কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি, বাংলা ভাষার কবি, নোবেল প্রাইজ প্রাপ্ত কবি। বাংলাভাষার প্রতি তাঁর অবদান সীমাহীন। ছোট গল্প রচয়িতা হিসেবে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাজারের মাঝে অন্যতম। কবি রবীর গান আরেক কবি সুফিয়া কামালের কাছে ছিল এবাদত তুল্য...। কবির কিছু দিক উল্লেখ করা হল:-
1.প্রজা শিক্ষায় বাধাদানে রবী
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি, বাংলা ভাষার কবি, নোবেল প্রাইজ প্রাপ্ত কবি। বাংলাভাষার প্রতি তাঁর অবদান সীমাহীন। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে তাঁর কবিতা পড়ে বড় হয়েছি। ছোট গল্প রচয়িতা হিসেবে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাজারের মাঝে অন্যতম। কবি রবীর গান আরেক কবি সুফিয়া কামালের কাছে ছিল এবাদত তুল্য...। বাংলাসাহিত্যের প্রতি তাঁর দান, তাঁর সম্ভার অতুলনীয়।
তারপরও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন মানুষ এবং একজন ভারতীয়। তাঁর লিখিত গান, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে বিগত ৪০ বছর ধরে চলে আসছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি ও জমিদার। তিনি তাঁর লেখা আমার ছেলেবেলাতে লিখেছেন, পেঠের খিদে, গায়ের জ্বর তাঁকে কখনও আক্রান্ত করেনি। বহু চেষ্টা করেও তিনি শরীরে সর্দি লাগাতে পারেন নি। খিদের অনুভূতির জন্যে না খেয়ে পালিয়েছিল বাঁচতে পারেননি; দাদীর কারনে। একটু জ্বর বা সর্দি আসার জন্যে বেশীক্ষন পুকুরে থেকেছেন, সর্দি-জ্বরতো আসেইনি উল্টো দাদী কবিরাজ ঢেকে এনেছেন নাতীকে দেখাতে। এ জাতীয় সোনার চামচ মুখে নেয়া কবির জমিদারী ছিল বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা-শাহজাদপুর অঞ্চলে, তাঁর প্রজারা প্রায় সবাই ছিলেন মুসলিম; গরীব ও অশিক্ষিত। তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার, পান বৃটিশ সরকারের আনুকূল্যতায়। এই পুরষ্কার প্রদান নিয়ে পরবর্তীতে বহু বিতর্ক শুরু হয়; ইদানীং কালেও নোবেল পুরষ্কার নিয়ে বিতর্ক চলে; তবে রবী ঠাকুরের পুরষ্কার দিয়েই এই পুরষ্কার বির্তকের অপযাত্রা শুরু হয়। তারপরও তিনি বাংলাভাষার জন্য গৌরব ও অহঙ্কার।
তিনি সাহিত্যে নোবেল পেয়ে দুনিয়াব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। আশ্চর্য হতে হয় সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার পরও তিনি তাঁর প্রজাকুল শিক্ষিত হোক তা মনে প্রাণে চাইতেন না। যার কারনে তিনি তাঁর প্রজাকুলের অচ্ছুত সন্তানদের জন্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করবে দূরের কথা নূন্যতম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেওয়ার গরজও অনূভব করেননি। ঠাকুর নিজে বলেছেন, তাঁর সকল প্রজারা খুব প্রভু ভক্ত, সরল ও সোজা প্রকৃতির। বঙ্কিম চন্দ্র লিখেছেন, “রবী ঠাকুর তাঁকে বলেছেন, ঠাকুরের প্রজারা খু্বই ভাল, কোন হট্টগোল করেনা, যথা সময়ে খাজনা পরিশোধ করে, তারা প্রভূকে প্রভূত ইজ্জত করেন। এমনকি মুসলমানেরা তাদের পয়গম্বরকে যেভাবে ইজ্জত করে, তাকেও সেভাবে ইজ্জত করে”। কথাটি বঙ্কিমের উদ্ধৃতি, রবী ঠাকুরের নয়। কথার সত্য মিথ্যার দিকে না গিয়েও বলা যায়; প্রজারা ঠাকুরকে মনে প্রাণে ইজ্জত করতে কুণ্ঠিত হতেন না এটা প্রমানিত; তবে ঠাকুর প্রজা কূলের শিক্ষার জন্য কিছু করেছেন, সীমের বিচি পরিমান অবদান তার জমিদারীর কোথাও নাই।
2.প্রজা ও কৃষক উৎপীড়ক রবী
