বই পড়ে যে লাইন গুলো ভালো লাগতো,একটা ছোট্ট খাতা্য় সেগুলো লিখে রাখতাম।আমার এক খাতা ভরা শুধু হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর বই থেকে নেয়া ভালো লাগা লাইন দিয়ে।এই মানুষটা দেখিয়েছে আমাকে বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে উপভোগ করা জীবনের আনন্দ,জাগিয়েছে ভরা জোছনা্য় গৃহত্যাগী হওয়ার তীব্র ইচ্ছা,শিখিয়েছে বাসি পোলও দিয়ে গরম ডিম ভাজা খাওয়ার এক অন্য স্বাদ। এখন যেভাবে জীবনটা দেখি,এই মানুষটার বই না পড়লে আমি কিভাবে দেখতাম জানি না।
যাই হোক,আমার সেই ছোট্ট খাতা থেকে মৃত্যু নিয়ে হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর বই এর কিছু লাইন নিচে তুলে দিলাম:
১)মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না,এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই।শেষ বিদা্য় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার।নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যা্য় না,যাওয়া উচিত নয়।এটা হৃদ্য়হীন ব্যাপার।(দেবী।পৃ:৪৮)
২)মৃত্যু টের পাওয়া যায়।তার পদশব্দ ক্ষীন কিন্তু অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।(তোমাকে।পৃ:৬৩)
৩)বেঁচে থাকার মতো আনন্দের আর কিছু নেই।(আগুনের পরশমনি।পৃ:৯৭)
৪)অসম্ভব ক্ষমতাবান লোকেরা প্রা্য় সময়ই নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যায়।(আকাশ জোড়া মেঘ। পৃ:২৭)
৫)আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে।যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না।(মেঘ বলেছে যাব যাব।পৃ:১৫৮)
৬)মৃত মানুষদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি না।আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্য।(অপেক্ষা।পৃ:১৪৬)
৭)যে বাড়িতে মানুষ মারা যায় সে বাড়িতে মৃত্যুর আট থেকে নয় ঘন্টা পর একটা শান্তি শন্তি ভাব চলে আসে।আত্মীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করে চোখের পানির স্টক ফুরিয়ে ফেলে।চেষ্টা করেও তখন কান্না আসে না।তবে বাড়ির সবার মধ্যে দুঃখী দুঃখী ভাব থাকে।সবাই সচেতন ভাবেই হোক বা অচেতন ভাবেই হোক দেখানোর চেষ্টা করে মৃত্যুতে সেই সব চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে।মূল দুঃখের চেয়ে অভিনয়ের দুঃখই প্রধান হয়ে দড়ায়।একমাত্র ব্যাতিক্রম সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের দুঃখ।(হিমুর রুপালী রাত্রি।পৃ:১৮)
৮) বিবাহ এবং মৃত্যু-এই দুই বিশেষ দিনে লতা পাতা আত্মীয়দের দেখা যায়।সামাজিক মেলা মেশা হয়।আন্তরিক আলাপ হ্য়।(একজন হিমু কয়েকটি ঝি ঝি পোকা।পৃ:৮১)
৯)আসল রহস্য পদার্থ বিদ্যা বা অংকে না-আসল রহস্য মানুষের মনে।আকাশ যেমন অন্তহীন মানুষের মনও তাই।পৃথিবীর বেশির ভাগ অংকবিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন।আকাশের দিকে তাকালে জাগতিক সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয়।We are so insignificant.আমাদের জন্ম মৃত্যু সবই অর্থহীন।(আমিই মিসির আলি।পৃ:৭৯)
১০)মৃত্যু হচ্ছে একটা শ্বাশত ব্যাপার।একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।আমরা যে বে্ঁচে আছি এটাই একটা মিরাকল।(কবি।পৃ:১৯১)
১১)মানব জীবন অল্প দিনের।এই অল্প দিনেই যা দেখার দেখে নিতে হবে।মৃত্যুর পর দেখার কিছু নেই।দোযখে যে যাবে-সে আর দেখবে কি-তার জীবন যাবে আগুন দেখতে দেখতে।আর বেহেশতেও দেখার কিছু নাই।বেহেশতের সবই সুন্দর।যার সব সুন্দর তার সৌন্দর্য বোঝা যায় না।সুন্দর দেখতে হ্য় অসুন্দরের সংগে।(কালো যাদুকর।পৃ:৭৮)
১২)সব মৃত্যুই কষ্টের,সুখের মৃত্যু তো কিছু নেই।(কোথাও কেউ নেই।পৃ:৪০)
১৩)দুঃখ কষ্ট সংসারে থাকেই।দুঃখ কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হয়।জন্ম নিলেই মৃত্যু লেখা হয়ে যায়।(কোথাও কেউ নেই।পৃ:৩৬)
১৪)শোকে দুঃখে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়।কবর দিয়ে দেয়ার পর নিকট আত্মীয় স্বজনরা সবসময় বলে-"ও মরে নাই"।(ছায়া সঙ্গী।পৃ:১৪)
১৫)ঘুম হচ্ছে দ্বিতীয় মৃত্যু।(পারাপার। পৃ:২২)
১৬)মানুষ হচ্ছে একমাত্র প্রানী,যে জানে একদিন তাকে মরতে হবে।কেননা অন্য কোন প্রানী মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয় না,মানুষ নেয়।(একা একা।পৃ:১০)
১৭)মৃত্যু ভয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষন।শুধু মাত্র নির্বোধদেরই মৃত্যু ভয় থাকে না।(নি।পৃ:২৫)
১৮)মৃত্যুতে খুব বেশি দুঃখিত হবার কিছু নেই।প্রতিটি জীবিত প্রানীকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মরতে হবে।তবে এ মৃত্যু মানে পুরোপুরি ধ্বংস নয়।মানুষের শরীরে অযুত,কোটি,নিযুত ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস যেমন-ইলেকট্রন,প্রোটন,নিউট্রন-এদের কোন বিনাশ নেই।এরা থেকেই যাবে।ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে।কাজেই মানুষের মৃত্যুতে খুব বেশি কষ্ট পাবার কিছু নেই।(নি।পৃ:১০)
১৯)অন্য ভুবনের দিকে যাত্রার আগে আগে সবাই প্রিয়জনদের দেখতে চায়।(আমার আপন আধার।পৃ:৭১)
২০)যে মানুষ মারা যাচ্ছে তার উপর কোন রাগ কোন ঘেন্না থাকা উচিত নয়।(নবনী।পৃ:১০৯)
ওপাড়ে ভালো থাকুক আমাদের এই প্রিয় মানুষটি......