(এইখানে ছফা পৃষ্ঠা খোলা হইল। আমরা যারা ছফা ভাইরে কাছ থিকা দেখছি তারা যাতে তার কথাবাতর্া কাজকাম এইখানে লোড করতে পারি। । যারা ছফার সঙ্গে নানা সময়ে কথা বলছেন, মিশছেন তারা অনুগ্রহ করলে ছফার নানা বিষয় এইখানে নথিভুক্ত হইতে পারে। যে কোনো লেখার মন্তব্যে লেখা যুক্ত করতে পারেন। মন্তব্য থিকা কাট কইরা পরে পোস্ট আকারে ছাড়া যাইতে পারে।
আহমদ ছফার (1943-2001) এই ইন্টারভিউর কিছু অংশ প্রথম আলোতে ছাপা হইছিল। পুরাটা পি আলো ছাপতে রাজি ছিল না।
ছফার সঙ্গে আমরা 1995 সালে সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গেছিলাম। সুনামগঞ্জে ছফা ভাই ভোর চাইরটায় উইঠা তার একঘেয়ে বেসুরা গলায় জাতীয় সংগীত থিকা শুরু কইরা নিজের লেখা লেখা 'ঘর করলাম নারে আমি...' গাওয়া শুরু করতেন। পাশের রুমে বেটাইমে ঘুম ভাইঙ্গা যাইত আমগো। সাজ্জাদ শরিফ, রাজু আলাউদ্দিন ও আমি তার সঙ্গে গেছিলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিল্পী বন্ধু ইকবালের বাসায় আমরা ছিলাম। ছবিতে ছফা ভাইয়ের সঙ্গে আমি। ইকবালের তোলা ছবি। তার কাছে আরো ছবি থাকতে পারে। দেখি ইকবালরে যোগাযোগ করা যায় কিনা।
সাজ্জাদ শরিফ এখন প্রথম আলোর ডেপুটি এডিটর। রাজু আলাউদ্দিন মেক্সিকোতে কী জানি চাকরি করে। আশীষ খন্দকার নাট্যকার। শাহরীয়ার রাসেল প্যানোরোমা জংশন বইলা একটা ডিজাইন হাউজ দিছেন কলাবাগানে। প্রায় কারো লগেই যোগাযোগ নাই। ছফা ভাইয়ের বাসায় আমগো নিত্য যাতায়াত ছিল। পরে শাহবাগ আজিজ মার্কেটে তার উত্থানপর্ব দোকানটিতে আমরা যাইতাম।
আপনারা আহমদ ছফা বিষয়ে আপনেগো লেখাপত্র পাঠাইলে খুশি হব। মন্তব্যে পেস্ট করতে পারেন। বা [email protected] ঠিকানায় পাঠাইতে পারেন। -ব্রাত্য রাইসু, 2/1/7
----
আহমদ ছফা : আরে না, আমি মুন্ত্রী হয়ে গেছি তো। আমি মুন্ত্রী তো, উল্টাপাল্টা প্রশ্নের জবাব দ্যাব না।
আশীষ খন্দকার : ছফা ভাইয়ের ওপর একটা ডকুমেন্টারি করে রাখতে চাই, ফিল্ম ডকুমেন্টারি।
ছফা : কর্নেল ফরহাদের (ফরহাদ মজহার) একটা ডকুমেন্টারি ইউনিট আছে। ফরহাদকে বললে যে কোনোদিন...প্রতিদিনই রিকোয়েস্ট করছে আমাকে, ওদের একটা ভিডিও ক্যামেরা আছে, ইত্যাদি আছে...কিন্তু এগুলোর করার একটা বিপদ আছে কী জানো, খুব তাড়াতাড়ি বোধহয় মরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আশীষ : এটা করতে গেলে খুব শিল্পসম্মত ডকুমেন্টারি করতে হবে। তথাকথিত যেসব বায়োগ্রাফির ওপর ডকুমেন্টরি হয়, সে ধরনের কাজ না।
ছফা : আমি একটা জিনিস ভয় পাই। ভয় পাই কী জানেন, অর্থাৎ ডকুমেন্টরি করা যায় কেমনে, একজন লেখক কিংবা ক্রিয়েটিভ লেখক আনকনশাসলি করলে ভালো। কিন্তু আমি তো এখন জানতে পারছি সব।
শাহ্রীয়ার রাসেল : এমনি নরমালি করলে অসুবিধা কী?
