছেন। যাহোক, উনার কথারই প্রতিধ্বনি করছি।
ইদানিং টিভি এবং পত্রপত্রিকায় ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের বিজ্ঞাপন এরকম একটি শ্লোগান দেখানো হয়-
বাংলাদেশের জান
সাকিব আল হাসান
আমার মতে, এই উপমহাদেশের মানুষ বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ প্রবণ। এই বাড়তি আবেগের কারণে আমরা অর্থাৎ বাংলাদেশীরা কোন বিষয়ে সম্পূর্ণ 'প্রফেশনাল' হতে পারি না। কল্পনা করুনতো রিকি পন্টিংকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কোন কোম্পানী এরকম বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারে কি না-
অষ্ট্রেলিয়ার জান
রিকি থমাস পন্টিং
মনে আছে, গত বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া টিমকে নিয়ে মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে কিরকম বিরক্তিকর বাড়াবাড়ি! বাঘ, সিংহের সামনে থেকে কোমল পানীয় নিয়ে আসা, স্টেডিয়ামে মাঝখান থেকে ক্রিকেটারদের উদয় হওয়া ইত্যাদি নানা বিজ্ঞাপন ঘন ঘন দেখে টিভিতে বিশ্বকাপ খেলা দেখার মজাই নষ্ট হতে বসেছিল। পরে এই ইন্ডিয়া টিম বিশ্বকাপের লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া মাত্র বিজ্ঞাপনগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের এই বাড়াবাড়ি অর্থাৎ টাকা ও প্রচার আমাদের আশরাফুল, মাশরাফির পারফর্মেন্সেও প্রভাব ফেলেছে বললে ভুল হবে না। সারা দেশে দোকানে দোকানের সাইনবোর্ডে, বিলবোর্ডে এদের চাঁদমুখের ছড়াছড়ি।
সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রে আমরা আশরাফুল বা মাশরাফির পুনরাবৃত্তি চাই না। তাই সবাইকে অনুরোধ- বাড়াবাড়ি কখনই ভাল নয় এই বিষয়টি মনে রাখা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৮