♠ চলচ্চিত্র কথন: রঞ্জনা আমি আর আসব না ♠
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
♠রঞ্জনা আমি আর আসব না
♠পরিচালনায়: অঞ্জন দত্ত
♠অভিনয়ে: অঞ্জন দত্ত, পর্ন মিত্রা, উশশি চক্রবর্তী, অমিত দত্ত, লোহিত এবং নন্দন বাগচী সহ আরো অনেকে।
♠সঙ্গীত পরিচালনায়: নীল দত্ত।
♠স্থিরচিত্র: সুপ্রিয় দত্ত।
♠গান : অঞ্জন দত্ত, কবীর সুমন, সোমলতা
♠মুক্তিকাল: ৬ এপ্রিল-২০১১ খ্রি:
♠সময়কাল: ২ঘন্টা ৬মিনিট ১৭ সেকেন্ড।
পুরস্কার: National Film Award for Best Feature Film in Bengali, National Film Award – Special Jury Award / Special Mention (Feature Film), National Film Award for Best Music Direction
_________________________________
♠রঞ্জনার কথা
বাবা-মা হারানো একটা মেয়ের গায়ক হয়ে উঠার গল্প। শুধু গাইতে পারলেই হয়না সাথে চাই গায়কী দৃষ্টিভঙ্গি আর নিজের হাতে লেখা নতুন সব শব্দ নিয়ে গান। গ্রামের একটা কনসার্টে গিটার হাতে গান গাইতে গিয়ে গায়ক অবনীর (অঞ্জনদত্ত) সাথে দেখা হয়ে যায় রঞ্জনার। উনি অফার দেন কোলকাতায় আসার। তারপর ঢ্যাঙ-ঢ্যাঙ করে গিটার কাধে ট্রেনে চেপে সোজা কলকাতা।
এদিকে অবনী বাবুর সঙ্গীত জীবন নিয়ে একটা ডকুমেন্টারী করছিল দীপান্বিতা অবনী সেন সেটা কোন কারন ছাড়াই নিষেধ করে দেন। নেক্সট জেনারেশনের যদি তাকে জানতে ইচ্ছে হয় তাহলে গান শুনবে, কনসার্টে আসবে। এভাবেই বেড়িয়ে আসেন। সিনেমার এ অংশে দারুন একটা গানের কিছুটা অংশ শুনতে পাই। দেখতে পাই অবনি সেনের রঞ্জনাকে ঘিরে মদ্যপ অবস্থায় অসংলগ্ন আচরণের এক দৃশ্যপট যার মূলে ছিল অতীতে হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী ও আগত সন্তানের অকাল প্রয়ান। মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভ করে সেদিনের সেই ঘটনা অবনী সেনের জীবনকে মাঝে মাঝে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। সিনেমায় আরো একটা চরিত্র দেখতে পাই এলবিস। কেয়ারটেকার হিসেবেই পুরো সিনেমায় যার উপস্থিতি। পরদিন অবনী সেনের সেই আচরণের জন্য রঞ্জনা অভিমান করে চলে যায়। তার ভেতরে ভয় থাকে যে মদ্যপ গায়কের সাথে থাকলে যে কোন সময় সে রেপড হতে পারে।
একজন শিল্পী কেন গান ছেড়ে দেয়? কেন মনে হয় তার আর গান গাওয়ার প্রয়োজন নেই। গান ছেড়ে প্রাণের মানুষের সাথে মিশে থাকার কথা বলেন একজন শিল্পী (সুমন) অবনী সেনের ভেতরে নতুন চিন্তাধারা প্রকাশ পায়। রঞ্জনার ফেলে যাওয়া গানের খাতাটা থেকে সিনেমার পথচলা শুরু হয় আবার। খাতা ফেরত নিতে এসে গানের তর্ক-কথায় জড়িয়ে যায় রঞ্জনা। শুরু হয় গিটার সাধনা।
গান লুকিয়ে থাকে অলি-গলি অথবা রাস্তায় এমনকি হাজার লোকের ভীড়ে। গান লুকিয়ে থাকে আমাদের জীবনের নোংরা নীড়ে শুধু শব্দগুলো খুজে নিতে হয়। এভাবে গান নিয়ে বলতে বলতে হঠাৎ হারিয়ে যেতে বলে রঞ্জনাকে, সে হারিয়ে না গিয়ে খুজে আনে মেটাল ব্যান্ড এর সানিকে এবার গান প্রসঙ্গে চলে আসে রবীন্দ্রনাথ, কে কয়টা গান গেয়েছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে? “শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা” ব্যাস তারপর থেকে চলছে এভাবেই। কালজয়ী গান এখনো পুরোনো ঝুলিতেই বন্দি, নতুনদের হাত থেকে আর তেমন গান কোথায়? সিনেমার এ অংশে সুমন,অঞ্জনের কন্ঠে বেজে উঠলো রবীন্দ্র সঙ্গীত। কেউ কেউ জীবনকে এত বেশি ভালোবেসে ফেলে যে সেখানের গানের প্রয়োজন হয়না তবুও মানুষ গান শোনে এবং গায়।
