
গল্প: অপূর্ন প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
প্রথম পর্বের পর
০৩.
শ্যামা আচঁলটা ধরে নিয়ে আবার শুরু করলো। আমি যে গল্পটা বলছি গল্পের মেয়েটি এ নগরেরই।
ধরুন তার নাম রুপা, আমি বললাম হ্যাঁ ধরে নিলাম তবে আপনি গল্প শেষ না করে থামতে পারবেন না কিন্তু। শ্যামা হেসে গিয়ে বললো ঠিক আছে; শুরু হলো গল্পটা;
বসন্তের কোন এক সকালে রুপা সেই তেলেভাজার দোকানটায় দাড়িয়ে আছে,আইসক্রিম হাতে নিয়ে। আইসক্রিম জিভে ছোয়াবার পর দোকানদারকে যখন টাকা দিতে যাবে তখন দেখলো ভাংতি নেই কিন্তু দোকানদার ব্যাটা নাছোড়বান্দা টাকা না পেলে ছাড়বে না। কি অস্বস্থি ব্যাপার; সাথে থাকা ক্লাসমেট ইতি আনমনে আইসক্রিম খাচ্ছিলো রুপা মৃদু ধাক্কা মেরে বললো মুখপুড়ি আইসক্রিম যে খাচ্ছিস টাকা দিবি কোত্থোকে; চেচিয়ে উঠে ইতি বললো কেন; তুই তো আমায় ডেকে আনলি টাকা কি তবে আমি দেব?
-রুপা বললো তা ঠিক কিন্তু ভাংতি নেই যে;
-তাহলে বল কাল দিবি।
-বললেই হলো এটা কি তোর মামুর দোকান নাকি,ও ব্যাটা আমাদের বাকী দেবে না।
রুপা আর ইতি দাড়িয়ে আছে কেউ তো আসবে তেলেভাজা খেতে দেখা যাক কি হয়। হঠাৎ ফুল হাতা শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে শ্যামলা মতোন একটা ছেলে এসে আইসিক্রিম নিল।
ছেলেটার কোকড়ানো চুল কিন্তু চোখে পড়ার মতো। রুপা ভাবলো এবার ভাংতি হবে নিশ্চই।
না বিপত্তি বাড়লো ছেলেটা পাচঁ টাকার একটা নোট দিতেই দোকনি বললো ভাংতি নেই একসাথে রেখে দিলাম তোমরা ওকে ভাংতি করে দিয়ে দিও। বলে কি !! রুপা বলে উঠলো কি বলছেন ওনাকে আমরা চিনি না।
দোকানি হাসতে হাসতে বলে হয়ে যাবে।
রুপা কি যে, করবে ভাবতে পারছে না এদিকে কলেজ ক্লাসের টাইম হয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় ইতি বলে উঠলো এই,যে মিষ্টার, কাল এখানে এসে তিনটাকা নিয়ে যাবেন। ছেলেটা বললো না, লাগবে না। রুপা বলে উঠলো তাই কি হয় পরিচিত না হলে আমরা কারো টা খাইনা। ছেলেটা এগিয়ে এসে বললো তাহলে চলুন পরিচিত হই। ততক্ষণে ইতি আর রুপা কলেজ পথে হাটতে শুরু করে দিয়েছে; পিছু পিছু ছেলেটা আসতে লাগলো। একটু পাশে এসে বললো পরিচয় না দিন সমস্যা নেই তাই বলে টাকাটা আমি ফিরত নেবো না।
-ইতি বললো পরিচিত হতে হবে না; কাল কলেজ গেটে দাড়াবেন টাকা পেয়ে যাবেন।
