{দু:খিত। লিখতে অনেক সময় লাগছে ব্যাস্ততার কারনে।ক্ষমা করবেন এবং সাথে থাকবেন}
রাতে ঘুমটা ভাল হলো না। সকালে ফ্লাইট, এ কারণেই হয়তো ঘুম সেরকম হয়নি।ঠিক ৫ টায় ওয়েক আপ কল আসলো হোটেলের।আমি উঠে গোসল করে নিলাম। এরপর ফজরের নামাজ পড়ে এবং রেডী হয়ে চলে গেলাম আমার কলিগের রুমে। তিনিও রেডী।হ্যান্ড লাগেজ ছাড়া আর কোন লাগেজ যেহেতু নেই, বেশ শান্তি বোধ করছিলাম।নীচে নেমে গেস্ট সার্ভিসে এয়ারপোর্ট ট্রান্সফারের কথা বললাম। ওরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে গাড়ি রেডী করে দিলো। এয়ারপোর্ট এ গিয়ে সরাসরি ইমিগ্রেশান শেষ করে লাউন্জে চলে গেলাম। ও হ্যা বলা হয়নি যে গতকাল দেশ থেকে আসার সময় আমার কলিগ তার মোবাইল ফোন হারিয়েছিলেন। কাঁত হয়ে ঘুমানোর সময় সম্ভবত ফোন টা সিটের কোনায় পড়েছে। তিনি একটা মিসিং রিপোর্ট ফাইল করলেন লাউন্জে যাবার আগে। [মোবাইলটা উনি ফেরত পেয়েছিলেন বাংলাদেশে এসে]। যাইহোক, দোহা এয়ারপোর্ট এর বিজনেস ক্লাস লাউন্জটা খুবই সুন্দর আর খাবার ও বেশ ভাল। আমরা সকালের নাস্তা করে নিলাম। আমি ফ্রেশ ফ্রুট জুস খেলাম বেশ খানিকটা।এরপর পিচ ফল খেলাম। অদ্ভূত লাগলো। আরেকটা ফ্রুট মিক্স নিলাম যার মধ্যে ছিল ফ্রেশ আংগুর, কমলা, পেপে আর তরমুজ। এগুলি খেয়ে একটা ওট বার মধু দিয়ে খেলাম। সব শেষে এক কাপ চা।আরামে খেয়ে নিয়ে নীচে ডিউটি ফ্রী শপে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করলাম। যদিও কিনলাম না কিছুই।বোর্ডিং এর যখন পনের মিনিট বাকী, আমরা ধীরে ধীরে বোর্ডিং গেটে আসলাম। আমাদের পাসপোর্ট আর বোর্ডিং কার্ড বাড়িয়ে দিলাম দায়িত্বে থাকা অফিসার অভিজিতের কাছে। অভিজিত ইন্ডিয়ান। কাতারে অনেক অনেক ইন্ডিয়ান কাজ করে। কাতার এয়ারলাইন্সের এই বোর্ডিং গেটেই কমপক্ষে ৫ জন ইন্ডিয়ান তো ছিলই। যাইহোক অভিজিত আমার পাসপোর্ট টা হাতে নিয়েই বলল, "স্যার, দেয়ার ইজ আ প্রবলেম উইদ ইওর লাগেজ, বিফোর ফ্লাইং ইউ মাস্ট সর্ট ইট আউট"। বিভিন্ন বইতে পড়ছি যে কথা শুনে মানুষের চোয়াল ঝুলে পড়ে। এই কথা শুনে আমার চোয়াল ঝুলে পড়ল। আমি জিগ্গাসা করলাম, "কি ধরনের প্রবলেম? আর যে কোন প্রবলেমই হোক তুমি তাড়াতাড়ি সমাধান করো।" লোকটি বলল যে স্যার আপনাদের সাথে দুটি কাগজের কার্টন আছে, সেগুলি কাতারের মিনিস্ট্রি অব ইন্টেরিওর সন্দেহ করছে। আমি বললাম, "ভাই, ওগুলি আমাদের অফিসের লিফলেট আর ফ্লায়ারস।" কিন্তু লোকটি বললো য স্যার আমাদের কিছু করার নেই, যেহেতু এটা মিনিস্ট্রির ব্যাপারে। তোমরা অপেক্ষা করো, ওরা লাগেজ দুটি নিয়ে আসবে। আমি রেগে গেলাম। বললাম, "অপেক্ষা করবো মানে? আমার ফ্লাইটের কি হবে? আমার খুব জরুরী কাজ আছে, ফ্লাইট মিস করা যাবেনা। তোমরা দেখে লাগেজ ঢুকাতে পারোনাই?" হুদাই হম্বিতম্বি করলাম। জানি কোন লাভ নেই। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওরা বললো "তোমাদের না নিয়ে প্লেন যাবেনা। প্লেন ওয়েট করবে।" আমি তো অবাক। বলে কি শ্লা!! কাতারের সিকিউরিটির লোক এসে ওগুলি চেক করে যখন আমাদের ছাড়লো তখন নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেছে ৪৫ মিনিট আগে। সব শেষ করে ওরা গাড়িতে করে যখন প্লেনে নিয়ে যাবে তখন দেখলাম আমাদের সাথে এক শ্বেতাংগ নারী। বললো সে অস্ট্রেলিয়ান।সে জিগ্গেস করলো , "আমার মত তোমরাও লেট?" আমি বললাম, "তুমি আমাদের ধন্যবাদ দাও। নইলে তুমি প্লেন মিস করতে"। মেয়েটি সত্যি সত্যি অনকে বার ধন্যবাদ বললো। প্লেনে ওঠার সময় ভাবছিলাম সহযাত্রীরা নিশ্চয়ই বিরক্ত। কিন্ত সিটে বসে কিছুই টের পেলাম না। বরন্চ এয়ার হোস্টেস এসে হট টাওয়েল দিল আর বললো,"স্যার অনেক ধকল গেল তোমার উপর দিয়ে। আমরা ফ্লাই করার পর কিছু মজার খাবার দিয়ে তোমাকে খুশী করার চেষ্টা করবো আমরা।" আমি হাসলাম।মনে মনে বললাম ফ্লাইট মিস করতে হয়নি যে তাতেই আমি অনেক অনেক খুশী। বোয়িং ৭৭৭ টি আমাদের নিয়ে আকাশে উড়ল। জোহানেসবার্গের পথে।