সে আমার দিকে দু’হাত তুলে বললো আমার দু’হাত রাঙিয়ে দিবি? কান্না আমার গলায় আটকে আছে ভেতরে নিতে পারছিনা। কষ্ট গুলো দু’হাতের মেহেদী আল্পনায় আলোকিত।
সারাটা দিন শুধু ঘর বন্ধ। বাইরে মস্ত এক তালা! রুপোর চাঁবি থাকে শেফালীর আচঁলে। ও চাঁবির ছুটি নেই। ঝুলে থাকে সেফটি পিনের মতো বুক ভরা অভিমান নিয়ে। অভিমানের শব্দ ভরতি চিঠি বুকে নিয়ে বসে আছে জোনাক গুলোও। ওরা বসে থাকে তনুকে ঘিরে। চোখের উঠোনে শুধু দেয়াল ভাসে। একপাশে রয়েছে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা ত্যাক্ত-বিরক্ত ক্যালেন্ডারটি। টেবিলের এক কোনায় পড়ে আছে কপাল-কুন্ডলা। মাঝে মাঝে যার পাতায় চোখের জল পড়ে কুন্ডলী পাকিয়ে যায়। সে কুন্ডলীতে ধোয়া নেই আছে শৈথিল্য। সাঁঝ সকালে শুধু খাবার এসে দাড়ায় শেফালীর হাত ধরে। জানালার ধার দিয়ে খানিকটা আকাশ বন্ধুর মতো ঝুলে থাকে। বৃষ্টি অথবা রোদ শেফালীর আঁচল ধরে দরজা পেড়িয়ে যায়। ওদের আক্ষেপ থাকে তনুর মুখটা দেখবার। আক্ষেপে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। তনুর প্রসাধনীবিহীন মুখটা শুধু আয়নাকে দেখে, দেখে উসকো চুলের খুচরো প্রলাপ। কতকাল উঠেনি সিদুঁর সিথিঁতে তার।
রোজ গ্রামবাসী পথের ধারে কথার গুলি ছোড়ে- তনু কি সত্যিই পাগল হইছে? নাকি হুদাই ঢং করে?
কদম, বকুল, পলাশ গাছে বন্ধ ঘরের অসহায় স্মৃতির ঘুড়ি উড়ে। সুতো নেই তবুও ওদের অভিমান। তনু পুরোটা আকাশ দেখতে পায়না। সেই ছোট বেলাকার ঘুড়িটি বকুল, কদম, পলাশ গাছের উপর দিয়ে ডেকে যায় তনু! তনু! তনুশ্রী। চাঁবি ঝুলে আছে শেফালির আচঁলে। ছ’বছর আগের কোন একদিন যার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখনো ঝুলে আছে মস্ত অভিমানে। সিথিঁতে সিঁদুর উঠেছিল সেই যে কবে। কেউ জানেনি। তারপর থেকে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেল তার সিথিঁ। আর কখনো সে হাসবে কি-না কেউ জানে না। তার যে অসুখ বড়। জোছনা অসুখ।
রোজ লুকিয়ে প্রলাপের সাক্ষি হই। আমার মধ্যমায় ব্যার্থতার বাঁসা। আমি আহত হই। ইচ্ছে করে একদিন রুপোর চাঁবি দিয়ে ও তালা খুলে দেই। তনু বেড়িয়ে আসুক। চিৎকার করে বলুক-আমি বাতাসে দ্বিহৃদয়া হইনি। কেউ একজন চাঁদ বুনে দিয়েছিল জঠরে। সেই কবে গলায় খিড়কি এটেঁ দিয়েছিল সমাজ। নির্বাক তনু। অভিমান ঝুলে থাকে তার ক্যালেন্ডারের গায়। শুনেছি কর্মফল বড় বিচিত্র! সময় তার করাতকলে নিঃদ্বিধায় তুলে নেয় শুভ-অশুভ সব ক্রিয়াদি। সময় এভাবেই ঘুড়ির ডানায় ভর করে তনুকে জাগিয়ে তুলে। কপাল কুন্ডলার পৃষ্ঠা যায় উল্টে। রুপোর চাবি পড়ে থাকে পথের ধূলোয়। পড়ে থাকে কদম, বকুল, পলাশ। একদিন খুব গোপনে কুড়িঁয়ে নিয়ে খুলে দেই অভিমানি তালাকে।
তনুকে রাঙিয়ে দেব। মেহেদী রঙে। আমার হাত ভরতি মেহেদী।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