এক শীতের বিকেলে লক্করঝক্কর মার্কা বাসে করে দীর্ঘ ভ্রমন শেষে যখন খাগড়াছড়ি সদরে পৌঁছালাম তখন আমি প্রায় ক্লান্তির শেষ সীমায় এসে গেছি। বাস থেকে নামতে না নামতেই এক ঝলক পাহাড়ি শীতল বাতাসে দেহটা জুড়িয়ে গেল। শহরে তখন ছড়িয়ে আছে শেষ বিকেলের নরম রোদ কিন্ত দুরের পাহাড়শ্রেনীতে সন্ধ্যার গাঢ় ছায়া নেমে এসেছে।এই শহরে আমি কাওকেই চিনিনা।এক বন্ধুর বন্ধুর মাধ্যমে এখানে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।বাস থেকে নেমে একটা দোকান থেকে ঠিকানা দিয়ে কোথায় যেতে হবে জেনে নিলাম।এটা নাকি একটা সরকারি গেস্টহাউস।পাকা সড়ক দিয়ে কিছুদুর হেঁটে গেলে দেখা যাবে ইট বিছান রাস্তা,সেই রাস্তা ধরে হেটে সামনের টিলার উপর উঠলেই গেস্টহাউস।জায়গাটা বেশি দূরে নয় তাছাড়া আমার সাথে একটা মাত্র হালকা ব্যাগ তাই হাঁটা ধরলাম রাস্তা দিয়ে।আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চল যে আসলেই অনেক সুন্দর তা বাসের জানালা দিয়ে দেখেই বেশ বুঝতে পারছিলাম।কিন্ত এভাবে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে বিকেলের রোদের আলোছায়ার মধ্য দিয়ে চলতে চলতে মনে হচ্ছিল সেই সৌন্দর্য যেন আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে তার মায়ার আঙ্গুল দিয়ে।আমার ক্লান্তি যেন কোথায় উধাউ হয়ে গেল।রাস্তার দুপাশেই লম্বা লম্বা গাছ।তাকিয়ে দেখে একটাকেও চিনতে পারলাম না।আমি এমনিতেও গাছপালা বেশি চিনিনা কিন্ত তাদের প্রাচীন আলিশান অবয়ব দেখে মুগ্ধ হলাম ঠিকই।রাস্তা ধরে বেশ কিছুদুর গিয়ে দেখি রাস্তা সামনের মাঝারি আকারের টিলায় উঠে বাঁক ঘুরে অদৃশ্য হয়েছে।রাস্তার শেষ মাথায় বাগান ঘেরা বেশ ছিমছাম একটা বাড়ি।এটাই বুঝি সেই সরকারি রেস্টহাউস।আমি গিয়ে দরজায় টোকা দিতেই একজন কমবয়েসি ছেলে বের হয়ে আসল।আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম আমি ঢাকা থেকে আসছি।ছেলেটি একগাল হেসে জানালো যে আমার জন্য একটা রুম ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছে।সাহেব নিজেই বলেছেন যাতে আমার কোনো অসুবিধা না হয় সেই দিকে নজর রাখতে।ভদ্রলোক নাকি জরুরি কাজে দূরের এক গ্রামে গিয়েছেন ফিরতে ফিরতে রাত হবে।আমি ঘরে ঢুকে ব্যাগটা টেবিলের উপরে রাখলাম।মাঝারি আকারের ঘরটিতে একটি খাট,একটা টেবিল,একটা আয়না লাগানো ছোট আলমারি আর একটা চেয়ার ছাড়া কিছুই নেই।সবকিছুতেই কেমন পুরোনো পুরোনো গন্ধ।ঘরের লাগোয়া বাথরুমে ঢুকে ছেলেটির দিয়ে যাওয়া গরম পানিতে স্নান করে নিলাম।স্নান শেষ হতেই সে একটা বড় মগ ভরা সুগন্ধি চা আর প্লেটে করে হাতে বানানো বড় বড় বিস্কিট দিয়ে গেল।বাইরে তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে।পাহাড়ি অঞ্চল বলেই মনেহয় বেশ শীত পড়েছে এই সন্ধ্যাতেই।আমি জানালার কাছে চেয়ার টেনে নিয়ে চায়ের মগ হাতে বসলাম।ভাবছি যাকে খুঁজতে এত দূরে, এত যন্ত্রনা করে আসলাম তাকে কি আসলেই দেখতে পাব?কেমন আছে সে?আমাকে হঠাত স্মৃতিরা ঘিরে ধরতে শুরু করলো।এই নিঝুম সন্ধায় জীবনের সোনালী সময়ের কথা ভাবতে আমার খুব ভাল লাগতে থাকে হঠাত করেই।
আমি রাশেদ হাসান।এখন আমার বয়স চৌত্রিশ।একসময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম।তখন বয়স কম ছিল।মনে ছিল অসীম আনন্দ।তখন সারাদিন কাটত বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে,চায়ের দোকানে চা সিগারেটের সাথে চলমান রাজনীতি নিয়ে তর্ক করে,চাঁদনী রাতে হলের ছাদে গিটার বাজিয়ে গান গেয়ে রাত জেগে রগরগে সব বিদেশি উপন্যাস পড়ে,ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে দিবানিদ্রার ফাঁকে ফাঁকে সহপাঠি আর স্যারদের নিয়ে গুঢ়তত্ত আলোচনা করে আর সুন্দরী রমনীদের দিকে তাকিয়ে আকাশকুসুম কল্পনা করে।এসব ছাড়াও আর একটা কাজ ছিল আমার সেটা হচ্ছে তিথিকে রাগানোর চেষ্টা করা।ছিপছিপে গড়নের শ্যামলা শ্যামলা,মিষ্টি মুখের মেয়েটি ছিল আমার ক্লাসমেট।ক্লাসের প্রথম দিনেই ওর সাথে আমার একটা খিটিমিটি বেঁধে যায় বসার জায়গা নিয়ে।প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকেই জানালার ধারে একটা সিট আমার পছন্দ হয়ে যায়।আমি কোনো কিছু না ভেবেই সেখানে বসে পড়ি। একটু পরেই একটি মেয়ে এসে আমায় বলে তুমি এখানে বসেছ কেন?আমি তার দিকে তাকালাম।ফর্শা মেয়ে আমার চিরকালই পছন্দ।ছোটবেলাতেই ঘোষনা করেছি মেয়ের গায়ের রং ফরশা না হলে আমি বিয়েই করবো না।এত বড় হয়েও সেই চিন্তা একটুও বদলায়নি বরং বেড়েছে।আমার কাছে ফরশা না হলে কোনো মেয়েই আকর্ষনীয় না।এই মেয়েটি কিন্ত শ্যামলা।বেশ ভালই শ্যামলা তবুও তার মুখটি আমার বেশ ভালই লাগল।আমি মুখে হাসি নিয়ে জিগাসা করলাম,এখানে বসলে কি সমস্যা?সে বললো এটা আমার সিট,এখানে আমি বসবো।আমি বললাম, কিভাবে হল এটা তোমার সিট?সব বেঞ্চই তো ডিপার্টমেন্টের সম্পত্তি।সে এবার বেশ ক্ষেপে উঠে বলল,দেখনি এখানে একটা ব্যাগ রাখা আছে।কথাটা সত্যি,এখানে একটা ব্যাগ রাখা ছিল বটে।বুঝলাম ভুলটা আমারই তবে তাতে কি?প্রথম দিনেই যদি একটা মেয়ের কাছে হেরে যাই তাহলে কি সন্মান থাকবে ছেলেমহলে?তাছাড়া মেয়েটার রা্গরাগ চেহারা দেখতে বেশ মজা লাগছিল।ইচ্ছা হল একটু দুষ্টুমি করি।বললাম,বুঝতে পারছি এই সিট তোমার পছন্দ কিন্ত সিটটা আমারও পছন্দ,ঝগড়া না করে এসো একসাথে বসি।সে বলল, এখানে দুজন বসার মত জায়গা কোথায়?আমি একটা মধুর হাসি দিয়ে বললাম, চাপাচাপি করে বসলে ঠিকই জায়গা হয়ে যাবে।সে আরো রেগে বললো একটা আপরিচিত ছেলের সাথে আমি চাপাচাপি করে বসবো কেন?আমি বললাম, আমি রাশেদ,বাসা রংপুর।এবার তো আর অপরিচিত থাকলাম না।আর দুদিন পর আমি তোমার খুব আপন জন হব,আপনজনের কাছাকাছি বসলে কিছু হয় না তাই বসে পর।এবার সে একেবারে ড্রাগনের মত ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে এক ঝটকায় ব্যাগটা তুলে নিয়ে দুমদাম করে একদম পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো।
