"সে আমাকে ভালবাসে—আমি তা চাইনে—চাইনে—চাইনে—লোকে থিয়েটার করে, মুখে চুনকালি মাখে—চোর হয়—ভিক্ষা করে—রাজা হয়—রানী হয়—ভালবাসে—কত ভালবাসার কথা বলে—কত কাঁদে—ঠিক যেন সব সত্য! চন্দ্রমুখী আমার থিয়েটার করে, আমি দেখি। কিন্তু তাকে যে মনে পড়ে—একদণ্ডে কি যেন সব হয়ে গেল। কোথায় সে চলে গেল—আর কোন্ পথে আমি চলে গেলাম। এখন একটা সমস্ত জীবনব্যাপী মস্ত অভিনয় আরম্ভ হয়েচে। একটা ঘোর মাতাল—আর এই একটা—হোক, তাই হোক—মন্দ কি! আশা নেই, ভরসা নেই—সুখও নেই, সাধও নেই—বাঃ! বহুৎ আচ্ছা—"
-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
চলতে-চলতে কতো কিছুই তো বলতে চেয়েও বলা হয়ে উঠে না। কতো অপরিচিত মুখ সামনে এসে দুলিয়ে দিয়ে যায়। কারও কথার ঋণে জীবনটা আটকে থাকে মরণাবন্দি! কারও ইশারাকে তুচ্ছ করে সম্পর্ক ভেঙে সৃষ্টি হয় রাগের শহর। সুগন্ধী রুমালের কল্পনায় মিশে সমুদ্রের যে ঢেউ এসে বয়সের ভাঁজে ভাঁজে উন্মত্ত করে দিয়ে যায় তার জমানো কষ্টগুলো আর কোনও দিন প্রজাপ্রতি হয়ে উড়তে পারে না।
কথার নদীতে নেমে অযাচিত ভাবেই থেমে যেতে হচ্ছে কারণ কোনও সুখই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যে অভিশাপ নিয়ে জন্মেছিলাম তোমাদের নগরে সে অভিশাপ দেয়ালে ছড়িয়ে দিয়ে নিষ্প্রভ হবার অঙ্কিত বাসনায় লিখছি নতুন এক লিপি। দহনেও গ্রহণ লাগে, লাগে তার উদ্ভাসিত আলোতেও। প্রদীপের নীচে যে আঁধার খেলা করে সে খেলায় বরাবরের মতো জয়ী হয়েছি আমি। দমবন্ধ সময়েও থেকেছি স্নিগ্ধ হয়ে অথচ বিলীন হবার আশা করেছিলো আমারই চারপাশ।
অচল জীবনের সাথী হতে আপত্তি থাকে প্রিয় সব মানুষের তবুও কী দারুন মুখায়ব ভঙ্গিমায় নিজেকে মেলে ধরে রাখে শানিত পাথরের মতো, যেন করুণা করার জন্যই তার জন্ম হয়েছে! পাথরে পা কেটে গেলে পায়ের ক্ষতি তাতে পাথরের কিছুই হয় না। যে গভীর ঘুমে থেমে আছে সব স্বার্থ তার কখনও মৃত্যু হয় না এমনকি পৃথিবীর ধ্বংস হলেও সে থাকে অটল।
আর এভাবেই পাথর শুধু সুরের কলকাকলীতে বলতেই থাকে প্রস্থান হোক সকল অপরিমেয়ের...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৫