চিক ভাইরাস (চিক্-ভি) হলো একটি ’আরএনএ’- ভইরাস, যা প্রধানত মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মশার কামড়ে রক্তে এ ভাইরাস প্রবেশ করলে যে রোগ হয় তার নাম ’চিকুনগুনিয়া’। বর্তমানে বাংলাদেশে এটির আবির্ভাব ঘটেছে এবং ইতিমধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
এ রোগটিতে কেউ আক্রান্ত হলে তা বোঝার উপায় কি?
রোগের কিছু লক্ষণ দেখেই মূলত রোগটি সনাক্ত করা হয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাস ঢোকার তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে সাধারণত এই রোগের উপসর্গ শুরু হয়-
১/ হঠাৎ কোরেই বেশ জ্বর হয় (১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
২/ শরীরে প্রচণ্ড- ব্যথা হয়। গিটগুলো ফুলে ওঠে। কখনো কখনো শক্ত হয়ে গিয়ে খুবই অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে এবং কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস কিংবা বছরখানেক ভুগতে হতে পারে।
৩/ জ্বরের সাথে সাধারণত হাতে ও পায়ে র্যাশ ওঠে। মুখমণ্ডল, হাত ও পায়ের তালুতেও হতে পারে।
৪/ মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, বমিভাব কিংবা বমি হওয়া, অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা, মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে।
৫/ সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই রুগী সুস্থ বোধ করেন। তবে প্রথম থেকে সাবধান না হলে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
৬/ আবার দেখা গেছে চিক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও কারো কারো (৩ - ২৫%) ক্ষেত্রে রোগের কোন উপসর্গ প্রকাশ পায়না।
ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগের সাথে এই রোগের উপসর্গের বেশ মিল রয়েছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে সমস্যা হতে পারে।
উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার কয়েক দিন পর রক্ত পরীক্ষায় লিম্ফোসাইট ও প্লেটলেট রক্তকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কমে যেতে পারে। তাছাড়া রোগীর রক্তের কালচার করলে চিক ভাইরাস ধরা পড়ে ও চিক ভাইরাস- IgM এন্টিবডির উপস্থিতি দেখে এই রোগটি সহজে নির্ণয় করা যায়।
নির্দিষ্টভাবে এ রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শমতে ওষুধ থেতে হবে। বিশ্রামে থাকতে হবে এবং বেশি বেশি তরল খাবার ও পানি খেতে হবে।
এ রোগ দমনের কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। তাই প্রতিরোধে যত্নবান হতে হবে। রোগটি প্রতিরোধের জন্য মশার উৎপত্তি রোধে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরে ও মশারির মধ্যে অবস্থান করতে হবে। মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সরাসরি রোগীর রক্ত সংস্পর্শ থেকেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত কোন ভাবেই যেন কোন সুস্থ ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে না আসে বা রক্ত গ্রহণ করা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
গর্ভবতী, শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগী, কিডনী-রোগী, লিভার-রোগী ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কেউ একবার এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে তার আর এই রোগ হয়না।
ধন্যবাদ-
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