ছফা : আমি জানতে পারতেছি তো আমার পাবলিসিটি হচ্ছে! তখন তো এতে কোনো মজা নেই আর।
ব্রাত্য রাইসু : মজা কীসে ছফা ভাই?
ছফা : একটা জিনিস মজা আছে না? এই যে ধরো ওই যে ছবিটা, দশ বিশ বছর অজ্ঞাতবাস ছিল...
রাইসু : পাখিঅলা ছবিটা?
ছফা : হঁ্যা, দু হাজার টাকা দিয়া আদায় করছি। একটা মজা আছে। যেমন ধরো কালকে জিটিভি থেকে টেলিফোন, একটা সিরিজ করার প্রস্তাব দিয়েছে, তার একটা মজা আছে না? আমি যে সমস্ত লোক চিনি, তারা ম্যানেজারি করে কাজ করার মধ্যে। একটা ঘৃণা আছে না। এই যে লিখে দেয়া আর কি না, 'আমি অমুক, আমি তমুক, আমি অমুক'--তাহলে লোকে বলবে, হঁ্যা, লোকটা বেশ কাজের। একজন লেখককে ভালোবাসার জন্য একটা নিজস্ব পদ্ধতি আছে। সেটা আমি নষ্ট করতে চাই না। আমার আবার অটোবায়োগ্রাফি--আবার বায়োগ্রাফি--হুস্স্স্!
ব্রাত্য রাইসু : শিস দিলেন নিকি ছফা ভাই।
ছফা : এগুলোর কোনো দাম নেই। কারণ আমি দেখছি, সবচেয়ে খারাপ লোকেরা সবচেয়ে ভালো বায়োগ্রাফি তৈরি করে।
খ.
রাইসু : ইয়াং ছেলেদের ওপর আপনার সাক্ষাৎকারটা আজকে নিতে চাই ছফা ভাই। ইয়াং ছেলেদের আপনারা চিটাগাঙের লোকরা বেশি পছন্দ করেন।
ছফা : হঁ্যা, চিটাগাঙের লোকরা হেমোক্সেুয়াল তো, এটার একটা মজা আছে। ও আল্লা, আমি যদি হোমোসেক্সুয়াল হতে পারতাম, আমার অনেক প্রবলেম সলভ হয়ে যেতো।
রাইসু : কী কী প্রবলেম সলভ হতো ছফা ভাই?
ছফা : মহিলারা এত কষ্ট দিতে পারত না আমারে।
রাইসু : তাহলে আপনে বাই সেক্সুয়াল, মানে দুইটাই।
ছফা : না তা না। আমি হোমোসেক্সুয়াল হতে পারলে অনেক প্রবলেম সলভ হয়ে যেত। কিন্তু সেটা সলভ হয়নি। হোমোসেক্সুয়াল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমার নেই। আমার অন্য জায়গায় একটা নালিশ আছে। আল্লাহতালা তো সব জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এবং এইটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম লংঘন করা।
গ.
ছফা : আমি মনে করি আমি একটা ধর্মজীবন যাপন করি। যেকোনো খানকি যেকোনো বদমাশ আমার কাছে আসলে তাকে আমি গুড ছেলে কিংবা গুড মহিলায় পরিণত করতে পারি।
রাইসু : আচ্ছা ছফা ভাই, আপনি কি কখনো বেশ্যাগমন করছেন?
ছফা : না আমি যাই নাই, এটা হয় নাই। আমি একবার, ক্লাশ নাইনের যখন ছাত্র, তখন আমার বন্ধুরা বললো, রিয়াজউদ্দিন বাজারে গেলে পরে মহিলারা নূরজাহানের মতো গান করে। দশ টাকা নিয়া তোমাকে স্বর্গে পেঁৗছে দেবে। আমি দশ টাকা নিয়ে, বাড়ি থেকে চুরি করে, বাসে করে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসছি। প্রথম যে অভিজ্ঞতাটা হলো : মাগুড় মাছেরে ছাই মাখালে যেরকম হয়, কতগুলো মহিলা সারা শরীরে পাউডার মেখে দেখি যে গুয়ের গন্ধ, মুতের গন্ধ, চিকন গলি...আমি দৌঁড়ে ওইপারে যখন গেছি দেখি যে আমার পুরুষাঙ্গটা নাই। ভয়ে। দিস ওয়াজ মাই ফার্স্ট এক্সপেরিয়েন্স ইন ব্রথেল। সেক্স কিনে-বেচে এমন কোনো মহিলার সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়নি। আমার এইটা কনসেপ্টে আসে না। কালকে আমি পিকনিকে গেছি আমার বান্ধবীরে অনার করার জন্য। আমার বৌদ্ধমূর্তিটা নিয়ে গেছি তারে দেওয়ার জন্য। কিন্তু লোকজনের সামনে দেওয়া গেল না। আজকে সকাল বেলা তার মাকে এই কথাটা বললাম। অর্থাৎ আমার জীবনের মধ্যে একটা পরিচ্ছন্নতা আছে। এগুলোর কোনো স্কোপ নেই।
রাইসু : সেক্সের?
