মাথায় টুপি,মুথে দাড়ি সুন্নতি লেবাসপরা একজন মানুষ আমাদের দেশে অনেক শ্রদ্ধা ও সম্নানের পাত্র।কিন্তু যখন দেখি তাঁরা কোন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তখন আমার গাঁ শিউরে ওঠে এই ভয়ে যে, তাঁদের বা বিরোধীপক্ষের সামান্য কিছু ভুলের কারনে না জানি তাদেরকে কি অপমান করা হয়। এমনকি যাদের অন্তরে তাদের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা আছে তাদের পক্ষ থেকেও বাধ্য হয়ে।সুতারাং আমাদের এমন কোন কর্মকান্ড করা যাবে না, যাতে দেশে সিফফিনের(ভুল বোঝাবুঝির কারণে মসুলমানদের ভিতর সৃষ্ট)যুদ্ধের মতো একটি যুদ্ধ বাধে বা সাধারণ মানুষদের সাথে আলেমগনের সম্পর্কহীনতা ও তাদের প্রতি খারাপ ধারনা তৈরি হয় সাধারন মানুষের।এজন্য (জাতির এই সংকট কালে) আমাদের উচিৎ এ সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কি আমল করেছেন, তা দেখা।
এক একজন উম্মতের প্রতি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর কি পরিমান দয়া ও ভালোবাসা ছিল, হোক না সে ইহুদী বা নাসারা, উদাহারণ স্বরুপ- একজন ইহুদীর লাশ দেখে তিনি ক্রন্দ্রনরত অবস্থায় যে মন্তব্য করেছিলেন সেটা থেকেই তো তার প্রমান পাওয়া যায়।
হযরত উমর রাঃ - এর যামানায় তাঁর পরিচিত একজন মুরতাদ (ধর্মচুত্য) হয়ে অনেক দুরের দেশে চলে গেলে তার হেদায়েতের জন্য তিনি মরুভূমির বহু পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্টে একজনকে পাঠিযেছিলেন দাওয়াত দেবার জন্যে।সে যখন হযরত উমর রাঃ এর রাজত্ব এবং তাঁর মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলেন ইসলাম গ্রহনের বিনিময়ে তখনও দূতের মুখে একথা শুনে হযরত উমর (রাঃ) আবার দূতকে একথা বলে পাঠালেন যে, মেযেকে দিতে রাজি তবে ইসলামী খেলাফত তো আমার একার ব্যাপার না বরং পরামর্শের ব্যাপার, পরামর্শ করে দেখা যেতে পারে। দুত আবার গেল শত শত মাইল দুর্গম মরুভুমি পাড়ি দিয়ে তাকে বোঝানোর জন্যে, মহান রবের দিকে দাওয়াত দেবার জন্যে-হত্যার জন্য নয়।দেখেন এক এক জন মানুষের ব্যাপারে তাঁদের দিলে কি পরিমান মহব্বত ছিলো যা তারা শিখে ছিলেন তাদের ও আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)এর কাছ থেকে। সমস্ত নবীদের মেহনতের বুনিয়াদ বা ভিত্তি ছিলো উম্মতের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আল্লাহতালার পরিচয়, মৃত্যুর পরের জীবন এবং আল্লাহর হুকুম পালনের ভিতরে যে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা রযেছে এসব কথা খুলে থুলে বলা।উম্মতের দ্বারে দ্বারে না গেলে তাদের ইমান আমল যে কোন পর্যায়ে নেমে গেছে তা বোঝা যাবেনা এবং তাদের জন্য(নবীওয়ালা) ফিকির মহব্বত-ভালবাসা আসবে না,যা অন্তরে বিদ্যমান থাকা আলেম সমাজ ও দীনের পথপ্রদর্শণকারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।এভাবে মেহনত করলে উম্মতের আসল অবস্থা প্রকাশ পায়, যে তারা ইমান আমলের কোন পর্যায়ে পৌছেছে।(অন্য সবকিছু ভুলে গেলেও - আমার উপরোক্ত দুটি কথা মেহের বাণী করে মনে রাখবেন চিরদিনের জন্য।)