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খাজনা তোলার জন্যে প্রথমদিকে বছরে একবার করে পাবনায় আসতেন। প্রজারা প্রভুকে পালকিতে বসিয়ে কাঁধে নিয়ে বয়ে চলত, কখনও তিনি চৌকিতে আধা হেলানরত অবস্থায় শায়িত থাকতেন, প্রজাকুল চৌকি সমেত তাঁকে জমিদারী দর্শনে নিয়ে যেতেন। কখনও তিনি নৌকায় চড়তেন; প্রজারা দুকুলে নৌকার রসি টেনে টেনে উজানে নিয়ে যেতেন। তিনি বৈশাখী বাতাস গায়ে লাগিয়ে নতুন কবিতা লিখতেন। প্রজারা তাঁকে খুশী করতে পেরে বড় আহ্লাদিত হত।
রবী ঠাকুর প্রজাদের হাজারো অনুনয় সত্বেও, সামান্য খাজনা লাঘব করেছেন এমনটি ইতিহাসে পাওয়া যায়না। বরং রবী ঠাকুরের জমিদারীতেই খাজনার পরিমান বেশী ছিল। বরং তিনি নিজে তার জমিদারীতে দু’বার খাজনা তোলার ব্যবস্থা করলেন। প্রথমবার জমির খাজনা বাবদ অর্থ উত্তোলন করা হত। দ্বিতীয়বার কালী পূজা অনুষ্ঠানের জন্য অবধারিত চাঁদার নামে দ্বিতীয় কিস্তিতে খাজনা তোলা হত। এর আগে বাংলাদেশে ঘটা করে কালীপূজা পালনের প্রচলন ছিলনা। কবি পরিবার নিজেরা বহ্ম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্বেও, বহ্ম চিন্তা চেতনার সম্পূ্র্ণ উল্টোভাবে বাংলাদেশে কালী পূজার জন্য তিনি আগ্রহী হন। বাংলাতে যাতে এ পূজা ঘরে ঘরে পালিত হয়, তার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন।
ধর্ম নিজের ব্যক্তিগত অধিকার বলে কারো এ নিয়ে সমালোচনার সুযোগ নাই। তবে ঠাকুর কালী পূজা পালনে, প্রজা সাধারণ থেকেই এই অর্থ আদায় করতেন। অনিচ্ছা সত্বেও প্রজারা অর্থ দিতে বাধ্য থাকতেন কেননা কথা না শুনলে পরবর্তী মৌসুমে চাষাবাদের জন্য জায়গা পাওয়া যাবেনা। প্রশ্নটি জেগেছে এখানে। এত আদায়ের পরেও জমিদারীতে তাঁর লাভ হচ্ছিল না। পরবর্তী কালে নিরুপায় হয়ে তার পরিবার জমিদারী বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। অথছ তাঁর জমিদারীতে খাজনা ছিল বেশী, পূজার বোনাস আয় এবং প্রজাদের খাজনা কোনদিনই বকেয়া ছিলনা।
যে কথা না বললেই নয়, ব্যক্তি জীবনে রবীন্দ্রনাথ কৃষির প্রতি খুবই আকৃষ্ট ছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান তাঁর লিখিত ‘রবীন্দ্রনাথের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ভাবনা’ বইতে উল্লেখ করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পুত্র, জামাতা ও ভাতিজাকে কৃষির উপর উচ্চ ডিগ্রী নিতে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। এই লিখায় গভর্ণর রবী ঠাকুর কৃষি ও কৃষকের প্রতি তার আন্তরিকার প্রচুর প্রমান দিতে চেষ্টা করেছেন। কৌতুহলউদ্দীপক কথা হল, রবী ঠাকুর কৃষি ও কৃষক নিয়ে যত চিন্তা করেছেন তার সবটুকু পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের নিয়েই। তার খেটে খাওয়া কঙ্কালসার প্রজাদের জন্য কিছু করতে পেরেছেন তার বিন্দু বিসর্গ তথ্য প্রমান, যুক্তি কিছুই নাই। আমার লিখার প্রশ্ন হল তিনি তার প্রজার জন্য কি করেছেন? সুতরাং একথা বলা চলে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি কৃষিতেও নোবেল পুরষ্কার পেতেন, তাহলে বাংলার অভাবী কৃষকদের খুশীর কোন কারন হতনা; যেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধাদানকারী রবী