ছফা : সেক্স থাকবে না কেন?
রাইসু : আপনে তো একটু প্ল্লেটোনিক ছফা ভাই।
ছফা : কেন প্লেটোনিক হবে। বাঘ যখন বাঘিনীর সঙ্গে মিশে প্ল্লেটোর চেয়ে বেশি ওরা। ইটস এ পার্টস অফ ইউর এক্সিসটেন্স। এই যে লিঙ্গ পূজা করত হিন্দুরা এটার অর্থ আছে। আমি মনে করি আমার জীবনের এই পর্যন্ত যে উপলব্ধিতে এসে পৌঁছেছি, পুরো সমাজকে আমার দেওয়ার মতো কিছু আছে।
রাইসু : আপনি প্রেমট্রেম করছেন কখনো ছফা ভাই?
ছফা : লোকে বলে। আমি তো বুঝতে পারি না।
রাইসু : আপনার প্রথম প্রেম কি অসামাজিক কিছু ছিল?
ছফা : মানুষের ছোটবেলা যেইটা, একটা পশুর ছোটবেলার মতো। আমি সেইটা বলার মতো মানসিক শক্তি অর্জন করি নাই। ট্রুথ উচ্চারণ করার মতো যে শক্তি তা এই মুহূর্তে আমার নেই। মানুষ অটোবায়োগ্রাফি যেগুলো দেয়, এগুলো হচ্ছে 'হতে-পারতো-অটোবায়োগ্রাফি'। অর্থাৎ যে মানুষ অনেক কথা অকপটে বলে সে অনেক কথা অকপটে লুকিয়েও রাখে। সুতরাং এই যে লোকে ফ্রাঙ্কনেসের ভান করে...ব্রিডিং সেন্টারে ষাঁড়কে যে কাজে ব্যবহার করা হয়, একজন সফিস্টিকেটেড লোকও নিজের কোয়ালিটি থেকে একটা বৃহত্তর ষাঁড় হওয়ার জন্য তা করে। আমার মনে হয় মানুষ বোধহয় অন্য কিছু। মানুষ অন্য কিছু। আমার অভিজ্ঞতা যেটা, সেক্স ইজ নট এভরিথিং অফ লাইফ।
রাইসু : যেসব ভদ্রমহিলারা আপনার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করছেন, করছেন তো অবশ্যই...?
ছফা : হ্যাঁ।
রাইসু : আমার মনে হয় এক ধরনের ভক্তিমূলক সম্পর্কের থেকে আপনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক হয়। তাই নয় কি?
ছফা : হ্যাঁ।
রাইসু : ওইখান থিকা, মানে ভক্তি থিকা আপনি যৌন সম্পর্কে কীভাবে যান?