মিশর,স্পেন নয় শুধু যদি রাশিয়ার ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই যা ছিল হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) ইবনে মুবারক (রহঃ) সহ অনেক জগতবিখ্যাত ইমামগনের জন্মস্থান ও দ্বীনের মেহনতের স্থান।তাহলে আমরা দেখতে পাবো যে এমন একটা সময় সেখানে ছিল যে, যখন মসজিদ ছিলো মুসুল্লিদের দ্বারা পরিপূর্ণ, মাদ্রাসা ছিল তালেবে এলেম (ছাত্রদের) দ্বারা ভর্তি।সারা দুনিয়া থেকে মানুষ সেখানে যেত দ্বীন এলেম শেখার জন্য।সাধারন মানুষের কাছে আলেমগন ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন। কিন্তু পরবর্তীতে কমিউনিষ্টরা সাধারণ মানুষদের কাছে গিয়ে এমন ভাবে বুঝিয়েছে হুজুর ও আলেমদের বিরুদ্ধে যে এক পর্যায়ে ঐ সব সাধারণ মানুষ জন আলেমদের ধরে ধরে নিষ্টুরতার সহিত হত্যা করেছে।বাইরে থেকে বোঝা যায়নি উম্মতের আসল অবস্থা যে তাদের ইমান আমল কোন পর্যায়ে পোউছেছে- কারণ উম্মতের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাওহীদ রিসালাত আথিরাতের মেহনত হযনি যা সমস্ত নবীদের মেহনতের ভিত্তি ছিলো।
আবু জেহেল থেকে শুরু করে বাদশা নাজাসী প্রর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি/গোত্র প্রধান/দেশের বাদশাদের দরবারে হুজুর (সাঃ)প্রথমে তাওহীদের বা ইসলামের দাওয়াত পাঠাতেন অথবা নিজে গিয়ে দাওয়াত দিতেন কারণ এর ভিতরে এতো শক্তি লুকায়িত আছে যে, বলা হয়ে থাকে-দাওয়াত আর দোয়া এই উম্মতের হাতিয়ার।এটা আমাদের ভুলে গেলে চলেবে না। সহীভাবে(তাওহীদ রিসালাত আখিরাতের) দাওয়াত দিলে আল্লাহতাআলার সাহায্যে দাওয়াতদানকারী ব্যক্তির পক্ষ হয়ে যায়।
আল্লাহতালা কুরাআন শরীফে বলেন -
“যাহারাল ফাছাদি ফিল বাররি ওয়াল বাহরি বিমা কাছাবাত আইদিন্নাস্”
জলে স্থলে প্রত্যেক জায়গায় তোমাদের যে বিপদ মুসিবত পেরেসানি আসে - সব তোমাদের হাতের কামায়, গোনাহের ফসল।
সত্যই কিন্তু তাই । এজন্য আগে আমাদের দেখা উচিত আমার ব্যক্তিগতভাবে এমন কোন্ গোনাহ হচ্ছে কিনা যা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আযাব আসার কারণ হয়।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আমাদের করণীয় সম্পর্কে আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে যা এসেছে তা নিচে বর্ণিত হলো-
তছলিমা নাসরিন থেকে শুরু করে আজ অবধি এই দেশে যারা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে বুঝে নাবুঝে কটুক্তি করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে এতো হইচই না করে যদি আমরা তাদের কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বলতাম যে হে মা/হে আমার বোন এটা তো মুসলমানের কথা নয়।আল্লাহ ইসলামে নারীদের এতো মর্যাদা দিয়েছেন যে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” এবং “একজন সাহাবী বাবা না মা কার হক বেশি তা জানতে চাইলেন, নবীজী বললেন মা। তারপর কে? তারপর্ও বললেন মা।তারপর কে ইয়া রাসুলাল্লাহ(সাঃ) - তখন নবীজী বললেন যে বাবার হক” এসব ছোট ছোট হাদিস তো বুদ্ধিমান লোকদের বোঝার জন্য যথেষ্ট যে আল্লাহতালা ইসলামে নারীদের কি মর্যাদা দিয়েছেন। তারপর তাদের জন্য নফল আমল করে, ছদকা করে চোখের পানি ফেলে দেখিনা পরিবর্তন হয় কিনা, তাকি করেছি আমরা? ভাল ধারণা রেখেই বলছি হয়তোবা এসব করা হয়েছে কিন্তু করা হলেও খুব অল্পই হয়েছে যা এখন থেকে বাড়াতে হবে।
যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে(দ্বীনের দায়ী)তাদের ভিতর নম্রতা বিনয় এর মতো গুনাগুন গুলি খুব করে থাকা চাই-কারণ আল্লাহতাআলা হযরত মুছা ও হযরত হারুণ (আঃ) এর মর্তবাওআলা নবীদের যখন ফেরাউনের মতো যালেম (যে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল)এর কাছে গিয়েও খুব নম্রভাবে দাওয়াত দিতে বলেছিলেন- তোমরা তাকে নমৃতার সাখে দাওয়াত দিবে, হয়তো সে তোমাদের দাওয়াত/উপদেশ কবুল করতে পারে(সুরা ত্বহা ৪৪)।
