বদলে যাচ্ছে গ্রামীন মিডিয়া কাঠামো। তার সাথে বদলে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনযাপনে; আচার-আচরণে; চেতনায়-মূল্যবোধে। মানুষ আর অপরের সুখ-দুঃখে নিজের লাভালাভ ভুলে একাট্টা হয় না। এই পরিবর্তনের দায়ভার সর্বাগ্রে মিডিয়ার।
বর্তমানে ক্ষমতাবানদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রের নাম মিডিয়া। এর হাত থেকে রেহাই পায় নি আমাদের মায়া-মমতা,আবেগ-ভালোবাসার সূতিকাগার অতি আদরের গ্রামও। মিডিয়া সহবাসে আমাদের রুপসী গ্রাম যেন বাল্য বিবাহের শিকার শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে অতীষ্ঠ কুড়িতে বুড়ি হওয়া সেই মেয়েটি।
যে লোকজ মিডিয়াগুলি গড়ে উঠেছে গ্রামীন লোকায়াত জীবনের সুখ-দুঃখ,আশা-নিরাশা,সংস্কার-প্রতিকার, অভিজ্ঞতা-প্রাজ্ঞতা ইত্যাদিকে আশ্রয় করে ; সেই মিডিয়া ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। নিজস্ব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সম্বন্ধে গ্রামের নতুন প্রজন্ম অজ্ঞ, উদাসীন। যাত্রা, পুতুলনাচ,জারি-সারি,কবিগান-পালাগান,পুঁথি পাঠের আসর তাদের কাছে অচেনা বস্তু।
প্রযুক্তির দাপটে এসব মিডিয়ার স্থান নিচ্ছে মোবাইল ফোন, ডিভিডি/ভিসিডি, স্যাটালাইটের মাধ্যমে প্রদর্শিত অশ্লীল চলচ্চিত্র। মোবাইল ফোন একাই বদলে দিচ্ছে পুরো গ্রামীন জীবনাচার। কী নেই ছোট্ট এ যন্ত্রে ! এর সাথে ইন্টারনেট সংযোগে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা, বীভৎসতা। গ্রামের তরুন-তরুনী রাতের পর রাত পার জেগে থাকছে মোবাইলে। বিকৃত যৌনাচারে জড়িয়ে খুন করছে তাদের সোনালী সম্ভাবনাকে। এর ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে মনোবৈকল্য। কাজে অন্তঃপ্রান গ্রামের মানুষগুলো কেমন যেন কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে।
আগে যেখানে গ্রাম বাংলার হাটে মাঠে বাউলগান, কবিগানের আসর জমতো এখন সেখানে ভিসিডি/ডিভিডির বদৌলতে চলে অশ্লীল, অন্তঃসারশূন্য চলচ্চিত্র। মোবাইলের মাধ্যমে চলে দেশি-বিদেশি রিমিক্স গান। ফলে গ্রামের নতুন প্রজন্ম লালন, আবদুল করিম, শচীন দেবকে চেনে না। চেনে এদের-ই গান গেয়ে বিখ্যাত হওয়া সালমা হাবিব ফুয়াদকে। এমনকি ম্যাডোনা সাকিরা বন জোভী পর্যন্ত তাদের কাছে অপরিচিত নয়।
এসব নতুন মিডিয়ার বদৌলতে একধরনের অন্তঃসারশূন্যতা, শেকড়হীনতার চর্চা ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামীন সমাজের এই উদ্দেশ্যহীন প্রবাহমানতার পরিনতি কী ? এর দায় কার ? কে ঘোচাবে সময় ও মেধার এই অর্থহীন অপচয়?
লেখক: জহিরুল ইসলাম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চ.বি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৫১