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আপাদমস্তক একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগোষ্টির প্রতি যেমনি ছিলেন হিংসূটে তেমনি ছিলেন মারমুখো! বঙ্গ বঙ্গের বিরোধীতা করতে গিয়ে, বঙ্গ ভঙ্গ বিরোধীরা ১৯০৫ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত শুধু পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের মত সফল জনসভা করে। এসব জনসভায় হিন্দু নেতারা সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে, জনগনকে স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ করে তুলে। প্রত্যেকটি বড় বড় জনসভায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন; বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন। হিন্দু মৌলবাদীদের ক্ষোভকে আরো চাঙ্গা করতে, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগুনের মাঝে পেট্রোল ঢালার কাজটি করেন। তিনি সমবেত জনতার জন্য কবিতা লিখেন, “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”। তিনি এই কবিতা দাঙ্গা উম্মাদ মারমুখো মানুষগুলোর জন্য উৎসর্গ করেন। তারপর থেকে প্রতিটি সমাবেশ শুরুর প্রাক্ষালে এই কবিতা শুনিয়ে যুবকদের রক্তকে গরম করে দিত, যাতে তাদের মাথায় খুন ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় কলিকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ প্রান হারায়। যাদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ তথা প্রায় ৪৭ হাজার নিহত মানুষ ছিল মুসলমান। বড় পরিতাপের বিষয় ইতিহাস জ্ঞানে অজ্ঞ বাংলার মানুষ সেই কবিতাকে বাংলাদেশের শহীদ মিনারে, সামরিক বাহিনীর স্মৃতি ফলকে, অঙ্কন ও খোদাই করে কিংবা কাষ্ট ফলকে চির ভাস্কর করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চরম বাধা দানকারীদের একজন ছিলেন। ঢাকাতে যাতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা হতে না পারে সেজন্য তিনি আমরন অনশন ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন ভিসি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ মদদে পশ্চিম বঙ্গের কোন হিন্দু শিক্ষিত নেতা বাকি ছিলেন না, যারা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেননি। এই সমস্থ বুদ্ধিজীবি চিন্তাতেই সহ্য করতে পারতেন না, যে পূর্ব বঙ্গের মানুষ, যারা সংখ্যা গরিষ্টতায় মুসলিম তারাও শিক্ষিত হবে! পূর্ব বঙ্গের মুসলিম যাতে কোন ভাবেই শিক্ষিত হতে না পারে, তার যত উপায় অবলম্বন ছিল তার সবটাই তারা প্রয়োগ করেছিল। সেটা যত দৃষ্টিকটুই হোক, বাধা দিতে সামান্যতম কার্পন্য তারা করেনি। উদাহরন হিসেবে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯২৪ সালে পাটনা হাইকোর্টের কাছে হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন; কেননা তিনি ব্যারীষ্টার সাইয়্যেদ হাসান ইমাম নামের এক অচ্ছুত মুসলীমের কাছে কংগ্রেস পার্টি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।
অসম্ভব মুসলিম ও পূর্ব বঙ্গ বিদ্ধেষী এসব বুদ্ধিজীবির আচরণের কারনে, দেশটি ধর্মীয় ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। মুসলমানেরা কখনও আন্দোলন করেনি নিজেরাই ধর্মীয় ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যেতে। দ্বিজাতি তত্বের মাধ্যমে দেশ ভাগ হতে, সমুদয় মাল মসল্লা, উপকরণ যুগিয়েছিল এসব কট্টর, গোঁড়া আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত. ইসলাম বিদ্ধেষী ব্যক্তিবর্গ। আমাদের আফসোস! বর্তমানে আমাদের মধ্য থেকেই, মীর জাফর, ঘষেটি বেগমদের জম্ম হচ্ছে, তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য। ধিক্ তাদের অজ্ঞতার প্রতি।
