somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মধ্য রাতের শূন্য দোলনায়

১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


০১.

বাইরে ঝুপঝাপ বৃষ্টি হচ্ছে।
বজ্রপাতের কমতি নেই। গগনবাসীরা কামার দাগাতে ভালোই জানে। হাতের নিশানা উলট্ পালট্ হলেও মাঝে সাঝে কুড়েঁ ঘর ফোঁড়তেও দ্বীধাবোধ করে না।
আমি বৃষ্টিতে পা রাখলাম। অমনি অভ্যর্থনা জানাতে সাদাবরফ ছুড়তে লাগলো গগনবাসীরা। কাদামাখা ঘাস, সবুজ আঙ্গিনা, সাদা তুলোর মতো হয়ে গেছে।
ভেতরে এলাম চলে। বৃষ্টির ছাট তাড়িয়ে নিয়ে এলো।

০২.

আলো ভরতি ঘরটা আমার আলো শূণ্য করলো কে?
আধারটা করতাল বাজাচ্ছে। হাতরে দিয়াশলাই খুজছি। টেবিল থেকে র‌্যাকে,তারপর টিপয় ঘুড়ে হাত পড়লো নাক সম্বলিত একটা মুখে। এ,কি শূন্য ঘরে প্রানী এলো কোত্থেকে !!!
ভাবলাম ভাস্কর্যটা বোধহয়। আরে ওটা তো ডানসাইডে!!
আমি তো এখন বামে।
তাহলে...............

০৩.

কে আপনি ?
আর আমার জীর্ন কুঠিরে কি হেতু আগমন ? সামান্য আলো জ্বাল্লাম। একদম চুপ। ভেজা কালোপেড়ে একটা শিফন শাড়ী জড়িয়ে।
নাকফুলটা চকচক করে জ্বলছে। মাথার চুল ভেজা। কফি কালার আধাঁরে,পুরো মুখ দেখবার জো নেই। চুলে ঢাকা একাংশ। শরীরটাও ভেজা।
-আমাকে কিছুক্ষণের জন্য একটু আশ্রয় দিন” ভেজা গলায় বলে উঠেলো অপরিচিতা। কন্ঠে মেশাল রঙের আকুঁতি। চেনা ঠেকলো। একদল পশু আমাকে পেলে ছিড়ে খাবে রাস্তার ধারে; কথাটা বলেই থেমে গেল ও।
আমার কুড়েঁটা কিন্তু সুরক্ষা দেবার মতো তেমন উপযুক্ত নয়; বলে আমি বসলাম। কিন্তু কেন আপনাকে ধরবে প্রশ্নটার উঁকি ঝুকিঁ মনের দেয়ালে আকিঁবুকিঁ করছে।

ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো এলোমেলো একরাশ কথা।
জানলাম দৈনিক কখগঘচ’র ক্রাইম রিপোর্টার। ধাতস্থ হতে পারছিনা। গগনবাসীদের কামান দাগার শব্দে বরফ হয়ে আছি।
মন মনিটরে ভেসে উঠলো, একটা পুরোনো কথামালার কিছু ছিন্নচিত্র। মনে হলো সে,তো পরিচিত।
এই সময় হঠাৎ দমকা তার ঠমকা মেরে আলোটা খেয়ে ফেললো।
এবার আর শূণ্য রইলো না কোথাও। কালো রং ঢলে পড়লো সবখানে।
দেখা হলোনা অপরিচিতার মুখটা। কবাট খোলার মৃদু শব্দটা কর্নের সাথে বেঈমানী করলো। একটা হ্যাচকা টান কালো পেড়ে শাড়ীটাকে বাইরে নিয়ে গেল। পিছু হটলাম না। জাপটে ধরলাম। গগনবাসী বিনা কারনে বর্ষণ অনুষ্ঠানে হঠাৎ টর্চ জ্বালানো বন্ধ রেখেছে। তাই চোখ এবার কালো রঙের সমুদ্র দেখছে চারিধারে।

০৪.