আলিমুল হওয়া সত্বেও আল্লাহ তালা কেন তা পাক কুরাআনে বললেন - কারণ শুধু নবী নয় আমাদেরকেও শেখানোর জন্যে।আমাদের এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে,আল্লাহ ওয়ালাদের প্রতিবাদের ভাষা যেন দুনিযাওয়ালাদের প্রতিবাদের ভাষা ভাষার সাথে মিলে না যায়, এবং যা সাধারণ নিরীহ মানুষদের এবং দেশের অর্থনীতির উপর যুলুম অত্যাচারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আল্লাহতালা বলেন আমি কোন এলাকায় যখন আজাব পাঠানোর ইচ্ছা করি, কিন্তু যখন দেখি ঐ এলাকার মানুষজন মসজিদসমুহকে (প্রধাণত দাওয়াতের মাধ্যমে) আবাদ করে, আল্লাহর জন্য একে অন্যকে মহব্বত করে এবং শেষ রাতে উঠে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও কল্যান চাই নিজের ও মানুষের জন্য তখন আজাবকে স্থগিত করে দেই।
তাই যদি এরকম করা হতো তাহলে কেমন হতো যে আমরা সবাই আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমল করে- রোযা রেখে শত শত রাকাত নামায পরে তাহাজ্জুদে দোয়া ও কান্না কাটি করে এমন কি আমাদের ছেলে মেয়েদের এবং পরিচিতি জনদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে সারা দেশে আমলের একটা পরিবেশ (সাধারণত রমযানে যে রকম দেখা যায়) গড়ে তুলি আর দাওয়াত দেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি,তাহলে দেখেন না আমাদের এই নিরব প্রতিবাদ সারা দেশে কি পরিমান প্রভাব বিস্তার করে ও সৃষ্টির কর্তার পক্ষ থেকে কি শান্তির ফয়সালা হয।এতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ নাগরিক খুশি ও উপকৃত হবে।
তাই আসুন আমরা হরতাল নয় বরং আমল,দোয়ার ভিতরে ক্রন্দনের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে ও ব্যাপকভাবে মসজিদে মসজিদে দাওয়াতের পরিবেশ কায়েমের মাধ্যমে আল্লাহর বরত্ব ও মহানত্ব, রাসুলের মর্যাদা ও আখিরাতের কথা বিস্তারিতভাবে বলে এবং আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্য, যে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা আছে তা মানুষের দিলের ভিতর বসানোর চেষ্টা করি ও নিজেদেরকে গুনাহ থেকে বাচাই।
একজন ডাক্তার যেরকম ওষুধ সম্পর্কে ভাল গ্যান রাখেন,একজন উকিল যেরকম আইন সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন তেমনি আলেমরা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে জানেন। আমরা হয়তো ডাক্তারদের কিছু বই পত্র পড়ে ওষুধ এবং অসুখ সম্পর্কে কিছু জানতে পারি কিন্তু কখনো মেডিকেলে পড়া ডাক্তারদের মতো অভিঙ্গ যেমন হবো না ঠিক তেমনি ভাবে কয়েকটি ইসলামী বই পড়ে হককানী আলেমদের সাহায়্য ছাড়া দ্বীনের পরিপুর্ণ বুঝও আসবেনা।যেরকমভাবে একজন আলেমের আছে ঠিক সে রকমভাবে।
পরিশেষে পাঠকবৃন্দের কাছে বিনয়ের সাথে একটি কথা পেশ করছি তা হলো-আলেমগন হচ্ছেন নবীদের ওয়ারিশ, তারা হচ্ছেন দ্বীনের খুটি। খুব ছোট বেলা থেকেই তারা দুনিয়ার অনেক স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে মা বাবা থেকে দূরে থেকে অনেক কষ্ট করে পবিত্র কুরআন হাদিসের তালিম নেন। তাদের জিন্দেগী অনেক বরকতময়, তারা অনেক পবিত্র তাই তাদের সামান্র ভুল (যদি হয়েও থাকে) এর কারণে তাদের প্রতি খারাপ ধারণা রাখা বা তাদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি না করে বরং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখি। যেভাবে আমাদের কাছের কেউ ভুল করলে মাপ করে দেই নচেৎ আমাদের দ্বীন ধর্ম শুধু ধংসই হবেনা বরং আমরা আল্লাহ তালার আযাবের উপোযুক্ত হয়ে যাবো।