-দ্ররিদ্র হলেও ভিক্ষুক মনে হচ্ছে না নিশ্চই আমায়; শেষে কি,না তিনটে টাকার জন্য হাত পাতবো। তাও আবার কলেজ গেটে কথাটা আনমনেই বলে উঠলো কোকড়াচুল ওলা ছেলেটা।
- হাত পাতার কথা তো বলিনি বলে ঝাজিয়ে উঠলো রুপা ।
সেদিন আর কথা বলার অবকাশ পায়নি রুপা; একে তো পথ চলতে সবার উৎসুক নজর আসছে, তার উপর ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে। কলেজ গেট আসার আগেই ছেলেটা অবশ্যি লা,পাতা হয়েছিলো। রুপা তারপর কদ্দিন মনে মনে খুজেছে টাকাটা ফেরত দেবার জন্য কিন্তু পায়নি।
মাস খানেক পর কলেজে বৈশাখী রচনা প্রতিযোগীতায় হঠাৎ করেই রুপা’র সাথে দেখা হয়ে গেলো অবশ্যি চিনবার কোন উপায় থাকতো না, কিন্তু সেই শার্ট আর কোকড়ানো চুল মনে করিয়ে দিলো আরে সেই তো, রুপা হাত নেড়ে ডাকলো এই,যে এই ভীড়ে ডাক শুনে কি,না সন্দেহ। সেদিন অবশ্যি লোকের চোখকে ভয় করেনি রুপা এতো ভীড়ে কেই বা আর দেখবে। এতো ভীড়ে কি, করে যে শুনে ফেললো ছেলেটা সেটা বুঝতে পারলো না রুপা। সামনে এসে বললো ডাকছিলেন; রুপা বললো হ্যাঁ।
রুপা ব্যাগে হাত ঢুকালো ওমনি ছেলেটা বলে উঠলো মাফ করবেন আমি টাকা নেবো না। কেন নেবেন না বলে দাড়িয়ে উঠলো রুপা ছেলেটি বললো সেদিন আপনাদের তিনটে টাকার আইসক্রিম খাইয়ে মনে মনে একটা সুখ অনুভব করেছিলাম; আজ যদি সেই টাকাটা নেই তাহলে আমার সুখটা নষ্ট হয়ে যাবে। রুপার জেদ চেপে গেলো বললেই হলো, আপনার টাকাটা যে পর্যন্ত ফেরত না দেবো আমার ভালো লাগবো না তার উপর আপনি আবার আমার অপরিচিত; আমি আবার অপিরিচিত কারো কিছু নেইনা এই পর্যন্ত বলে থামলো রুপা।
ছেলেটি হাত জোড় করে বললো দেখুন টাকা নেবো না; আমরা দু;জন এক নগরের বাসিন্দা ভিন গাঁ, তো- আর নয়। রুপা বললো তা ঠিক আছে কিন্তু। রুপার কথা শেষ হলো না ইতি এসে হাজির বলে বসলো আরে সেদিনের আপনি না; জানেন কতো খুজেছি তিনটে টাকা দেবা’র জন্য; আজ কিন্তু নিতে হবে।
ছেলেটি অপ্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে রইলো; রুপা আবার বসে গেলো; বললো আপনার নাম কি ? থাকেন কোথায়? কলেজ পড়েন বোধ হয়? কোন ইয়ার? হাত উচিয়ে ছেলেটি বলে উঠলো যারা ধীরে;সে; থামুন এবার; নাম সুমিত; রেল কলোনি থাকি। সেকেন্ড ইয়ার। রুপা বললো ও তাই।
ইতি মাঝখান থেকে বলে উঠলো আমি ইতি, রিভার ষ্ট্রিট সেইম টু ইয়ার।
