মধ্যরাতে আকস্মিক ঝড়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ‘২৪ জনের মৃত্যু’র খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ভোলার মনপুরায় একটি ট্রলার ডুবে খোরশেদ মাঝিসহ ১০ জেলে মৃত্যুর খবর স্থানীয় সূত্রে পাওয়া। এছাড়া মাঝিসহ অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
আক্রান্ত লোকজন জানিয়েছে, আবহাওয়া পূর্বাভাস না থাকায় শত শত ট্রলারে করে জেলেরা মেঘনা নদীতে নির্বিঘ্নে মাছ ধরার কাজ করছিলেন। এসময় বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আকস্মিকভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় পুরো উপকূলীয় অঞ্চল।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৭ জন ও ভোলার মনপুরা, চরফ্যাশনসহ আরো কয়েকটি ৫ জন ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছে।
রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় ও মোবাইলফোন কোম্পানির টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রকৃত খবর পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
হাতিয়া
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তমরুদ্দিতে একজন, জাহাজমারায় দুইজন, চরকিংয়ে একজন, নিঝুম দ্বীপে দুইজিন ও নলচিরায় একজন মারা গেছেন।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিবুর রহমান মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, ঘূণিঝড়ে ওই সব এলাকার প্রায় ১৫ হাজার কাঁচা-পাকা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “কোনো আবহাওয়া পূর্বাভাস না থাকায় সাগর ও নদীতে অবস্থানরত জেলেদের নিখোঁজ ও মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।”
তিনি জানান, হাজার হাজার গাছ উপড়ে পড়ায় উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। হাতিয়া থেকে মেঘনায় শত শত ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা কূলে ফিরে আসেনি। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল।
বিভিন্ন জায়গা থেকে নিহত ও নিখোঁজের খবর আসছে। জেলে পল্লীগুলোয় চলছে শোকের মাতম। একদিকে তাদের বসত বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে মাছ শিকারে ব্যস্ত হাজার হাজার জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
চরফ্যাশন ও মনপুরা
নিহত পাঁচজনের মধ্যে আছেন মনপুরার জেলে শাহে আলম (৩০) ও আবদুল খালেক (৩৫) ও চরফ্যাশনের আমেনা বেগম (৩২)। অন্য দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বেলায়েত, জসিম, নীরব, মালেক, হেজু, খালেক, জলিল ও খোরশেদ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নরেশ কর্মকার জানান, মনপুরায় নিহত তিনজনের মধ্যে মেঘনা নদীর মনপুরার হাজির হাট এলাকা থেকে শাহে আলম ও দাসের হাট এলাকা থেকে আবদুল খালেকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরচাপায় অপরজনের মৃত্যু হয়েছে।
চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কালাম পাটোয়ারী জানান, রাত দেড়টার দিকে মনপুরা ও চরফ্যাশনে ঝড় শুরু হয়। ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঝড়ে চরফ্যাশনের চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর পাতিলা ও মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ও দাসেরহাটসহ বেশ কিছু এলাকার আট শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘড়-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ঢালচরে ঘরচাপা পড়ে আমেনা বেগম নামের এক নারী নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ভোরের দিকে মনপুরা-তজুমদ্দিন রুটের সরকারি সি ট্রাক ও সারবাহী ১টি ট্রলার ডুবে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সন্দ্বীপ
এছাড়া চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত দুজনই নারী। তারা হলেন, সন্তোষপুর ইউনিয়নের খোদেজা বেগম (৬৫) এবং গাছুয়া ইউনিয়নের আনোয়ারা বেগম (৩০)।
Click This Link
১. ১১ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৮ ০