সেই থেকে শুরু।তারপর সবসময় তিথির সাথে আমার ঝগড়া লেগেই থাকত।বড় কিছু না।এই টুকটাক খোঁচাখুচি।প্রথম দিন থেকেই ওর কাছে আমি বদের বদ,বখে যাওয়া,টাংকিবাজ,বেয়াদপ একটা ছেলে।হবেই বা না কেন?আমিও তার তার এই ধারনাটাকে দৃঢ় বিশ্বাসে পরিনত করার একটা সুযোগ ও হাতছাড়া করিনি।সে যতটা সম্ভব আমায় এড়িয়ে চলত।আর আমিও বারবার তার সামনে এসে তাকে বিরক্ত করতাম।এভাবেই দুইদুইটা বছর কেটে গেল।তিথিকে সত্যিকার অর্থে ভাল করে জানার সুযোগ পেলাম থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝি সময়ে এসে।
ক্যাম্পাসের একটা সংগঠন আছে যারা সারা দেশে আর্ত মানবতার সেবায় নিয়জিত থাকে।শুনেছি তিথি এই সংগঠনের সদস্য।সে বার দেশে বেশ ভয়াবহ বন্যা হল।প্রতিবারের মত ফান্ড সংগ্রহ করে বন্যা দূর্গত এলাকায় ত্রান পৌঁছে দেয়ার জন্য সংগঠনটি তৈরী হল।আমিও এক বন্ধুর আমন্ত্রনে সংগঠনের সাথে জুটে গেলাম।আমার দেশ সেবার তেমন আগ্রহ ছিল না বরং আগ্রহ ছিল নৌকা ভ্রমন করে অচেনা জায়গাতে যাওয়ার।খুব ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘুম ঘুম চোখে লঞ্চে গিয়ে দেখি সেখানে তিথিও আছে।খুশিতে আমার সবকটি দাঁত বের হয়ে গেল।এমন সুযোগ পাব ভাবিনি।সারাটা পথ এখন মজা করা যাবে ওর সাথে আর লঞ্চ থেকে তো পালাতেও পারবে না।যাওয়ার সময় সারাটা রাস্তা ওকে জ্বালাতন করতে করতে গিয়েছি কিন্ত এই ফুর্তির মনোভাব আর থাকল না যখন গ্রামটাতে পৌঁছালাম।চারিদিকে অথৈ পানি তার মাঝ থেকে বড় বড় গাছগুলো জেগে আছে।যেসব বাড়িঘর টিকে আছে সেগুলোর শুধু চাল দেখা যাচ্ছে,বাকি সবকিছু পানির নিচে।শুধু রেললাইন বসানো উচু পাড়ে পানি উঠতে পারেনি।সব মানুষ সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে।সে এক করুন দৃশ্য।পশুপাখি, মানুষ সবাই মিলে এক স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।এখানে প্রকৃতির প্রবল প্রতাপের কাছে সকলেই সমান্ অসহায়।
আমার মন থেকেও সব দুষ্টুমির ভুত উধাউ হয়ে গেল।সারাদিন ধরে সবার মাঝে রিলিফ বিতরন করলাম।এর মাঝেই কিছু গুন্ডা ধরনের ছোকরা অন্যদের রিলিফ কেড়ে নিয়ে একটা ঝামেলা বাধানোর তালে ছিল।কি যে হল জানিনা সেই গন্ডগোলের মাঝে আমি গিয়ে অনেক উঁচু গলায় ঘোষনা দিলাম এমন ঝামেলা হলে এক্ষনি আমরা চলে যাব রিলিফ না দিয়ে।তখন দেখলাম গ্রামের লোকরা ছেলেগুলকে টেনে সরিয়ে নিল।এরপর আর কোনো ঝামেলা হয়নি।দলের সবাই বেশ ভয় পেয়েছিল।সবাই ধন্যবাদ জানাল আমাকে শুধু তিথি ছাড়া।সে শুধু একটা নরম দৃষ্টি উপহার দিল।সারাদিন খেটে খুব ক্লান্ত ছিলাম।তাছাড়া কিছুই পেটে পরেনি,নিজেদের খাবারও বিলিয়ে দিয়েছিলাম আমরা।লঞ্চে যখন উঠলাম তখন মাথা ঘুরছে ক্ষুধায়।লঞ্চের রান্না ঘরে থাকা জিনিস দিয়ে আমাদের অনুরোধে বাবুর্চি কিছু রুটি আর সবজি করে দিল।সবাই শেষ বিকালের রোদে খোলা ডেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেতে বসলাম।আমি তখন দলের মেয়েদের সাথে ফাজলামি করছিলাম।এমন করতে করতেই রেলিঙ্গের কাছে একটা পাইপে পা বেঁধে হুমড়ি খেলাম আর আমার সব খাবার গিয়ে পড়ল পানিতে।কিছুটা ঝুলে রইল রেলিং এ।আমি চোখে অন্ধকার দেখলাম।একে তো পেটে ক্ষুধা তার উপর পৌঁছাতে রাত হবে।লঞ্চে আর কিছুই ছিল না খাবার মত।সবাই আমার অবস্থা দেখে মজা পেয়ে হাসছিল আর আমার কাঁদতে ইচ্ছা করছিল।এমন সময় তিথি আমাকে তার কাছে ডাকল এবং তার খাবারের ভাগ দিল।এতটাই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে ওর প্রতি মন থেকে কৃতজ্ঞ হয়ে উঠেছিলাম খাবার পেয়ে।মনে মনে ভাবছিলাম ওকে আর জ্বালাব না।মনে হচ্ছিল মেয়েটির মনে সত্যিই মায়াদয়া আছে।
সেই ভ্রমনের পর থেকে তিথির সাথে আমার কেমন যেন একটা বন্ধুত্ব তৈরী হল।ওর কথা জানিনা কিন্ত আমার মাঝে ওকে জানার ইচ্ছা প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকল।তখন আর আমি তিথিকে তেমন বিরক্ত করতাম না অযথা।সেও আমাকে দেখে পালিয়ে যেত না।চা খেতে গিয়ে ওকে দেখলে মাঝে মাঝে ক্যান্টিনে বসে গল্প করতাম।সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে,ওর যত কাছাকাছি যাচ্ছিলাম ততই ওর সম্পর্কে আমার আগের ধারনা পালটে যাচ্ছিল।আগে ওকে যেমন বদমেজাজি আর অহংকারি মেয়ে মনে হত তা যে সত্যি ছিলনা তা স্পস্ট বুঝতে পারছিলাম।আসলে তিথি অনেক সহানুভুতিশীল,নরম মনের,বুদ্ধিমান একটা মেয়ে।মেয়েটাকে আমার দিন দিন আর বেশি ভাল লাগতে থাকল।
ফোর্থ ইয়ারে একটা প্রজেক্টে আমাদের একসাথে কাজ করার সুযোগ হল।দেখলাম সে পার্টনার হিসাবে খুব ভাল।আমাদের ক্লাসে মেয়েদের রেজাল্টই সবচেয়ে ভাল হয়।তবুও আমরা ছেলেরা তাদের বেশ আন্ডারএস্টিমেট করি।কারন আমরা সব ছেলেরাই জানি যে মেয়েরা একএক জন বিশিষ্ট মুখস্তবিদ।তারা হলে বসে সারাদিন রূপচর্চা করে আর নোট মুখস্ত করে।তারপর পরীক্ষার হলে এসে দাড়ি কমাসহ সব খাতার মাঝে উগরে দেয় তবে এসম্পর্কে কোনো সত্যিকারের জ্ঞান তাদের মাথায় থাকেনা।প্রথমে তিথিকেও আমি তাদের দলভুক্ত মনে করেছিলাম কিন্ত আমার ভুল ভাঙতে দেরি হল না।
সময়টা খুবই ব্যস্ততার মাঝে কাটছিল।ক্লাস,পরীক্ষা আর প্রজেক্টের ছুটাছুটির মাঝে দম নেওয়ার সময় নেই তবুও কি ভালই না লাগত সবকিছু।তিথি আর আমি সেসময়ে খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম,আসলে বন্ধুর চেয়েও আরো বেশি কিছুই ছিলাম।ওর সাথে কথা বলার জন্য অধির হয়ে অপেক্ষা করতাম।ও জানত কিনা জানিনা তবে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে প্রায়ই ওকে দেখতাম।আমাদের অন্য বন্ধুরা প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিল আমাদের সংঘাত বন্ধ হওয়াতে তবে পরে এমন বন্ধুত্ব দেখে তেমন অবাক হত না।তাদের নাকি ধারনা ছিল আমাদের মাঝে আরো অনেক কিছুই হবে।ওর সাথে সময় কাটাতে আমার খুব ভাল লাগত।পড়ালেখার পাশাপাশি নানারকম বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করতাম।আমি দিন দিন ওর উপর কেমন যেন নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি প্রথম ওর কাছে ভাললাগাটা প্রকাশ করলাম এক রোদেলা সকালে।কিছুদিন ধরেই ওর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না।ক্লাসে আসেনা,ক্যন্টিনে দেখিনা,লাইব্রেরীতেও না।বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়েও কোনো হদিশ পাইনা।এভাবে ছয়টা দিন কেটে গেল।