3 জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা রবী
জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা রবী
রবী ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা..... গানটি শুনে এবং গেয়ে, সবাই ধারনা করেন তিনি বুঝি বর্তমান বাংলার মানুষের প্রতি খুবই অনুরক্ত ছিলেন। ব্যাপারটি মোটেও সত্য তা নয়, কিঞ্চিত পরিমানও নয়। পাকিস্থানের স্বপ্ন দেখা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে, বাংলাদেশের স্বপ্ন ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রেও দেখা হয়নি। তাহলে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৮ সালে বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিনা প্রশ্নটিই অবান্তর। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, তিনি কোন বাংলার জন্য কেঁদেছিলেন? যিনি পাকিস্থান জন্মেরও ৭ বছর আগে ১৯৪১ সালের ৭ই আগষ্ট মৃত্যু বরণ করেন। যখন বাংলাদেশ নামক কোন বস্তুর স্বপ্ন দেখা অবান্তর ছিল।
মূলতঃ ১৯০৫ সালে তদানীন্তন বৃটিশের ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন ঘোষনা করেন, রাষ্ট্রিয় কাজের সুবিধার্থে তথা পূর্ব বঙ্গের মানুষের সুবিধার্থে বঙ্গকে ভেঙ্গে দুভাগ করা হবে; ঢাকা হবে পূর্ববঙ্গের প্রধান কেন্দ্র। এটি কোন স্বাধীনতা কিংবা স্বায়ত্বশাসন ছিলনা, সেরেফ রাষ্ট্রিয় কাজের সুবিধার্থে এই পৃথকিকরণ। তদানীন্তন বাংলার মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসায় পিছিয়ে ছিল। তারা সবাই ছিল চাষা; তাদের উৎপাদিত পাট, চা, বেত কাঁচামাল হিসেবে তৈরী হত এবং তা কলিকাতার মিলে প্রক্রিয়াজাত হয়ে বিদেশে রপ্তানী হত। এসব শিল্প কারখানায় কলিকাতার অভিজাত হিন্দুরা চাকুরী করত। তাদের সন্তানেরা সেখানে লেখাপড়া করে মানুষ হত। অপরদিকে বাংলার চাষারা ছোটখাট মারামারি করলেও কলিকাতা হাইকোট পর্যন্ত ছুটতে হত, এতে তারা গরীবই থেকে যেত। সাধারন একটা পুস্তিকা কিংবা বিয়ের কার্ড ছাপাতে সদূর সিলেট-চট্টগ্রামের মানুষকে কলিকাতা পর্যন্ত ছুটতে হত। এতে কলিকাতায় একটি হিন্দু আইনজীবি শ্রেনীও গড়ে উঠে। যার খদ্দের ছিল বাংলার অভাবী লোকজন। তাই দেশ ভাগ হলে তাদের ভাতের অভাবে মরার ভয় ছিল।
রবী ঠাকুরের দুঃচিন্তা ছিল সবচেয়ে বেশী । কারন তারা ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের মানুষ; আর দেশ ভাগ হলে, তাদের জমিদারী পড়ে যাবে পূর্ব বঙ্গে। এতে করে পশ্চিম বঙ্গ থেকে, পূর্ব বঙ্গে গিয়ে প্রশাসনিক খবরদারী করার অতীত খায়েশ বন্ধ হয়ে যেত। তখন তাকে জমিদারী চালাতে পূর্ব বঙ্গের নিয়ম কানুন মেনে চলতে হত এবং তার জন্য দুটি পথ খোলা থাকত। হয়ত জমিদারী বিক্রি করতে হত, নয়ত পূর্ব বঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হত। এই দুইটির একটি করাও তার জন্য অসম্ভব ছিল। ফলে তার চরম স্বার্থহানীর জন্যই, হৃদয়ে বাংলার মায়া উৎড়ে উঠে। শুরু হয় চড়া গলায় পেরেশানী। এই হতাশায় তিনি ১৯০৮ সালে রচনা করেন, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি....। যে গানের সূত্রপাত হয়েছিল পূর্ব বঙ্গের মানুষদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য। যে গানটি রচনা করা হয়েছিল কবি পরিবারের জমিদারী টিকিয়ে রাখার জন্য। যে গানটি রচনা করা হয়েছিল, রক্তচোষা জমিদারের স্বার্থ সংরক্ষনে। সেই গানটিই হয়ে গেল আমাদের জাতীয় সঙ্গীত! অর্থাৎ জোতার মালা গলায় নিয়ে, জাতির গুনকীর্তন!
