পরিচিতি :
ঝিঙে , ঝিঙ্গা, ঝিঙ্গে এর ইংরেজি নাম Luffa এবং বৈজ্ঞানিক নাম Luffa luffinea যা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত একটি সবজি। ইহা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের লতাজাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ঝিঙে গাছের মসৃণ গাঁট থেকে নতুন কান্ড বের হয় ও পরিনত সময়ে ফুল ও ফল হয়। ঝিঙে দেখতে আকর্ষণীয় গাঢ় সবুজ রংয়ের ফল। ইহা লম্বা গড়ে ২৭ সেমি ও ওজন গড়ে ১২৫ গ্রাম এবং গাছ ৬ ফুট থেকে ১৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ইহা সাধারণত বেড়ায়, মাচায় ও অন্য গাছকে আশ্রয় করে প্রসারিত হয়ে থাকে। এর ফুল হলুদ রঙের হয়ে থাকে। সন্ধ্যার আগে ফুল ফোটে। সবুজ রঙের সবজি বোঁটার দিক থেকে চিকন হয়ে আস্তে আস্তে মোটা হতে থাকে এবং সবজিটি দেখতে শিরসম্পন্ন। সবজির ভিতরে প্রকোষ্ঠগুলি দেখতে যেন জাল বুনে তৈরী, সেটা দেখা যায় ফল পাকলে। প্রকোষ্ঠের মধ্যে অনেকগুলি বীজ থাকে। এগুলি দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি ও চেপ্টা। ঝিঙে চাষের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস এবং সংগ্রহের সময় হলো জুন হতে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত, এই সময় ঝিঙ্গার বাজার দর ও চাহিদা অনেক বেশি।এই সবজি চীন ও ভিয়েতনামে প্রচুর জন্মে তবে কমবেশি সবস্থানেই পাওয়া যায়।
ঝিঙের পুষ্টি উপাদানসমূহ :
ঝিঙে সারা বিশ্বে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে স্বীকৃত। এতে খাদ্য-আঁশ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, রিবোফ্ল্যাভিন, জিঙ্ক, লোহা, থায়ামিন ও ম্যাগনেশিয়াম, ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ঝিঙেতে রয়েছে ৯৩ গ্রাম জলীয় অংশ, ০.৩ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২.৬ গ্রাম আঁশ, ৩০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৮ গ্রাম আমিষ, ৪.৩ গ্রাম শর্করা, ১৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬.৭ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ ও ৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
সুস্বাস্থ্য গঠনে পুষ্টি উপাদানসমূহের অবদান :
ওজন নিয়ন্ত্রণের মহৌষধ: ঝিঙে খুবই কম ক্যালরি বা খাদ্যশক্তির একটি সবজি। এতে চর্বি নেই। এর আঁশ কোলেস্টেরল কমায়। এ ছাড়া এতে প্রচুর পানিও রয়েছে। তাই ঝিঙে খেলে বারবার খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে কমে যায়। ফলে একে ওজন কমানোর মহৌষধ বলা চলে। রক্ত শোধক: রক্তকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে ঝিঙে অতুলনীয়। যকৃতের জন্য খুবই উপকারী এই সবজি। পাশাপাশি এটি অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাবও দূর করে। জন্ডিস নিরাময়কারী: জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঝিঙে আদর্শ পথ্য। ঝিঙের ‘জুস’ পান করলে যকৃতের কর্মক্ষমতা বাড়ে। পাকস্থলী ভালো রাখে: এতে প্রচুর আঁশ থাকায় এটি পেট পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পাইলস রোগ দূরে রাখে। অ্যাসিডিটি ও আলসারও নিরাময় করে এটি। নিয়মিত ঝিঙে খেলে পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ে, খাবারও হজম হয়। ডায়াবেটিসে উপকারী: ঝিঙেতে বিদ্যমান পেপটাইড এনজাইম রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়। রক্তের ইনসুলিনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ঝিঙে খুবই উপকারী। প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক: প্রদাহরোধী ও অ্যান্টিবায়োটিকের চমৎকার গুণ রয়েছে এই সবজিতে। শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয় এটি। ত্বকেরও সুরক্ষা দেয়। এটি বিভিন্ন রোগজীবাণু, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। সূত্র
ঝিঙের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :
ঝিঙের এর ক্ষতির চেয়ে দেহে আরও বেশি উপকারী এবং এটিকে সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে বিবেচিত হয় না।
ছবি : অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:২০