ছফা : ইট ইজ পার্ট অফ দি হোল, এগুলিকে মামুলি সেক্স হিসেবে দেখা ঠিক না। আমি অনেক সময় গ্যেটের জীবনী পড়ে ভাবতাম যে লোকটা আর কোনো কাজই করে না, যৌনসঙ্গমই করে। এত যৌনসঙ্গম করে, লোকটা বাঁচে কীভাবে? মামুলি লোক মনে করবে যে সতীচ্ছদ করা একটা মস্ত বড় জিনিস। এবং প্রায় কবিদের মধ্যেও আমি এটা দেখেছি। অর্থাৎ কোনো মহিলা দেখলেই মরদ আমি...অর্থাৎ ব্রিডিং সেন্টারে ষাঁড় যে পারপাসে ব্যবহার করে, একটা সফিস্টিকেটেড লোকও নিজের কোয়ালিটি দেখায় একটা বৃহত্তর ষাঁড় হওয়ার জন্য। আমার মনে হয় মানুষ বোধহয় অন্য কিছু। আমার অভিজ্ঞতা এইটা, সেক্স ইজ নট এভরিথিং অফ লাইফ। সেক্স হচ্ছে একটা এক্সপ্রেশন, দেয়ার আর মেনি আদার এক্সপ্রেশন। ইয়ুং-এর অটোবায়োগ্রাফি পড়বে যারা তারা বুঝবে। ফ্রয়েড যেইটা দেখেছে যে মানুষের সব কিছুই যৌন কার্যাবলী। যৌন এনটিটির বাইরেও তো মানুষের আর একটা এনটিটি আছে। আমরা যদি পশুজগতে যাই, গাছের জগতে যাই, কিছু গাছ আছে তার অঙ্গ দিয়ে তৈরি করে। কিছু গাছ আছে বীজ থেকে তৈরি করে। কিছু প্রাণী আছে তার সেল থেকে বংশবৃদ্ধি করে। এবং মানুষ তার বংশবৃদ্ধি করে যেটা সেটা হচ্ছে ম্যামাল, স্তন্যপায়ী। আমরা যদি অন্য প্রাণী হতাম, আমরা আমাদের অনুভূতি কীভাবে মূল্যায়ন করতাম...?
রাইসু : কীভাবে করতেন ছফা ভাই?
ছফা : আমি জানি না, অন্যভাবে যদি আবার প্রাণী হিসেবে আমি জন্মাই...আমার একবার টিবি হয়েছিল, আমাকে সেকলুশন করে রাখছিল। একটা বিড়াল ছিল আমার সঙ্গে। এটা ছিল হুলো। দাউ ইট ক্যাম উইথ হিজ গার্ল ফ্রেন্ড। এবং বিড়ালের যে করে বাচ্চা হয়, এবং বাচ্চার প্রতি যে অপত্য স্নেহ--মানুষকে আমার মনে হয়েছে অনেক স্টেজে পশুদের নকল করতে হয়েছে। মানুষের মধ্যে সামথিং এই যে 'গডলি' যেটা কল্পনা করা হয়, মানুষের এই যে সমস্ত বন্ধন ছাড়াইয়া যাওয়ার ক্ষমতা আছে এইটাই হচ্ছে ঈশ্বরত্ব।
রাইসু : যৌনতা এই ঈশ্বরত্বকে নষ্ট করে না?
ছফা : যৌনতা দিয়ে মানুষ একটা কাজই করে, বংশবিস্তার করে।
রাইসু : না।
ছফা : না, আমাকে বলতে দাও। মানুষের আরো ফ্যাকাল্টি আছে, সমস্ত ফ্যাকাল্টিগুলি যৌনতার অধীন নয়। ইয়ুং এই জায়গায়ই ডিফার করে ফ্রয়েডের সঙ্গে। মানুষের জীবন হচ্ছে সাইকো সোমাটিক ফোর্স। শারীরিক, মনোদৈহিক একটা ব্যাপার।
আশীষ : ইলেক্ট্রনিকাল বায়োলজিক্যাল সাইকো ফিজিক্যাল ফোর্স।
ছফা : এবং এরই মধ্যে যেগুলি আছে, যেমন রিলিজিয়াস এক্সপিরিয়েন্স, আধ্যাত্মিক এক্সপিরিয়েন্স এগুলি এক ধরনের...যেমন বাউলরা প্রেমভাজা খায়, প্রেমভাজা মানে দুইজনের পায়খানা খায়। ফরহাদ তো এগুলি বলে না। এগুলিকে তারা বলে আধ্যাত্মিক এক্সপিরিয়েন্স। কিন্তু এখন বাস্তব জীবনে যেটা দেখা যায়, ফিজিক্সে যদি যাও, তো বস্তু আর ভাবের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব পাবে না। হায়ার ফিজিক্সে। বাউলরা যে জীবন যাপন করে, জীবনযাপনটা তারা একটা ধর্ম মনে করে।