এই ছয়দিনে আমি কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গেলাম।ওর ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম।বাসার কারো নম্বর ছিলনা আমার কাছে।তাই মনে হচ্ছিল কোন ভয়ানক কিছু ঘটে গেছে।হয়ত ওর বিয়ে হয়ে গেছে কোনো বড়লোক ছেলের সাথে, হয়ত ওর কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছে,হয়ত ও এখন মৃত্যুশয্যায়।প্রতিটা খারাপ চিন্তার সাথে সাথে আমার বুকের মধ্যে কেমন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিল।আমি ওদের বাসা চিনতাম না।চেনে এমন কাওকে নিয়ে দেখে আসার সাহসও হচ্ছিল না।এসব ছাড়াও অন্য কিছু যে হতে পারে তা ভাবতে পারছিলাম না।তাহলে অন্তত একটা খবর তো দিত সে।গভীর থেকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করছিলাম যে এই মেয়েটা আমার কতটুকু দখল করে নিয়েছে।সপ্তম দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি ক্যাম্পাসে চলে এসেছিলাম।এই কয়দিন আমি শুধু ছটফট করে কাটিয়েছি।রাত্রিজাগরনের ছাপ পুরো চেহারায়।চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকা আরো অসহ্য তাই ক্যান্টিনের বাইরে গাছতলায় আনমনে বসে ছিলাম।হঠাত দেখি ঝলমলে চেহারা নিয়ে তিথি আমার সামনে দাঁড়িয়ে।সে আমাকে কিছু বলছিল কিন্ত আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না ।মনে হচ্ছিল আমার হৃদস্পন্দন থেমে গেছে।একটা অদ্ভুত স্বস্তি আমার উতকন্ঠিত স্নায়ুতে শীতল পরশ বুলিয়ে দিল।যখন নিজের বোধ ফিরে পেলাম তখন শুনলাম তিথি বলছে,কি এমন ভুত দেখার মত করে চেয়ে আছ কেন?আমি বললাম,কোথায় ছিলে এতদিন?তিথির চেহারা আনন্দে ঝলমল করে উঠল।সে বলল,গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম ফুফাত বোনের বিয়েতে।এত মজা করেছি তুমি বিশ্বাস করতে পারবানা।সেই ছোট বেলায় গ্রামে গিয়েছি দাদু বেঁচে থাকতে,তারপর তো আর যাইনি।খুবই ভাল সময় কাটালাম সেখানে।অনেকদিন মনে থাকবে আমার।আমি মুখ বেজার করে বললাম,আমারও মনে থাকবে যে শিক্ষা দিলে এই কয়দিনে সেটা।ও বলল ,কি শিক্ষা দিলাম আমি?আমি উত্তর দিলাম এই যে ফোন বন্ধ করে রাখলে,আর আমি ভাবলাম মরেটরে সত্যিই ভুত হলে কিনা।ও বলল,তারাতারি রেডি হতে গিয়ে ফোনটাই বাসাতে ফেলে গিয়েছিলাম।রাতে অফ করে ডাইনিংরুমে চার্জ দিয়েছিলাম।বের হওয়ার সময় ভুলেই গেছি ব্যাগে ভরতে।আমি ভাবিনি এর মাঝে কেউ আমার জন্য চিন্তা করবে।তবে তোমার চেহারার এই হাল হয়েছে কেন?আমি বললাম, তোমার জন্য টেনশন করতে করতে।আমি ভেবেছিলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।ও বলল,আমার বিয়ে হলে তোমার এমন কেন হবে?আমি তখন ওর অবাক হওয়া মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকালাম এবং বললাম,কারো সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে যদি অন্য কেউ নিয়ে যায় তবে তার অবস্থা তো এমনই হবে।তিথি আমার মুখের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল।আমিও তার মুখখানি দেখছিলাম।তার মুখে ছিল নানা অনুভুতির মিশ্রন।আস্তে আস্তে তার মুখটা আরো নরম হল,একটু যেন লজ্জা উঁকি দিল এবং সে চোখটা নামিয়ে নিল।আমি বললাম,তিথি তুমি আমার সাথে আর এমন করোনা,তুমি কাছে না থাকলে আমি খুব কষ্ট পাই।তিথি মৃদু স্বরে বলল,আচ্ছা আর এমন করবোনা।তবে এখন তুমি ক্যান্টিনে চল আমার সাথে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু খাওনি।
এর পরে যে রোমান্টিক সিনেমার মত প্রেমের নদী বয়ে গেছে আমাদের জীবন দিয়ে তা নয় কিন্ত জীবনের সবকিছুতে মধুর মত মিষ্টি এক আবেশ ছড়িয়ে গেছে।আগে থেকেই একসাথে থাকতাম,তখনও থাকি কিন্ত তখন আমি জানি যে সে আমার।আগেও তাকে দেখতাম তখন ও দেখি কিন্ত লুকিয়ে দেখতে হয়না আর কারন আমি জানতাম ও শুধুই আমার অধিকার।তিথি বরাবরই খুব চাপা।আমার সাথে থাকত সারাক্ষন কিন্ত সচেতন ভাবে ভালবাসাটা প্রকাশ করত না।তবে আমি ঠিকই বুঝতাম ওর অবস্থা অনেকটা আমার মতই।আমাদের অনার্স ফাইনালের রেজাল্ট হল।তিথি বরাবরই ভাল করে এবারও করেছে।আমিও ওর পাল্লায় পড়ে ভালই পড়ালেখা করেছিলাম তাই আমিও ভাল করেছি।দুজনেই মাস্টার্সে ভর্তি হলাম।বন্ধুরা তো জানতোই দুজনের পরিবারও কিছুকিছু জানল।মনে হলনা তাদের তেমন আপত্তি আছে আমাদের ব্যপারে।অরাজি হওয়ার মত তেমন কিছু ছিলনা দুজনের মাঝে ।আসলে আমাদের দুজনের ভাল রেজাল্টও তাদের রাজি হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রেখেছিল।দিনগুলো যেন হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলছিল।দিনদিন আমাদের মাঝে আরো ভাল বোঝাপড়া তৈরী হচ্ছিল।তিথির মাঝে অদ্ভুত এক সততা ছিল।একধরনের স্বচ্ছতা ছিল যেটা আমি খুব ভালবাসতাম।তিথি আমার সাথে তার জীবনের এমন এক অধ্যায় শেয়ার করেছিল যা না করলেও খুব বেশি ক্ষতি ছিল না।
আমি তিথিকে শাড়ি পড়তে দেখিনি একবারও।ওকে একদিন সেটা বলতেই সে বলল,যদি চাও তো একটা গল্প শোনাতে পারি,তারপর হয়ত অনেককিছু পরিবর্তন হবে।ও যা বলল তার সারমর্ম এই যে,তিথি যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন তার এক খালার বিয়েতে গিয়েছিল।সেখানে সবকিছুতে তার মায়ের হেল্প দরকার ছিল বলে বিয়ের দশ বারো দিন আগেই সেখানে যেতে হয়েছিল।তিথিও তার মায়ের সাথে ছিল।শহরের বাসায় মেহমানকে জায়গা দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যায়না তাই আসেপাশের একদুইটা ফ্লাটে মেহমানদেরর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।তিথি আর তার বয়েসি কয়েকজন থাকত তিন্ তলার এক আন্টির বাড়ি।সে বাসায় তখন থাকত আন্টি,তার বর, তার বাচ্চা ছেলে আর অনার্স পড়ুয়া এক দেবর।এই ছেলেটি বেশ স্মার্টই ছিল বলা যায়।কয়দিনেই তিথিদের কয়জনের সাথে তার খুব ভাব জমে যায়।ছেলেটি তাদের সাথে মজার মজার গল্প করত,ক্যারাম খেলত এবং হাসিঠাট্টা করত।তিথির তাকে বেশ ভাল লেগে যায়।কিশোরির সরল মনে সে ছেলেটিকে বন্ধুত্বের স্থান দিয়ে দেয়।এর কিছুদিন পরে গায়ে হলুদের রাতে নিচে খালাদের বাসায় বেশ বড় আয়োজন করে অনুষ্ঠান হচ্ছিল।তিথি সেদিন প্রথম শাড়ি পরেছে।সে এবং তার বয়েসি মেয়েরা সেজেগুজে বাড়ির শোভা আরো বাড়িয়ে তুলছিল।