ঈদ সংখ্যার প্রচলন সম্ভবত বিচিত্রা’ই এদেশে চালু করেছিল। বিচিত্রা'র পাশাপাশি রোববার, সচিত্র সন্ধানী, নিপুণ, তারকালোক ইত্যাদি ঈদ সংখ্যা বের করতো। সারাবছর আগ্রহ নিয়ে থাকতাম ঈদ সংখ্যার জন্য। প্রাপ্তিটা নিশ্চিত করার জন্য হকারকে অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখতাম। ঈদ সংখ্যার মধ্যে বিচিত্রা’র জন্যই হুমায়ূন আহমেদ প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন। হাসনাত আব্দুল হাই’এর ত্রয়ী- নভেরা, সুলতান, আরজ আলী মাতব্বর ধারাবাহিকভাবে ৩টি ঈদ সংখ্যা বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া শওকত আলী’র ওয়ারিশ সিরিজ, সৈয়দ শামসুল হক’এর জলেশ্বরী নিয়ে লেখা, মঈনুল আহসান সাবের’এর পাথর সময় ইত্যাদি জনপ্রিয় উপন্যাস বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। সেই সময় এদের সাথে লেখক তালিকায় আরো থাকতেন- শওকত ওসমান, রফিকুন নবী, শাহরিয়ার কবীর, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন প্রমুখ। বিচিত্রা’র ১৬টি ঈদ সংখ্যা (১৯৮৫-১৯৯৮) আমার সংগ্রহে আছে। সাধারণ নিউজপ্রিন্টে ছাপা ঈদ সংখ্যা বিচিত্রা’র গুণগত মান ছিল এককথায়- অসাধারণ।
বিচিত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শেষের দিকে পাক্ষিক অন্যদিন ঈদ সংখ্যা বের করা শুরু করে। অন্যদিন’ই প্রথমবারের মতো নিয়মিতভাবে কলকাতার লেখকদের লেখা ঈদ সংখ্যায় চালু করে। এই বিষয়ে আমার একটু ভিন্নমত রয়েছে। আমি কলকাতার লেখকদের লেখা পড়ি যে না, তা নয়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়’এর লেখার আমি রীতিমতো ভক্ত। কিন্তু ঈদ সংখ্যায় দেশের বাইরের লেখকদের এরকম দাপট উপস্হিতি মেনে নিতে পারি না। এমনিতে তাদের বই আমাদের দেশে সহজলভ্য। আবার ঈদ সংখ্যায় তাদের লেখাকে প্রমোট করা কেন? দেশ ম্যাগাজিনের পূজা সংখ্যায় নিয়মিত শামসুর রাহমান’এর কবিতা প্রকাশিত হতো। পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ’এর উপন্যাস দেশ’এর পূজা সংখ্যায় কয়েকবছর নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। আর পূজা সংখ্যা আনন্দলোক’এ ইমদাদুল হক মিলন’এর। মাঝে অব্শ্য তসলিমা নাসরীনও ঠাঁই করে নিয়েছিলেন সেখানে। তবে সেই সংস্করণ আমাদের দেশে আসতো না। ব্যস। আর কোন লেখকদের লেখাই পূজা সংখ্যায় প্রকাশিত হয় কি না আমার জানা নেই। ঈদ সংখ্যাগুলোতে কলকাতার এমন লেখকের লেখা ছাপা হয় তাদেরকে আমাদের দেশের পাঠকরা ভালো করে চিনেন কি না সেটাই আমার সন্দেহ হয়।
এদিক থেকে প্রথম আলো ব্যতিক্রম। ঈদ সংখ্যা প্রকাশনার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দেশী লেখকদের লেখা নিয়েই তারা প্রতিব্ছর ঈদ সংখ্যা ছাপিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এজন্য প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আশাকরি এই ধারা অব্যাহত থাকবে। গত কয়েকবছর ধরে ম্যাগাজিনের পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকাগুলো পাল্লা দিয়ে ঈদ সংখ্যা বের করছে। এতে লাভ হয়েছে পাঠকদের। তারা নিজেদের পছন্দমতো ঈদ সংখ্যা পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বরাবরের মতো এবারও আমি ৩টি ঈদ সংখ্যা সংগ্রহ করেছি। প্রথম আলো’র সাথে সমকাল আর কালেরকণ্ঠ। বলা বাহুল্য প্রথম আলো ব্যতীত অন্য দু’টি কলকাতার লেখকদের লেখা ছেপেছে।
এই ৩টি ঈদ সংখ্যার পরিসংখ্যান পাঠকদের সাথে আমি একটু শেয়ার করি। ৩টি প্রকাশনায় উপন্যাস ছাপা হয়েছে ২৩টি, ছোট গল্প ৩৯টি, কবিতা ১২৭টি, ভ্রমণ কাহিনী ০৮টি। এছাড়া প্রবন্ধ/নিবন্ধ, অনুবাদ সাহিত্যসহ রয়েছে আরো নানা আয়োজনের লেখা। ঔপন্যাসিকের তালিকায় আছেন- হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, বুলবুল চৌধুরী, মঞ্জু সরকার, মইনুল আহসান সাবের, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক প্রমুখ। ছোটগল্প লেখকের তালিকায় আছেন- আল মাহমুদ, বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীল, আবেদ খান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, মাহবুব তালুকদার, মশিউল আলম, ধ্রুব এষ, সুমন্ত আসলাম প্রমুখ। কবিতা লিখেছেন- আবুল হোসেন, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, কাজী রোজী, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সাজ্জাদ শরীফ, মারুফ রায়হান, আসলাম সানী প্রমুখ। কলকাতার জনপ্রিয় লেখক- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও সমরেশ মজুমদার যথারীতি আছেন।
প্রতিটা প্রকাশনার কিছু কিছু লেখা পড়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রথম আলো’য় প্রকাশিত আন্দালিব রাশদী’র প্রতিমন্ত্রী নামক উপন্যাস নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছি । আরো কিছু লেখা ভালো লাগার তালিকায় চলে আসছে। অনেকে হয়তো ঈদ সংখ্যার লেখার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রাখতে পারেন। কিন্তু ঈদ সংখ্যাসমূহের এই আয়োজন প্রতিবছর আমাদের সাহিত্যে কিছুটা হলেও গতি সঞ্চার করছে এটাই বা কম কি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:০০