রাইসু : আমার মনে হয় ছফা ভাই, এইখানে বাউলরা হইছে সবচেয়ে বড় এলিট।
ছফা : এলিটিজম হচ্ছে একটা জিনিস, যখন একটা অংশে নিজেদের আইডেনটিটি এসার্ট করতে করতে তারা মনে যে দে আর স্টে ফর সামথিং। বাউলদের এই যে সেকলু্যড মানসিকতা, এইটা আমি খুব অপছন্দ করি। দেখো, জৈনরা মনে করে সমস্ত বস্তুসত্তার মধ্যে প্রাণ আছে। এই কাঠটার মধ্যেও প্রাণ আছে। প্রাণের যে ভেরিয়েশন, সেটা হচ্ছে ডিগ্রি এবং স্টেজের। সেজন্য উদর্ুতে একটা শের আছে : সে মুক্তাতেও নেই, সে পাথরেও নেই, সে নানা বর্ণে দীপ্ত।
রাইসু : এটারই উল্টা করে রবীন্দ্রনাথ বলতেছেন, তোমারই স্পর্শে পান্না হলো সবুজ।
ছফা : রবীন্দ্রনাথ এটা গ্যেটের সেকেন্ড পার্ট থেকে চুরি করেছে।
রাইসু : রবীন্দ্রনাথ তো তাইলে তো অত বড় মাপের কিছু ছিল না।
ছফা : এগজাক্টলি, এই যে বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে, তালি দেওয়ার যে ক্ষমতা এটাই মানুষকে বড় করে।
রাইসু : এইটা তো দামি কথা বললেন, ছফা ভাই।
ছফা : দামি কথা তো বলি, কিন্তু কারো মাথায় তো সান্ধায় না। আমরা একটা গিভেন পয়েন্ট অফ টাইমে বাস করছি। আজকে যে মানুষের জীবন, পাঁচ হাজার বছর আগের কোনো ইতিহাস নেই। পাঁচ হাজার বছর পরেও কোনো ইতিহাস থাকবে না।
রাইসু : কেন, পাঁচ হাজার বছর আগে লেখে নাই কেন?
ছফা : লিখে রাখার প্রয়োজনীয়তা ফিল করেনি। ইতিহাস লেখার সঙ্গে একটা সাবজেক্টিভ আইডিয়া যুক্ত আছে। ইতিহাস কথাটা যখনই উচ্চারণ করবা, তখনই তার সঙ্গে একটা সাবজেক্টিভ আইডিয়া যুক্ত আছে।
রাইসু : কী রকম?
ছফা : আমরা অন্যদের চাইতে আলাদা। আমাদের কথা লিখে রাখা লাগবে। এলিটিজমের মধ্যে মানব জাতিটাই নিমজ্জিত। আমরা যে গ্রেকো রোমান হিস্ট্রি বলি এটা হচ্ছে গ্রিক ইগোর ফল। ইতিহাস তখনই লেখে মানুষ...সে রবি ঠাকুর যখন রবি ঠাকুর হয় তখন তার অটোবায়োগ্রাফি লেখতে গেলে তার তেরো পুরুষের বর্ণনা দেওয়া লাগে। বুঝেছো? যে লোক রবি ঠাকুর হয়নি সে অটোবায়োগ্রাফিও লেখে না, তেরো পুরুষকেও টেনে আনে না। এই যে সাবজেক্টিভ, এটা হচ্ছে মানুষের একটা স্পেশাল কোয়ালিটি। আমি যে এইখানে পাঁচতলার থেকে দাঁড়িয়ে যে আকাশ দেখি, তখন আকাশের চারপাশে যতটা গোল দেখি, নিচের তালায় দাঁড়ালে আর কিনা সে গোলটা আরো সঙ্কুচিত হয়ে আসে। একটা বায়োলজিক্যাল প্রপার্টি আছে, কারণ হচ্ছে তুমি যত উপরে উঠবে তত বলয়টা বাড়বে। তখন প্রশ্নটা, মানুষের জীবনকে ঘিরে চারপাশে কতগুলো আঁধার কতগুলো আলো থাকে। যেখানে আমি নিজের চোখে দেখি না, ফিল করি না, সেইখানে সিভিলাইজেশন নেই।
রাইসু : সিভিলাইজেশনকে ওইভাবে জরুরি মনে করেন?
ছফা : মনে না করার উপায় নাই, সিভিলাইজেশনের একটা অংশ সাইন্স।
রাইসু : সাইন্সরে মূল্যবান মনে করেন?
