অনলাইন আর অফলাইন যেখানেই যান। চোরের মায়েদের বড় বড় গলাবাজির তোড়ে ভেসে যাবেন। আসল ফ্যাক্ট জানুন।
কৃতজ্ঞতাঃ Akm Wahiduzzaman
এরশাদ আমলে সিমিটারের সাথে দেশের খনিজ সম্পদ নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, ১৯৯১ সালে সেই চুক্তি বাতিল করেছিল বিএনপি, আন্তর্জাতিক আদালতে ড. কামাল হোসেনকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে সিমিটারের বিরুদ্ধে মামলায় জিতেছিল। সেই সময় তেল-গ্যাস রক্ষার জাতীয় কমিটির কোন অস্তিত্বই ছিল না।
শেখ হাসিনা যখন ফুলবাড়ীতে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য এশিয়া এনার্জির সাথে চুক্তি করেছিল, সেই সময়ও জাতীয় কমিটি কোন সাড়া-শব্দ করেনি। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত হাসিনার প্রত্যেকটি দেশবিরোধী চুক্তির পক্ষে ছিল এই জাতীয় কমিটির নেতারা।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের করা চুক্তি পরবর্তী বিএনপি সরকার বাতিল না করায় এই জাতীয় কমিটি সেই আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়েই ফুলবাড়ীতে সহিংস্র আন্দোলন গড়ে তোলে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। রেল লাইন উপড়ে, রাস্তা কেটে, পুলিশের গাড়ীতে আক্রমণ করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল তারা সেই সময়ে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিষয়টিকে শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করার ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ৩ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি বিএনপির জন্য অবশ্যই একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
কিন্তু আওয়ামী লীগের করা চুক্তি বাতিলের জন্য আওয়ামী লীগকেই নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সিদ্ধান্তটা জাতীয় কমিটির জন্য কেমন বিবেচনাপ্রসূত ছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর কী জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে?
রামপাল ইস্যুতে আন্দোলনটা জাতীয় কমিটির পক্ষে থেকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ লিয়াঁজো রক্ষা করে। ২০১৩ সালে রামপালের লংমার্চের সময় জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সারাক্ষণই সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখা হয়েছে, কোথায় জনসভা করা যাবে, সভায় কী বক্তব্য দেয়া হবে, কারা বক্তব্য দেবে, সেসবও জাতীয় কমিটি সরকারের প্রেসক্রিপশন মতই করেছে।
এই জাতীয় কমিটির লোকজন যে যে মিডিয়ায় কাজ করে, তারা খুব সতর্কতার সাথে রামপাল ইস্যুতে জাতীয় কমিটির লোকদের লেখা ছাড়া অন্যদের লেখাকে ফিল্টার করেছে; পাছে রামপাল ইস্যুতে সরকার বিরোধী বা ভারত বিরোধী কোন বক্তব্য না প্রচার হয়ে যায়!
জাতীয় কমিটির নেতাদের কাছে আমি গতকাল প্রশ্ন রেখেছিলাম, কী কারণে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য তাদের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে? তারা সেই উত্তর দেয় নাই। তাদের পক্ষ নিয়ে এক সাংবাদিক ফেসবুকে লিখেছে ফুলবাড়ীর ঘটনার কারণে তারা বিএনপির উপর আস্থা পায় না। কিন্তু তারা কী এটা ভেবে দেখেছে যে, আওয়ামী লীগেরই করা চুক্তি বাতিলের জন্য আওয়ামী লীগকেই সাথে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে হিংস্র আন্দোলন করার পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রামপাল ইস্যুতে আপোষকামী আন্দোলন করার কারণে দেশের সাধারণ মানুষও তো জাতীয় কমিটির উপর আস্থা পাচ্ছে না।
জাতীয় কমিটি তাদের আপোষকামী আন্দোলনের ব্যর্থতার দায় বিএনপির উপর চাপিয়ে বলতে চাইছে, বিএনপি এই আন্দোলনে থাকার কারণে এই আন্দোলন ব্যর্থ হচ্ছে! তার মানে রামপালে কয়লাভিত্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে সেইফ এক্সিট নেবার জন্য জাতীয় কমিটি এখন বিএনপির উপরে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে।
শেষে জাতীয় কমিটির নেতাদের কাছে প্রশ্ন, ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার ফুলবাড়ীর জনগনের সাথে একটি চুক্তি করেছিল, আপনাদের সেই আন্দোলনের নেত্রী শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে আয়োজিত আপনাদের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে ঘোষনা করেছিলেন, "সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে পরিনাম হবে ভয়াবহ।" সেই ঘটনার ১ মাসের মধ্যে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বলে সেই সরকারের পক্ষে আর ঐ চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আপনাদের সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা তো গত ৮ বছর যাবত এই দেশের ক্ষমতায়। আপনাদের কাছে এবার জানতে চাই, ২০০৬ সালে সরকারের সাথে ফুলবাড়ীর জনগণের স্বাক্ষরিত চুক্তি কী আপনারা গত ৮ বছরে শেখ হাসিনাকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাতে পেরেছেন? না পারলে কী সেই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কোন আন্দোলন করেছেন?
আপনারা কী ফুলবাড়ীর সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৬ সালে হিংস্র আন্দোলন করেছিলেন? নাকি বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন? আন্দোলনটা জনস্বার্থে হলে এখন কেন সেই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছেন না? এখন কেন আপনারা রামপাল ইস্যুতে সরকার বিরোধী আন্দোলন করছেন না, যেমনটা ২০০৬ সালে করেছিলেন? না কী আপনারা অপেক্ষায় আছেন, কখনো আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কোন সরকার ক্ষমতায় এলে তখন ফুলবাড়ী আর রামপাল ইস্যুতে হিংস্র আন্দোলন করবেন?