somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা আবার কী?

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আই,ই,আরে ভর্তি হয়ে আজ তৃতীয় বর্ষ শেষ করতে চললাম। এই পুরোটা সময়ে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন, "কোথায় পড়/পড়েন?" উত্তরে বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোন সাবজেক্ট জানতে চাওয়ার পর যখন বলেছি "শিক্ষা" তখন শতকরা ৯৮ শতাংশ ব্যক্তি পালটা প্রশ্ন করেছেন, "শিক্ষা আবার কী?", "বিএড?", "এটা কি ডিপ্লোমা?" "এটা কি ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় অধিভুক্ত না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সাবজেক্ট?", এটা কি অনার্স?"। দেখা যাক শিক্ষা আসলে কী এবং কীভাবে সেখানে অনার্সও পড়া যায়।

আমরা জানি যে, মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা ৫ টি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। খাদ্য নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা হয়। কৃষিবিজ্ঞান, মৎসবিজ্ঞান, পশুপালনবিদ্যা, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান- এসব বিষয়ই মানুষের প্রধানতম মৌলিক চাহিদা খাদ্য নিয়ে কাজ করে। তেমনি বস্ত্রের জন্য রয়েছে বস্ত্র প্রকৌশল। বাসস্থানের চাহিদা মেটানোর জন্য রয়েছে পুরকৌশল। চিকিৎসায় পড়াশোনা করার জন্য রয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। ঠিক একইভাবে মানুষের শিক্ষা চাহিদা মেটানোর জন্য শিক্ষাবিজ্ঞানও রয়েছে। কৃষিবিজ্ঞান বা পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান, বস্ত্রকৌশল, পুরকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞানকে উচ্চতর শিক্ষার একেকটি বিষয় বা জ্ঞানক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও আমাদের দেশে শিক্ষাবিজ্ঞান একটি পূর্ণাঙ্গ ডিসিপ্লিন হিসেবে খুব একটা পরিচিত নয়। শিক্ষা নিয়েও যে একটি বিষয় থাকতে পারে যেখানে অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি করা যায় সেটি আমরা অনেকেই জানি না। সে কারণে যখনই শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে আমরা কেউকে পড়াশুনা করতে দেখি বা শুনি তখন অবাক হতে হয় আমাদের।

মানুষ সমাজের প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে। উচ্চশিক্ষায় নানা অনুষদের নানা ধরণের বিষয়ের সাথে আমরা পরিচিত। বিজ্ঞান অনুষদের বিষয় হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত যেমন আমাদের নিকট পরিচিত তেমনি কলা অনুষদের বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজির সাথেও আমরা পরিচিত। সেরকম শিক্ষাবিজ্ঞান নিজেই একটি অনুষদ বা পৃথক জ্ঞানক্ষেত্র হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নরওয়ে বা অস্ট্রেলিয়ার মত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় সকল সাধারণ বিশ্ববদ্যালয়ে "শিক্ষা" একটি পৃথক অনুষদ, ইনস্টিটিউট বা কলেজ হিসেবে থাকে। বিশ্বের নামকরা সবগুলো বিশ্ববদ্যালয়ে (বিশেষায়িত বিশ্ববদ্যালয়গুলো বাদে) শিক্ষা ইনস্টিটিউট বা কলেজ অভ এডুকেশন থাকে। তার অধীনে শিক্ষাবিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে পড়ানো হয়।