ছফা : কম মূল্যবান মনে করার মতো...সিভিলাইজেশন ইজ হোয়াট উই হ্যাভ, কালচার ইজ হোয়াট উই আর। কালচার সিভিলাইজেশন এইগুলি সবই হচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের এক্সটেনশন।
আশীষ : আচ্ছা, যে নারী জেনেটিক্যালি তার সেক্সকে চেঞ্জের চিন্তাভাবনা করছে এবং নারী যখন পুরুষ ভাবছে নিজেকে, সে বিষয়টা নিয়ে আপনার কী মত?
ছফা : প্যান্ট পরলেই যাবতীয় প্রবলেম সলভ হয়ে যায় না। অনেক কমপ্লেক্স মহিলা আছে যারা শাড়ি পড়ে, অথবা সফিস্টিকেটেড অথবা অভিজাত, মেয়েদের একটা আলাদা এনটিটি হিসেবে দেখা উচিত। এককটা স্পিসিজের যৌনতারও নিজস্ব একেকটা প্যাটার্ন আছে। যেমন এই যে কেঁচোদের যৌনতা, সাপের যৌনতা একরকম নয়। কেঁচো তার সেল থেকে জন্ম দিতে পারে। সাপ আবার তার আণ্ডা থেকে জন্ম দেয়। পেঙ্গুইন তার দুধ খাওয়ায় বাচ্চারে। এই যে গাছ, কোনো গাছ আছে তার ডাল থেকে তৈরি করা হয়, কোনো গাছ বীজ থেকে তৈরি করা হয়। কোনো গাছ শিকড় দিয়ে তৈরি হয়। এখন এই যে সমস্ত প্রাণবান সত্তা এগুলোর একটা গতি আছে। এটা কখনো একটা বড় একটা ছোট নয়। যে সমস্ত জায়গায় সূর্যের আলো পড়ে না সেখানে ঘাস গজায় না। ঘাস না গজালে প্রাণও গজাতে পারে না। যেখানে ঘাস গজায় সেখানে জঙ্গলও গজাতে পারে। জঙ্গল গজালে জন্তু থাকতে পারে। যদি হরিণটাও থাকতে পারে, তখন বাঘটাও থাকতে পারে। বাঘটাঘ থাকলে মানুষটাও থাকতে পারে। এই যে লড়াইটা শুরু হয়ে গেল। এই মানুষের জীবনের যে বৈশিষ্ট্য, তার খাদ্যাভাসই তাকে চেঞ্জ করে দিয়েছে। সে মিনারেল খায়, ঘাস মাটি সৈন্ধব লবণ এগুলো খায়। সে বীজ জাতীয় জিনিস খায়। সে জন্তু জাতীয় জিনিস খায়। এই যে খাদ্যাভাসের ভেরিয়েশনের জন্য তার ইতিহাসের মধ্যে হয়তো মাঝে মাঝে তুমি নিরামিষাশী লোক পাবে, কিন্তু নিরামিষাশী লোক প্রমাণ করবে যে একসেপশন ইজ নট দ্য রুল। একসেপশন প্রুভস দ্য রুল। অর্থাৎ কিছু লোক যেহেতু আমিষ খায় কিছু নিরামিষাশী থাকলে একটা ভারসাম্য রক্ষা হয়। তখন যেই জিনিসটা মানুষরে শুধু যৌনতা হিসেবে দেখা, আমি জানি না অত বেশি। একটা স্ট্রিক্ট সিচু্যয়েশনে মানুষ কাপড় পরতে শিখেছে। এবং যখন লোম ছিল তখন কাপড় পড়ার দরকার ছিল না। মানুষের শরীরে ঘন লোম ছিল। মানে যখন আর কি গীতিকবিতা লিখতো না, গীতিকবিতা যখন তৈরি হয়নি তখন যুধিষ্ঠিরের দুঃখের মধ্যে সকলে সান্তবনা পাইতে চেষ্টা করতো। হিস্টিরিক এক্সপিরিয়েন্সগুলি বাইপাস করে মৌলিক অভিজ্ঞতায় ফেরত যাওয়া যায় না। মানুষ সকলে সমান বয়সের, কিন্তু আসলে মানুষ সমান না। একই ভাবে জন্মাইছি, কিন্তু মানুষের ফ্যাকাল্টি এক রকম নয়। এবং প্রতিটা কথার
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সকাল ১০:২৪