এমন অনেক বৃষ্টিবিভোর রাত কেটেছে, আমি অপেক্ষায় থেকেছি আপনার সাথে বৃষ্টিবন্দনার কথা বলবো বলে, অথচ- তখন আপনি প্রতিষ্ঠিত যুবকের সাথে ভবিষ্যত মতাদর্শ নিয়ে ব্যস্ত আমার কথা শোনার সময় তখন আপনার সময়ের চেয়ে অনেক দূরে ঝুলে থাকতো, তবুও মনে হতো এই বুঝি আপনার মতাদর্শন আলাপ করা শেষ হলো। হয়তো এক্ষুনি আমাকে রিংব্যাক করবেন... তারপর কথা শুরু হবে।
কখনো এমনটি হয়ে উঠেনি। একদিকে আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন অপরদিকে বৃষ্টি থামছেই না, রাত বাড়ছে নিকটে চলে আসছে সকাল। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সাইকো ভুবেনেশ্বর বলেছিলেন-যে মুহূর্তে তুমি তোমার প্রিয়জনকে মনে করো, সেই মুহূর্তে সেও তোমাকে মনে করে কিন্তু সেটা হয়তো সে সবসময় বলে উঠতে পারে না। এইসব ভুলভাল মিথ্যে শান্তনা দিয়ে মানুষ তার জীবনকে টেনে লম্বা করে দেয় আর মনে মনে সান্ত্বনা খোঁজে।
যখন আমি এভাবেই অপেক্ষায় বসে থাকি রাত বাড়ে, বৃষ্টির তান্ডব বেড়ে চলে তখন কোন কোন দিন ফোনে করাক করাক রিং বেজে উঠে, কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে- এখনো জেগে আছেন?
আমি তার পরিচয় জানতে চাই না, শুধু বলি আপনিও তো ঘুমাননি। সে হাসে, তার হাসি ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির শব্দে। ভেসে যায় ঘর। আমার ঘর জুড়ে সে হাসির রেশ সুগন্ধির মতো ঘুরে বেড়ায়। আমিও মিথ্যে হেসে ওঠার ভান করি। সে বলে আপনার কুঁইকুঁই শব্দের হাসিটা বেশ অন্যরকম। কথা বলার মাঝখানে সে হাই তুলে, বলে, ঘুম পাচ্ছে আজ রাখি।
আমি জানি সে রেখে দেই বললেও ফোন কান থেকে সরাবে না। শুধু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবে, তারপর যখন আমি নির্মীলিত কন্ঠে হঠাৎ গুনগুন করে গাইবো মান্ধাতা আমলের কোন পুরনো গানের লাইন, তখন সে বলবে- আপনি গান খুব ভালোবাসেন তাই না?
আমার উত্তর সন্ধ্যার আগেই সে আবার বলে উঠবে, শুনেছি যারা গান ভালবাসে তাদের মন অনেক শান্ত হয়; সত্যি কি তাই?
আমি কথা এড়িয়ে গিয়ে বলবো, রাত অনেক হলো এবার ঘুমিয়ে পরুন। বৃষ্টি থামবে না আজ। আমাকে যেতে হবে অনেক দূর কোন এক ঘুমের দেশে। তারপর, আমি ইচ্ছা করে ফোন রেখে দেবো। আর কান পেতে শুনবো ওদিকে তখনো চলছে ভবিষ্যতের মতাদর্শন পাঠ।
সাইকো ভবানন্দ বলেছিলেন-তুমি তাকে ভালবেসো, যে তোমাকে ভালোবাসে আর যে তোমাকে ভালবাসে না তার কাছ থেকে দূরে থেকো। ভবানন্দ'র সব বক্তব্যের সাথে আমি কখনো একমত হই না, সব সময় দ্বিমত পোষণ করি।
মধ্যরাত শুরু হওয়ার একটু পরেই আপনার কথা বলা শেষ হয়, আপনি আমাকে ছোট্ট একটি এসএমএস করে জানিয়ে দেন, আজ মনটা খুব খারাপ, আপনার পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়।
ওদিকে তখন বৃষ্টির তান্ডব আরো বাড়তে থাকে, আমার ঘরের চারপাশে জমে যায় জল। আমার ইচ্ছে করে আমি সেই জলে ডুবে বসে থাকি কিন্তু সেটাও পারি না, কারণ আপনার কাছ থেকে তিরস্কৃত হলে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। আমি তখন জানালা বন্ধ করে দিয়ে মোবাইল ফোন থেকে আপনার নম্বরটা ডিলিট করে দেই, মনে মনে একটু শান্তি অনুভব করি কিন্তু আপনার সকল তথ্য সব মাথায় জমে বসে আছে, তা মুছে দেবো কী করে।।
__________
রিভারস্ট্রিট ।। সেপ্টেম্বর ২০২০