রুপা চুপ মেরে আছে। কয়েক সেকেন্ড পর কোকড়াচুল ওলা সুমিত রুপা’র দিকে চেয়ে বললো আপনি? রুপা বললো আমারটা না জানলেও চলবে। সুমিত কিছু বললো না বলে চলে যাচ্ছিলো; পেছন থেকে রুপা বলে উঠলো সুমিত শুনুন আপনি রেল কলোনির কোন সাইডে থাকেন? সুমিত বলে উঠলো কেন বাড়ি গিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে আসবেন নাকি? রুপা বললো না সে জন্য নয় তবে টাকা আপনাকে দেবই । ও আচ্ছা !! বলে সুমিত চলে গেল।
এভাবেই সুমিতের সাথে রুপা’র পরিচয়ের সুত্র ধরে একসময় ভালোলাগা শুরু হলো। রুপা ভীষণ চাপা স্বভাবের মেয়ে সুমিত সেটা কদ্দিন পড়েই টের পেল; তবে খুব মিশুক অল্পতেই কারো মনে জায়গা করে নেয়ার মতো সব রকমের দক্ষতা আছে রুপা’র। লোকে বলে এ বয়সের কাঁচা দিনগুলিতে কাঁচা প্রেম হয় বাঁধ ভাঙ্গা আর এ প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগে না। রুপা’র ও বেশি সময় লাগলো না। তবে সত্যি বলতে রুপা সুমিতে’র জীবনটাকে ভালোবেসে ফেললো।
রেল কলোনির পাশেই একটা ঝুপরিতে থাকতো সুমিত। টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাতো। তাছাড়া অবসরে কড়া রোদ্রে রাস্তায় দাড়িয়ে হকার হয়ে পত্রিকা বিক্রি করতো। অভাব গোচাতে বিয়ে বাড়ি কিংবা গায়ে হলুদের ঘর সাজানোর কাজটিও করতে হতো।
সুমিত যে ঘরটাতে থাকতো রাতে বৃষ্টি হলে বিছানা ঘুটিয়ে বসে থাকতে হতো সারারাত।
সকালে পেটে আহার জুটতো বছরে মোটে গড়ে একশো দিন। অভাবি সংসার। কিন্তু পরিবারের সবাইকে ভালোবাসে খুব। সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় হলো লেখালেখি করার ভীষণ ঝোক।
ভাঙ্গা একটা টেবিলে বসে লেখে;
মশার কামড়, পারিবারিক কলহ আর অশান্তির মাঝেই চলে লেখালেখি ওর কলম এই ঝড়-বাদলেও থামে না।
রুপা মাঝে মাঝে ওর কবিতা শুনে অবাক হয়। ওর লেখালেখিটাকে ভালোবেসে ফেলে আর তার সুবাদেই তাগদা কদ্দিন পরপর নতুন কবিতা লেখার।
একদিন বিকেলে রুপাদের বাসার পিছনে কাচুমাচু হয়ে কখন যে সুমিত দাড়িয়ে সেটা রুপা জানে না। প্রতিদিনের অভ্যাস মতো হঠাৎ জানালা খুলে দেখে সুমিত দাড়িয়ে। অবাক হয়ে যায় রুপা কি ব্যাপার তুমি এখানে!!
বাইরে বেড়িয়ে চোখ রাঙ্গায়; ডাক দাওনি কেন?
সুমিত হেসে বলে ভয়ে; তোমার বাবা যা রাশভারি লোক কিছু যদি বলে। রুপা চোখ নামিয়ে বলে, বলতে ক্লাসমেট। সুমিত আবার হেসে বলে আমার মতো, বোতাম ছাড়া জামা পড়া, তেলহীন চুলের ছন্নছাড়া, ছেলেটা তোমার ক্লাসমেট হয় কি করে!!
