পোস্টটা ড্রাফটে ছিল অনেক দিন। লেখার সময়ের অভাবে পোস্ট করা হয়নি। এছারাউ সামু বন্ধ থাকার কারনে পোস্ট ও করতে মন চায়নি। তাই সামুর শুভ মুক্তিতে আবারো শুরু করলাম আমার ভ্রমন কাহিনী। চীন গিয়েছিলাম গত বছর অক্টোবরে, সেই ভ্রমন নিয়েই লেখা।
আমি চাকরির পাশাপাশি ছোটখাট ব্যাবসার সাথে নিয়োজিত। তাই, ব্যাবসায়িক কাজেই চাইনিজদের সাথে যোগাযোগ ছিল। তবে চীন কখোনো যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সময় সুযোগ পেলে যাব ভেবে রেখেছিলাম। তবে সুযোগ টা এত তারাতারি আসবে ভাবতে পারিনি। চীনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়ীক মেলা ক্যান্টন ফেয়ার হয় বছরে ২ বার। এই মেলায় আমার জাওয়ার ইচ্ছে ছিল আগে থেকেই। অনেক ব্যাবসায়ীক সুযোগ আছে নাকি এই মেলায়। এই মেলা বছরে ২ বার হয়। এপ্রিল এর অক্টোবর। এদিকে বাবসায়ীক কাজে নিয়জিত অনেকেই ঠেলাঠেলি করতে লাগলো এবারের মেলাতে অংশগ্রহন করার জন্য। তাই আমিও সাত পাচ না ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে এবার যাবই।
সিদ্ধান্ত তো নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু বললেই তো আর যাওয়া হয় না। বিদেশ যাওয়ার এক বস্তা ভেজাল। তাই একটা একটা করে শুরু করলাম। ক্যান্টন ফেয়ার টি হয় চীনের গুয়াংডং প্রদেশের বড় ও প্রাচীন ব্যাবসায়ীক শহর গুয়াংজু তে। এই মেলায় সারা পৃথিবী থেকে মানুষ আসে , তাই মেলার সময় হোটেল রুম আর প্লেনের টিকেট পাওয়া খুব ই কষ্টকর। এদিকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মাত্র ২৫ দিন আগে। তাই তরিঘড়ি করে ভিসা করতে দিলাম। ভিসা না পেলে তো হোটেল এয়ার বুক করা যাবেনা। আমার রিলেটিভ যিনি একজন অভিজ্ঞ ট্রাভেল এজেন্ট ভিসা করে দিলেন চীনের। চাইনিজ ভিসা পাওয়া খুব সহজ যদি আগে কয়েকটা দেশে যাওয়া থাকে। আমার এর আগে সিংগাপুর যাওয়া ছিল তাই ১০০০০ টাকা লেগেছিল ভিসার খরচ।
ভিসা হয়ে গেল ৩ দিনের মধ্যে। এর মধ্যে আমি হোটেল বুক করে ফেললাম এগডার মাধ্যমে। আমি এর আগেও এগোডার মাধ্যমে সিংগাপুরে হোটেল বুক করেছিলাম। তাই এবারো তাই করলাম । আমার রিলেটিভ এয়ার টিকেট কেটে দিলেন ইউ এস বাংলা এয়ার লাইন্স। মনে একটা ভয় নিয়ে টিকেট টা নিলাম কারন কিছুদিন আগেই ইউ এস বাংলার বিমান সামনের চাকা ছারাই ল্যান্ডিং করেছে । এছারা এর আগের নেপালের হৃদয়বিদারক ঘটনা সবার ই জানা।
এদিকে চায়নাতে ডলার নেয়ার চেয়ে চাইনিজ আরএমবি নেয়াটাই সবচেয়ে ভাল বলে মতামত পেলাম। তাই টাকা সব আর এম করে নিলাম মানি এক্সচেঞ্জ থেকে। শুনেছি চায়নাতে কার্ড সব যায়গায় কাজ করেনা। ডলার ও নাকি শুধু ১টা ব্যাংক থেকে ভাঙ্গানো যায়। তাই এতো ভেজালে না গিয়ে আর এম করে নিলাম।
আমি বিদেশে যাওয়ার আগে সবসময় ই গুগল থেকে প্রচুর তথ্য নিয়ে যাই যা আমাকে প্রায় শতভাগ সাহাজ্য করে অচেনা নগরীতে চলাচলের জন্য। সত্যি অনলাইন রিসার্চ এখন ট্রাভেলের জন্য অপরিহার্য বিষয়। তাই এবারো তার কোনো ব্যাত্যয় হয়নি। গুয়াংজু শহরে কোথায় থাকবো, কিভাবে যাব, কখন গেলে ভাল হবে, কোথায় খাব ইত্যাদী সব খুটিনাটি বিভিন্ন ট্রাভেলারের ব্লগ থেকে নোট করে নিলাম। ব্যাস, এখন খালি প্লেনে ওঠার পালা
দেখতে দেখতে যাওয়ার সময় হয়ে এলো। আমার ফ্লাইট ছিল বাংলাদেশ টাইম রাত ১০ টা ১৫ মিনিটে। যেতে লাগবে পৌনে চার ঘন্টার মত। আমি হেলতে দুলতে পৌছে গেলাম হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট সারে ৭টায়। চেক ইন করে লাউঞ্জে বসলাম। ইমিগ্রেশনে কিছুই জিজ্ঞাসা করে নি। প্রায় ২ ঘন্টা সময় কিভাবে পার করি? তাই ডিউটি ফ্রি শপে ঘোরাফেরা করতে লাগলাম। আমাদের এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ খুব বড় নয়, তাই একবার ঘুরন দিলেই সব শেষ হয়ে যায়।