পার্ক হোটেলের নাইট ক্লাবের গান দিয়ে রঞ্জনার কোলকাতায় গান গাওয়া শুরু হয়। আমি-তুমি আর ধুম-ধারাক্কা গানের মাঝে শৈল্পিক কথার গান কে শুনে? তাও আবার মহিলা রকষ্টার? সেই ব্যর্থতা! শ্রোতা ততটা মগ্ন নয় যতটা ভাবায় গানের কথা। রঞ্জনার লেখা নিয়ে এ্যালবাম হয় তাও আবার একটা গান নিয়ে-তুমি আসবে বলে তাই, আমি স্বপ্ন দেখে যাই। নাহ সেখানেও ব্যার্থতা। অনেক তারার ভীড়ে নতুন কেউ কাট-পিস তাল-সুর-লয় বাদ শুধু মৌলিক গান নিয়ে পাঠকের কাছে পৌছে যাবে সেটা খুব সম্ভব নয়। কলকাতায় হয়তো কিছুটা ভাবা যায় তবে এ দেশে একেবারেই নয়।
শেষ পর্যন্ত অবনী বাবু ষ্টার আনন্দ’র দীপান্বিতার কাছে ছুটে যান টিভিতে রঞ্জনার একটা প্রমোটের জন্য কিন্তু অবনী বাবুর জন্মদিনে ওয়াইন গ্লাস নিয়ে ঘটে যায় অতীত আর বর্তমান এর সব ভুল নিয়ে তিক্ততা। আবার অবনী বাবুর বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় রঞ্জনা।
একজন শিল্পী তার ব্যাক্তিগত জীবনে খারাপ হতেই পারে আর তাতে কিন্তু তার সৃষ্টিতে বাধা না আসলেও তার বড় পরিচয় যে সে একজন মানুষ সেটা ভুলে গেলে বাকী থাকেনা কিছুই। দীপান্বিতা রঞ্জনার বাইট নিতে এসে দেখে সে উধাও! অবনী বাবুর কাছে তার জীবনের হেরে যাওয়ার গল্প বলা হয়ে যায়। রঞ্জনাকে খুজে পাবার কথা বলে এবং এক বাঙলা ব্যান্ড দলের সাথে এক হোটেলে থাকার সন্ধান দেয়। তারপর ধুন্ধুমার! এবং একদল নেশাগ্রস্ত লোকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর টিভির পর্দায় আসে রঞ্জনার উপস্থিতি। ছড়িয়ে পড়ে খুচরো পয়সার মতো তার কন্ঠ নিয়ে। প্রতিভাবান মানুষ গুলো হিট হয়ে যেতে পারে একটু সুযোগ পেলে, সেটা কজন পায়? ভাগ্যিস রঞ্জনা পেয়েছিল আর তাই গান নিয়ে উঠে আসে মঞ্চে। আর ওদিকে অবনী সেন অসুস্থ বিছানায় এবং সুমন গান নিয়ে গ্রামের পথে। ভালো অনুভুতি থেকে ভালো কিছু হয় তার সাথে প্রয়োজন একটু ভালোবাসা। শুধু ভালো কিছু নিয়ে জায়গা দখল করে থাকলেই চলে না নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। ওদেরকে একটু সুযোগ দিতে হয়। ওরাও গেয়ে উঠুক নতুন কিছু সৃষ্টির উন্মাদনায় কিন্তু ক’টা সেলিব্রেটি এ কাজ করে? পৃথিবী বড় স্বার্থপর!
সিনেমার গল্পটা শেষ হয়ে আসে রঞ্জনার গান নিয়ে এবং অবনী সেনের অন্তর্ধান দিয়ে। পরিচালক অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় নবম চলচ্চিত্র এটা। যারা অঞ্জন দত্তের গান শুনেন তাদের কাছে পুরোনো গান গুলোই নতুন ভাবে ধরা দেবে নতুন রুপে। অবনী সেনের (অঞ্জন দত্তের) অভিনয় বা চরিত্রটি অতি রঞ্জিত লেগেছে কোথাও কোথাও। দীপান্বিতার চরিত্রটিতে ঢলে পড়ার বাই টা না থাকলে খুব একটা খারাপ হতো না। কবীর সুমনের সামান্য উপস্থিতির আকর্ষণটা শ্রোতাকে ধরে রাখতে পারবে। আর রঞ্জনার কথা না হয় যারা সিনেমা দেখবেন তারাই বুঝে নেবেন। যেহেতু গান নিয়ে ছবি সেহেতু সংলাপ গুলোতেও শৈল্পিকতা রয়েছে। তবে খুচরো ইংরেজী সংলাপ গুলোও খারাপ লাগেনি। আশা করি যারা অঞ্জন দত্তের অভিনয় বা গান ভালোবাসেন তারা এদ্দিনে সিনেমা দেখে ফেলেছেন। যদি না দেখে থাকেন তো দেখে ফেলুন। খারাপ লাগাটা তরতরিয়ে বেড়ে উঠবে আর সেই সাথে আরও কিছু নতুন ভাবনা।
____________________________________
♠সিনেমার কয়েকটি গানের শিরোনাম:
১. রাস্তা-অঞ্জনদত্ত
২.অন্ধকারের পরে-সোমলতা
৩.রঞ্জনা আমি আর আসব না -অঞ্জন দত্ত
৪. গানওয়ালা- কবীর সুমন
৫. বৃষ্টি- অঞ্জন দত্ত
৭. চল যাই- সোমলতা
৮. সবাই- অঞ্জন দত্ত
৯. জাগরনে যাই বিভাবরী-সোমলতা, অঞ্জন দত্ত, কবীর সুমন
১০. তুমি আসবে বলে- সোমলতা
সিনেমার গানের পুরো এ্যালবাম ডাউনলোড লিংক
___________________________________________
রঞ্জনা আমি আর আসব না সিনেমাটি ডাউনলোড করুন এখান থেকে
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন