somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ বিক্রি করা সেই ৭ দফা চুক্তি গোপন চুক্তি।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে ভারতে আশ্রয়ে ছিলেন তখন মুজিবনগর সরকারকে দিয়ে ভারত গোপনে ৭ দফা চুক্তিগুলো করিয়ে নেয়। যার সারমর্ম ছিল রক্ষীবাহিনী গঠন, ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য ভারতের নিয়ন্ত্রণে রাখা, বাংলাদেশের বার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ভারতকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অনুবর্তী রাখা।

কী ছিল সেই ৭ চুক্তিতে :

১. ‘বাংলাদেশে ভারত তার ইচ্ছামতো, পছন্দসই লোক দিয়ে পছন্দসই নেতৃত্ব পাঠিয়ে একটি সামরিক বাহিনী গঠন করবে, যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আধাসামরিক বলে পরিচিত হবে। কিন্তু এদের গুরুত্ব এবং সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের মূল সামরিক বাহিনী থেকে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ রাখা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বাহিনীটি হচ্ছে রক্ষীবাহিনী। ভারতীয় সৈন্যের পোশাক, ভারতীয় সেনানীমণ্ডলীর নেতৃত্ব ও ভারতের অভিরুচি অনুযায়ী বিশেষ শ্রেণির লোককে শতকরা ৮০ জন এবং ‘বিশেষ বাদ’-এর সমর্থক ২০ জন করে নিয়ে এই বাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে। অস্ত্র, গাড়ি, পোশাক, সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে এই বাহিনীটি মূল বাহিনীকে ছাড়িয়ে গেছে। এ বাহিনীটি ব্যবহার করা হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ভারতবিরোধী কোনো সরকার ঢাকার ক্ষমতায় বসলেও বাহিনী দিয়ে তাকে উৎখাত করা হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী রাজনীতি সমর্থকদের এই বাহিনী দিয়েই দমন করা হবে। এ বাহিনীর মধ্যে ভারতপ্রেমী বিশেষ শ্রেণির লোকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় কোনোদিন এদের ভারতের বিরুদ্ধে লাগানো যাবে না। এ দেশের জনগণ কোনোদিন বিপ্লবে অবতীর্ণ হলে, রক্ষীবাহিনীর পোশাক পরে ভারতীয় সৈন্যরা লাখে লাখে রক্ষীবাহিনী সেজে এ দেশের অভ্যন্তরে জনগণকে দমন করতে পারবে।’

২. ‘বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে যে সামরিক সাহায্য নিয়েছে তা পরিশোধ করতে হবে বিভিন্নভাবে যেমন-ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশ অস্ত্র কিনতে পারবে না। মাঝে মাঝে ঘোষণা করা হবে ভারত থেকে এত কোটি টাকার অস্ত্র কেনা হলো। এর দাম ভারতই ঠিক করে দেবে। সরবরাহ দেওয়া হবে অর্ধেক অস্ত্র। সরবরাহকৃত অস্ত্রও ভারত ইচ্ছামতো নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে। অর্থাৎ একই অস্ত্র বারবার দেখিয়ে ১৯৭১-এর পাওনা এবং ভারতের সম্পূর্ণ যুদ্ধ খরচ আদায় করা হবে। অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দমনের অস্ত্র ছাড়া কোনো ভারী অস্ত্র সাঁজোয়া, গাড়ি বা ট্যাংক বাংলাদেশকে দেওয়া হবে না।’ ৩. ‘বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভারতের অনুমতি ছাড়া কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যাবে না। কোন পণ্য কত দরে বাইরে রপ্তানি করতে হবে ভারত সেই দর বেঁধে দেবে। এসব পণ্য ভারত নিজে কিনতে চাইলে বাংলাদেশ আর কারও সঙ্গে সে পণ্য বিক্রির কথা আলোচনা করতে পারবে না। বাংলাদেশের আমদানি তালিকা ভারতের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। (বাংলাদেশে বিদেশি পণ্য আমদানির ব্যাপারে ভারত উদার থাকবে-যেসব পণ্য ভারতকেও আমদানি করতে হয় সেগুলো আমদানি করানো হবে বাংলাদেশকে দিয়ে? বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল ভেঙে বিদেশ থেকে যেসব সামগ্রী আমদানি করবে সেগুলো ভারত নিজে আমদানি করবে না। চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ থেকে সেই মালগুলো ভারতীয় টাকায় জোগাড় করবে। বিলাতের সেভেন ও রুক বেডর বেলায় এসব এবার ঘটেছে। ভারত সেভেন ও ক্লক আমদানি করেনি। বাংলাদেশকে দিয়ে বিপুল পরিমাণে দেড় কোটি টাকার ব্লেড আমদানি করিয়েছে- এখন ভারত নিখরচায় সে ব্লেড নিয়ে গেছে।’