একসময় তিথির একটু বাথরুমে যাওয়ার দরকার হয়।সে কাওকে না জানিয়ে তিনতলার ফ্লাটে চলে যায়।ফ্রেস হয়ে বের হতেই তার সেই ছেলেটির সাথে দেখা হয়ে যায়।সে তিথিকে দেখেই বলে উঠে তোমাকে তো দারুন লাগছে।এমন প্রশংসায় তিথি খুব খুশি হয়।ছেলেটি তিথিকে নিজের ঘরে ডেকে নেয়।তিথিও সরল মনে চলে যায়।সে বলে শাড়িতে তোমাকে একদম বউদের মত লাগছে।এখন তোমার একটা স্বামী দরকার।এখন আমি তোমার স্বামী হব।ছেলেটির প্রতি কিশোরি বয়েসের মুগ্ধতা ছিল বলেই হয়ত এসব কথা বা একটুআধটু স্পর্শ তিথির প্রথমে খারাপ লাগেনি।কিন্ত কিছু পরে তিথি বুঝতে পারে সে খারাপ কিছুর মাঝে ফেসে গেছে।বাড়িতে তখন কেউ ছিলনা,সবাই নিচে।সাহায্য করার মত কেউ নেই তাই তিথি চুপচাপ সব মেনে নিয়েছিল।অতটুকু বয়েসে সে পুরুষের দেহলোলুপ নোংরা দিকটার সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল।ভয়ে,লজ্জায় আর সংকোচে সে কাওকে কিছু বলতে পারেনি।কাওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ সব হজম করে গেছে।যে কয়দিন ছিল তার মাঝে আরো দুই তিন বার ছেলেটা তিথিকে অনেকটা ব্লাকমেইল করেই নোংরা সুযোগ নিয়েছিল।ছেলেটি বলত যে সে তিথির সাথের অন্য মেয়েদের বলে দেবে যে তিথি তার বউ হয়ে গিয়েছে।আর যাই হোক অন্যদের জানতে দেয়া যাবেনা এটাই তিথির মনে হয়েছিল।এই ঘটনা আর কেউ জানেনি,বিয়ে শেষ হলে পরে সে আর সেখানে যায়নি।তবে ঘটনাটা তার মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে।এরপর থেকে আর তার শাড়ি পড়ার ইচ্ছা হয়নি জীবনে।কারন শাড়ি পড়ার কথা মনে হলেই তার সেই ঘৃন্য পশুটার কথা,আচরন আর স্পর্শের স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
যখন তিথি এসব বলছিল আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তার মুখে ছিল একটা অদ্ভুত বেদনা আর গভীর বিসন্নতা যা আগে আমি তার মুখে দেখিনি।ওর লাঞ্ছনা আর লজ্জাটুকু আমি অনুভব করতে পারছিলাম।ও দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছিল,তো এখন বল যে এই গল্পের নায়িকার সাথে কি তুমি তোমার জীবন কাটাতে চাও?আমি আহত কন্ঠে ওকে বলি,তিথি এসব তুমি কি বলছ?আমি সত্যিই তোমাকে চাই।একটা নোংরা জীব ছোট একটা মেয়ের অসহায়তার সুযোগ নিয়েছে তার জন্য তুমি তো দায়ী নও।প্লিজ এগুলোকে তুমি গুরুত্ব দিওনা,এভাবে কষ্ট পেওনা।তিথি মলিন ভাবে হেসে বলেছিল,আমি হয়ত তেমন গুরুত্ব দিইনি এসবকে,দিলে কি এত দূর আসতে পারতাম?কবেই মরে যেতাম।তবে আমি জানি তোমরা ছেলেরা এটাকে খুব গুরুত্ব দাও।তোমরা নিজেরা যেমনি হও জীবন সঙ্গী চাও একদম আনটাচড।তাছাড়া আমার দোষ একেবারে নেই তাও তো না,আমি নিশ্চয় তাকে বেশি পাত্তা দিয়েছিলাম তাই সে আমার এমন ক্ষতি করার সাহস পেয়েছে।তাছাড়া পরে তার ব্লাকমেইলিং মেনে নেওয়া উচিত হয়নি।এত ভয় পাওয়া উচিত হয়নি।একদম বাচ্চা মেয়ে তো ছিলাম না।কেন তার ডাকে তার রুমে গেলাম ফাঁকা বাসায়?কেন বোকার মত বিশ্বাস করলাম?আমি ওর হাত দুটো ধরে মিনতি করে বললাম,তিথি আমি তোমাকে চাই,এসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথাও নেই,আপত্তিও নেই।আজ থেকে এই দুঃসহ স্মৃতি মাথা থেকে বের করে দাও।আমার সাথে নতুন করে জীবন শুরু কর।তিথি বলল,তুমি ভাল করে ভেবে দেখেছ তো?আমি বললাম ,হ্যাঁ। বললাম তো আমি শুধু তোমাকে চাই।একটা দুর্ঘটনা নিয়ে কেন আপত্তি করব?তিথি বলল,এখন মনে না হলেও জীবনে কখনো যদি এটা গ্রহনযোগ্য না মনে হয় তুমি আমাকে বলবা,আমি কোনো প্রশ্ন না করে তোমার পথ থেকে সরে যাব।আমার ইচ্ছা হচ্ছিল তিথিকে বুকে জড়িয়ে ধরতে কিন্ত তা সম্ভব ছিল না।আমি ওর হাতে একটা চাপ দিয়ে বললাম, এমন সময় কখনো আসবে না।
সেদিনের পর থেকে আমার সাথে ওর সম্পর্ক আরো গভীর হল।আগে তিথির মাঝে কেমন একটা দ্বিধা কাজ করত বলে আমার মাঝে মাঝে মনে হত,তবে বুঝতাম না সেটা কি জন্য কিন্ত এরপর থেকে সে আমার সাথে মন খুলে মিশতে শুরু করল।আমি তাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম।সে সেই শাড়ি পড়ে আমার সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়েছিল।
যে মানুষ কখনও কাওকে খুব বেশি চেয়েছে সেই জানে যে প্রিয় মানুষটাকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার কি ব্যকুলতা কাজ করে মনের মধ্যে।আমারও সেই ব্যকুলতা ছিল।তাই খুব মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতাম যাতে দ্রুত একটা চাকরি পাই এবং ওর সাথে একটা ছোট্ট সুখের নীড় গড়তে পারি।তিথি আমাকে খুব সাহায্য করত।আমি যখন পরিশ্রম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম ও তখন আমাকে উতসাহ দিত।এত চেষ্টা সুফল বয়ে এনেছিল ঠিকই।ক্যাম্পাস ছাড়ার আগেই আমি একটা কোম্পানিতে ভাল চাকরি পেয়ে যাই।কিছুদিন পর তিথিও একটা কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেয়।আমরা খুবি সুখি ছিলাম।উফ!কিসব দিন ছিল তখন।আমাদের ইচ্ছা ছিল যে আমরা এক দেড় বছর চাকরি করবো।এর মাঝে নিজেদের সংসার সাজানোর জন্য যা লাগে সেসব যোগার করব,তারপর বিয়ে।তখন নতুন নতুন চাকরি পেয়েছি।নিজের ইনকামের টাকা নিজের হাতে।ইচ্ছা মত খরচ করতাম।প্রায়ই ওকে এটা ওটা কিনে দিতাম,রেষ্টুরেন্টে খেতে যেতাম।ও আমার পাগলামী দেখে হাসত,মাঝেমাঝে রাগও করত বেহিসাবি খরচ করার জন্য।আমি বলতাম এখনই খেয়ে নাও মন ভরে,বিয়ের পর আর সুযোগ পাবেনা,তখন শুধু তুমি চাকরি করবা এবং আমাকে খাওয়াবা।
আমাদের জীবনটা সুখে কানায় কানায় পুর্ন ছিল।আমি তিথিকে অন্তরঙ্গ ভাবে পেয়েছিলাম।অনেক বেশি গভীর আর অন্তরঙ্গভাবে।অনেকের কাছেই হয়ত সম্পর্কটা সঠিক বলে মনে হবেনা।কিন্ত আমরা এই প্রজন্মের মানুষ।আমাদের কাছে ন্যায় অন্যায় এর মাত্রাটা একটু অন্যরকম।যাকে শুধুই নিজের বলে মনে করি,মন থেকে ভালবাসি তাকে সম্পুর্নভাবে পাওয়াটাকে অপরাধ বলে ভাবতে পারিনা।তাছাড়া নিজের ভালবাসার মানুষকে কাছে পেলে তাকে আরো নিবিরভাবে পেতে চাইবে না এমন পুরুষ হওয়া কঠিনতম তপস্যার ব্যপার।আমি কোনোকালে সাধু সন্ন্যাসী ছিলাম না,আমি নিতান্তই সাধারন পুরুষ মানুষ।তিথি অবশ্য আপত্তি করত তবে কোন কালে কোন পুরুষ এসব ব্যাপারে মেয়েদের আপত্তিকে পাত্তা দিয়েছে?
