মাইকেল প্যারেন্টি বলেছেন, মিডিয়া বিশ্বাস নির্মাণ করে। আমরা বলছি, হাল যুগে মিডিয়াকে বিশ্বাস করতে আপনি বাধ্য। আর আপনার অনিবার্য বিশ্বাসগুলোর উপর দাঁড়িয়ে থেকে বাকি বিশ্বাস নির্মাণ করে মিডিয়া। এই নির্মিত বিশ্বাসের উপর আপনি নির্ভর করে মেনে নেন যে, মিডিয়া যা দেখায় শোনায় বলেÑসবই সত্য!
উধাহরণ টেনে বিষয়টি খোলাসা করা যাকÑ
১৪ নভেম্বর ২০০৭- সিডর আঘাত হানার আগের দিন
মিডিয়ায় সংবাদ শিরোনাম ছিল এ রকম-
হারিকেনে রূপ নিয়ে তীব্রতর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় সিডর
কাল আঘাত হানতে পারে, ৮ নম্বর সতর্ক সংকেত।
১৫ নভেম্বর সিডরের দিনÑ
ধেয়ে আসছে সিডর,মংলা সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
১৬ নভেম্বরÑ
আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিডর। ঝড়টি ঘন্টায় ২২০ থেকে ২৪০ কি.মি. গতিবেগ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা জেলায় আঘাত হেনেছে।
১৭ নভেম্বর
বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ
প্রাথমিক হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৮৭৮, উপকূল জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ।
সিডরের এ রকম সংবাদের মধ্য দিয়ে উপকূলীয় মানুষের মনে আস্থা তৈরি করেছিলো মিডিয়া। তেমনই আধুনিক মিডিয়া ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, বৃষ্টি, রোগ-শোক, খাদ্যাভাব ইত্যাদি সম্পর্কে সংবাদ জানিয়ে অডিয়েন্সের আস্থা তথা বিশ্বাস অর্জন করে। অডিয়েন্স ঐ সকল বিপদে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মিডিয়াকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। একসময় বিপদ কেটে যায়। কিন্তু মিডিয়ায় বিশ্বাস কাটে না। মিডিয়া এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করে নতুন নতুন বিশ্বাস। যেমন কালো মানেই খারাপ। টুপি-দাড়ি মানেই মৌলবাদী। সুন্দর হতে হলে ক্রীম মাখুন। সৌন্দর্য ধরে রাখতে বিউটি পার্লারে যান। স্মার্ট হতে হলে নিদৃষ্ট ব্র্যান্ডের শার্ট পরুন।
এভাবেই মিডিয়া একের পর এক ভ্রান্ত বিশ্বাস উৎপাদন করে। প্রথমে আপনি মিডিয়াকে বিশ্বাস করেছিলেন জীবন বাঁচাতে আর সেই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে মিডিয়া আপনাকে বাধ্য করে ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলো গিলতে। যা আপনি প্রতিনিয়ত মেনে চলছেন এবং আটকে যাচ্ছেন ভ্রান্ত বিশ্বাসের মায়াজালে। মিডিয়ার এই ভ্রান্ত বিশ্বাস বলয় থেকে আমাদের কারোর-ই কি মুক্তি নেই ?
মাঈনউদ্দিন/দেলোয়ার জাহান,শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।