সময় হয়ে এল ফ্লাইটে ওঠার। উঠে পরলাম। আমি সিট পেয়েছিলাম এমারজেন্সি এক্সিটের সাথের সিট টা।তাই ফ্লাইট এটেনডেন্ট আমাকে সবিনয়ে বলল "স্যার এই দরজাটা আমরা না বললে হাত লাগাবেন না" । আমি মনে মনে বললাম, তোমাদের প্লেনের যে রেপুটেশন তাতে তোমাদের বলার সুযোগ ও থাকবেনা, আমাকেই হয়ত খুলে নিতে হবে । মনে পরে গেল ইউ এস বাংলার নোজ ল্যান্ডিঙ্গের ঘটনা
ফ্লাইট উড়াল দিল গুয়াংজুর উদ্যেশ্যে।
বাইয়ুন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, গুয়াংজু।
বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা, চাইনিজ সময় ভোর ৪ টায় অবতরন করলাম । বোর্ডিং দিয়ে ঢুকে আবিষ্কার করলাম সবাই একটা কিয়স্কের সামনে লাইন ধরে দাড়িয়েছে। কি ব্যাপার? ও আচ্ছা চায়নায় প্রথমবার যারা যায় তাদের আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। বিমানবালা এই কথাটা বিমানে বলেছিল। সেই জন্যই এই লাইন। তো কি আর করা, আমিও একটা কিয়স্কের সামনে গিয়ে লাইন ধরলাম। হঠাত দেখি কিয়স্ক বাংলা কথা বলছে ! যাব্বাবা, চাইনিজ মেশিন বাংলা বলছে ! । পরে বুঝতে পারলাম, বাংলা ভাষাভাষিদের সুবিধার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিনে বাংলা ভাষা যোগ করা হয়েছে। আমাদের বাঙ্গালীদের হাতে বোধ হয় যাদু আছে, কারন অনেক চেষ্টার পরেও অনেকেই হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে পারছিলেন না। আমার মনে পরে গেল আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার ঘটনা । আর তাছারাও চাইনিজ মাল তো
আমি আশেপাশে কয়েকটা মেশিন খালি দেখে ফিঙ্গার দিয়ে চলে আসলাম। ইমিগ্রেশনে এসে আরেকদফা দিতে হয়েছে। ইমিগ্রেশনে আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলো না, সিল মেরে ছেরে দিল। তবে লেডি ইমিগ্রেশন অফিসারটা জোশ ছিল
ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে লাগেজ নিয়ে বের হয়ে এলাম। এখন চিন্তার বিষয় হল রাত বাজে সারে ৪টা, এখন হোটেল এ যাওয়া সম্ভব না। কারন মেট্রো চালু হয় ৬ থেকে। ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই এখন এয়ারপোর্টেই থাকতে হবে সকাল পর্যন্ত। কি আর করা। মনে পড়ল সিম কার্ড কিনতে হবে। লাগেজ নিয়ে বের হয়েই দেখি কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে, সিম কিনছে তারা। সবার সাথে আমিও কিনলাম। ১৬০ আর এম নিল চায়না ইউনিকম, সাথে ৩ জিবি ডাটা। আমার ৬ দিনের জন্য যথেষ্ট। এয়ারপোর্ট থেকেই সিম নেয়া ভাল, বাইরে থেকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে দেয়।
সিম কার্ড নিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতরেই মেট্রো রেলের সিড়ির কাছে একটা সিটে এসে বসে পরলাম। বসার পড় মনে পড়ল একটা মেট্রো কার্ড কিনতে হবে। মেট্রো কার্ড কিনে নিলে বার বার টিকেট কাটতে হবেনা। ঢুকে পড়লাম একটা সেভেন ইলেভেন শপে। মেট্রো কার্ডের নাম ইয়াং টেং চেং, মুল্য ৫০ আর এম। তবে আমি শুধু কার্ড টা পেলাম না। দোকানী বল্য চাবির রিং সহ প্লাস্টিক কার্ড আছে মুল্য ৯৫ আর এম। মর জ্বালা, শুধু চাবির রিঙ্গের দাম ৫০ আর এম, বাংলা টাকায় ৫৬২ টাকা । উপায় না দেখে তাই নিয়ে নিলাম। নেয়ার পরে ভুল ভাংলো যে আসলে নেয়া ঠিক হয়নি। পরে কিনলেই চলতো। আমি আবার কাজ করার পর ভুলটা বেশি ধরতে পারি, আগে নয়। এই এক্সপার্টিস আমার চরম লেভেল এর ।
রাত বাজে সারে ৪ টা। কি করা যায়? ভাবতে লাগ্লাম। পাশে তাকিয়ে দেখি আমার মতো আরো শরনার্থি বসে আছে, ঘুমাচ্ছে । তাই আমিও লাগেজ সামনে রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।
চলবে