তখন পর্যন্ত ইটালীয়ানদেরকে খুব কমই ভালো ইংরেজী বলতে শুনেছি। তাই যখন এক সহকর্মীকে খুব চমৎকার ইংরেজী বলতে শুনলাম, মনের ভুলেই তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম - তুমি তো চমৎকার ইংরেজী বলো, তুমি কি ইটালীয়ান? সে হেসে উত্তর দিল, আমি রোমান। রোমান শব্দটার উপর যে একটু বেশি জোড় দিল তা নজরে এলো স্বাভাবিক ভাবেই। বুঝলাম, রোমানরা নিজেদের ইটালীয়ান বলার পাশাপাশি রোমান হিসাবে পরিচয় দিতে কিছুটা বেশি পছন্দ করে।
পরে অবশ্য বুঝেছিলাম ইটালীতে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আঞ্চলিক জাতীয়তা নিয়ে গর্ববোধ চরম পর্যায়ের। এক এলাকার লোকজন অন্য এলাকার লোকজনদের চরম অবজ্ঞা করে। মিলানোরা মনে করে তারাই সেরা, তারাই ইটালীর অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। রোমানরা গর্ব করে তাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে। ভেনিসের অধিবাসীদেরও তাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্বের কমতি নেই। সেই সাথে অন্য সবাইকে অবজ্ঞা করাটা ওদের সংস্কৃতির অংশ।
ইটালীতে ছিলাম কিছুদিন। তাই মাউন্ট ভিসুভিয়াস আর পম্পেই বেড়াতে যাবার ইচ্ছাটাও ছিল। সহকর্মীদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম পম্পেই যেতে হলে নেপলসে নেমে ট্রেন বদলাতে হয়, সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টার পথ। পথের নির্দেশনার সাথে একটা সাবধানবানী জানাতে কাউ ভুল করলো না - "নেপলস এর মানুষ কিন্তু জুতা না খুলেও মোজা চুরি করতে জানে, তাই সাবধানে থেকো"। যদিও জুতা বা মোজা কোনকিছুই না খুইয়ে নেপলস থেকে ফিরে আসতে পেরেছিলাম, তার পরও নেপলস এর মানুষজনকে সত্যিই কিছুটা ধুর্ত বলেই মনে হয়েছিলো।
পম্পেইঃ
নেপলস সেন্ট্রাল ষ্টেশান থেকে সারকাম-ভিসুভিয়ানা লাইনে ৩৫ মিনিটের পথ পারি দিলেই পম্পেই স্ক্যাভি ষ্টেশান। হারকুলেনিয়াম দেখতে চাইলে অবশ্য এর কিছুটা আগেই আরকোলানো ষ্টেশানে নেমে যেতে হয়। একদিনের ট্রিপে হারকুলেনিয়াম, পম্পেই আর ভিসুভিয়াস দেখাটা প্রায় অসম্ভব। তাই হারকুলেনিয়ামকে দর্শনীয় স্থানের তলিকা থেকে বাদ দিতে হলো।
খ্রীষ্টপূর্ব ৭৯ সালে ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতে ধ্বংশ হয় পম্পেই আর হরকুলেনিয়াম, চাপা পরে যায় ৬০ ফুট উঁচু ছাইয়ের নীচে। মারা পরে পম্পেই এর ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার অধিবাসির অধিকাংশই। ধ্বংশ স্তুপের মধ্যদিয়ে হাটলেই বুঝা যায় সে যুগে পম্পেই এর অধিবাসীদের জীবন যাত্রার মান কতোটা উন্নত ছিল। উপাসনালয়, খেলার মাঠ (এম্ফিথিয়েটার), ব্রথেল অথবা অভিজাত সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরের দেয়ালে বা মেঝেতে দৃষ্টি নন্দন কারুকাজ এক অনন্য সভ্যতার কথাই স্মরন করিয়ে দেয়। লাভার সাথে জমে পাথর হয়ে যাওয়া হতভাগ্য মানুষের শরীর দেখে পম্পেই বাসীর জন্য দুঃখবোধ নিয়েই ফিরবেন আপনি।
মাউন্ট ভেসুভিয়াসঃ
ইতালীর মূল ভূভাগে অবস্থিত জীবন্ত আগ্নেয়গিরী এটি। ৭৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ বার লাভা উৎগিরন করেছে ভিসুভিয়াস। শেষবারের মতে ১৯৪৪ সালের অগ্নুৎপাতে মারা পরেছিল শতধিক মানুষ। নেপলস শহর ও এর আসেপাশের ৩০ লক্ষাধিক মানুষ যেকনো সময় ভিসুভিয়াসের জেগে উঠার ভয় নিয়েই জীবন জাপন করে।
পম্পেই থেকে ১টা ৩০ মিনিটে যে শেষ বাসটি ছাড়ে, সেটি ধরেই গিয়েছিলাম ভিসুভিয়াসে। বাস থেকে নামার পর ৩০ মিনিটের হাঁটা পথ পেরুলেই পৌঁছে যাওয়া যায় জ্বালামুখে। ভয়ঙ্কর এক অতল সুরঙ্গ যেন খাড়া নেমে গেছে। মাঝে মাঝে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। অকারন এক ভীতিতে ছেয়ে যায় মন। তবে উঁচু পাহারের উপর থেকে এখনকার দিনের পম্পেই, নেপলস অথবা দূরে সাগরের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায় সহজেই।
পুরানো লিখাঃ
ঐতিহাসিক শহর রোম - অল্প কয়েকটা দিনে যেমনটা দেখেছি। সাথে কিছু ছবি থাকছে বোনাস হিসাবেঃ Click This Link
মন ভালো করা কিছু ছবি - ক্যামেরার চোখে কায়রোঃ Click This Link
ছবিতে প্যারিসঃ Click This Link
মজার ছবি - জিব্রাল্টার এয়ার পোর্ট(???)ঃ Click This Link