আজ "দিনমজুর" নিকের একটি লেখা পড়লাম। গ্রামীণফোনের দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট নিয়ে উনার গাত্রদাহ দেখলাম। হ্যাঁ এ গাত্রদাহ অনেকেরই। কিন্তু এ ধরনের জ্বলাজ্বলি কতটুকু মানানসই? আসলে আমাদের চারপাশে শত্রু আর শত্রু। প্রতিক্রিয়াশীল, পুঁজিবাদীরা আমাদেরকে গিলে খাচ্ছে। কিন্তু বন্ধু কোথায়? এতো শত্রুর বিপরীতে আমাদের বন্ধু কারা? তারা কোথায় থাকে?
আমাদের বন্ধুরা বাঁধাই করা বইয়ের ভেতর থাকে। সেখান থেকে বেরিয়ে বড়জোর রাস্তার ধারে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। না, না, তারা মিছিলও করে থাকে। আর কিছুর দরকার আছে? থাকলেইবা কি! তাদের সোনার অতীত আছে। অবদান নিয়ে কিছু বলবেন? চোখে আঙ্গুল দিয়ে অতীত দেখিয়ে দিবো। রাশিয়া দেখাবো, চীন, ভেনিজুয়েলা, কিউবা দেখাবো। আর কিছু দেখতে চান? জানি চাইবেন না।
বন্ধুদের গল্প বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের এসকল বন্ধু খুব জ্ঞানী। প্রচুর অধ্যয়ন করে থাকে এবং যে কোন কিছুর একধরনের কাঠামো সৃষ্টি করে প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে হলেও সে কাঠামো টিকিয়ে রাখবে। এরা ভীষণ ঘরমুখী হয়। হবেইতো। পথে ঘাটে মাঠেতো জ্ঞানের ছড়াছড়ি নেই। অফিসকক্ষে বই আছে, সে বই পড়ুয়া আছে। আলোচনা সেখানে হবে। জ্ঞানী হতে হতে আমাদের এসব বন্ধুরা জ্ঞানের কাছে জিম্মি হয়ে যায়। এটা এক ধরনের নেশা। আরো চাই, আরো চাই।
গ্রামীণ ফোন, বাংলালিংক আমাদের দেশপ্রেম নিয়ে ব্যবসা করছে। আর আমাদের দেশপ্রেম নিয়ে আমরা কিছুই করতে পারছি না। কেবল তাদের সমালোচনাই করতে পারছি। গ্রামীণফোন তাদের এসব আইডিয়া নিশ্চয় নরওয়ে থেকে আমদানি করে না। আমাদের দেশীয় মেধা নি:সৃত এসব মালামাল আমাদেরই বদহজম হবে। কারণ চেতনার পাল্লায় এটা অবশ্যই কুখাদ্য।
আপনি হয়তো জানেন, বা জানেন না, আমাদের বন্ধুরা খুবই দরিদ্র। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা চাকুরী করবে না। চাকুরী করার সময় কোথায়! কতো কাজ তাদের। এসব কাজের মাঝে বেশিরভাগই ব্যবচ্ছেদধর্মী কাজ। যেমন এরা এটা কি করলো? কেন করলো? এসব প্রশ্নবোধকের পর যা পাওয়া যায়, সেটা যে কোথায় যায়- তারা নিজেরাও জানে না।
আমার দেশের ফসলের জমি থেকে দেশী বীজ উঠে যাচ্ছে//বন্ধুদের তাকে আরেকটা বই যোগ হয়েছে
মৌলবাদীরা দিন দিন বিপদজ্বনক হয়ে উঠছে//আমার বন্ধুরা "মৌলবাদের সেকাল একাল" বিষয়ক আলোচনা সভা করছে।
সরকার তেল গ্যাস বিক্রি করে দিচ্ছে//আমার বন্ধুরা মিছিল করছে।
---এভাবে কতো বছর? এক দু তিনশো বছর?
একটা বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি। সেটা হলো শিবিরের উত্থান। ছাত্র শিবির একটি ছাত্র সঙগঠন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টও একটি ছাত্র সংগঠন। ছাত্র শিবির মৌলবাদী জংগী সংগঠন। ছাত্রফ্রন্ট প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। এভাবে যতো তুলনামূলক মূল্যায়ন করবো, ছাত্রফ্রন্টই ফ্রন্টলাইনে থাকবে। কিন্তু যখনই সাংগঠনিক সফলতার মূল্যায়ন করবো, তখন আর ফ্রন্টলাইনে থাকে না। এর কারণ কি?
হ্যাঁ এখানে সমস্যাও আছে। ছাত্রশিবির একটি ধর্মাশ্রয়ী সংগঠন। যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, সেহেতু শিবিরের সফলতা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বেশি মানুষ যে তথাকথিত ধর্মাশ্রয়ী তা কিন্তু নয়। জাতীয় নির্বাচন দেখলেই বুঝা যায়। ধর্মাশ্রয়ীদের বাইরের মানুষগুলো কেন বন্থুদের পাশে আসে না। হ্যাঁ এর পেছনেও যুৎসই কারণ আছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সমর্থন করে এরকম মানুষগুলো দু'ধরনের হয়ে থাকে। হয় প্যাকেজ নেগেটিভ, আর না হয় একেবারেই মূর্খ। আর বাকি থাকলো একেবারেই সৎ এবং জ্ঞানীরা। তারাতো আমাদের সমাজতান্ত্রিক বন্ধুরা।
আমি যে তন্ত্র নিয়ে চলি, সেটা ধর্মাশ্রয়ীদের সাথে কাজ করার মতো না, আবার ঢালাওভাবে মূর্খ মানুষদের সাথে কাজ করার উপযোগীও না। তাহলে এ তন্ত্র কাদের জন্য। এ তন্ত্র গ্রহণ করার জন্য জ্ঞানী হতে হবে? নাকি গ্রহণ করে জ্ঞানী হতে হবে?
মোটের উপর সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য কৌশলগত অবস্থানে না গিয়ে শাস্ত্রীয় মন্ত্রে কেন চলা হচ্ছে? তবে কি কেবলই কিছু সংখ্যক জ্ঞানীর স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে, তুমুল জ্ঞানচর্চা করে সমাজতন্ত্র কায়েম করা হবে?
তন্ত্রের এমন শাস্ত্রীয় চর্চার ফলে অবস্থাদৃষ্টে কালমার্কস ঈশ্বর হয়ে যাচ্ছেন এবং তার দেখানো তন্ত্র বাইবেল হয়ে যাচ্ছে।
এই পোস্ট পড়তে আসা সমাজতান্ত্রিকদের জন্য কিছু প্রশ্ন। (ছাত্রফ্রন্টের স্থলে নিজ সংগঠনের নাম পড়ে নিবেন)
==>>
বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে মেধা তালিকার ১-১০ এর মধ্যে শিবিরের নূন্যতম ৩-৪জন সমর্থক/কর্মী পাওয়া যায়। আশাকরি এক্ষেত্রে কৌশলগত দিক উল্লেখ করতে হবে না। শিবিরের এমন অবস্থানের বিপরীতে ছাত্রফ্রন্টের অবস্থান কি?
==>>
শিবিরের বেশিরভাগ দায়িত্বশীল খুবই মিশুক এবং মৃদুভাষী হয় (অন্য সাধারণ মানুষের সাথে)। এবং ছোটদের সাথে খুবই আদর মিশিয়ে কথা বলে। এক্ষেত্রে তারসাথে প্রথমে বেশিরভাগ সময় ধরে তার পাড়লেখা নিয়ে কথা বলে। এবং অবশ্যই ছোটদেরকে আগে সালাম দেয়ার সুযোগ দেয় না (এটি ছোটদের মুরুব্বীদেরকে আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে)। এরকম কৌশলের বিপরীতে ছাত্রফ্রন্টের কৌশল থাকার প্রয়োজন আছে কি?
==>>
নি:সন্দেহে শিবিরের কিশোর পত্রিকা "কিশোর কন্ঠ" একটি কিশোরবান্ধব পত্রিকা। কিশোরদের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষন করে খুব সফল এই পত্রিকাটি কিশোরদের কাছে বেশ আকর্ষনীয়। ধর্মীয় ফিচারগুলো বাদে অন্য ফিচার অবশ্যই যেকোন ধরনের কিশোরদের কাছেই আকর্ষনীয়। নিশ্চয় ছাত্রপ্রন্টেরও কিশোর প্রকাশনা আছে। আপনার কি মনে হয়, কিশোর কন্ঠের বিপরীতে আপনাদের কিশোর পত্রিকা বয়সগত দর্শনভেদে সমৃদ্ধ?
==>>
আপনার কি মনে হয় ছাত্রফ্রন্ট কর্মীদের কিশোর সংলাপ (কিশোরদের সাথে কথা বলার সময় সঙলাপগুলো) কিশোরসূলভ?
==>>
একটি ধর্মব্যাবসায়ী জঙ্গী সংগঠনের চাইতে একটি আদর্শবাদী শান্তিকামী সংগঠন কেন অনগ্রসর। প্রধান পাঁচটি কারণ জানালে খুশি হবো।
==================
শিবিরের প্রধান যে কৌশল সমূহ :
১. চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেশিরভাগ স্থানে শিবির খুব নিরীহ চলাফেরা করে।
২. মেধাতালিকার শুরুর দিকে ছাত্রদের টার্গেট করে। যার ফলে কম মেধাবীরা তাদের অগ্রগামীদের অনুসরণ করে। পড়ালেখার রুটিন, হ্যান্ডনোট ইত্যাদি দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে।
৩. ধর্মকে খুব আবেগ দিয়ে প্রকাশ করে। এবং আটাকেই জীবনের মূল নিয়ামক তত্বে প্রতিষ্ঠিত করে।
৪. প্রচুর কিশোর পত্রিকাসহ সহায়ক পুস্তক প্রকাশ করে।
৫. নিয়মিত বৈঠক করে।
৬. শিবিরের মেসে থাকে না, এমন সম্ভাব্য সমর্থকদের অসুখ হলে শিবিরের মেসে এনে সেবা করা হয়।
৭. সততা, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতাসহ অন্যান্য যতো বয়সোপোযোগী পজিটিভ টার্ম আছে সবগুলোর উপরে বিশেষ জোর দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়।
৮. প্রচারপত্র (প্রসফেক্টাস, বই, ধর্মীয় বাণীর স্টীকার, ক্যালেন্ডার) সমূহের গায়ে শিবিরের ট্যাগের মাধ্যমেই প্রাথমিক সাংগঠনিক প্রচার সেরে নেয়। ততোদিনে হাফচান্সের কিশোররা দুর্বলতা প্রকাশ করতে শুরু করলে চূড়ান্ত ব্রেন ওয়াশ দেয়া হয়।
এসকল মনস্তাত্বিক কৌশল মোকাবেলা করার কোন প্রয়োজনীয়তা ছাত্রফ্রন্ট অনুধাবন করে কিনা, এবং করলে তার প্রেক্ষিতে কোন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে কি না। (জাস্ট হ্যাঁ অথবা না)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ২:১০