নিষেধ মানছে না।
ছুড়ির ফলাটা ঢুকিয়ে দিলো; ব্যাকা ত্যাড়া হয়ে ঢুকে গেল উরুতে। ককিয়ে উঠলাম। লাল স্রোতের ধারা বইছে। ওরা টেনে হিছরে নিয়ে যাচ্ছে অপরিচিতাকে।
আমি খোড়া হয়ে আছি। ঝুপঝাপ বৃষ্টি। ক্রমে বাড়ছে। মুষল ধারে। এটাকে কুকুড়-বেড়াল বৃষ্টি বলা যায়। গগনবাসীদের কি হলো আজ ঢালাও বর্ষন চালাচ্ছো কেন ?
পড়নের শার্ট ছিড়ে বাধলাম উরুতে। আবার পিছু ছুটলাম।
অপরিচিতার আর্তনাদ আমাকে ঘোড়া পাগল করে ছুটালো গলি থেকে পথ। আমি থামছি না। আমার পায়ে খিল ধরে গ্যাছে।
গগনবাসী আজ বর্ষণ ধারায় ক্ষেপেছে। হুশ হারা পা’টা আতি পাতি করে খুজে একটু বিশ্রাম চাইছে। সে,হবেনা। প্রতি মুহুর্তে দংশন ভয় আমাকে তাড়া করছে। ছুটলাম আবার। কোথায় নিয়ে চললো ওকে। ছুটছি তো ছুটছি। পথের ধারে বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে কোরাস তুলছে স্রোতের ধারা।

০৫.

কালো সময় দীর্ঘ হচ্ছে। আরো দীর্ঘতর। আমি ছুটছি কালো রাতকে গায়ে মেখে। গগনবাসীরা টর্চের আলো ফেলে পথ দেখাচ্ছে আমায়। কাঁদপানি মাড়িয়ে আমি থমকে গেলাম।
দশভূজা মন্দিরের বটগাছটা কাদঁছে যেন। পিঁ-পিঁ একটা শব্দ। আমি বাকশূন্য।
কালোপেড়ে শিফন শাড়ীটার আচঁল,দুলছে মগডালে। চক্ষু চড়কগাছ হবার জন্য ছলকে উঠলো।
কি, মায়াঢালা দু’টো চোখ অপরিচিতার। গগনবাসীদের কৃপায় দেখতে পেলাম। আমি কাদায় শুয়ে পড়তে চাইলাম। গগনবাসী আবার
টর্চ জ্বাললো। মানুষ মুখোশ পড়া নেকড়ের দল; গলায় শাড়ী পেচিঁয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে শূন্যের দোলনায়।

মুখটা চেনা যেন লাগছে। আপন কেউ নয়তো।
তিন কূলের আপন’রা তো গা’ঢাকা দিয়ে আছে। না হোক আপন। কিন্তু খুব চেনা লাগছে কেন ?
আবার মুখ উচুঁ করে থাকলাম। গগনবাসী বিনা চার্জে আরেকবার টর্চ জ্বাললো। এবার চোখ কি জানি বুঝে ফেললো। নোনা পানি ছাড়ছে আপনমনে।
আরে; এ,যে প্রেমা। হঠাৎ করেই পায়ের যন্ত্রনাটা কুন্ডলি পাকাচ্ছে।
তিশি পরিমান ভালোবাসার প্রার্থী ছিলো যে, এই অপরিচিতা। যে এখন মগডালে শূন্য দোলনায়। আমি ছন্নছাড়া তাকে তা দিতে পারেনি।
এই অনাথ; কারো সংসারে আস্তাকুড়ে ফেলে রাখা আবর্জনা হয়ে বেচেঁ থাকতে চাইনি। চার্চে থেকে নিজে কিছু করতে চেয়েছি। এক ভরদুপুরে পথ ফুড়েঁ এসে, প্রেমা প্রেম নামক দাওয়াটা চেয়ে বসলো ভালোবাসার রোগ সারাবে বলে।
আমি দেইনি। কিন্তু গহীনে সুপ্ত হয়ে থেকেছে।
সামনে থেকে ফেরালাম মন থেকে ফেরাতে পারলাম কি !!

০৬.

কালো রংটা ছেয়ে যাক সমস্ত ভূবণ। আলো চাইনা। আমি চোখ খুলবো না।
দেখতে পারবেনা শূন্যে ঝুলে থাকা। গগনবাসী আলো চাইনা। আরো বর্ষণ চাই। রাতটা দীর্ঘ চাই। আমি অন্ধ হতে চাই।
আমার চোখ ঝলসে দাও তোমাদের বজ্রকামানে।
ভোর হয়ে আসছে। আমি হাটু গেড়ে বসে আছি বটতলে। গগনবাসীরা ঘড়ে ফিরছে। সাথে নিয়েছে শূন্যে ঝুলে থাকা প্রেমা কে। ভোর হলেই এক দঙ্গল চারপেয়ে’রা আমাকে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির কারাগারে ছুড়ে দেবে টিস্যু’র মতো। তাই বেঁচে থাকার নয় মধ্য রাতের শূন্যটা
আজ হাহাকারটা কাদঁছে নোনা পানি ফেলে, গগনবাসীদের দূয়ারে।

-------------------------সমাপ্ত -----------------------------

প্রচ্ছদ পরিকল্পনা- আমি নিজেই
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪০
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×