আমার একটা bদী ছিল। নাম মাতামুহুরী। গরমের দিনে যখন তখন ঝাপিয়ে পড়তাম ওর শীতল জলে। নাটাই হাতে ঘুড়ি উড়িয়ে কত্তো বিকাল কাটিয়েছি। নদীর ওপারে ছিলো দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। রাখালিয়া বাঁশির সুর ভেসে আসতো কোন দূর অজানা থেকে । সেই মধুমাখা সুরে কত্তো আবেগ ছিলো। অনুভূতি ছিলো। পূর্ণিমা রাতে ছেলেরা গোলাছুট খেলতো। হা-ডু-ডু খেলতো। মাতামমুহুরীর উপর একটা বাঁশের সাকো ছিলো। সাকোতে বসে আমরা গল্প করতাম ! চাঁদের বুড়ির গল্প। সোহ্রাব রুস্তমের গল্প। কখনো হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠতামÑ ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...! আমাদের গা ভিজতো জোছনায় আর পা ভিজিয়ে দিত মাতামুহুরীর শীতল ধারা। নদীটির পাড়ে একটা তালগাছ ছিলো। অনেক দূর থেকে আঙুল উঁচিয়ে তালগাছ দেখিয়ে বন্ধুদের বলতাম- ঐ আমাদের গ্রাম!
এখনো মাতামুহুরী আছে। কিন্তু নদীর পাড়ে বসে কোনো কিশোর ঘুড়ি উড়ায় না আর। নদীর ওপারে এখন ফসলের ক্ষেত হয় না। কৃষকেরা এখন তামাক চাষে ব্যস্ত। দেশজুড়ে নাকি তামাকের চাহিদা বেড়েছে ;দামও বেশী। কেউ জানেনা তামাক চাষ মাটির উর্বরতা নষ্ট করে দিচ্ছে । রাখালিয়া বাশির সুর হারিয়ে গেছে। এখন আধুনিক যুবকদের (!) মোবাইলে বেজে ওঠে রূপবানে নাচে কোমর দোলাইয়া কিংবা ধুুম্মাচালে...। এখনও মাতামুহুরীর উপর সাকো হয়। এখনো আকাশকে রুপালি স্রোতে ভাসিয়ে চাঁদ ওঠে। কিšু— চাঁদের আলোয় নদীর চরে কোনো কিশোরের দল গোল্লাছুট খেলে না। হা-ডু-ডু খেলে না। চাঁদের বুড়ির গল্প করে না। এখন নদীর পাড়ে গাঁজার আসর বসে। জুয়ার আসর বসে। জোছনায় গা ভাসিয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে আমাদের কিশোরেরা।
এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমার শৈশবের তালগাছটা মরে গেছে। এখনও মাতামুহুরী আছে। কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি আমার শৈশব-কৈশরের প্রিয় মাতামুহুরীকে। তারপরও মাঝেমধ্যে শহুরে যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে ছুটে আসি প্রিয় মাতামুহুরীর কাছে । আমার মায়ের কাছে। মাতামুহুরীর রূপ পরিবর্তনে হতাশ হই ।অশ্র“জলে ভাসি...!
লেখক : রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ; চ.বি।