বুক রিভিউঃনীলিমা ইব্রাহিমের "আমি বীরাঙ্গনা বলছি"
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রতিবার নারী দিবস কবে আসে কবে যায় তা ঠিক করে বোঝা হয়ে ওঠে না তবে এবারের বিষয়টা ব্যতিক্রম।এবার বেশ সরবেই পালিত হলো দিবসটি।
নারীর প্রতি অনাদর,সহিংসতা নতুন কিছু নয়।যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে বিষয়টি।তাই ব্লগে আমার প্রথম বুক রিভিউটি দিতে চাই নারীদের সন্মানে।
আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি লিখেছেন ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম।বইটি মূলত ভাগ্যহত কিছু নারীর জীবনের কাহিনী।লেখিকার সাবলীল বর্ননাতে উঠে এসেছে এক কালো অধ্যায়ের বাস্তব হৃদয় বিদারক চিত্র।১৬ই ডিসেম্বরে আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ঠিকই কিন্ত এইসব নারীরের যুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি,হয়ত তখনি তাদের আসল যুদ্ধ শুরু।
অনেক দেশেই যুদ্ধ হয়েছে আরো অনেক দেশেই হবে তবে সবক্ষেত্রেই সব চেয়ে বেশি নির্যাতিত থাকবে নারীরাই।ভিনদেশি শত্রুর উতপাত তো সাময়িক কিন্ত নিজ দেশের,নিজ সমাজের,নিজ ঘরের শত্রু থেকে বাঁচার উপায় কি??
নীলিমা ইব্রাহিমের বই টি পড়ে অবাক হতে হয়।আশ্চর্য!!!আমাদের সমাজ এরকম??যেখানে সবাই ভুক্তভুগি সেখানে নারীর প্রতি মানুষ কি একটু সহানুভুতি দেখাতে পারেনা?লেখিকা কেন এমন একটি বই লিখতে আগ্রহী হলেন তা জানা যায় বইটির ভুমিকা থেকে।কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি---
বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে এক একটা মেয়ের জীবনের গল্প।লেখিকা নিজে এই মানুষগুলির সাথে কথা বলে তুলে এনেছেন তাদের হৃদয়ের গহীনের শব্দ।বইটি কোনো আনন্দের বই নয়।বইটি পড়তে পড়তে কখনো চোখ ফেটে জল আসে,কখনো মানব জাতির উপর ঘৃনা হয় আবার কখনো শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।যুদ্ধের সময় বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই একই রকম তবে তাদের পরবর্তি জীবনের অভিজ্ঞতা এতই বিচিত্র যে তা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক হচ্ছে এই মানুষগুলোর পরিবারের লোকের আচরন।বাবা,ভাই সকলেই মুক্তি যোদ্ধা কিন্ত তারাও যদি তাদের অভাগা বোন কে বরন করে নিতে লজ্জা পায় তবে কার কাছে কি আশা করা যাবে??এই বইয়ে একজন নারীর কন্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছে এই কথাগুলি।
এমনই আরো অনেক বাক্য আপনার উপলব্ধিকে নাড়া দেবে।নারীর মর্যাদা নিয়ে কথা বলা বা সভা সমিতি করা আজকাল একটা ফ্যাসানে পরিনত হয়েছে।এসব করার আগে আমাদের ভাবা দরকার আমরা কি সত্যিই এত সভ্য হয়েছি?নারীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দেয়ার যোগ্যতা কি সত্যিই আমাদের আছে।বইটির প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ হলেও বইটির বিষয়বস্তু পুরোনো হয়নি মোটেও।কারন নারীর সন্মানহানী,নির্যাতন আর অবমাননা এখনো চলছে।৪০টি বছর পেরিয়ে আমরা অনেক কিছুই জয় করেছি কিন্ত নির্যাতিত একজন নারীকে বুকে টেনে নেয়ার সাহস অর্জন করিনি আজও।কোনো নরকের কীট যদি ফুলের মত পবিত্র একজনকে নির্যাতন করে তবে আমরা সকলে মিলেও তাকে অসন্মান করি।ভেবে দেখার মত বিষয় হচ্ছে আমরা তবে সেই নরকের কীটের চেয়ে কম কিসে??
একজন মানুষের কোনটি আসল?মন না দেহ?দেহটিকে যে কেউ চাইলেই কলুষিত করতে পারে কিন্ত মন তো থাকে তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।তবে কেন এমন একজন কে আমরা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারিনা।কেন দূর্ঘটনা ভুলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারিনা।কেন তাকে নিজের প্রেয়সী হিসাবে মেনে নিতে পারিনা??তবে কি আমরা শুধু নারীর দেহের পেছিনেই ছুটি?তবে সে ব্যাক্তি মানুষটার প্রতি আমাদের কোনো আগ্রহই নেই???
নীলিমা ইব্রাহিমের এই বইটি আপনাদের কিছু নারীর ব্যাক্তি মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।জানিয়ে দেবে তার অন্তরের উপলব্ধির কথা।আমরা কোনো সাংবাদিকের কলমে লেখা খবর আকারেই পড়ে এসেছি এসব অভাগা নারীদের কথা।হোক না সেটা একাত্তরের কথা, বর্তমানের নির্যাতিত কোনো নারীর ও অন্তরধ্বনিও এই কথাগুলোর প্রতিফলন।আসুন এবার তাদের নিজেরদের মুখ থেকেই শুনি তাদের অভিজ্ঞাতার কথা।এই বইটি পড়ে যদি আমাদের কারো মনেও কোনো পরিবর্তন আসে যদি নারীর প্রতি অন্যায় আচরন থেকে কেউ বিরত হয় তবে লেখিকার এই বইটি সার্থক হবে সেই সাথে সার্থক হবে আমার এই লেখা।
বইটির পিডিএফ ভার্সন অনেক সাইটেই পাওয়া যায় যেখান থেকে সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন
দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?
দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্তান.....
শেখস্তান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের বিয়ের খাওয়া
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন