
এম্নিতে আমি বড় পর্দার ভক্ত,সুযোগ পেলেই মুভি দেখতে ঢুকে পড়ি।কারণ,বড় পর্দায় কোনো মুভি দেখার সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।এরই স্বাদই অন্যরকম।একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি,অতি জঘন্য মুভিও বড় পর্দায় দেখার পর ভালো লেগেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি টি.এস.সি.-তে একটি চলচিত্র উৎসবে দেখে এলাম সপ্তপদী।যদিও মুভিটি আগেও অনেকবার দেখেছি,কিন্তু এবার যেন আমার এই চেনা মুভিটিকেই নতুন করে আবিষ্কার করলাম।
সম্পূর্ণ মুভিটাই ব্যতিক্রমী।প্রায় অর্ধেকেরও বেশি অংশ ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়েছে। মূল গল্পের শুরুটাও তেমনি,ফুটবল মাঠে।কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী (উত্তম কুমার) আর রিনা ব্রাউন (সুচিত্রা সেন),দুই মেডিকেল স্টুডেন্ট।মাঠে তাদের পরিচয়।প্রথমে রাগ,তারপরে অনুরাগ (তবে,এই অনুরাগের পূর্বে বেশ কিছু মজাদার খন্ড প্রলয় আছে।আর আছে শেক্সপীয়ারে'র ওথেলো'র সবচে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যটির চিত্রায়ন। কলেজের কালচারাল ফাংশনের অংশ হিসেবে "ওথেলো"তে অভিনয় করেন উত্তম-সুচিত্রা।মুভিটায় এই বিশেষ অংশটি পরিচালনা করেন উৎপল দত্ত।সত্যি বলতে কি,ওথেলোর অংশটুকুই আমার সবচে ভালো লেগেছ।মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো)।
কৃষ্ণেন্দু আর রিনা বিয়ে করতে চাইলে কৃষ্ণেন্দুর বাবা (ছবি বিশ্বাস) বাধা দেন।কারণ,দুইজন দুই ধর্মের।বিয়ে আর হয় না।অনেক বছর পর,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুনঝরা সময়ে কৃষ্ণেন্দু আবার রিনাকে খুঁজে পায়।তবে এ সম্পূর্ণ অন্য এক রিনা।কেন রিনার এই অবস্হা, কেনইবা সে সবার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায় এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নামে কৃষ্ণেন্দু।
উপমহাদেশীয় মুভির একটা কমন সমস্যা,কাহিনী মাঝে-মাঝে ঝুলে যায় (স্লো হয়ে যায়)।সপ্তপদী সেই ত্রুটি থেকে অনেকাংশে মুক্ত।মুভিটার বেশ কিছু দৃশ্য দেখলে অবাক হতে হয়,১৯৬১ সালের স্বল্প প্রযুক্তি দিয়ে এই ধরণের ভালো কাজ কিভাবে করলো ! ওয়াইড শটগুলো দেখলে মজা পাওয়া যায়।
কাহিনী মাস্টার রাইটার তারাশন্কর বন্দোপাধ্যায় এর "সপ্তপদী" উপন্যাস থেকে নেওয়া আর মুভিটার পরিচালক অজয় কর।উত্তম কুমার তা চলচিত্র জীবনে মাত্র তিনটি মুভি প্রযোজনা করেছিলেন।সপ্তপদী তার মাঝে একটি।এই মুভিতেই আছে বাংলা চলচিত্র ইতিহাসের কিংবদন্তীতূল্য
গান,"এই পথ যদি না শেষ হয়..."
সব মিলিয়ে সপ্তপদী সম্পর্ক,ইতিহাস,জাতিগত প্রভেদ,রাজনীতি আর মাণুষের গল্প।ভারতীয় সাদা-কালো যুগের অন্যতম সেরা চলচিত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১০ সকাল ৯:৫৮