বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সৈনিকদের নিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নানান ধরনের রাজনীতি, অপরাজনীতি, কুরাজনীতি হয়েছে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ঝি কুত কুত খেলেছে। বিষয়টি একেবারেই নগ্ন হয়ে যায়, যখন স্বাধীনতা বিরোধীরাও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে খেলাধুলা শুরু করে দেয়। জামাতপন্থী মুক্তিযোদ্ধা(!) সংগঠনের অনুষ্ঠানে আলী আমান নামের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি মারার মতো কাজও জামায়াত শিবির কর্মীরা করেছে। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নাসেরা বেগমের প্রতিও নজর পড়েছিলো জামায়াত শিবির সমর্থকদের। নজর পড়ার পর সেটা নিয়ে তাদের ভাবটাও ছিলো অন্যরকম। সোনারবাংলা ব্লগে পোস্ট আসলো শিবির কর্মীরাই নাকি মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনা রক্ষা করছে! আরতো পোজ দিয়ে ছবি তোলাতুলির বিষয়টা ছিলোই।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্ত্রী এখন ফেরিওয়ালা!!!জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রাপ্যটা আমরা এভাবে দিলাম!?
এসব সমস্যা অনেক জটিল সমস্যা। আবার এসব করে বেড়ানোর স্বাধীনতাও(!) শিবির কর্মীদের আছে। কিন্তু শুরু থেকেই এ বিষয়টা ছিলো বিতর্কিত। ওরা নাসেরা বেগমের জন্য টাকা তুলতো, আর আপডেট দিতো ফটোব্লগের। কত টাকা তুলেছে, সে টাকা কোথায় আছে, এসবের কোন আপডেটই ব্লগে দিতো না। সবকিছুকে ছাপিয়ে ওদের ভাব ছিলো দেখার মতো। প্রচুর হাততালি, পিঠ চাপড়ানির সাথে সাথে ওরা আরেকটি যুদ্ধজয়ের আনন্দে বিভোর।
হঠাৎ চারুকলা এবং কিছু ফটোওয়ার্ক..
'কলমদাদির' সাথে এক বিকেলে,,,,ছবিব্লগ
এতক্ষণ যা বলেছি, এসব হচ্ছে স্রেফ দু:খের কথা। এ প্রজন্মের তরুণদের মাঝেও যখন সেকেলে পলিটিশিয়ানদের মতো গোবরমার্কা পলিটিক্স দেখি, তখন আসলেই কষ্ট লাগে। সবাই দেশপ্রেমিক, সবাই আদর্শবান। কিন্তু কাউকে দেখি হাসিনার বিরোধিতা করতে, কাউকে দেখি খালেদার বিরোধিতা করতে, দেশের পক্ষে কথা বলার লোক খুব কমই পাই। ওদের দেশপ্রেম হাসিনা খালেদা কিংবা মৌলবাদীদের মাধ্যম হয়ে প্রকাশিত হয়!
আজ সারাদিন ব্লগার অসামাজিক ০০৭০০৭ ব্লগে বিভিন্ন মন্তব্যে বলেছেন উনি নিজেও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জনৈক তাপস তাদের সাথে এ প্রতারণা করেছে। নাসেরা বেগমকে সাহায্য করার জন্য অর্থ সংগ্রহ বিষয়ক যতগুলো পোস্ট এসেছিলো, সেখানে আমরা খুব ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারি অসামাজিক ০০৭০০৭ কে। জনৈক তাপস এ ব্লগের কেউ না। অসামাজিক ০০৭০০৭ এর কথা যদি সত্য হয়, তাহলে ধূর্ত তাপসের শয়তানি বুদ্ধির কাছে ধরা খেয়েছেন উনি। কিন্তু আজ এ ধরা খাওয়ার কুপ্রভাব নানাভাবে পড়েছে। প্রথমত এর পুরো দায় চলে এসেছে ব্লগ প্লাটফর্মের উপর। তারপর দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার সন্দেহজনক আচরণের কারণে জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে “জাতীয় স্বার্থে ব্লগার-অনলাইন এক্টিভিস্ট” নামে একটি সংগঠন। দৈনিক আমারদেশ এর আজকের প্রতিবেদনে উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্লগারের চেয়ে ননব্লগারের সংখ্যা বেশি, এবং তাদের উল্লেখিত মূল হোতাও ব্লগার নন, তবুও তাদের সংবাদের শিরোণাম হয়েছে “ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের প্রতারণা : কলম বিক্রেতা নাসেরার ১৪ লাখ টাকা আত্মসাত”। এর মানে কী হতে পারে, আমার জানা নাই।
কয়েকটি পোস্টে আমিসহ আরো কয়েকজন আমারদেশ পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি পাঠানোর বিষয়ে বললে দুপুরের দিকে আমারদেশ পাঠকমেলা নামে নিক থেকে রীতিমতো হুমকি ধমকি দেয়া হয়। হুমকির ভাষা হচ্ছে “যারা তাপসকে বাঁচানোর জন্য প্রতিবাদ লিপি পাঠাতে চায়, তাদের মুখোশ উন্মোচিত করে দেবে আমারদেশ পত্রিকা।“ অনেকটা উপহাস করেই ওই নিক থেকে বলা হলো “আমারদেশ পত্রিকা বসে আছে উনাদের প্রতিবাদলিপি নেয়ার জন্য!” বিষয়টি দেখুন, নিউজের ভাষ্য অনুযায়ী একজন ননব্লগার নাসেরা বেগমের টাকা মেরে দিয়েছে। আমার শিরোণাম করলো “ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্টরা টাকা আত্মসাত করেছে!” এবার যখন ব্লগারদের পক্ষ থেকে সংবাদটির প্রতিবাদ পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তখন আমারদেশ পাঠকমেলার মহামান্য হর্তাকর্তা প্রতিবাদকারীদেরকে তাপসের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ এমাত্র এ নিকে লিংক আনতে গিয়ে দেখলাম উনি আরেকটি পোস্ট প্রসব করেছেন, যার শিরোণাম "প্রতিবাদলিপি আসেনি আমার দেশ-এ।" বেশ সিরিয়াস দেখা যাচ্ছে।
কয়েকজন বিজ্ঞ ব্লগারকে বলতে দেখলাম দৈনিক আমারদেশ এর সমালোচনা কেন করা হচ্ছে! আমারদেশ পাঠকমেলা এর আগে ব্লগারদেরকে ব্যবহার করে ফেলানী ইস্যুতে তাদের ভারত বিদ্বেষী কার্যক্রম সফল করার চেষ্টা করেছিলো। ব্লগারদের মাথার উপর নুন রেখে জামায়াত শিবির বিএনপি সমর্থকদের দিয়ে ওই কাজটি করতে চেয়েছিলো আমারদেশ পাঠকমেলা। এখানে পাঠকমেলা এবং শিবির সংগঠকদের পরিচয় পুরোপুরি গোপন রাখা হয়। কিন্তু শেষমেষ আর তা গোপন থাকেনি। ভারত বিদ্বেষ আর বাংলাদেশ প্রেম- এ দুইয়ের পার্থক্য ব্লগাররা বেশ ভালোই বুঝে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সাথে ফেলানীর তুলনার বিষয়টিও ব্লগাররা বুঝে। পরে কেবল জামায়াত শিবির এবং কতিপয় বিএনপি সমর্থকদের নিয়ে মানববন্ধন করতে হয়েছে আমারদেশ পাঠকমেলাকে। অথচ গত কিছুদিন ধরেই বেশ কয়েকটি ইস্যুতে “জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট” এর ব্যানারে কয়েকজন মানুষ জোরালো ভূমিকা রেখে চলেছেন। একজন ননব্লগারের অপকর্মের দায়ভার ব্লগের কাঁদে তুলে দেয়া এবং সুন্দর করে “ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট” কথাটি ব্যবহার করার পরও যদি আমাকে কেউ বুঝায় যে, আমারদেশ পত্রিকার কোন দোষ নেই! তাহলে আমি তার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
এবার অসামাজিক ০০৭০০৭ নিকধারীকে নিয়ে একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি-
আমার ফেসবুক আইডি হচ্ছে “সবাক পাখি”। ভদ্রলোক আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড নন। উনি ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে ফেসবুকে আমাকে একটি মেসেজ পাঠালেন U name shoud be Sobak Kak..pakhi is not goes with u...
জবাবে আমি বললাম - Thanks for ur comment.