তিথি একটা মেয়েদের হোষ্টেলে থাকত।আর আমি থাকতাম একরুমের ছোট্ট একটা বাসায়।দুজনের জমানো টাকা দিয়ে কিছু ফার্নিচার কিনেছিলাম,আরো কেনার প্লান ছিল।মাঝে মাঝেই তিথি আমাকে নিয়ে বাজারে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা কিনত তার হবু সংসারের জন্য।ভালই চলছিল সব।এর মাঝেই একবছরের মাথায় আমার প্রোমোশন হল এবং আমাকে হেডঅফিসে কাজ দেয়া হল।তিথি একটা ভাল চাকরি পাওয়ায় কলেজের চাকরি ছেড়ে দিল।এতে বেতন খুব ভাল শুধু একটা সমস্যা সেটা হলো তাকে শহরের বাইরে বেশ দুরের এক জেলায় কাজ করতে হবে।পরিকল্পনা এমন ছিল যে ও কয়মাস বাইরে থাকবে তারপর আমরা বিয়ে করলে বদলি হয়ে শহরে আসার চেষ্টা করবে।যদি না হয় তো চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখানে নতুন কিছুতে ঢুকবে।আর যাই হোক এই কয়মাসে বেশ কিছু টাকা জমাতে পারবে ও যা দিয়ে প্রয়োজনের বাকি জিনিসগুলো কেনা যাবে।ও চলে যাওয়ার আগে দুইরুমের একটা ভাল বাসা দেখে আমি উঠে পড়লাম।এখানেই আমাদের সংসার পাতার ইচ্ছা ছিল।দুজনে মিলে বাসাটা গোছালাম সুন্দর করে।
ও চলে যাওয়ার পর খুব খালি খালি লাগত।তবে হেডঅফিসে কাজের চাপ বেশি হওয়াতে দ্রুত মেনে নিতে পারলাম ব্যাপারটা।এখানে একটা মেয়ে কাজ করত।এই মেয়েটিই আমার জীবনের সবকিছু বদলে দিল।কনা নামের এই মেয়েটি ছিল চোখ ধাঁধানো সুন্দরী।কথাবার্তাতে যেমন চৌকস তেমনি মোহনীয় তার আচার ব্যাবহার এবং পোষাক।হ্যাঁ সে জানত বটে পোষাক কিভাবে পড়তে হয় এবং নিজেকে কিভাবে আকর্ষনীয় করে দেখাতে হয় অন্যের সামনে।গায়ের রঙ সত্যিই ছিল দুধে আলতায় মেশান ঠিক যেমনটা আমি ছোটবেলা থেকে কামনা করতাম।কনা আমাদের সেকশনে কাজ করত না।তবে তার সাথে একবার লাঞ্চের সময় পরিচয় হল,তারপর থেকে সে প্রায়ই আমার সাথে গল্প করতে আসত।তার মত মেয়ে সামনে থাকলে একজন পুরুষের মাথা ঠিকমত কাজ করার কথা না।তার ফর্সা মুখ,চপল চপল ব্যাবহার,স্মার্ট কথাবার্তা আমাকে কেমন হতবিহবল করে দিত।আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তিথি প্রতি মাসে একবার আসত শহরে আমার জন্য।আমি তার জন্য অধির হয়ে অপেক্ষা করতাম প্রথম প্রথম।তবে কনার সাথে মিশতে মিশতে আমি যেন তিথিকে মিস করতে ভুলেই যাচ্ছিলাম।কনার সাথে আমার ফোনেও কথা হতে লাগল।অফিসের বাইরেও আমরা সময় কাটাতে লাগলাম।আমি যেন কনার প্রতি অনুরক্ত হয়ে যেতে থাকলাম আরো বেশি বেশি।ওর প্রবল ব্যক্তিত্বের ছটার কাছে তখন তিথি যেন কেমন ম্লান হয়ে যেতে লাগল।জানিনা তিথি কাছে থাকলে এমনটা হত কিনা জানিনা।হয়ত হলেও এত সহজে হত না।তবে আমি আমার দোষ আর কার উপর চাপাতে চাইনা মোটেও।তিথির অনুপস্থিতির শুন্য স্থান সাময়িকভাবে পুরন করতে গিয়ে আমি তিথিকেই প্রতিস্থাপিত করে দিলাম।
কনা আমাকে বড় বড় স্বপ্ন দেখাত।বিদেশের সুখ সমৃদ্ধির জীবনের হাতছানি দেখাত।আমার তখন ওর উচ্চাকাংখ্যা, বড় বড় চিন্তা ভাবনা খুব ভাল লাগত।সেই তুলনায় তিথিকে খুব সাধারন মনে হত।তিথি যখন জিগাসা করল যে আমি ফোনে কার সাথে এত কথা বলি তখন আমি ওকে বলি যে আমার একটা নতুন বন্ধু হয়েছে যার সাথে বেশ ভাল সময় কাটছে।তিথি রাগ না হয়ে যেন কিছুটা নিশ্চিন্ত হল।আসলে আমাকে দূরে রেখে ও খুব চিন্তায় থাকত।আগে আমি ওর দূরে যাওয়া একদম সহ্য করতে পারতাম না।তাই এবার যেন সে একটু নিশ্চিন্ত হল যে অন্তত আমার কষ্ট কম হবে।তার আমার উপর অনেক বেশি ভরসা ছিল।কিন্ত আমি যে কিভাবে ভরসার যোগ্যতা হারালাম তা আজও জানিনা।
কনা আমাকে স্পষ্টভাবেই বুঝাত যে সে আমাকে ভালবাসে।সে আমাকে বোঝাল যে আমার এদেশে পরে থাকা উচিত নয় বরং আমি যদি শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বাইরে যাই তবে অনেক উজ্জ্বল জীবন পেতে পারি।তখন দুজনে খুব আনন্দে থাকতে পারব একসাথে।আমার কখনো অতবড় স্বপ্ন ছিলনা।আমার সমস্ত কিছুই ছিল এখানে।আমার বাবা মা,পড়ালেখা,তিথি এই সবকিছু।এসবের মাঝেই ছিল আমার জীবন,আমার সমস্ত আশা,আমার সকল শান্তি।তবে তখন আমি এসবকিছুই কিভাবে যেন ভুলে গেলাম।সবকিছু যেন আমার কাছে পায়ের বেড়ী বলে মনে হতে লাগল।আমি এসব থেকে মুক্ত হতে চাইছিলাম।
তিথি আমাকে জানাল যে আগামী দুইমাস সে এখানে আসবেনা বরং তার বাসা ময়মনসিংহতে বাবা মার কাছে যাবে।আমি যে খুব অখুশি হয়েছিলাম এটা শুনে তা নয়।এই দুইমাসে কনা আমাকে সম্পুর্ন গ্রাস করে নিল।তারপর একদিন আমি শ্বেতশুভ্র বিষ পান করলাম এবং সেই বিষের নেশায় আমার চিরচেনা শ্যামবর্ন অমৃতের মধুরতা সম্পুর্ন ভুলে গেলাম।
প্রায় দুইমাস পর তিথি জানালো যে সে আসবে আমার সাথে দেখা করতে।আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এবার তাকে সব জানাতে হবে,জানাতে হবে যে আমি তাকে চাইনা।কিন্ত কি বলবো তাকে?কিসের অযুহাত দিব?কি দোষে ওকে ছেড়ে দিচ্ছি তার কোনো অযুহাত আমার কাছে নেই।তাহলে ওকে কি বলবো?আমি কোনো অতৃপ্তি বা না পাওয়ার কথা বলতে পারবনা,বলতে পারবনা কোনো অশান্তি বা ঝগড়াঝাটির কথা।কারন এসবের কিছুই হয়নি ওর সাথে।তাছাড়া বিষয়টা ও কিভাবে নেবে তাও বুঝতে পারছিলামনা।যদি ও বা ওর পরিবারের কেউ ঝামেলা করে তখন কিভাবে সামলাব।তাছাড়া আমার পরিবারের সবাই ওকে পছন্দ করে তাদেরই বা কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