৪. ‘বাংলাদেশের বার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলো ভারতকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। (বাংলাদেশ যেন স্বাবলম্বী না হতে পারে ভারত সেভাবে পরিকল্পনাগুলো কেটেছিঁড়ে ঠিক করবে। আইয়ুবি আমলে, বাংলাদেশে পরিকল্পনায় অর্থ ব্যয় হয়েছে কিন্তু সবই অনুৎপাদনশীল খাতে। পশ্চিম পাকিস্তানে সব অর্থ ঢালা হয়েছে উৎপাদনশীল খাতে। ভারতও বাংলাদেশের উন্নয়নকে অনুৎপাদনশীল রেখে দিতে চায়। ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক ঘোষিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও বাজেটে একই অবস্থা দেখা গেছে। আগামী মহাপরিকল্পনা এখন ভারতের কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তাতেও অনুৎপাদনশীল খাত প্রাধান্য পাবে।)’

৫. ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অনুবর্তী রাখতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।’

৬. ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তিগুলো বাংলাদেশ একতরফাভাবে অস্বীকার করতে পারবে না। তবে ভারত এ চুক্তিগুলোর কার্যকারিতা অস্বীকার না করলে বছর-বছরান্তে এ চুক্তিমালা বলবৎ থাকবে।’

৭. ‘ডিসেম্বর যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, ভারতীয় সৈন্যরা যে কোনো সংখ্যায় যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে এবং বাধাদানকারী যে কোনো মহলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। ভারতীয় বাহিনীর এ ধরনের অভিযানের প্রতি বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছে। ভারত চুক্তিটি নাকচ না করলে বছর-বছরান্তে এ চুক্তি কার্যকর থাকবে।’

১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি সই হয়েছে এবং এখনো প্রকাশিত হয়নি ভারতের সঙ্গে এমন চুক্তি থাকলে তা সরকার নথিপত্র খুঁজে প্রকাশ করলে জনগণ জানতে পারবে সেসব চুক্তিতে জাতীয় স্বত্বার কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হয়েছে। এটা এখন সময়ের দাবী।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৩
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরাকানে 'স্বাধীন মুসলিম রাজ্য' প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১২


বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি একটি ‘স্বাধীন মুসলিম রাজ্য’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা আসলে হাস্যকর এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি , এবং চীনের ভূ-রাজনীতির ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

১০০ টা নমরুদ আর ১০০ টা ফেরাউন এক হলেও একজন হাসিনার সমান নৃশংস হওয়া সম্ভব ছিলো না!!

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৫২

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য কবর খুঁড়তে হয়েছিলো ২ টা।
একটা না।
ফাঁসির ৪ ঘন্টা আগেও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জানতেন না, আজকেই তাকে যেতে হবে।
ফ্যামিলি যখন শেষবারের মতো দেখা করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিন নিয়ে এতো লাফালাফির কি আছে?

লিখেছেন অপলক , ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:১০

ফিলিস্তিনে গত ৩ বছরে মারা গেছে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫১ হাজার। বাংলাদেশে ১৯৭১এ মাত্র ৯মাসে মারা গেছে ৩ লক্ষ, যদিও শেখ মুজিব বলেছিল, ৩০ লক্ষ।
কোথায় ৫১ হাজার কোথায় ৩০ লক্ষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন ...

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:১৯





****
আরো দেখতে চাইলে ভেতরে আসেন ...







...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৩

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

"হুজুগে-গুজবে বাংগালী"- বলে আমাদের একটা দুর্নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। গুজব আর হুজুগ যমজ ভাই।
গুজব বা হুজুগের সবকিছু মানুষ কিনতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্যোতনা দেয় অন্ধ বিশ্বাস।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×