আফসোস আমাদের সরকার গুলো এর কোনটাই মূল্যায়ন করেনি। বর্তমান সরকার জানে গানটি খুবই ঠুনকো ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ভবিষ্যতে এটার অস্থিত্ব বিপন্ন হবে। তাই নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে সংসদে বিল আকারে সেটাকে রক্ষা করেছেন। বিলে এতই কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে, যাতে এটা নিয়ে নূন্যতম কোন কথাই তুলতে না পারে। মূলত এরাই বরী ঠাকুরের মূল উত্তরসুরী।
অন্তিম যাত্রায় রবী
মানুষ মরণশীল, পৃথিবীতে সবাইকে মরতে হয়, সে হিসেবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে কবি যে যশ, সুখ্যাতি, সম্মান নিয়ে দাপটের সাথে ঘুরে রেড়িয়েছিলেন, তাঁর অন্তিম যাত্রা হয়েছিল খুবই করুন, বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। জমিদারী এবং নোবেল পুরষ্কারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ তাঁর বিপদের দিনে কোনই কাজে আসেনি। বরং বলা যায় কৃপন স্বভাবের পুত্ররা এ অর্থ ধরে রাখার প্রতিই বেশী মনোযোগী ছিলেন।
কবির এপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে। প্রচন্ড ব্যাথায় বার বার বেহুশ হচ্ছিলেন, যখন হুশ ফিরে পাচ্ছিলেন তখন কবিতা লিখায় মনোযোগ দিচ্ছিলেন। ডাক্তার ডাকা হল, বলা হল; অপারেশন ব্যতীত কাজ হবেনা। ছেলেরা কবিকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে, কম টাকা দিয়ে কাজ সারতে, বাড়িতেই শল্য চিকিৎসক ভাড়া করে আনেন। বাড়ীর খোলা বারান্দায় পেট কাটার ব্যবস্থা করা হল। সেজন্য কবিকে কোন লোকাল এনেসথেসীয়া দেওয়া হয়নি। শুধু পয়সা কড়ি বাঁচাতেই, খোলা বারান্দায়, বিনা অবশে, শল্য চিকিৎসক এভাবে একটি জীবন্ত মানুষের পেট কাটলেন! অবশেষে সাকসেসফুল অপারেশন হল। তবে কবি আরো ভয়ঙ্কর ব্যাথার জ্বালায় বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। অবশেষে কবি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
পৃথিবী বিখ্যাত এত বড় মাপের ব্যক্তির কপালে শেষ জীবনে এটাই ছিল। তাঁর সন্তানেরা যেভাবে টাকার প্রতি লোভী ছিল, সেভাবে তাঁর চিকিৎসা সেবায়, ভারত সরকারের কোন মন্ত্রনালয়ও এগিয়ে আসেনি। শহরের কোন গন্য মান্য ব্যক্তিও ভূমিকা রাখেনি। কবির মৃত্যু সংবাদ মুহুর্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। দলে দলে মানুষ কবি গৃহে ভির করতে রইল। এত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা, কারো পক্ষে সম্ভব হলনা। জন স্রোতের কারনে কবি পরিবারের কেউ, লাশ নিয়ে ভাবার সুযোগ পাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত লাশ ঘর থেকে বের করা এবং শবদাহ পর্যন্ত কোনটিতেই কবি পরিবার বা সরকারী কর্তৃপক্ষের কোনই নিয়ন্ত্রন ছিলনা।
লাশ বহর যাওয়ার কালে, কেউ একজন কবির স্মৃতি, নিজের কাছে ধরে রাখার নিমিত্তে, এক গুচ্ছ দাঁড়ি তুলে নেন। এভাবে আরেকজনে তুলেন। দেখা দেখি স্মৃতি রক্ষার্থে কবির নিথর দেহের উপর আরো অনেক মানুষ হামলে পড়ে। এই জঠলার মধ্যে লাশ বহনকারীরা টাল সামলাতে পারেননি। ফলে লাশ নীচে পড়ে যায়। কবিকে যখন চন্দন চিতায় চিৎ করে শোয়ানো হল, তখন তাঁর চেহারা চেনার উপায় ছিলনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবির দাঁড়ি, মোচ, চুল, চোখের ভ্রু এমনকি হাতের লোমগুলো পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হয়। লাশটি নরম হয়ে পড়েছিল। ফটোগ্রাফার আনার পর লাশের এই করুন অবস্থা দেখে; আর ফটো না তুলে মুখে আগুন লাগানো হয়। দুর্ভাগ্য কবির! যিনি মুখাগ্নি করেন তিনি কবি পরিবারের কেউ ছিলেন না। মশাল ধারীরা নিজেদের ভাগ্যবান করার জন্য, ক্ষমতার জোড়ে একজন সেই সুযোগ গ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের প্রিয় কবি। বাংলা ভাষাকে তিনি যথেষ্ট ধনী করেছেন, পৃথিবীতে পরিচিত করেছেন। বাংলাভাষায় কথা মানুষেরা চিরদিন তাঁর কাছে ঋনী থাকবে। তাঁর ছোট গল্প, সাহিত পৃথিবীতে কিংবদন্তী হয়ে থাকবে। তাঁর প্রাপ্য সম্মান তাকে দিতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে যেটার পিছনে কোন অবদান রাখেননি, সেটা তাঁর নামে চালিয়ে দেওয়া বড় অন্যায় গর্হিত কর্ম। জীবনের একটি ছোট্ট স্বীকৃতি দিতে গিয়ে, তার সেরা কীর্তিগুলোকে করা হচ্ছে উপহাস আর তামাসা। এর জন্য দায়ী কে?