৫ম হিজরীতে বনুল মুস্তালিকের বিখ্যাত যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উহাতে একজন মুহাজির ও একজন আনসারীর মধ্যে পরস্পর লড়াই হইয়া গেল। সাধারণ বিষয় ছিল কিন্তু বড় আকার ধারণ করিল। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কওমের নিকট অপরের বিরূদ্ধে সাহায্য চাহিল। উভয় পক্ষে দল সৃষ্টি হইয়া গেল এবং যুদ্ধ বাঁধিয়া যাওয়ার উপক্রম হইল। এমন সময়ে কিছু লোক মধ্যস্থতা করিয়া উভয় দলের মধ্যে সন্ধি করাইয়া দিলেন। আ’ব্দুল্লহ ইবনে উ’বাই মুনাফিকদের সর্দার ও অত্যন্ত প্রসিদ্ধ মুনাফিক ও মুসলমানদের ঘোরতর শত্রু ছিল কিন্তু নিজেকে মুসলমান বলিয়া প্রকাশ করিত বিধায় তাহার সহিত খারাপ আচরণ করা হইত না। আর ঐ সময় মুনাফিকদের সহিত সাধারণতঃ এই ব্যবহারই করা হইত। সে যখন এই ঘটনার খবর পাইল তখন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শানে বেয়াদবী মূলক উক্তি করিল এবং আপন বন্ধুদের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিল, এই সমস্ত কিছু তোমাদেরই কর্মফল। তোমরা তাহাদিগকে নিজেদের শহরে স্থান দিয়াছ, নিজেদের সম্পদ সমূহ তাহাদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করিয়া দিয়াছ। তোমরা যদি তাহাদের সাহায্য করা বন্ধ করিয়া দাও তবে এখনও তাহারা চলিয়া যাইবে এবং ইহাও বলিল যে, আল্লহর কসম! আমরা যদি মাদীনায় পৌঁছিয়া যাই তবে আমরা সম্মানী ব্যক্তিগণ মিলিয়া এইসব অপদস্থ লোকদের সেখান হইতে বাহির করিয়া দিব। হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমা অল্পবয়স্ক বালক ছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইহা শুনিয়া সহ্য করিতে পারিলেন না। তিনি বলিলেন, আল্লহর কসম! তুই অপদস্থ। তোকে তোর গোত্রের মধ্যেও তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখা হয়। তোর কোন সাহায্যকারী নেই। আর মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইজ্জাত ও সম্মানের অধিকারী। রহ’মান অর্থাৎ আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতেও সম্মান দান করা হইয়াছে এবং আপন গোত্রের মধ্যেও তিনি সম্মানিত।।
আ’ব্দুল্লহ ইবনে উ’বাই বলিল, আরে! চুপ থাক। আমি তো এমনিই ঠাট্টা করিয়া বলিতেছিলাম। কিন্তু হযরত যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহু রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গিয়া বলিয়া দিলেন। হযরত উ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু আবেদনও করিলেন যে, এই কাফেরের গর্দান উড়াইয়া দেওয়া হউক। কিন্তু রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দান করিলেন না। আ’ব্দুল্লহ ইবনে উ’বাই যখন জানিতে পারিল যে, এই ঘটনা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়া গিয়াছে তখন সে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে আসিয়া মিথ্যা কসম খাইতে লাগিল যে, আমি এইরূপ কোন শব্দ বলি নাই। যায়েদ (রদিয়াল্লহু আ’নহু) মিথ্যা কথা বলিয়াছে। আনসারদের মধ্য হইতেও কিছু লোক খিদমতে উপস্থিত ছিলেন। তাহারাও সুপারিশ করিলেন যে, ইয়া রসুলুল্লহ! আ’ব্দুল্লহ গোত্রের সর্দার ও একজন সম্মানী ব্যক্তি। একটি ছেলের কথা তাহার বিরূদ্ধে গ্রহণযোগ্য নহে, হইতে পারে ভুল শুনিয়াছে বা ভুল বুঝিয়াছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাহার সাফাই গ্রহণ করিয়া লইলেন। হযরত যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহু যখন এই কথা জানিতে পারিলেন যে, সে মিথ্যা কসম খাইয়া নিজেকে সত্যবাদী ও যায়েদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিয়াছে তখন লজ্জায় বাহির হওয়া বন্ধ করিয়া দিলেন। লজ্জায় রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতেও উপস্থিত হইতে পারিলেন না।
অবশেষে সূরা মুনাফিকুন নাযিল হইল, যাহা দ্বারা হযরত যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহু এর সত্যবাদিতা ও আ’ব্দুল্লহ ইবনে উ’বাইইয়ের মিথ্যা কসমের অবস্থা প্রকাশ পাইয়া গেল। পক্ষ-বিপক্ষ সকলের দৃষ্টিতে হযরত যায়েদ রদিয়াল্লহু আ’নহুয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি পাইল এবং আ’ব্দুল্লহ ইবনে উ’বাইয়ের ঘটনাও সকলের নিকট প্রকাশ হইয়া গেল। যখন মাদীনা মুনাওয়ারা নিকটবর্তী হইল তখন আ’ব্দুল্লহ ইবনে উ’বাইয়ের পুত্র যাহার নামও আ’ব্দুল্লহ (রদিয়াল্লহু আ’নহু) ছিল এবং একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। মাদীনা মুনাওয়ারার বাহিরে তরবারী উত্তোলন করিয়া দাঁড়াইয়া গেলেন এবং পিতাকে বলিতে লাগিলেন যে, ঐ সময় পর্যন্ত মাদীনা মুনাওয়ারায় প্রবেশ করিতে দিব না যতক্ষন পর্যন্ত তুমি এই কথা স্বীকার না করিবে যে, তুমিই অপদস্থ এবং মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত। সে আশ্চার্যন্বিত হইয়া গেল যে, এই ছেলে তো সর্বদাই পিতার সহিত অত্যন্ত সম্মানসুলভ ও উত্তম আচরণ করিত কিন্তু রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মুকাবিলায় সহ্য করিতে পারিলেন না। অবশেষে সে বাধ্য হইয়া ইহা স্বীকার করিল যে, আল্লহর কসম আমি অপদস্থ আর মুহা’ম্মাদ (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মানিত। ইহার পর মাদীনায় প্রবেশ করিতে পারিল।
সুত্র: ফাযায়েলে আমাল
আমার ব্লগ বাড়ীতে সবাই কে আমন্ত্রন...
http://sowkat-mybenefactor.blogspot.com/