একটি ডিসিপ্লিন হিসেবে শিক্ষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শিক্ষায় পরিমাপ ও মূল্যায়ন, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষার সামাজিক ভিত্তি, শিক্ষার দার্শনিক ভিত্তি, শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষজায় গবেষণা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিক্ষানীতি অধ্যয়ন, শিক্ষায় নেতৃত্ব, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন- এরকম অনেক কোর্স পড়ানো হয় শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়ে। শিক্ষাবিজ্ঞানের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে শিক্ষকতা বা শিক্ষণ বা টিচিং। শিক্ষাক্রম প্রস্তুত ও উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষাদান এবং শিক্ষা মূল্যায়ন- এসবই শিক্ষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। উল্লেখ্য, শিক্ষাক্রম মানে পাঠ্যসূচি নয় বরং পাঠ্যসূচি বা পাঠ্যক্রম, শিক্ষাক্রমের একটি অংশ মাত্র। একইভাবে, শিক্ষায় মূল্যায়ন অর্থ পরীক্ষা সংগঠন নয়। পরীক্ষা গ্রহণ বা প্রশ্নপত্র তৈরি, শিক্ষায় পরিমাপ ও মূল্যায়নের একটি অংশ। আবার, শিক্ষাদান পদ্ধতি মানে শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষে পাঠদান নয়। পাঠদানের বিভিন্ন রকম বৈজ্ঞানিক কৌশল, শিক্ষার্থীর মনস্তত্ব বিশ্লেষণ, শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার, পাঠ পরিকল্পনা তৈরি, পাঠ মূল্যায়ন- এরকম আরও অনেকগুলো বিষয় মিলিয়ে শিক্ষণ বা শিক্ষকতা।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আই,ই,আর) না পড়লে জানতে পারতাম না যে শিক্ষাবিজ্ঞান নামে পৃথক কোনো বিষয় থাকা সম্ভব এবং সেখানে এত সব কিছু পড়ানো হয়। শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়টি যে একটি বিষয় হতে পারে তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। এর প্রধান কারণ হলো, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনটির অনুপস্থিতি। উন্নত দেশগুলোর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষা বা শিক্ষাবিজ্ঞান নামে ডিসিপ্লিন থাকে, সেখানে আমাদের দেশে শিক্ষা বিষয়টি পড়ানো হয় শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ দু'টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বিষয়টি পড়ানোর জন্য রয়েছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা Institute of Education and Research (IER)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পড়ানো হয় না, শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই,ই,আর এবং টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ, ঢাকাতে শিক্ষায় স্নাতক (সম্মান) বা ব্যাচেলর অভ এডুকেশন (অনার্স) রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বিএড (সম্মান) রয়েছে।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেইনিং কলেজগুলোতে শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিএড এবং বিএড (সম্মান) এর মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ব্যাচেলর অভ এডুকেশন হচ্ছে পেশাদার শিক্ষকদের জন্য। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকগণ "শিক্ষকতা বিষয়ে" প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করার জন্যে টিচার্স ট্রেইনিং কলেজে পড়তে আসেন। বিএড-এ শিক্ষাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিক্ষকতা সম্পর্কে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়া হয়। সেই সাথে শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলোও কয়েকটি কোর্সের মধ্য দিয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু ব্যাচেলর অভ এডুকেশন (সম্মান)- এ শিক্ষাবিজ্ঞানের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। শিক্ষায় স্নাতক (সম্মান) কোর্সে শুধুমাত্র শিক্ষকতা নয়, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। আর মাস্টার্স বা এমএড পর্যায়ে শিক্ষার বিশেষ একটি ধারায় পড়াশোনা করতে হয়। পেশাদার শিক্ষক এবং শিক্ষায় সম্মান ডিগ্রি অর্জন করা শিক্ষার্থীরা সবাই শিক্ষায় মাস্টার্স পড়তে পারেন। যারা বিএড করেছেন তাদের জন্য এমএড দুই বছর মেয়াদী । বিএড (সম্মান) পাশ করা শিক্ষার্থীদের জন্য এমএড এক বছর মেয়াদী।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, টিচার্স ট্রেইনিং কলেজগুলোর মধ্যে একমাত্র সরকারি টিচার্স ট্রেইনিং, ঢাকা এবং দারুল ইহসান ও উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) রয়েছে। সারা বাংলাদেশে মাত্র চারটি স্থানে পড়ানোর কারণেই বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে শিক্ষায় অনার্স বলে কিছু একটা আছে। কিন্তু, শিক্ষাও একটি ডিসিপ্লিন এবং দেশে একটি সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে শিক্ষায় গবেষণা ও কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আশা করছি, সেই গুরুত্ব উপলব্ধি করে, আগামীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা অনুষদ বা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট খোলা হবে যেখানে শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পড়াশোনা করার সুযোগ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫২
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×