রুপা ধমক দিয়ে বলে ক্লাসমেট তো ক্লাসমেট সেখানে বোতাম ছাড়া আর ছন্নছাড়া হলে কি সমস্যা সুমিত বলে ষ্টুডেন্ট মানে পরিপাটি বেশ ভূষা। রুপা রেগে বলে হয়েছে নিজেকে এতো ছোট ভাবা ঠিক না।
পুকুর পাড়ে এসে রুপা বললো কি জন্যে এসেছিলো? সুমিত মাটির দিকে নজর দিয়ে বলে না মানে পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে ; বন্ধুরা বলে কিছু দক্ষিণা দিতে হবে ওরা তো জানে না পকেট আমার গড়ের মাঠ।
রুপা ঘর থেকে দু’শো টাকা এনে দিলো কিন্তু সাথে একটা শর্ত জুড়ে দিলো ফেরত দেয় যাবে না। সুমিত বললো ফেরত দেবে; কিন্তু রুপা আবারো চোখ রাঙ্গাতেই সুমিত চুপ মেরে গেলো। রুপার ভীষণ খুশি লাগছিলো সুমিত একদিন ভালো লেখক হতে পারবে। সংসারের অভাব কিছুটা দূর হবে একদিন যদি ভালো লেখক হয়ে যায় সুমিত তাহলে তার আনন্দ আকাশ ছোবে। আর যাই হোক দু,মাইল হেটে টিউশনি করাতে হবে না; কিংবা কারো জন্মদিন বা বিয়েতে আর ঘর সাজাতে হবে না সুমিত কে।
রুপা’র চোখ কতো দিন দেখেছে ছাতাহীন সুমিত কে ভিজতে ভিজতে কলেজে। কাঠ রোদ্দুরে পথের ধারে পেপার বিক্রি করছে সুমিত; রুপার ইচ্ছে হতো আচঁলে ঘাম মুছে দিতে কিন্তু তা তো সম্ভব ছিলো না। দিন দিন সুমিত রুপা’র অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাচ্ছিলো রুপা সুমিত কে ভলোবাসার মহামন্ত্র দিয়েছে তাই পিছু ফিরবার আর অবকাশ পায়নি।
সুমিত বলতো ওর জীবনের মোড় নাকি ঘুড়িয়ে দিয়েছে রুপা। হয়তো সত্যিই তাই আর রুপা’র অবস্থা তারচেয়ে জটিল হয়ে গিয়েছিলো।
০৪.
এক বর্ষায় রিকসা করে ঘুড়ছিলো দু’জনে; হঠাৎ রুপা’র সেই রাশভারি বাবার চোখে পড়ে গেলো। রুপা ভাবতো বাবা মেনে নিবে মেয়ে বড় হয়েছে বুঝতে শিখেছে একমাত্র মেয়ে বাবা নিশ্চই না করবে ,না। কিন্তু সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি সমস্যা জট পাকাবে এভাবে। ওদের ভালোবাসা সমাজ, পরিবার তো কোনদিন মেনে নেবে না। এসব যেনেও থেমে থাকেনি ওদের ভালোবাসা।
আসলে ভালোবাসার মনে হয় একটা মধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে যা কাছে টানে। বর্ণ,ধর্ম, উচু,নিচু ভাববার সময় দেয়না ভালোবাসা।
সুমিতের কিছুই নেই; রুপাকে যে কোথায় বসতে দেবে সে জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। অথচ বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে বসে আছে । একবার টিউশনির টাকা বাচিঁয়ে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলো রুপাকে।
সে শাড়ি হাতে নিয়ে আনন্দ আর কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো রুপা’র; যে ছেলেটি ভালো খেতে পায় না; ভালো পড়তে পায় না। অথচ ভালোবাসার জন্য কি আকুতি !!
রুপা ভাবতো এতো প্রেম সইবে তো।
এভাবেই চলছিলো পড়াটা শেষ করে ফেললে হয়তো তেমন একটা সমস্য হতো না। কিন্তু ভাগ্যটা যে এতে নিষ্ঠুর ছিলো সেটা বুঝতে পারেনি রুপা। ওর বাবা ব্যাপারটা জেনে মেয়েকে ঘরবন্দি করলো। ওদিকে সুমিত কদ্দিন বাড়ির বাইরে গেটে দাড়িয়ে থেকে ফিরে গেছে। বাবা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি; অপমান করে বের করে দিয়েছে।
