আওয়ামী স্বর্ণযুগ: ডিজিটাল বাংলাদেশ- ০১
-------------------------------------
শত শত আহত হাজার হাজার ঘর ছাড়া, দু’জনকে দিগম্বর : গরু লুট করে জবাই
শত শত আহত হাজার হাজার ঘর ছাড়া, দু’জনকে দিগম্বর : গরু লুট করে জবাই
ছড়িয়ে পড়ছে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। মহাজোট সমর্থকদের হামলায় সারাদেশে চারদলীয় জোটের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুট হয়েছে। হামলার হুমকি ও চাঁদা দাবির মুখে চারদলীয় জোটের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
বাগেরহাটের কাটাখালী এলাকায় মহাজোটের সমর্থকরা এক মহিলাকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করেছে। রাজশাহীর দুর্গাপুরে বিএনপি’র এক কর্মীকে উলঙ্গ করে ঘুরিয়েছে সন্ত্রাসীরা এবং চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ভগিরতপুরে এক জামায়াত কর্মীকে দিগম্বর করা হয়েছে। গলাচিপায় বিএনপি কর্মীর বাড়ি থেকে গাভীন গাভী ধরে এনে জবাই করে খেয়েছে মহাজোট সমর্থকরা। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা জামায়াতের আমীরের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। গফরগাঁও বাজারে দু’পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে আহত চা দোকানদার জামাল উদ্দিন মারা গেছেন। সাতক্ষীরায় নবনির্বাচিত এমপি’র ভাইপো সন্ত্রাসী হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। হামলার ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হলেও প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। খবর আমাদের সংবাদদাতাদের।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন অব্যাহত রেখে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে।
দুর্গাপুর থানার বেলঘরিয়া গ্রামের তকিবর রহমান নামের এক বিএনপি সমর্থকের কাপড় খুলে নিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বুধবার দুর্গাপুরের বেলঘরিয়া বাজারে ঘুরিয়েছে দিনের বেলায়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অব্যাহত হুমকির মুখে গৌরিহার গ্রামের পূর্বপাড়ার লোকজন জমিতে কাজ করতে যেতে পারছেন না। হাটবাজারে যেতেও অনেকে ভয় পাচ্ছেন। ওই গ্রামের প্রতিবী সাদের আলীর চায়ের দোকান এবং তার ভাতিজা কুতুব উদ্দিনের একটি মুদিখানার দোকান ব করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে একই থানার কিশোরপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাকে বেদম মারধর করেছে। আহত অবস্খায় তাকে দুর্গাপুর থানা স্বাস্খ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের ভয়ে ওই এলাকার কিশোরপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ওয়ালিউল হকসহ বিএনপি সমর্থক পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ কর্মীরা ওয়ালিউলের বাড়ির টিন এবং ঘরের চালা ভাঙচুর করেছে। এলাকাবাসী জানান, গৌরিহার পশ্চিমপাড়া এলাকার আওয়ামী সমর্থকদের অব্যাহত হুমকির কারণে পূর্বপাড়ার লোকজন বিলের জমিতে কাজ করতে যেতে পারছেন না। কেউ বিলে গেলেই তাকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করা হচ্ছে। গতকাল সকালে ওই গ্রামের বিএনপি সমর্থক বাক্কার আলীর ৯১টি খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি ভেঙে ফেলেছে আওয়ামী সমর্থকরা। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ওসি কৃষä সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব ঘটনার কথা শুনেছেন বলে জানান। গতকাল আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ ও নওসু মহুরির নেতৃত্বে একদল লোক দুর্গাপুর থানার আলিপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু তালিব মোল্লাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তারা তার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
মোহনপুর থানার ধুরইল ইউনিয়নের নাপিতপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বুধবার রাত ৮টার দিকে বিএনপি নেতা এরশাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা এ সময় এরশাদকে বাসায় না পেয়ে তার স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে মারধর করে। একই দিন ধুপহাটে এক বিএনপি সমর্থকের চালের দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
এ দিকে রাজশাহী মহানগরীতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে অনেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ইনচার্জ এম মুবিনুল ইসলামের বাসায় গিয়ে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে কয়েকজন লোক দুই বস্তা চাল ও চাঁদা দাবি করে। একই দিন দুপুরে ওই ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষকের কাছেও তারা টাকা দাবি করে। ওই শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এলাকার ছাত্রলীগের ছেলেরা পিকনিকেব জন্য তার কাছে টাকা দাবি করে। এ সময় তারা বলেন, অনেক দিন তারা রাজশাহীতে বঞ্চিত ছিল। তাই এখন থেকে সব ব্যাপারে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
যশোর অফিস জানায়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় যশোরের বিভিন্ন এলাকার চারদলীয় জোটের ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী বাড়িঘর ফেলে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি। যশোর-৬ আসনের চারদলীয় প্রার্থী বিএনপি’র আবুল হোসেন আজাদ গত বুধবার স্যায় অভয়নগর থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভাটপাড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার কবলে পড়েন। তারা আজাদকে লাঞ্ছিত করে এবং তার গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। অভয়নগরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নওয়াপাড়ার দুই ছাত্রদল কর্মীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব কোবাদ আলীকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে তার দুই পায়ের হাড় বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। বৃদ্ধকে উদ্ধার করতে গিয়ে তার দুই ছেলেসহ নয়জন হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীরা কোবাদ আলীর চারটি টালির ঘরও ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়া শার্শার ভবের বেড় গ্রামের বিএনপি নেতা আবদুল আজিজ, সদর উপজেলার জোত রহিমপুরের ফিরোজ, পাঁচবাড়িয়ার সাগর, মনিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের নূর হোসেন, মথুরাপুর গ্রামের আসাদ, চৌগাছা উপজেলার বাড়িয়ালি গ্রামের অনিল, অখিল, রফিকুল, মুকুন্দপুর গ্রামের শাহাজান মেম্বার, মোক্তারপুর গ্রামের বাবর আলী মেম্বারকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে দাঁড়িপাল্লা ও ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে। বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে আন্দুলিয়া গ্রামের পিন্টুর। তার কাছে ৪ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়েছে। পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদেরের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছে ৪ লাখ টাকা। তার বড় ভাই মাওলানা আবু সাঈদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি এখন বাড়িছাড়া। মশ্বমপুর গ্রামে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ক্ষেত-খামারে নামতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ কর্মীরা। তিলকপুর বাজারে চারদলীয় নেতাকর্মীদের দোকানপাট ব করে রাখা হয়েছে নির্বাচনের পরের দিন থেকে।