শুরু করতে চাই প্রিয় কবি কাজী কাদের নেওয়াজ এর শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা দিয়ে,
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, “শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, “সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
“আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”
এই কবিতা আমাদের শিখিয়েছে, পানি ঢেলে দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দেওয়া উচিত। এই কবিতায় না আছে কোনো রাজনীতি, না আছে ধর্মীয় উগ্রবাদ। আরে ভাই, গল্প-কবিতার চরিত্রগুলো তো কোনো না কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ। বাদশা আলমগীর নামটি যেমন ইসলাম ধর্মের, তেমনি শকুন্তলা নামটিও সনাতন ধর্মের।
আজ যারা সমাজে জ্ঞানী-গুণী ও সৎ আদর্শবান মানুষ, তারা অনেকেই এসব কবিতা পড়েই বড় হয়েছেন।
কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষকরা কি আমাদের আদ্যো নিজেদের সন্তান ভাবেন?
শিক্ষক শব্দটার এক কথায় প্রকাশ হওয়া উচিতঃ ছাত্র-ছাত্রীদের হিত চিন্তা করে যেই জন।
করোনা মহামারীতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন, কিন্তু কয়জন শিক্ষক সত্যিকার অর্থে ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন? তাদের সমস্যা সমাধানে তাদের পাশে থাকছেন... তাদের যোক্তিক দাবিতে তাদের পাশে থাকছেন?
প্রশ্নটা আমার সকল শিক্ষকদের কাছেই রইল।
সবাই সুস্থ্ থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:২৮