সমাজ সংস্কার আর সমাজ সংস্কার কথাটা ভীষন ভাবে কষ্ট দিচ্ছিল রুপা কে। কিন্তু রুপা ঘরে বসেই সিদ্ধান্ত নিলো বেঁচে থাকলে সুমিতকেই বিয়ে করবে। ওর বন্ধুরা বললো তোরা দু’জন দু ধর্মের; সমাজ মেনে নেবে না। তোদের দু’জন কে এক ধর্ম নিতে হবে।
এ কথায় সুমিত প্রথম কদ্দিন খুব কাদঁলো। একটা হাহাকার ছিলো। সারা পৃথিবী জুড়ে একটা ধর্ম দিলে কি এমন ক্ষতি হতো ও ব্যাটার তাহলে আজ এমনটা হতো না।
শেষ পর্যন্ত চোখের জল মুছে মা,বাবা, ভাই,বোন সবাইকে ত্যাগ করে সুমিত ভালোবাসা পাবার জন্য ধর্মান্তরিত হলো। এতো বছরের সম্পর্ক গুলো কে ফেলে দিয়ে শুধু ভালোবাসার তাগিদে সুমিত এসে রুপার হাত ধরলো। রুপা বুঝতে পারলো সুমিত যে হাতটা ভালোবেসে সব ছেড়ে দিয়ে এসে ধরেছে, সে হাত যদি সে ছেড়ে দেয় তাহলে পৃথিবীতে এর চেয়ে আর জগন্য কাজ কিছুই হবে না। আর সুমিত কি বাচঁবে তাকে ছাড়া।
একটা দিন ঠিক করে রুপা সিদ্ধান্ত নিলো সবাইকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসবে সুমিতের মতোই; তারপর দুজন এক হবে।
কাঙ্খিত দিনটিতে বের হতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে গিয়ে আয়নাটা ভেঙ্গে গেল তবুও দমলো না রুপা। ওদিকে সুমিত তো বাইরে দাড়িয়ে তাছাড়া সুমিতদের সমাজ সুমিত কে একঘরে করে দিয়েছে ধর্মান্তরিত হবার দায়ে। সুমিত ভীষণ একা হয়ে গেছে পথে চলতে মা’র সাথে দেখা হলে মা পর্যন্ত কথা বলে না।
সেদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রুপা সোজা কাজী অফিসে চলে গেল। অতঃপর বিয়ে।
তারপর রিকসা করে নতুন ঠিক করা বাড়িতে যাবার উদ্দেশে পা বাড়ালো কিন্তু বিধি বাম মাধবীলতা বিল্ডিং পার হতেই পুলিশ এসে রুখে দাড়ালো। রুপা’র বুঝতে বাকী নেই কে কাজটা করাচ্ছে। একমাত্র মেয়েকে অপহরণ করেছে বলে দাবী করেছেন রুপা’র বাবা। রুপা বাধা দিয়েছে কিন্তু পুলিশ কি আর শোনে।
সুমিতের বন্ধুরা কোর্টে গেছে কিন্তু ওদেরকে এই অপরাধের সাথে যুক্ত করা হবে এই ভয় দেখিয়ে হটিয়েছে।
এরপর কেউ আসেনি আর; সুমিতের পরিবারের সবাই তো এর আগেই ওকে বাতিল ঘোষনা করেছে।
পুলিশ সুমিতকে নিয়ে যাবার পর ওর বাবা রুপা কে ধরে এনে ঘরে বন্দি করেছে। অন্ধ কুঠুরি আর ককে বলে।
তারপর থেকে প্রথম কদ্দিন শুধু রাতদিন ঘুমের ইঞ্জেকশান দিয়ে দমিয়ে রেখেছে যখনি জেগে উঠতো মুখে একটাই কথা সুমিত কোথায়? ওর কান্নার সঙ্গি শুধু ধূসর দেয়ালটা ছিলো আর কেউ নয়।
সমাজের লোকজন রুপার বাবাকে বলেছে কি সাহস আপনার মেয়ের মুসলমানের মেয়ে হয়ে কি,না হিন্দুর ছেলের সাথে বিয়ে!! যেন এটা একটা মহাভারত অশুদ্ধ করার মতো কাজ।
রুপা বন্দিঘরে থাকতে থাকতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো একটু ছাড় পেলেই ভাংচুর করতো প্রায় পাগল। সুমিত ছাড়া আর কোন শব্দ সে বলতো না , খেতো না।
বাড়ির লোকজন অতিষ্ট হয়ে উঠলো শেষে সবে মিলে সাব্যস্ত করলো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়। একদিন বুঝিয়ে সুঝিয়ে সুমিতের সাথে দেখা করাবে বলে দেশ থেকে কলকাতা পাঠিয়ে দিলো।
তারপর সেখানে ওর ট্রিটমেন্ট করা হলো দীর্ঘ এক বছর পর ও সুস্থ মানুষের মতো কথা বলতে পারলো আস্তে আস্তে নিজের অবস্থায় ফিরে এলো। আর ততদিনে রুপা বুঝে গেলো তার ভালবাসা সে হারিয়েছে চিরতরে।
এই পর্যন্ত বলে থেমে গেল শ্যামা।
০৫.
