যাকেই বলি সাউথ আফ্রিকা যাবো, সেই একটু ভ্রু কূঁচকে তাকায়!! আফ্রিকা কেন যাবো? ওটাতো ভয়নকর যায়গা!! আমি বলি অফিসের কাজে যাবো। যেতেই হবে। সবাই বলে ওখানে তো প্রতিদিন বাংলাদেশী খুন হয়। আমি ভাবি তাইতো। প্রায়ই পত্রিকায় দেখি।ভয় ভয় করে আমার। দশ দিন থাকতে হবে এত ভয়ংকর যায়গায়!!! সামনে আরো লম্বা সময়ের জন্য যেতে হবে হয়তো। ভাবি আর দুশ্চিন্তা করি। ইন্টারনেটে ভালো খারাপ দুই রকমের ই রিপোর্ট দেখি সাউথ আফ্রিকা সম্পর্কে। আমি খুজি বাংলাদেশী কোন ব্লগ পাওয়া যায় কিনা। কিন্ত নাহ। নেই। সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ই লিখবো সাউথ আফ্রিকা কে নিয়ে বাংলা ব্লগ। এবারের দশ দিন আর সামনে তো আরো লম্বা সময়।
বাংলাদেশে সাউথ আফ্রিকার এম্বেসী নেই। ভিসা নিতে হয় শ্রীলংকা থেকে।ভিসা হাতে পেতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগলো।গুলশানে সাউথ আফ্রিকান এয়ারলাইন্সের এক এজেন্ট ভিসা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।ওরাই একমাত্র অথোরাইজড এজেন্ট। খরচ হয় ২৪০০০ টাকার মত। যদিও ভিসা ফি অনেক কম। কিন্ত কি আর করা। নিজে শ্রীলংকা গিয়ে ভিসা করাতে আরো বেশী খরচ।
প্লেনে ওঠার তারিখ চলে এল।এয়ারপোর্টে যখন অপেক্ষা করছিলাম, নানাজনের নানা কথা মনের মাঝে উঁকি দিতে থাকলো আর আমার একটু একটু ভয় লাগতে লাগলো।যাইহোক কাতার এয়ারলাইন্সে লাগেজ বুক করে চেক ইন করলাম আর এগিয়ে গেলাম ইমিগ্রেশান কাউন্টারের দিকে। মোটামুটি লম্বা লাইন। কাতারের রাজধানী দোহা হয়ে যেতে হবে। এ কারণেই লাইনটা আরো লম্বা। কাতারে অনেক বাংলাদেশী ভাইয়েরা কাজ করেন। অনেকেই ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ছুটি কাঁটিয়ে ফিরে যাছছেন কর্মক্ষত্রে।
একসময় আমার সিরিয়াল আসলো। ইমিগ্রেশান অফিসার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে জিগ্গেস করলেন কোথায় যাব? বললাম। সাথে সাথে উনি হাত থেকে পাসপো্র্ট টা ডেস্কের উপরে রাখলেন আর তাঁকিয়ে বললেন যে সাউথ আফ্রিকাতে প্রচুর লোক ভুয়া ভিসা নিয়ে যাছ্ছে। কাজেই আমার পাসপো্র্টে সিল মারার আগে ওনার বড় কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হবে। আমার অসস্হি টা আরো বেড়ে গেল। একটু অপমানিত বোধ করলাম। বললাম,"আপনি আমার পাসপোর্ট টা দেখেন। অনেক দেশের ভিসা আছে।আর সাউথ আফ্রিকা যাবো নকল ভিসায়?" ভদ্রলোক বললেন, "স্যার ক্ষমা করবেন, আমি আমার বস কে ডেকেছি। উনি আসছেন।" অপমানিত আমি এক পাশে দাড়িয়ে রইলাম। তবে বস খুব তাড়াতাড়ি এলেন এবং আমার আর আমার কলিগের পাসপোর্ট চেক করে দ্রুতগতিতে ইমিগ্রেশান শেষ করলেন। ভেবেছিলাম লাউন্জে নাস্তা করবো। তা আর হলোনা কারণ প্লেন টেক অফের সময় বেশী বাকী নেই। বোর্ডিং এর সময় আবার আমার ভিসা দেখতে চাইলো এয়ারলাইন্সের লোক। লে বাওয়া। এত ঝক্কি!!! নিজের লজ্জাই লাগছিল সাউথ আফ্রিকা যাচ্ছি বলে। মনটা কেমন খারাপ লাগলো। অবশ্য কাতার এয়ারলাইন্সের সুন্দর বিজনেস ক্লাস মনটা ভাল করে দিল। এয়ারবাস টি উড়াল দিলো দোহার উদ্দেশ্যে। আমাদের রুট হল ঢাকা-দোহা-জোহানেসবার্গ।দোহায় ১৯ ঘন্টা ট্রানজিট। কাতার এয়ারলাইন্স যেহেতু হোটেল দিবে, সেহেতু লম্বা ট্রানজিটেও কষ্ট লাগবেনা।বরন্চ দোহা শহরটাও ঘোরা হবে। মেঘের উপরে উঠে মনটা ভাল হয়ে গেল। ক্ষুধাটাও ততক্ষনে বেড়ে গেছে বেশ। আমি খাবার অর্ডার দেয়ার জন্য মেনু হাতে নিলাম। (চলবে)