আজকের ঘটনার পর আমি উনাকে একটি মেসেজ পাঠাতে গিয়ে উনার আগের মেসেজটি এবং আমার জবাব আবারো দেখলাম। তারপর আমি একটি মেসেজ পাঠালাম - "U name shoud be Sobak Kak..pakhi is not goes with u..." আমাকে পাঠানো আপনার এ মেসেজটির কথা মনে আছে? কলমদাদির কেসটি আমি নিতে চাই। তাপসকে খুঁজে বের করবো যেভাবে পারি। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন? কোনভাবেই ব্লগকে কলংকিত হতে দিবো না। নাকে খত দিয়ে সব টাকা তাপস কলমদাদিকে বুঝিয়ে দিবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ মেসেজটির কোন জবাব আমি পাইনি।
যাহোক আজ ব্লগে কোন এক কমেন্টে তারেক জিয়ার আদর্শের সৈনিক ভুদাইকে বলতে দেখলাম তাপসকে খুঁজে বের করার জন্য উনারা তৎপর আছে। অসামাজিক ০০৭০০৭ কে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেছেন। এটা দেখে একটু আশাবাদী হয়েছি। অসামাজিক ০০৭০০৭ আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলা কথাগুলো এবং তার প্রেক্ষিতে উনার কাছের মানুষরা প্রতারক তাপসকে ধরার বিষয়ে তৎপর আছেন দেখে আশাবাদী হলাম।
আজ পত্রিকার রিপোর্টে নাসেরা বেগমের মোবাইল নাম্বারটি একজন কলগার্লের নাম্বার হিসেবে পর্ন সাইটে দেয়ার ঘটনাটি পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। কোন মানুষের পক্ষে এ কাজটি সম্ভব হতে পারে বলে বিশ্বাস হয়নি! যেহেতু টাকা নিয়ে তাপস চম্পট হয়েছে, সেহেতু এ কাজটিও সেই করেছে। তবে অসামাজিক ০০৭০০৭ এর বিরুদ্ধে রুদ্রপ্রতাপ (বাধন) এর নাম্বার ফেসবুকের "মেয়ে পটানো গ্রুপে" মেয়ের সেল নাম্বার হিসেবে প্রকাশ করার অভিযোগ আছে। এ সংক্রান্ত স্ক্রীনশটও খুঁজলে পাওয়া যাবে।
কাউকে কাউকে বলতে দেখছি “জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট” গ্রুপটি কেন এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেয়নি? আমি সকালে একটি ছোট্ট পোস্ট দিয়ে আমারদেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং বলেছি রাতে বিস্তারিত (যা বলতে চাই) পোস্ট দিবো। কর্ণেল সামুরাই নামের একজন ব্লগার তার পোস্টে বলেছেন প্রতারকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না জানিয়ে যারা প্রতারকের মুখোশ (!) উন্মোচন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আমি লেগেছি। এসব বিজ্ঞ ব্লগারদের জ্ঞাতার্থে বলছি – “তাপস এ ব্লগের কেউ না। সুতরাং এখানে প্রতিবাদ মতো করার একটি যায়গাই আছে, সেটা হচ্ছে ননব্লগার প্রতারকের প্রতারণা ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্টদের গায়ে মাখানোর জন্য আমারদেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যেতে পারে। আর একটি সমাধানের যায়গা আছে। সেটা হচ্ছে অসামাজিক ০০৭০০৭ এর সাহায্য নিয়ে অথবা তাকে সাহায্য করে তাপসকে খুঁজে বের করা। আমি ছাড়াও অন্তত একজনকে দেখেছি, যিনি কিনা এ বিষয়ে অসামাজিক ০০৭০০৭ কে সাহায্য করার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সুতরাং বিজ্ঞ(!) ব্লগারদেরকে আলুপোড়া না খেতে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে নাসেরা বেগমকে কেন্দ্র করে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ব্লগীয় দায়ভার অসামাজিক ০০৭০০৭ কেই নিতে হবে। কিন্তু উনি অর্থসংগ্রহের জন্য ব্লগে পোস্ট দিলেও (স্টিকি পোস্ট) পরবর্তীতে বলতে দেখেছি, “এটা কোন ব্লগীয় উদ্যোগ নয়।“ তবুও নিশ্চয় উনার দায়ভার আছে। এবং আজ উনি বেশ জোর গলায় বলেছেন “এর শেষ উনি দেখে নেবেন”। আশাকরি তিনি সফল হবেন। এবং এর পাশাপাশি সচেতন হবেন।