আমি খুব তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। ঘাড়ের পাশটা ঘামে ভিজে কখন যে ঠান্ডা হয়ে আছে সেটা টের পাইনি। আমার চোখটা ছলছল করেছিলো কিন্তু পানি গড়িয়ে পরেনি।
গল্পটা আমাকে একটু স্তব্ধ করে দিয়েছে মাত্র । আমি বললাম আচ্ছা এটা তো সত্য ঘটনা।
আমি কি মেয়েটার সত্যি নামটা জানতে পারি? শ্যামা আচলটা এতক্ষণে ছাড়লো বললো মেয়েটির নাম অপূর্ন। আবার একটা স্তব্ধতা আমার মাঝে।
কাল যে গল্পটা পড়েছিলাম সে গল্পের নায়িকার নামটাই তো অপূর্ন। আমি একটু হাফ ছাড়লাম, হঠাৎ মনে পড়লো আরে গল্পটা তো শেষ হয়নি গল্পের নায়ক সুমিতের কি হলো।
আমি বললাম শ্যামা সুমিতের কি হলো । শ্যামা চুলে ক্লিপ আটকাতে আটকাতে বললো, এখানে চা হবে একটু যদিও আমি খুব একটা চা খাইনা। তবে গলাটা শুকিয়ে গেছে তো তাই ।
ট্রেনটা আরেকটা ষ্টেশনে এসে থেমেছে মাত্র আমি নামলাম। প্লাটফর্মেই পেলাম। চায়ে’র কালার দেখে মনে মনে বললাম মুখে দিতে পারলেই হয়। দু’কাপ নিয়ে এসে উঠলাম,ট্রেন এখানে পাচঁমিনিট থামবে।
আর দু’টো ষ্টেশনের পড়েই ময়মনসিংহ। তের মিনিটের পথ বাকী।
পুরো গল্পটা ততক্ষণে শেষ হয়ে যাবে হয়তো। কামরায় এসে চা দিলাম জিবে ছোয়াতেই বুঝলাম; ছ্যা ছ্যা গরম পানি চিনিকম মার্কা। যা হোক কি আর করা যাবে খেলাম।
শ্যামা বললো মনে হচ্ছে গরম পানি খাচ্ছি আর ওদের আর কি দোষ দেব চিনির যা দাম।
কাপ দুটো ফিরিয়ে যখন দিচ্ছি তখন ট্রেনের হুইশেল শোনা গেল।
কামরায় এসে দেখি শ্যামা হাতপাখা দোলাচ্ছে আমি বসতে বসতে বললাম আচ্ছা কাল যে গল্পটা আমি পড়েছিলাম সেখানে গল্পটা এমনই ছিলো তবে এতো বিস্তারিত না; সেখানে ছিলো জেলখানার নির্যাতনের কথা; ছেলেটির অনুনয়ের কথা; সর্বোপরি ভালোবাসার জন্য তার কষ্ট; করুণ একটা ইতিহাস।
আপনার কাছ থেকে জানলাম যে এটা লেখকের নিজের জীবনের গল্প। আমি পত্রিকাটা আবার হাতে নিলাম শেষের লাইনে চোখ বুলিয়ে দেখলাম সেখানে গল্পের নায়কের শেষ পরিনতি বিষয়ে কিছু নেই জেলখানা পর্যন্তই আছে তাই শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললাম বলুন তো শেষ পর্যন্ত সুমিতের কি হলো ......
শ্যামা বললো সেটা একটু করুন আমি বললাম হোক আমি শুনবো। শ্যামা বললো তাহলে শুনুন
চলবে...............
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৪৭