আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কৌশলের রাজনীতিতে এরা কখনই বুদ্ধির স্বাক্ষর রাখতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারটাতে খুব একটা পারঙ্গম নয়। সরকারে থাকাকালীন এরা ছোট ছোট ব্যাপারকে এতটাই জটিল করে ফেলে যে বিরোধী দল খুব সহজেই ইস্যু পেয়ে যায়। নইলে বিরোধী দল তাদের বিগত চরম দু:শাসনের পর এখন মাঠ গরম করে কোন মুখে?
আমার মনে হয় আওয়ামী লীগে একটা বিশেষ উইং আছে যাদের কাজ হল বিরোধী দল নিয়মিত নতুন নতুন ইস্যু খুজেঁ পাচ্ছে কিনা বিষয়টা তদারকি করা।
ইব্রাহীম হত্যার বিষয়টাতেই আসি। পরিষ্কার সংশ্লিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কেন সাংসদ নুরুন্নবী শাওনকে পুলিশী ছোঁয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে? প্রথমত: হত্যা পরবর্তী একটা বানোয়াট গল্প সাজানোর চেষ্টা, পরবর্তীতে পরস্পরবিরোধী অজস্র কথাবার্তা বলার প্রেক্ষিতে বোঝাই যায় ঘটনাটিতে এমপির হাত আছে।
যদি নাও থেকে থাকে, তদন্তের স্বার্থে অন্তত: একবার এমপিকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তো চক্ষুলজ্জা কিছুটা দূর হয়। কিন্তু তা করা হলনা।
কেন?
আওয়ামী লীগে কি নেতৃত্বের এতটাই অভাব পড়ে গেছে যে সন্ত্রাসীদের রক্ষা না করলে চলছেনা? ইব্রাহীম হত্যার বিষয়টাতে যদি পুলিশ শুরু থেকেই পুরোপুরি স্বচ্ছতার সাথে তদন্ত করত (বা করতে দেওয়া হত), তাতে শাওন দোষী প্রমাণিত হোক বা না হোক, সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ত বৈ কমত না।
আমি ভেবেছিলাম সরকারের সামনে একটা বড় সুযোগ এসেছে এ দুটি ঘটনা স্বচ্ছতার সাথে মীমাংসা করে জনপ্রিয়তাকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। আমরা অন্তত: বলতে পারতাম যে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসকে লালন করেনা।
একইভাবে মালিবাগ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বন্দুক হাতে ডা: ইকবাল ও শাওনের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুপারিশে তাদের নাম প্রত্যাহার করা হল। এর কারনটা কি?
বারবার কেন সরকার সন্ত্রাসীদের সমর্থন করছে? শাওন, ইকবালদের যে ভাবমূর্তি তাতে পরবর্তী নির্বাচনে জেতা দূরে থাক, মনোনয়ন পাওয়াই তাদের জন্য দুরূহ হবে। আর তাদের জন্য আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় যে ব্যাপক ধস নামল , তার প্রভাব যদি সামনের নির্বাচনে পড়ে , তার দায়দায়িত্ব কে নেবে?
শেখ হাসিনার বোঝা উচিত, শাওন-ইকবালদের মত সন্ত্রাসীদের ছাড়াও আওয়ামী লীগ চলবে। সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা কোনমতেই সমীচীন নয়। নুরুন্নবী চৌধুরী দু'একটা না থাকলে দলের কোন ক্ষতি হবেনা।
১৯৫৪এর নির্বাচনে ফরিদপুরের দালাল মোহন মিয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। মোহন মিয়া হেরে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের কোন ক্ষতি হয়নি। পরবর্তীতে ইতিহাসই মোহন মিয়াকে জায়গা করে দিয়েছে শান্তি কমিটিতে। সুতরাং ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড়।
আওয়ামী লীগের রাজনতিক ভিত্তি জনসমর্থনের অনেক গভীরে প্রোথিত। বাংলাদেশের সমগ্র জাতীয় সত্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দলটির ভূমিকা। শেখ হাসিনা একা দলটিতে থাকলেও আওয়ামী লীগ চলবে। কারও নেতৃত্বের দরকার হবেনা। তত্বাবধায়কের আমলে তা ভালভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই দু'একজনের পাপের দায়ভার যেন গোটা দলের ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটাই আমাদের কাম্য
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৩