কিছুদিন পর এক সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখি তিথি ঘরের সমস্ত এলোমেলো কাপড় গোছাচ্ছে।আমাকে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে এলো।ওকে দেখেই আমি চমকে উঠেছিলাম।যদিও ওকে দেখে অবাক হওয়ার কোনো কারন ছিলনা।ওর কাছে বাসার একটা চাবি থাকত যাতে সবসময় ইচ্ছা মত আসতে পারে।আমি আসলে চমকে ছিলাম এই জন্য যে আজ খুব কঠিন একটা কাজ আমার করতে হবে।তিথি বলল,একদিন আগেই চলে এলাম কারন তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল।কেমন ছিলে এতদিন?মুখ এত শুকনা দেখাচ্ছে কেন?আমি খসখসে শুকনো গলায় কোনোমতে উত্তর দিলাম।ও বলল তুমি ফ্রেস হয়ে এস আমি চা দিচ্ছি।আমি বাথরুমে গিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।বের হয়ে দেখি সে একটা ট্রে তে চা আর মিষ্টি সাজিয়ে অপেক্ষা করছে।সেদিন সে ঘন নীল একটা শাড়ি পড়েছিল।ও জানে যে আমি ওর শাড়ি পড়া খুব পছন্দ করি তাই আমাকে খুশি করতে বিশেষ দিনে শাড়ি পড়ত।তিথিকে খুব খুশি দেখাচ্ছিল।সে আমায় বলল,তারাতারি খেয়ে নাও তারপর আমায় মেসে দিয়ে এস।বাইরে দেখ কেমন মেঘ করেছে মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে।মেসে ওরা আজ আমার সন্মানে পোলাউ মাংশ রান্না করবে তাই তারাতারি যেতে বলেছে।আমি খাওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্ত গলা দিয়ে খাবার নামতে চাইছিল না।চা শেষ করতে করতেই বৃষ্টি নেমে গেল।ও হাজার রকম গল্প করছিল আমার সাথে ঠিক আগের মতই।আমাকে নতুন কেনা এক সেট প্লেট আর মগ অনেক আগ্রহ করে দেখাচ্ছিল।বলছিল আমাদের বাসায় মেহমান আসলে এগুলোতে খেতে দেয়া হবে।আমি হঠাত সাহস সঞ্চয় করে বলে ফেলি,তিথি আমাদের বাসা কখনো হবেনা তাই এসব করে আর লাভ নেই।তিথি ভাবল আমি দুষ্টুমি করছি।সে হাসিমুখে জিগাসা করল,আমাকে নিয়ে কি গাছতলায় থাকবা তুমি?এবার আমি থমথমে চেহারা করে বললাম,আসলে আমি তোমার সাথে থাকতে চাইনা,এটাও চাইনা যে তুমি আমার কাছে আস।সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।তখনও তার মুখে ছিল হাসি কারন সে আমার কথা বিশ্বাস করছিলনা।আমি তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম।সেই চোখের মাঝে কোনো কৌতুক বা মমতা ছিলনা।তিথির মুখের হাসি আস্তে আস্তে নিভে যেতে থাকল।হয়ত এই কয়মাসে ওর সাথে আমার ছাড়াছাড়া আচরন ওর মনে পরে গেল।সে আমায় প্রশ্ন করল,কেন?আমি বললাম আমার ভাললাগছেনা তোমাকে।সে আবার জিগাসা করল,কেন?আমি বললাম কারন আমি এমন কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চাইনা যে আগে অন্য পুরুষের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে মিশেছে।চাইনা এমন একটা মেয়ের গর্ভে আমার সন্তান জন্ম নিক।ও হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন।ওর চোখদুটো জলে ভরে উঠল,ঠোঁট একটু কাঁপল।ওর নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা আমাকে অবাক করেছিল কারন ও দ্রুত নিজেকে সামলে নিল।একটুও কাঁদল না,চিতকার বা বিলাপ করল না।শুধু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় প্রশ্ন করল, কনা তাইনা?ওর সেই দৃষ্টির সামনে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।সেই সন্ধ্যায় ঝমঝম বৃষ্টির মাঝে আর একটা কথাও না বলে তিথি বাইরে বের হয়ে এসেছিল।পেছনে ফেলে এসেছিল তার এতদিনের পরিশ্রমের অর্থে গড়া সুখের নীড়।যে নীড় দুজনে মিলে ঠিক একজোড়া পাখির মত একটু একটু করে খরকুটো এনে গড়ে তুলেছিলাম।যা ঘিরে ছিল তার এত সাধ এবং স্বপ্ন।যেখানে জন্ম নেয়ার কথা ছিল তার এবং আমার সন্তা্নদের।সেই অসীম বন্ধনের মায়া সে এক নিমেশেই কাটিয়ে উঠে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
ও এখানে আসলে ওর বান্ধবির মেসেই উঠত বরাবর।আমি পরদিন সেখানে গিয়েছিলাম।না, ওকে ফিরিয়ে আনতে না।ভাবলাম বাসার এতবড় জিনিসগুলো তো তাকে ফিরিয়ে দিতে পারবোনা যদি তার ভাগের অর্থগুলো ফিরিয়ে দিতে পারি তো তাই দিব।ওর বান্ধবী বলল যে ও খুব ভোরে উঠে চলে গেছে।আমি ওর চাকরির ঠিকানায় যোগাযোগ করে জেনেছিলাম যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।তার ফোনে তাকে আর পাইনি কোনদিন।ওর বাবার বাড়ির ঠিকানাও জানতাম না।এভাবেই তিথি আমার জীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
এরপর আমি বিদেশে গিয়েছিলাম কনার সাথে কিন্ত কনা আমাকে বিয়ে করেনি।সেদেশে গিয়ে সাতমাস সে আমার সাথে ছিল।তারপর আমাকে ছেড়ে গিয়েছে।শেষ খবর যা পেয়েছি তাতে জানতাম সে নাকি এক বৃটিশ ধনী লোকের সাথে আছে।আসলে আমার প্রতি ওর সত্যিকারের কোনো ভালবাসা ছিল না।আমাকে তার যখন দরকার ছিল তখন কাছে নিয়েছে দরকার শেষে আর কাছে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি।এক বন্ধুর কাছে পরে শুনেছিলাম ছেলেদের মুগ্ধতার সুযোগ নিয়ে তাদের বশ করা ছিল ওর প্রিয় একটা খেলা।আগেও বহুবার এই খেলা সে অনেকের সাথে খেলেছে।আমি জানতাম না যে আমার মার্জিত আচরনের জন্য অফিসে মেয়েরা আমার প্রশংসা করত।তার নাকি এসব শুনে জিদ চেপেছিল আমার তপস্যা ভাঙ্গানোর।কনা একজন উচ্চাকাংখি মেয়ে ছিল।আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল যে আমার মত কোনো সাধারন ছেলেতে তার মন ভরবে না।এসব কথাই আমি অনেক পরে জেনেছি।বুঝতে পেরেছিলাম আমি কি ভয়ানক অন্যায় কাজ করেছি। শুধু একটা মোহে অন্ধ হয়ে আমি আমার আসল ভালবাসাটাকেই মোহ বলে ভুল বুঝেছিলাম এবং চিরতরে বিদায় করে দিয়েছি।
কনার দোষ আমি দেই না এক্ষেত্রে।তার মনের খেয়ালে হয়ত সে এমনটা করেছে কিন্ত তাতে আমার সাড়া দেয়া উচিত হয়নি।আমিতো কানায় কানায় পুর্ন একজন সুখি মানুষ ছিলাম।শুধু রূপের মোহে আর কথার জাদুতে কেন এমন পথে পা বাড়ালাম?তবে কি আমি তিথিকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসতাম না?যদি নাই বাসতাম তবে কেন আজও ওকে ভুলতে পারিনা?কেন ওর কথা ভাবলেও বুকের মাঝে টনটন করে। র্প্রথম প্রথম সাহস হয়নি ফিরে এসে তিথির সামনে দাঁড়ানোর।যে ভয়ানক কথা আমি ওকে সেদিন বলেছিলাম তারপর আর কি নিয়ে যাই ওর সামনে?পরে আস্তে আস্তে খোঁজ নিতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্ত ওর খবর পাইনি।ও যেন হঠাত করে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে বাতাসে মিলিয়ে গেছে।হতাশ হয়ে আমি উচ্চশিক্ষার চেষ্টা করতে লাগলাম।সেটা সফল হওয়ার পর এতদিনে দেশে ফিরে এসেছি।এসেই ওর খোঁজ নিতে চেষ্টা ক্রলাম কিন্ত সফল হতে পারলাম না।ওর বন্ধুরা কেউ আমার সাথে কথা বলতে চায়না।অনেকে অনেকভাবে অপমানও করেছে।তবুও আমি দেশের এপ্রান্ত থেকে প্রান্ত ঘুরেছি।অনেকের অফিসে বা বাসায় গিয়েছি শুধু ওর খবর জানতে।শেষে একজন দয়া করে একটা ঠিকানা দিয়েছে।ও নাকি বিয়ের পর ওর স্বামীর সাথে এখানে থাকে।তাই আমার এতদুরে আসা।যদি ওর দেখা পাই তবে কি বলবো জানিনা।শুধু জানি যে ওকে একবার আমি দেখতে চাই,ও কেমন আছে জানতে চাই।এমন পাগলামী কেন করছি আমি জানিনা তবে এটা জানি যে তিথিকে আমি ভুলতে পারিনি।আমি অনেক দেশের অনেক মেয়ের মাঝে ডুবে ওকে ভুলতে চেয়েছি কিন্ত সফল হয়নি।ওর মত কেউ আর আমার জীবনে আসেনি।
