একসময় মাসুদ রানা সিরিজের কোনো একটা গল্পে একটা হত্যার বর্ননা পড়েছিলাম।
শত্রুর দলে অনুপ্রবেশ করেছে রানা সঙ্গী নিয়ে।আত্মগোপনে থেকে দেখছে কার্যকলাপ। সঙ্গী কে ফার্মের কর্মীর ছদ্মবেশে পাঠানো হয়েছে।হঠাৎ ফার্মের কর্মীরা হে ফর্ক ( কাঁটা চামচের মত দেখতে কিন্ত বড় জিনিস যা দিয়ে খড় বিচুলি পালা দেয়া হয় বা পরিস্কার করা হয়) দিয়ে নাচের তালে তালে গোল হয়ে ঘিরে আসে,রানার সঙ্গীকেও তাদের সাথে আসতে হয়।এটা তাদের হে ড্যান্স।নেচে নেচে ফর্ক দিয়ে বিচুলি তুলে তুলে তারা পালা করে রাখে।ঘিরে নাচতে নাচতেই তারা রানার ছদ্মবেশী সঙ্গীকে এটাক করে।গোল হয়ে ঘিরে নাচের তালে তালে হে ফর্ক দিয়ে খুঁচিয়ে তারা খুনটা করে ফেলে।ভিক্টিমের মৃত্যু চিৎকার চাপা পড়ে তাদের গানের শব্দে।খুন শেষে খড় দিয়ে তারা মৃতদেহ চাপা দিয়ে দেয়, তারপর কিছুই হয়নি এমন ভাব করে চলে যায়।সবার হাতে চকচকে অস্ত্র! লুকিয়ে থাকা রানা সঙ্গীর জন্য কিছুই করতে পারেনা।ঠিক মনে নেই,সেও হয়ত বন্দী ছিলো তখন।
বইটির নাম মনে না পড়লেও খুনের বর্ননা হিসাবে এটা আমার মনে থাকার কারন হচ্ছে খুনটা যথেষ্ট ভয়ংকর মনে হয়েছিল আমার কাছে।মেয়েটির অসহায়ত্ব, কিছু করতে না পেরে রানার অসহায়ত্ব খুবই টাচ করেছিলো।
ভাবিনি এমন কিছু বাস্তবে দেখতে হবে।একজনকে নাচ গান করে পিটিয়ে মারা হলো।আর আমরা অসহায়ের মত সেই দৃশ্য দেখলাম!এ যেন পরাবাস্তব কোনো দৃশ্য! মানুষকে অনেক ভাবেই মেরে ফেলা যায় তবে এত নিষ্ঠুরতা কেন?কেন তাতে নাচ গান করা প্রয়োজন হয়?এক সামান্য একটা প্রাণকে ঘিরে এত উল্লাস?জংলীরা তার শিকারকে খাওয়ার আগুনে ঝলসানোর সময় নাচ গান উৎসব করে বলে শুনেছি। একজন কে মেরে ফেলার জন্য নাচ গান করার প্রয়োজন হয় কিভাবে একটা সভ্য সমাজে?কি পরিমান অসুস্থ মানসিকতার জনতা আমাদের দেশে!
নগর পুড়লে দেবালয় যে এড়িয়ে যায় না তার এক কষ্টকর উদাহরণ তৈরি হলো আজকে।সেনাকর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার ডাকাতের এটাকে নিহত হলেন।একজন সেনাকর্মকর্তার গলায় ছুরি চালানোর মত সাহস হয় যাদের তারা কতটা ভয়ংকর হতে পারে!ক্লাস সেভেন থেকে বাড়ি ছেড়ে যে ছেলেটি পাবনা ক্যাডেট কলেজের কঠোর নিয়মতান্ত্রিক জীবন কাটিয়েছে ছয়টি বছর এবং বিএমএর কঠোরতম ট্রেনিংয়ের পর কেবল মাত্র জীবন শুরু করেছে তার জীবনপ্রদীপটি এভাবে নিভে গেল! অরাজকতা, মব কিলিং, সন্ত্রাসী ছেড়ে দেয়া বিষয়গুলোকে যারা জাস্টিফাই করেন তাদের একটু টনক নড়া উচিত। সন্ত্রাসী সব সময়েই সন্ত্রাসী। দুষ্ট লোক সবসময়ই দুষ্ট লোক। বিগত সরকারের দোষ দিয়ে, তার আগের সরকারের দোষ দিয়ে বা এই সরকারের দোষ দিয়ে এই মৃত মানুষের বাবা মা তাদের সন্তানকে ফিরে পাবে না।
একটা উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা একজন সেনা কর্মকর্তা তৈরি করতে পরিবারসহ আরও কতগুলো মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষা আর পরিশ্রম যায় সেটা যারা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছে তারাই জানে।এরা আমাদের দেশের এসেট।এদের জীবন এভাবে অকালে ঝরে যাওয়ার নয়।
যারা সমস্ত অরাজকতাকে সমর্থন যোগাচ্ছেন তারা যদি ভাবেন আপনি সেফ তবে আপনি মহামূর্খের মত ভাবছেন।এইরকম একটি দেশে কেউই সেফ না।কখন মৃত্যু এসে আপনার বা প্রিয়জনের ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলবে আপনি বুঝতেই পারবেন না।কারন আপনারও শত্রু আছে তা আপনি কিছু করেন বা না করেন। যে প্রানী নি:শ্বাস নেয় সে কারও না কারও শত্রু হবেই,সে যত নিরীহ তৃণভোজীই হোক না কেন।এটাই জীবনের রীতি।
তাই অন্যায়কে অন্যায় বলতে শিখুন।এইটা বলবেন না যে অমুক লোকে হেই করছিলো তখন আপনি কই ছিলেন?বরং এইটা বলুন যে তখনও অন্যায় হইছে,এখনো অন্যায় হচ্ছে।অন্যায় অরাজকতাকে বাহবা দিয়ে এটাকে আরও বাড়িয়ে দেবেন না।তাতে এই মৃত্যুগুলোর দায় আপনাদের ঘাড়েও আসবে।