প্রতিদিন আমি ধর্ষণ করে যাই এই জনপদ।
এখানে আমি ঠিক খাপ খাই না।এটা ঠিক আমার জায়গা নয়।চারদিকে স্মার্ট মানুষের ভিড়ে আমি অদম লজ্জায়,উৎকণ্ঠায় ম্রিয়মান থাকি।কখন কোন দিক থেকে কার অবজ্ঞা ভরা গালি ভেসে আসে কে জানে?আতঙ্কিত হতে হতে সংকোচিত হয়ে যাই।সবার চোখে মুখে মাল্টিস্টোরেড দূরদেশী স্বপ্ন ,দূরদেশী বিলাসিতা,দূরদেশী হালচাল,দূরদেশী সুবাস। আমার শরীরে জোঁকের মত লেগে আছে মাটির গন্ধ,ক্ষেতের গন্ধ।আমার কথায় গন্ধ, আমার আচরণে গন্ধ।
মুখের উপর ওরা বলে দেয় ক্ষেত।এমন ক্ষেত হইলে চলে।আমি কোঁকড়ে যেতে থাকি মাঘের তীব্র শীতে কম্পমান দিগম্বর পাগলের মত।একটা অচল পয়সার থেকেও অচল হয়ে গেছি।আমি তখন হিংস্র হয়ে উঠি।বাল্যশিক্ষা বইয়ের উপর তীব্র আঁচর বসাই ।আমার নষ্টের মূলে এই বই।এই বইয়ের শিক্ষা পেয়েছি বলে আমি আজ ক্ষেত।মাঝে মাঝে স্মার্ট হতে গিয়ে শরীরের বসন খুলে স্বল্পবসন হই।কিন্ত্ত আমাকে কেউ স্মার্ট বলে না ।বলে পাগল।কিন্ত্ত ওরা যখন স্বল্পবসন হয় তখন ওরা কি দারুণ স্মার্ট হয়।হিংসায় আমার পিত্ত জ্বলতে থাকে।ওরা বলে যুগের চাহিদা মিটাতে হয় নতুবা স্মার্ট হওয়া যাযনা।যুগের চাহিদা মিটিয়ে ওরা সকল তল্লাটে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে আর তাদের লাঠিয়াল বাহিনী আমার মত অচলদেরকে মেরে পিটে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে।নিজেকে বদরাবার কত চেষ্টা করি কিন্ত্ত পারিনা।কোকিল হতে গিয়ে বারবার কাক হয়ে যাই।এ যেন পরম নিয়তি।চোখের সামনে দিয়ে কতজনের রঙের পরিবর্তন হয়ে গেল কাকের কণ্ঠে কোকিলের সুর উঠল কিন্ত্ত আমার কিছুই হলোনা।বাবা ছেলেবেলায় একটা গান গাইতেন উদাস দাওয়ায় বসে।সেই কদমতলার গান।'কদমতলায় দেখা দিও বন্ধু কেউ যেন না জানে'বাবার উদাস ভঙ্গি আজও আছে।কিন্ত্ত মুখে আজ আর কোন গান নেই।বাবার বুঝি কদমতলায় বন্ধুর সাথে আর দেখা হলো না। চাতক পাখির মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আমার জননী।তার জন্য একদিন একরাশ ভরসা কিনে নিয়ে যাব বলে।সে দৃষ্টি এখন অসহ্য ঠেকে।মনে হয় এক শকুন চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।তাদের জঠর জ্বালার উপায় আমাকে করতেই হবে।নতুবা ছিঁড়ে ফুড়ে খাবে আমার হাড় মাংস কলিজা।বাবার আমি ব্যর্থ হই।একটা চাকরি যোগাতে পারিনা কোন মতে।পরীক্ষার তিনধাপ পেরিয়ে কতবার গেলাম ভাইবা দিতে।প্রতিধাপে একহাজার করে হলে কমপক্ষে তিনহাজার।একশটা পরীক্ষাতে কম করে হলেও তিন লক্ষ খুইয়েছি।
সে যে কত বড় কষ্ট সে জানে আমার পায়ের জুতোজোড়া।এখন আচমকা কেউ সালাম দিলে তাকে চিনতে কষ্ট হয়।একদা সে আমার ছাত্র ছিল কিনা বহু চেষ্টা করেও মনে করতে পারিনা।দুঃখের কথা কাউকে বলতে পারিনা।ওরা বলে চাকির হবে টাকা দিয়েছ?লোক ধরেছ?ছাত্র জীবনে কোন্ পার্টি করেছ?
আমার ছেলে বেলা কেটেছে রাখালের বেশে।হাতের তালুতে লাঙ্গলের কটির দাগ শতচেষ্টা করেও মুছতে পারছিনা।ছাত্র জীবন লজিং টিউশনের চাপে কোন এক বালিকার টুকটুকে মুখ দেখে হাসার ফুসরত ও আমার মেলেনি। রাজনীতি করার রাজ কপাল কি আমার ছিলো?বাল্যশিক্ষা বইটাকে শত প্রশ্ন করি সে আমায় কোন জবাব দেয় না।লোকে বলে এমন ক্ষেত পাবলিক তো দেখি নাই যে যুগের যে ভাও।সেই বাল্য শিক্ষাতে পড়ে থাকলে হবে?এখন তো আর বাল্যকাল নেই তোমার।যৌবন পেরিয়ে যাচ্ছে।যৌবন শিক্ষা পড় এখন।যদি টিকতে চাও।
তো আমি কোথায় যাব যৌবন শিক্ষা লাভ করতে?সেই স্মার্ট লোকদের পেছনে?আমি পারিনা।বাল্যশিক্ষা আমার সর্বনাশ করেছে।যতবার আমি স্মার্ঠলোকদের দিকে যৌবন শিক্ষা লাভ করতে অগ্রসর হতে চাই,ততবার ব্যর্থ হই।একটা বিবভিষা ভাব আসে।আমার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাল্যশিক্ষা।আমি এখন কি করব ভেবে পাইনা।
স্মার্টনেস আমার অধরাই থেকে গেল।