বাইরে থেকে কে যেন দরজায় টোকা দিল।আমার চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল।আমি অনুমতি দিতেই একজন ভদ্রলোক ঘরে আসলেন।আমি বুঝলাম আমি তারই অতিথি।তার সাথে আলাপ করতে করতে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।যেখানে যেতে চাই সে এলাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে উনি বলল এখান থেকে সেটা বেশ দূর তবে উনি কাজে যাওয়ার পথে কাছাকাছি নামিয়ে দিতে পারবেন।আমি ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে বিদায় দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন খুব ভোরে উঠে তৈরী হয়ে নিলাম যাওয়ার জন্য।আশা নিরাশার অদ্ভুত এক অনুভুতি ছিল বুকের মধ্যে।ভদ্রলোক তার কথা মত আমাকে কিছুদুর পৌঁছে দিলেন এবং কিভাবে বাঁকিটা যেতে হবে তা বলে দিলেন।অনেকদুরের পাহাড়ি পথ পার হয়ে আমি আসল ঠিকানায় পৌঁছালাম।টিলার উপর ছবির মত একটা বাড়ি।গাছপালায় ঘেরা,সুন্দর ছিমছাম।বাড়ির আঙ্গিনায় অনেকরকম রংবেরং এর ফুলের গাছ।ইঁট বাধানো সরু পথ চলে গেছে বাড়ির সামনে দিয়ে।কেমন অদ্ভুত একটা প্রশান্তি বিরাজ করছে চারিদিকে।তিথির স্বামী নাকি বন বিভাগের অফিসার।হয়ত এজন্যই এমন ছবির মত বাড়িতে ওরা থাকে।
দুরুদুরু বুকে বাড়ির দরজায় গিয়ে টোকা দিলাম।একটু পর একজন পাহাড়ি মহিলা বের হয়ে আসল।তাকে তিথির কথা জিগাসা করতেই অদ্ভুত উচ্চারনের ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় সে উত্তর দিল যে ম্যাডাম বাইরে গেছেন,স্যার ও বাড়ি নেই।কখন আসবে জানতে চাইলে বলল ম্যাডাম তারাতারিই চলে আসবে কিন্ত স্যার আসবে দুপুরে।আমি বাগানের শান বাঁধানো বকুল গাছের নিচে বসলাম অপেক্ষা করবো বলে।মহিলাটি অবশ্য বলেছিল বাড়ির ভেতরে বসতে কিন্ত আমার কেমন যেন সংকোচ হল।কতক্ষন বসে বসে চারপাশের দৃশ্য দেখেছিলাম জানিনা এর পর হঠাতই এক অপুর্ব দৃশ্য দেখলাম।সেটা হয়ত ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটা দৃশ্য।দেখলাম পাহাড়ি পথে আমার চিরচেনা মেয়েটি হেঁটে আসছে।তার পরনে সাদার উপর গোলাপী ফুল ফুল একটা শাড়ি।তার চুলগুলো আরো লম্বা আর ঘন কালো হয়েছে।মেঘের মত ছড়িয়ে পরেছে পিঠময় আর সামনে থেকে ঘিরে রেখেছে সেই মায়াবী মুখটাকে।ওর একহাতে বেতের তৈরী একটা বাজারের ব্যাগে কিছু সবজি আর অন্যহাতে ধরে আছে একটা দুইতিন বছরের ছোট্ট মেয়ের হাত।হাল্কা গোলাপী ফ্রক পড়া মেয়েটি তিথির হাত ধরে ছোটছোট পায়ে হেঁটে আসছে।তার ছোট হাতে একটা ছোট ঝুরিতে কিছু বুনো ফুল।মেয়েটিকে দেখে একনজরে বলে দেয়া যায় সেটা তিথিরই মেয়ে।কারন শিশুটির চেহারায় যেন তিথিরই মায়াবী চোখ আর সেই একই রকম গায়ের রং।চেহারার বাঁকি অংশটা হয়ত ওর বাবার কাছ থেকে পেয়েছে কিন্ত এই দুইয়ে মিলে যে অপুর্ব মায়া সৃষ্টি হয়েছে তা শুধু চোখই শীতল করেনা বরং মনটাও ভরিয়ে দেয়।শিশুটিকে দেখা মাত্রই কেন যেন বুকে চেপে ধরতে ইচ্ছা করে,বড় আপন বলে মনে হয়।আমি কখন যেন উঠে দাঁড়িয়ে ছিলাম।আঙ্গিনায় ঢুকে আমার দিকে চোখ পড়তেই তিথি থমকে গেল।মনেহল ও কি করবে তা মন স্থির করে উঠতে পারছেনা।
বাড়ির ভেতর থেকে মহিলাটি তিথিকে দেখতে পেয়ে তার হাত থেকে শিশুটিকে আর বাজারের ব্যাগটি নিয়ে গেল।মনেহল তিথি দ্রুত সামলে নিয়েছে।এবার সে মৃদু পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং জিগাসা করল,কেমন আছ?ওর কন্ঠ ছিল শান্ত এবং স্থির।আমার বুকটা কেঁপে উঠল।আমি কোনোমতে বললাম ভাল।তারপর দুজনেই চুপচাপ।আমি ভেবেছিলাম আমকে দেখে ও রাগ করবে,অপমান করবে এবং ওর সাথে বেঈমানী করার জন্য দোষ দেবে কিন্ত ও কিছুই করল না।যেদিন ওকে জীবন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম তখনও সে কিছু বলেনি,আজও কোনো অভিযোগ করল না।বড় অদ্ভুত তিথির এই অভিমান।বড় ভয়ংকর এর জ্বালা।তার চেয়ে ও বাজে ভাবে অপমান করলেই যেন আমি সুখি হতাম।ও জিগাসা করল আমার বাবা মা ভাই বোন্দের কথা।আমি উত্তর দিলাম।আমি যখন জানতে চাইলাম সে কেমন আছে তখন সে মিষ্টি করে একটু হাসল।ও কিছু না বললেও আমি বুঝলাম ও খুব সুখে আছে।ওর চেহারার উজ্জলতা আর গালের আভা প্রকাশ করছিল যে ওর জীবনে অতৃপ্তির কোনো অশুভ ছায়া নেই।আমি বার বার মুগ্ধ হচ্ছিলাম ওর রূপ দেখে।আশ্চর্য! এত রূপ তো ওর আগে কখনো ছিলনা।ও একবারও জিগাসা করল না কনার কথা।আমাকে এখানে দেখে যা বোঝার সে তা বুঝে নিয়েছিল।একবারও জানতে চাইছিল না আমি কেন এখানে এসেছি।জানলে চাইলে হয়ত কোনো উত্তর দিতে পারতাম না।আমার সম্পর্কে ও কিছুই জানতে চাইছিলনা।এমন কি আমি কোথায় থাকি সেটাও না।দুজন চুপচাপ সেই বকুল গাছের নিচে কতক্ষন বসেছিলাম।তারপর একসময় ছোট্ট মেয়েটি এসে তিথিকে প্রশ্ন করল,মা ইনি কে?তিথি তার মেয়েকে কোলে নিয়ে একটু হাসল কিন্ত কিছু বলল না।আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ বোধ করলাম কারন তিথি যদি মেয়েকে বলত ইনি তোমার মামা হন তবে আমি তা সহ্য করতে পারতাম না।আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,তিথি আমি চললাম।তিথি বলল কিছুক্ষন থাক,ও আসলে দেখা করে যাও।আমি বললাম,না আমি এখন যাব।তিথি তার মেয়েকে আমার কোলে তুলে দিল।আমি মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললাম।আমি একটু শান্ত হতে মেয়েটি অবাক চোখে আমায় জিগাসা করল,তুমি কে?আমি অশ্রু জড়ানো মুখে একটু হেসে বললাম,আমি রাশেদ।মেয়েটিকে কোল থেকে নামিয়ে আমি তিথিকে বললাম, যাই।এছাড়া আর কিছু বলার ছিলনা আমার।পথে হেঁটে ফিরে যাওয়ার সময় একবার পেছনে ফিরে দেখলাম তিথি মেয়ের হাত ধরে আমার দিকে চেয়ে আছে।
কিভাবে গেষ্টহাউসে পৌঁছালাম জানিনা।সারাটা পথ আমার বুকটা খাঁ খাঁ করছিল।মনে হচ্ছিল সেই পাপ যদি না করতাম তবে তিথি আজ আমার হতে পারত,ঐ পুতুল পুতুল মেয়েটি আমার হতে পারত।সেদিন তিথিকে নিঃস্ব করে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্ত আজ তিথির সব আছে তবে আমার কিছুই নেই।তিথি আমায় ভুলে গিয়েছে কিন্ত আমি হয়ত ভেবেছিলাম আমার মত সেও আমাকে ভুলতে পারেনি।
