জোহানেসবার্গের আকাশে পৌছাতে প্রায় ৯ ঘন্টা লাগল কাতার থেকে।ক্যাপ্টেন জানালো যে কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা জোহানেসবার্গ এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবো। আমি উপর থেকে উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কেমন শহরটা, কেমন দেশটা। একটা চাঁপা উত্তেজনা টের পেলাম নিজের মধ্যেই। এত যায়গায় গিয়েছি,কিন্ত এমন অনুভূতি কখনো হয়নি আমার।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ল্যান্ড করলাম ও আর ট্যাম্বো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে।আফ্রিকা!!! এসেই গেলাম!!!প্লেন থেকে নেমে লাগেজ বেল্টের দিকে এগুতেই একটু ধাক্কা খেলাম। এত কালো লোক একসাথে কখনো দেখিনি। বর্নবাদী মনে হতে পারে আমাকে? না তা নয়। এটা সাউথ আফ্রিকা সম্পর্কে এত ভয়ংকর গল্প শোনার কারণেই হয়েছে সম্ভবত।
লাগেজ বেল্টের সামনে অপেক্ষা করার সময় দেখলাম কয়েকজন এয়ারপোর্ট কর্মী বিভিন্ন সিরিয়স কাজ করছে কিন্ত শরীরটা বাজতে থাকা মিউজিক এর সাথে সাথে দুলাচ্ছে।এরা আসলেই খুব আনন্দ প্রিয় জাতি।ইমিগ্রেশানের লোকটার আমার সাথে বিভিন্ন মজা করলো। আমার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বললো, "ফ্রম বাংলাদেশ? হাউ ইজ এভরিওয়ান ইন বাংলাদেশ?" এরপর পাসপোর্ট এ এরাইভাল সিল দিয়ে বললো,"স্টে ওয়েল মান, এন্ড নেক্সট টাইম প্লীজ ব্রিং ডিজিটাল পাসপোর্ট, দিজ হ্যান্ড রিটেন পাসপোর্ট গিভস ট্টাবল মান"। আমি একটু লজ্জা পেয়েই বললাম, "শিওর মা ফ্রেন্ড"।
পাসপোর্ট নিয়ে বাইরে আসলাম।তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে তখন। সাথে ভয়ংকর ঠান্ডা বাতাস। আমার মনে হলো আমি বের হওয়া মাত্রই জমে গেলাম। উফফফ।আমার গায়ের সামার স্যট এই ঠান্ডা ঠেকাতে পারলোনা।আমার কলিগ খুঁজতে লাগলেন আমাদের রিসিভ করতে আসা লোকদের।খুঁজে পেতে অবশ্য সময় লাগলো না।তিনজন এসেছেন আমাদের রিসিভ করতে। সেলিম ভাই, আলম ভাই আর সোহাগ।সেলিম ভাই পরে জেনেছি বিশাল ধনাঢ্য ব্যক্তি। সাউথআফ্রিকায় আল-মেহরান নামের একটা হোটেল চেইনের মালিক। আলম ভাই কন্সট্রাকশান বিজনেস করেন। উনিও বেশ ধানাঢ্য। আর সোহাগ হল সেলিম ভাই এর শালা। সেলিম ভাই এর সাথে ওনার দুই পিচ্চি মেয়েও ছিলো। আমাদের জন্য ফুল কিনে নিয়ে এসেছিলেন ওনারা। মেয়ে দুটি আমাদের কে দিল। ফুলের তোড়া।
আমি তো অভিভূত! এত সুন্দর অভ্যর্থনা পাবো সাউথ আফ্রিকায় কল্পনাতেও ছিলনা এটা। পরে যতদিন ছিলাম, দেখেছি বাংলাদেশী ভাইয়েরা কি অসাধারণ আতিথেয়তা দিয়েছেন আমাদের কে। আমরা সেলিম ভাইয়ের বিএমডব্লিউ গাড়িতে চড়ে বের হলাম এয়ারপোর্ট থেকে। রওনা দিলাম আমাদের গন্তব্যস্হল ফোর্ডসবার্গের দিকে।