দেশে সংস্কৃতি কারখানার শিল্পী নির্মাণে অভিনবত্ব চলছে। তাই তিন চাকার গাড়ি চালকদের মধ্য থেকে একজোড়া একখান, কৃষকদের মধ্য থেকে একজোড়া একখান, গৃহিণীদের মধ্য থেকে একজোড়া একখান, কারাগারের বন্দীদের মধ্য থেকে একজোড়া একখান শিল্পী চাই-ই-চাই। এদের সাজুগুজু করিয়ে তেল কাজল মাখিয়ে জাতির সামনে টিভি পর্দায় আপনাদের বিনোদন দিতে নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে বাছাইয়ের জালে বাঁধা হয়েছে তিন চাকার চালকদের। তারপর অঞঘ- বাংলা ফিকির তুলেছে কৃষকদের নিয়ে ‘কৃষি-তারকা’ বানানোর। আমাদের মাঠের কৃষককে এখন গান গাইতে দেখা যাবে রাজধানীর সুরম্য মিলনায়তনে। টেলিভিশনের রঙিন বাক্সে। গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বা মুগ্ধতার চমৎকার অভিনয় দেখিয়ে তাদের গলায় মেডেল ঝুলিয়ে দেবেন তথাকথিত শিল্পবোদ্ধারা। আমাদের কৃষকেরা হবেন শহুরে মধ্যবিত্তের বিনোদন সরবরাহকারী কৃষক তারকা। আমাদের এতোদিনকার জানাবোঝা ছিলÑ আমাদের ৩ কোটি কৃষকের প্রত্যেকেই এক একজন তারকা। তাঁরা শস্যের মাঠে লড়াই করেন। ঘাম ঝরান, চালিয়ে রাখেন সভ্যতার চাকা। অথচ অঞঘ-বাংলা ম্যাজিক মেরে আমাদের ৩ কোটি কৃষক তারকাকে মাত্র ৩-এ এনে ঠেকাবেন। এভাবে অঞঘ-বাংলার বাণিজ্যিক ধান্দা আর প্রথাগত হিরোইজম ধারণার ঘেরাটোপে শুকিয়ে যাবে কৃষকের ঘাম ঝরানো শরীরের মহত্বগাঁথা।
৩ কোটি থেকে ৩ -এই ম্যাজিক ফর্মূলায় কৃষক এখন হেমন্তের মাঠভরা সোনালী ধান দেখে মুগ্ধ হবে না। বরং তাঁরা অঞঘ টিভির সোনালী পর্দার নায়ক হয়ে সুখ অনুভব করবে। বাস্তুচ্যুত হবে গর্বের সমৃদ্ধ সোনা ধান ফলানোর তৃপ্তি থেকে। আমরা হয়তো ভুলেই যাব কৃষাণ-কিষাণীর গাওয়া মধুমাখা সুরের মাদকতা, যা মাঠ পেরিয়ে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়তো। কৃষকের গানে মুখরিত আমাদের সেই শস্যক্ষেত; আমাদের দরিদ্র কৃষককে কখনো ফোকাস করেনি টিভি ক্যামেরা। কখনো কোনো শিল্পবোদ্ধা আওয়াজ তোলেন নি কৃষকের গানগুলোর পক্ষে দাঁড়িয়ে। অথচ এখন টিভি ক্যামেরা কৃষককে ডাকে আলো ঝলমলে মঞ্চে। কৃষক তোমাকে সেখানেই যেতে হবে। গাইতে হবে সংস্কৃতি কারখানার সুর করা গান। যে গানে ফসল তোলার কাজ এগুবে না আর । যে গানের সুরে পাখিরা ক্ষেতে স্বাভাবিক বিচরণ করবে না। অন্যদিকে অঞঘ-এর কাছ থেকে আমাদের কৃষকেরা শিখে নেবে হিরোইজম চর্চার উন্নততর শিল্পবিদ্যা ! এ চর্চার শেষ কোথায়? কে বাতলে দেবে, অঞঘ?!
দেলোয়ার জাহান, শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।