৩য় ব্লগ দিবসে ভাবছিলাম যাবো না কি যাবো না। আমার অফিস পল্টনে। এতো কাছে থেকে যদি না যাই তবে কেমন হয়ে যায় না? মেইলে যে অনুষ্ঠানসূচি পেয়েছিলাম জানা আপুর কাছ থেকে তাতে খুব একটা মন ভরেনি। এমন একটা শীতের সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হবে এবং শেষ হতে নিশ্চয়ই ১১ টা বাজবে, ভাবছিলাম এতো সাদা-মাটা অনুষ্ঠান সূচি! বিষয়টি ভালো এবং অর্থবহ কিন্তু যাদের নাম দেখলাম আলোচনার তালিকায় তাদের মধ্যে ব্লগের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাড়া বাকিরা তো শুধু অনুষ্ঠান রাঙ্গানোর জন্যই যেন আসবেন। তবে আনিসুজ্জামান স্যার উপস্থিত হবেন এটা ভেবে ভালো লাগছিল। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাহেব থাকছেন। সব মিলিয়ে যাবো না কি যাবো না এমন দোটানায় ছিলাম। একটা বিষয় প্রকটভাবে ভাবছিলাম, অনুষ্ঠানের শেষ আয়োজন হিসেবে গান পরিবেশনের বিষয়টা থাকতেই পারতো। নামকরা কোনোসঙ্গীত শিল্পী না হলেও অন্তত যেনো ব্লগাররা তাদের লেখালেখির বাইরের কিছু বিষয় তুলে ধরতে পারেন তেমন কিছু হতেই পারতো। গান, আবৃত্তি ইত্যাদির পরিবেশনা থাকতেই পারতো। আর ভাবনা নয় দিলাম ছুট। মিস করা ঠিক হবে না। ব্লগে লেখালেখি করাটা খুবই ভালো লাগে অথচ তাদের আয়োজন করা অনুষ্ঠানে একজন একনিষ্ঠ ব্লগার হয়েও যাবো না এ হয় না।
ছোট্ট স্পেস। বসলাম পেছনের বাম পাশের একটা চেয়ারে। আমার সাথে আমার পরিচিত এক ভদ্রলোককে নিয়ে গিয়েছিলাম অনুষ্ঠানটা দেখানোর জন্য। দু’জনের আলোচনা শুনে উনি চলে যেতে চাইলে বারন করলাম। -থাকেন না আরেকটু। -নাহ্ শীতের রাত, চলে যাই। এক ঘেঁয়ে লাগছে। কৌশিক ভাই প্রায় সব সময়ই উচ্চারণ করছিলেন এবারে আহব্বান জানাবো ...... কে। আহব্বানের উচ্চারণ হবে আওভান। অতো সুন্দর একটা ভোকাল অথচ উনি আহব্বান আহব্বান করছিলেন। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যেগুলো অনায়াসে এড়িয়ে যেয়ে খুব বেশি ফরমাল না হয়েও চমৎকার হতে পারতো উপস্থাপনা। একের পর এক কথামালা বিবৃত করছিলেন যখন আলোচকগণ তখন বক্তাদের কথার আওয়াজ যেন একঘেঁয়েমীতে পরিণত হয়েছিল।
আনিসুজ্জামান স্যার অবশ্য শুরু করলেন একটু কৌতুক করে, পাকা শিক্ষক মহোদয়গণ যেমনটা করেন সাধারনত। দুষ্ট ছেলে-মেয়েরা ক্লাসে হৈ চৈ করছে, বেশ কয়েকটা ক্লাস নেয়া হয়ে গেছে। মাথা কাজ করছে না। ইংরেজি গ্রামার অথবা অংকের ক্লাস শেষ হয়েছে একটু আগে এখন আর সামাজিক বিজ্ঞানের ক্লাসে মন বসছে না, তো একজন অভিজ্ঞ পাকা শিক্ষক যেভাবে ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ঠিক সেইভাবেই শুরু করলেন আনিসুজ্জামান। বললেন- ব্লগ কি আমি জানি না তবে জানা কে জানি। বেশ হাসির রোল পড়ল। আলোচনা শোনার ক্ষেত্রে ভালো লাগা শুরু হলো। একঘেঁয়েমীটা শূন্যে নেমেছিল তখন, যখন গণগ্রন্থাগারের পরিচালক আলম তালুকদার সাহেব কৌতুক দিয়েই শুরু করলেন তার আলোচনা। উনি ভালই একটা টার্ন নিলেন বক্তৃতায়। সাদা মাটা ভাবে নিজের মতো করে বিশুদ্ধ, অশুদ্ধ, সহজ সরল করে সংক্ষিপ্ত কথা রাখলেন। বেশ আকর্ষণীয় ছিল সেটা। জানা আপুর কাছ থেকে ব্লগ কার্যক্রমের শুরুর দিকের কথাগুলো আরও শুনতে অগ্রহ হচ্ছিল। কিন্তু আরো জানার আগ্রহ থাকতে থাকতেই যেন উনি মাইক্রোফোন ছেড়ে দিলেন। এখন মিডিয়ার দাপট এতো বেশি যে, কোনো একটা ছোট্ট বেখবর ঘটনাও ইলেকট্রনিক্স অথবা প্রিন্ট মিডিয়ার দৃষ্টি এড়ায় না কিন্তু এখানে তার অভাবই মনে হয়েছে। কেন যেন মনে হয়েছে আমরা একটু গুরুত্বহীন। এছাড়া আমরাও এতো চমৎকার একটা প্লাটফর্ম পেয়ে সময়গুলো নষ্ট করছি অযথাই কিছু ফানি মন্তব্য করে।
আমি ২০০৪ বা ২০০৫-এর দিকে তখনকার জনপ্রিয় দৈনিক জনকণ্ঠ এবং ভোরের কাগজে নিয়মিত লিখতাম। পাঠক ফোরাম তখনই শুরু হয়। তখন একটা লেখা লিখে কতবার যে তা প্রুফ দেখতাম চূড়ান্ত প্রিন্ট দেবার আগে। তারপর অপেক্ষা করার ব্যাপার তো আছেই। কখনো ১৫ দিন কখনো ৩০, কখনো বা ৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো লেখাটা কালো প্রিন্টিং-এর হরফে নিউজপেপারে দেখার জন্য। এখন ব্লগ হয়ে কত সহজ হয়েছে। অথচ এর মর্মার্থ কেউই খুব একটা বুঝতে পারছি না। একটা ক্লিক দেবার সাথে সাথেই পুরো বিশ্ব আমাকে দেখে নেবার সুবিধায় থাকছে। এতো কিছুর পরও বলব অনুষ্ঠান অনেক সুন্দর হয়েছে। যারা অয়োজক ছিলেন শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আপনাদের এবং এই ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশি বেশি হবে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যূগুলোতে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে উপলক্ষ্য করে এই প্রত্যাশা করছি।