বাস ছিল সন্ধ্যা সাতটায় তাই আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল।না হলে আমার এক মুহুর্ত থাকার ইচ্ছা করছিল না এখানে।বুকটা জ্বলছিল।পৃথিবীর সবার উপর এমন কি তিথির উপরও প্রচন্ড অভিমান হচ্ছিল।বিকালের দিকে শুনি এক ভদ্রলোক এসেছেন দেখা করতে।তিনি আমার ঘরে এসে পরিচয় দিলেন যে তিনি তিথির স্বামী।লোকটি লম্বা এবং সুপুরুষ,বয়েসে মনেহয় আমার চেয়ে বড়।তিনি ঘরের একটা চেয়ারে বসে আমায় বললেন,ওর কাছে শুনলাম আপনি এসেছেন।তাই দেখা করতে আসলাম।আমি বললাম আপনি অনেক ভাগ্যবান একটা পুরুষ।লোকটি আন্তরিক ভাবে হেসে বলল,এমন ভাগ্যবান আসলে আপনার হওয়ার কথা ছিল আপনি ছিলেন না বলেই আমার সুযোগ হয়েছে।উনি নিজে থেকেই বললেন, তিথি আপনাকে অনেক বেশি চাইত,আমার অনেক সাধনা করতে হয়েছে ওকে আমার করে নিতে।আমি কৌতুহলকে হারাতে পারলাম না, বললাম কিভাবে পরিচয় হল আপনার সাথে?উনি বল্ আপনার সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তিথি সবকিছু ছেড়ে বাবার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল।সে কাওকেই বেশি কিছু বলেনি সবাই শুধু জানত আপনাদের সম্পর্ক আর নেই।কেন নেই সেটাও কেও জানত না।দীর্ঘদিন,প্রায় ছয়মাস তিথি বাড়ি থেকে এক পা বাইরে বের হয়নি,কারো সাথে কথা বলেনি।এভাবে সে অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।কিছুদিন চিকিতসাও নিতে হয়েছিল।যখন ও কিছুটা সুস্থ তখন ওর বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়।সে তখন ছিল আমার সহকর্মি।সেই বিয়েতেই প্রথম আমি তিথিকে দেখি।ওকে প্রথম দেখার পর আমার বুকের মধ্যে যেন কেমন করে ওঠে।ওর মুখের গাঢ় বিষাদ আমার মনের গভীরে ছায়া ফেলে।যেকোনো মুল্যে এই মেয়েটিকে নিজের করে নেয়ার ঝোঁক হয়,তার ঐ মুখে হাসি ফুটানোর প্রবল ইচ্ছা হয়।আমি যখন বিয়ের প্রস্তাব দিলাম তখন ওর বাড়ির সবাই খুব খুশি হয়েছিল।তিথির কোনো অনুভুতি ছিল না।আমার মনে হয়েছিল সে ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে।প্রথম যখন কথা বলি ওর সাথে তখন সে প্রশ্ন করেছিল কেন আমি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাই যার একবার বিয়ে হয়েছে।আমি বলেছিলাম আমি জানি এমন কিছু হয়নি।সে বলেছিল,তার শুধু সংসারটাই হয়নি।মনপ্রান থেকে সে একজনের স্ত্রীর মতই সময় কাটিয়েছে।আমি আগেই আপনাদের দুজনের কথা শুনেছিলা্ম তিথির বাসার মানুষ আর বন্ধুদের কাছে থেকে।শুধু বুঝতে পারিনি এত সুন্দর সম্পর্ক কেন ভাঙলো।আমি বলেছিলাম যে আমার একজন জীবনসঙ্গিনী দরকার জীবন কাটানোর জন্য,তোমাকে আমার সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়েছে।আমি হয়ত খুব উপযুক্ত ছেলে নই তোমার জন্য কিন্ত তুমি কি আমাকে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করবা?তুমি কি তোমার জীবনের ভাগ দিয়ে আমাকে ধন্য করবা?হয়ত তোমায় খুব সুখ দিতে পারবনা কিন্ত খুব কষ্টও দিবনা।তুমি কি একবার এই ঝুঁকি নিয়ে দেখতে চাও?আমি সব জেনেই তোমাকে চাইছি,তোমার সব কষ্টের ভাগ চাইছি।তুমি জীবনটা আমার সাথে কাটাও।
ভদ্রলোক এই পর্যন্ত বলে হাসলেন ,আবার বললেন এর দশদিনের মাঝেই আমি ওকে বিয়ে করি এবং পুরনো চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন চাকরি নিয়ে এই পাহাড়ে চলে আসি।আমার অনুমানে তখন একবছরের বেশি হয়ে গিয়েছিল আপনাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে তবুও ওর তেমন সাড়া ছিলনা এই বিয়েতে।শুধু অন্য সবার ইচ্ছাতেই সে এতে রাজি হয়েছিল।এরপর আমি ধীরে ধীরে তার মন জয় করার চেষ্টা করেছি এবং আমি সফল হয়েছি।ও নিজে থেকে আপনার সন্মন্ধে কিছু বলেনি আমায়।আমিও চেষ্টা করিনি যাতে ও আপনাকে ভুলে যায় কারন ওর স্মৃতি ওর কাছেই থাক তাতে আমার কোনো সমস্যা হবেনা।আমি শুধু চেয়েছি আর অনেক অনেক প্রিয় স্মৃতি দিয়ে ওর জীবনটা ভরিয়ে তুলতে এবং আমি পেরেছি।আপনার স্মৃতি যদি ঝরনার মত তার মনকে ভিজিয়ে তোলে তখন আমি চেয়েছি প্রমত্তা নদীর মত তাকে ভালবাসায় ডুবিয়ে দিতে।প্রথম প্রথম ও খুব কষ্ট পেত।হয়ত আমার ভালবাসা ওকে আপনার কথা মনে করিয়ে দিত।বিয়ের পরে অনেকদিন পর্যন্ত ও আমার বুকে আমার আলিঙ্গনের মধ্যেও ডুকরে কেঁদে উঠত রাতে।আমি ওকে কাঁদতে দিতাম কারন জানতাম এই কান্না একদিন শেষ হবে।তারপর সে আমাকে মনের মাঝে স্থান দেবে।ও আপনার নামে কোনো অভিযোগ করেনি আমার কাছে তবে আমার কৌতুহল ছিল কেন এটা ভাঙ্গল তা জানার।বিয়ের দুবছর পর বুঝতে পারলাম আমাদের সন্তান আসবে পৃথিবীতে।সেরাতে সে আমাকে কারনটা জানিয়েছিল।প্রথম প্রথম আপনার উপর খুব রাগ হত আমার কারন আপনি তিথিকে এত কষ্ট দিয়েছেন।তবে এখন আপনাকে আমার হতভাগা মনে হয়,আপনার জন্য কষ্ট হয় যে এমন লক্ষী একটা মেয়েকে এভাবে পেয়েও হারিয়েছেন।
এবার আমি বুঝতে পারছিলাম কেন তিথিকে এত সুখি মনে হল দেখে।এমন বিবেচনা সম্পন্ন পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।তার সামনে নিজেকে একটা অসভ্য বর্বর বলেই মনে হচ্ছিল।আমি তাকে জিগাসা করলাম,ভাই আমি এসে কি আপনাদের সংসারে অশান্তি এনে দিলাম?উনি হেসে বলল,আপনি সেটা পারবেন না কারন আসলেই আমরা একে অন্যকে খুব ভালবাসি এবং খুব ভাল করে বুঝি।হয়ত ওর মনে কিছু পুরোনো স্মৃতি হানা দেবে কিছুদিন,তারপরে সবই ঠিক হয়ে যাবে।তিনি বললেন,আমি আসলে এসেছি আপনাকে রাতে খাওয়ার দাওয়াত করতে।আমি বললাম, না ভাই।আমি এই সন্ধ্যাতেই চলে যাচ্ছি।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল ততক্ষনে। আমি ব্যাগটা গুছিয়ে রওনা দিলাম।উনি জানতে চাইলেন আমি কি করি এখন ইত্যাদি।তার সাথে আলাপ করতে করতেই বাসের কাছে পৌঁছে গেলাম।বিদায় নেওয়ার আগে উনি বললেন,ভাই নতুন করে জীবন শুরু করেন।একজন সঙ্গিনী না থাকলে জীবন পুর্ন হয় না।আমরা দুজনেই দোয়া করি আপনি আমাদের মতই সুখি হোন।
বাস ছেড়ে দিল।আমি তিথিকে তার স্বর্গে রেখে ভবিষ্যতের দিকে পাড়ি জমালাম।পাহাড়ি ঠান্ডা হাওয়া আমার মনের সকল অস্থিরতা দূর করে দিচ্ছিল আর আমি ভাবছিলাম আগামী দিনের কথা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